আফগানিস্তানকে দেখে বিশ্বজয়ী শ্রীলঙ্কাকে মনে পড়ছে মুরালির
স্কটল্যান্ডকে ১৩০ রানে হারিয়ে শুরু হয়েছে আফগানিস্তানের যাত্রা- বিশ্বকাপে এর চেয়ে ভালো সূচনা আর কিই বা হতে পারে! মুজিব-উর-রহমান ও রশিদ খানের ঘূর্ণি জাদুতে ৬০ রানেই গুটিয়ে যায় স্কটিশরা। সে ম্যাচে আফগান ব্যাটাররাও বিশাল বিশাল ছক্কা হাঁকিয়েছেন।
এই উড়ন্ত আফগানিস্তানকে দেখে বেশ স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছেন শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরন। তিনি যেন টাইম মেশিনে চড়ে ফিরে গেছেন ২৫ বছর আগের ঘটনায়। এই আফগানিস্তানকে দেখে ১৯৯৬ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী শ্রীলঙ্কার কথাই মনে পড়ছে মুরালির।
আইসিসিতে লেখা বিশেষজ্ঞ কলামে এ কথা জানিয়েছেন মুরালি। জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য মুরালির কলামটি অনুবাদ করে দেয়া হলো:
আফগান স্পিনারদের এ পর্যন্ত যা পারফরম্যানস দেখলাম তাতে আমি মুগ্ধ। হতে পারে তারা তুলনামূলক দুর্বল দলের বিপক্ষে খেলেছে, তবে মুজিব-উর-রহমান ও রশিদ খান যেভাবে স্কটিশ ব্যাটারদের নাচিয়েছে, তা সত্যিই অবিশ্বাস্য।
বাকি ম্যাচগুলোতে এই দুজন এভাবে বোলিং করলে প্রতিপক্ষের জন্য তারা হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এদের দেখে শ্রীলঙ্কার ১৯৯৬'র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের কথা মনে পড়ছে। এই কথা বলাটা এখন খুব অগ্রীম হয়ে যাচ্ছে, তবে তাদের স্পিনাররা যদি এভাবে খেলতে থাকে, কখন কী হবে তা আপনি নিজেও জানেন না।
যদি ১৯৯৬ সালের দিকে ফিরে তাকাই, অনেক অভিজ্ঞ ব্যাটারের পাশাপাশি আমাদের অনেক তরুণ বোলারও ছিল আমাদের দলে। কন্ডিশনের সুবিধা পেয়েছি আর আমরা ঘরের মাঠে পুরো নব্বইয়ের দশক দুর্দান্ত খেলেছি এবং কন্ডিশনের সুবিধা কিভাবে কাজে লাগাতে হয় তা বুঝে গিয়েছিলাম। এটা কোনো আকস্মিক বা অপ্রত্যাশিত ছিল না, আমাদের অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় ছিল।
আফগানিস্তানের ক্ষেত্রেও এমনটা প্রযোজ্য। মোহাম্মদ নবী দীর্ঘদিন ধরে খেলছে। এছাড়া হযরতউল্লাহ জাজাই ও রহমানউল্লাহ গুরবাজের মতো উদীয়মান ব্যাটাররাও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলেছে। স্পিনারদেরকে আলাদা রেখে ওদের ব্যাটারদের কথা বললাম। বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলে এই সংস্করণে তারা দুর্দান্ত হয়ে উঠেছে। তাই আমার কথা হচ্ছে, কেন তাদেরকে টুর্নামেন্টের ‘ডার্ক-হর্স’ বলা যাবে না!
সেরা দলের কথা বলতে হলে আমি পাকিস্তানের কথা বলব। তাদের গ্রুপে ভারত ও নিউজিল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দুটো দলকে হারিয়েছি। পাকিস্তান বরাবরই প্রতিভাবান খেলোয়াড় নিয়ে টুর্নামেন্ট খেলে কিন্তু অতীতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো তারা খুব বাজে খেলেছে।
এবারের পাকিস্তানকে সম্পূর্ণ ভিন্ন মনে হচ্ছে। জানি না এত শক্তিশালী তারা কিভাবে হলো, তবে তারা মোমেন্টাম ধরে রাখতে পারে ও তাদের বোলিং আক্রমণও বিশ্বমানের।
ব্যাটিংয়ে পাকিস্তানের রয়েছে বাবর আজমের মতো বিশ্বমানের খেলোয়াড়। তাছাড়া ১৫ বছরের ওপর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা অভিজ্ঞ শোয়েব মালিক ও মোহাম্মদ হাফিজ তো আছেই। কয়েকজন দুর্দান্ত তরুণ খেলোয়াড়ও আছে। ঐতিহ্যগতভাবে তাদের ফিল্ডিং অতটা ভালো না, তবে ফিল্ডিংয়েও তারা ভালো করছে।
ম্যাথু হেইডেনকে পাওয়াটা তাদের জন্য অনেক বড় ইতিবাচক দিক। বর্তমান সময়ের ক্রিকেট কীভাবে খেলতে হয় তা সে (হেইডেন) ভালো করেই জানে এবং পাকিস্তান দলের জন্য অনেক বড় একজন উপদেষ্টা।
একটা জিনিস পরিষ্কার যে, ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেরা দলগুলোর বোলিং আক্রমণ আসলেই দুর্দান্ত।
হারিস রউফ ও শাহিন শাহ আফ্রিদির গতির ঝড় পাকিস্তানকে বিপজ্জনক দলে পরিণত করেছে। ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার বোলিংয়ের পাশাপাশি ইয়র্কার ও স্লোয়ারও করতে পারে। এমন কন্ডিশনে অতিরিক্ত গতিই পার্থক্য করে দেয়। আর স্পিনারদের সঠিক লাইন-লেংথে বোলিং করতে হবে।
যে দলটাকে নিয়ে আমার বেশি চিন্তা, তা হলো ভারত। জাসপ্রিত বুমরাহ ম্যাচ উইনার। তবে বোলিংয়ে তারা বুমরাহর ওপর একটু বেশিই নির্ভরশীল। আমার মতে তারা একজন লেগ স্পিনার অথবা রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে খেলাতে পারে। অথবা দুই পেস বোলার এবং হার্দিক পান্ডিয়াকে দিয়ে বোলিং করাতে পারে। তাদের দলের ভারসাম্য ঠিক রাখতে হবে এবং বুমরাহর ওপর বেশি নির্ভর করা যাবে না।
এসএএস/এএসএম