সেমিতে উঠে বাংলাদেশকে ধন্যবাদ দিতেই পারে অস্ট্রেলিয়া!
হতাশাময় বিশ্বকাপে সুপার টুয়েলভে পাঁচ ম্যাচের সবকটিই হেরেছে বাংলাদেশ দল। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার বড় স্বপ্ন নিয়ে গেলেও, শুক্রবার বিকেলে খালি হাতেই ফিরে এসেছে দেশে। অথচ, টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েও শনিবার এই বাংলাদেশ দলই গড়ে দিলো পার্থক্য।
দিনের শুরুটা হয়েছিল অবশ্য এক সুখবর দিয়ে। প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অস্ট্রেলিয়া হারিয়ে দেয়ায় ২০২২ সালের বিশ্বকাপে সরাসরি সুপার টুয়েলভে খেলার টিকিট পেয়ে গেছে বাংলাদেশ দল। দিনের পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার জন্যই সৌভাগ্য বয়ে এনেছে বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের গ্রুপ-১’এ সমান চারটি করে ম্যাচ জিতেছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু নেট রান রেটের কারণে বাদ পড়ে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম চার ম্যাচ জেতা ইংল্যান্ডই হয়েছে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। আর শুধু ইংল্যান্ডের কাছেই হারা অসিরা হয়েছে গ্রুপের দ্বিতীয় দল।
চলতি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম চার ম্যাচে একটিও হারেনি ইংল্যান্ড। তাদের বিপক্ষে কোনো দলই পেরোতে পারেনি দেড়শ রানের ঘর। চার ম্যাচে কোনো ব্যাটারই পারেননি ফিফটি হাঁকাতে। শনিবার এ তিনটি কাজই করে দেখিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবু বিদায় নিয়েছে বিশ্বকাপ থেকে।
শারজাহ ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ইংলিশদের বিপক্ষে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৮৯ রান করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। রাসি ফন ডার ডুসেন ৯৪* ও এইডেন মারক্রাম খেলেন ৫২* রানের ইনিংস। পরে কাগিসো রাবাদার হ্যাটট্রিকের সুবাদে ১০ রানে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। অর্থাৎ তিনটি অধরা কাজই করে দেখিয়েছে টেম্বা বাভুমার দল।
তবু নেট রান রেটের মারপ্যাঁচে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হয়েছে অন্যতম ফেবারিটদের। গ্রুপ-১ থেকে সেমিফাইনালে উঠেছে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। অথচ এ দুই দলের সমান চারটি জয় পেয়েছে প্রোটিয়ারাও। কিন্তু তারা পিছিয়ে পড়েছে নেট রান রেটের কারণে। আর ঠিক এ কারণেই বাংলাদেশকে ধন্যবাদ দিতেই পারে অস্ট্রেলিয়া।
কেননা একদিকে অস্ট্রেলিয়ার নেট রান রেট বাড়িয়েছে বাংলাদেশ, অন্যদিকে কমিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার নেট রান রেট। গত মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে মাত্র ৮৪ রানে অলআউট হয়েছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। পরে ম্যাচ জিততে প্রোটিয়াদের অপেক্ষা করায় ১৩.৩ ওভার পর্যন্ত।
সেদিন বল হাতে রীতিমতো অপ্রতিরোধ্য ছিলেন তাসকিন আহমেদ। তার করা চার ওভারের প্রতিটি বলই ছিল একেকটি ঘটনা। কী বাউন্স, কী সুইং, কী মুভমেন্ট, কী গতি- সবকিছু মিলিয়ে দুর্দান্ত এক প্যাকেজ ছিলেন তাসকিন। ভালো করেন আরেক পেসার শরিফুল ইসলামও।
বাংলাদেশের করা ৮৪ রান টপকাতে ১৩.৩ ওভার খেলে ফেলাটাই কাল হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য। কেননা একদিন পর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশকে আরও কম ৭৩ রানে থামায় অস্ট্রেলিয়া। পরে এই ৭৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে মাত্র ৬.২ ওভার নেয় অ্যারোন ফিঞ্চের দল।
টাইগারদের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার লক্ষ্য ছিল কাছাকাছিই। কিন্তু অসিদের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি বল খেলে ফেলে প্রোটিয়ারা। এটিই মূলত পার্থক্য গড়ে দিয়েছে নেট রান রেটে। তাই তো সমান ৮ পয়েন্ট হলেও, নেট রান রেট দক্ষিণ আফ্রিকার (+০.৭৩৯) আর অস্ট্রেলিয়ার (+১.২১৬)।
অবশ্য শনিবার এই নেট রান রেটের ব্যবধান ঘুচিয়ে নেওয়ার সুযোগ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে। আগে ব্যাটিং করে ১৮৯ রান করার পর তাদের ম্যাচটি জিততে হতো অন্তত ৫৮ রানের ব্যবধানে। তা করতে পারলে অস্ট্রেলিয়াকে টপকে টেবিলের দুই নম্বরে উঠে যেত তারা।
শুধু তাই নয়, ইংল্যান্ডকে ৮৭ রানে থামাতে পারলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ারও সুযোগ ছিল প্রোটিয়াদের। কিন্তু তারা শুধু ম্যাচটিই জিতেছে, মেলাতে পারেনি অন্য সমীকরণ। তাই ১০ রানের জয়, রাবাদার হ্যাটট্রিক কিংবা ডুসেন-মারক্রামের ফিফটি; সবই গেছে বিফলে। সুপার টুয়েলভ থেকেই বিদায় ঘটেছে দক্ষিণ আফ্রিকার।
এসএএস/আইএইচএস