শেরে বাংলার স্লো পিচে খেলে কী লাভ হলো তাহলে?
বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সিনিয়র প্লেয়ারদের সবাই, হেড কোচ ডোমিঙ্গো, এমনকি নির্বাচকরাও বড় গলায় বলেছিলেন, ‘দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয় আমাদের সাহস, আস্থা আর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা আত্মবিশ্বাস নিয়েই বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছি। আসলে কি তাই? সত্যিই রিয়াদের দল স্লো উইকেটে খেলে লাভ হয়েছে রিয়াদের দলের?
‘আচ্ছা ভাই, বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে শেরে বাংলার স্লো পিচে খেলে কী লাভ হলো বলতে পারেন?’ এক পাঠকের প্রশ্ন।
শুধু ওই পাঠকই নন, যদি তেমনটাই হবে, তাহলে আজ বুধবার আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামের স্লো পিচে ব্যাটিংয়ের এমন হতচ্ছিরি অবস্থা কেন বাংলাদেশ দলের?
এ প্রশ্নের উত্তর দেবেন কে? অধিনায়ক রিয়াদ? হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো না টিম ম্যানেজমেন্ট? এদিকে দেশে অনেক আশা নিয়ে টিভির সামনে বসে থাকা কোটি ভক্ত ও সমর্থক আবারো চরম হতাশ।
সবার একটাই কথা, ইংল্যান্ডের নির্জিব ও মাঝারি মানের বোলিংয়ের বিপক্ষে এমন খাপছাড়া শ্রীহীন ব্যাটিং কেন? এটা ১৭০-এর উইকেট নয়। এখানে ১৪৫-১৫০ রান হতে পারে ফাইটিং স্কোর; কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে মনে হলো না তাদের মাঝে এ বোধ, উপলব্ধি ছিল। থাকলে আরও একটু রয়ে-সয়ে খেলতেন সবাই। তাতে নিশ্চিতভাবেই ১৪০ থেকে দেড়শো রান করা সম্ভব ছিল।
কিন্তু শুরু থেকে ব্যাটসম্যান তকমাধারীদের ভুল পথে হাঁটায় আর তা হয়নি। ১২৪-এ থেমে গেছে স্কোর। ওই যে হিসেব কষে খেলার কথা কেন বলা হলো? তার ব্যাখ্যাটিই শোনেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, যারা ইংল্যান্ডের লেগস্পিনে অসহায় আত্মসমর্পন করেছিল, যে লেগস্পিন গুগলি বোলার (আদিল রশিদ) আগের ম্যাচে মাত্র ২ রানে ৪ উইকেটের পতন ঘটিয়ে হয়েছিলেন ইংল্যান্ডের জয়ের নায়ক। আজ সেই লেগি আদিল রশিদ কোন উইকেটই পাননি। বরং তাকেই সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দে খেলেছেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। আদিল রশিদের ৪ ওভারে রান উঠেছে ৩৫।
মইন আলিকে শুরুতে দেখে খেললে নির্ঘাত স্কোরলাইনের এ জীর্ণ দশা হতো না। একটু বুদ্ধি খাটিয়ে ঠান্ডা মাথায় ব্যাট চালালেই হয়তো আরও ২০-২৫টি রান বেশি করা যেত; কিন্তু তা হয়নি। উল্টো মঈন আলির সাধারণ মানের অফস্পিনেই উইকেট বিষর্জন দিয়ে এসেছেন দুই ওপেনার লিটন দাস আর নাইম শেখ।
শুরুতে দুই ওপেনার এবং ৬ ওভারে সাকিবসহ ৩ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যাওয়া থেকে আর সামনে আগানো সম্ভব হয়নি। মঈন আলি আগের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বোলিং ওপেন করে ২ উইকেটের পতন ঘটিয়ে ক্যারিবীয়দের পিছনের পায়ে ঠেলে দিয়েছিলেন।
আজও তাকে দিয়েই বোলিং শুরু ইংলিশ ক্যাপ্টেন মরগ্যানের। মঈন আলিকে দেখে স্ট্রাইকে লিটন দাস। মঈন আলির প্রথম ওভারে লিটন দাস দুটি বাউন্ডারি হাঁকালেন। প্রথমটি দু’পা সামনে বেরিয়ে সোজা বোলারের মাথার ওপর দিয়ে। আর পরেরটি এক্সট্রা কভারের ওপর দিয়ে।
কিন্তু এ অফস্পিনারের দ্বিতীয় ওভারেই হঠাৎ সোজা ব্যাটে অফ সাইডে খেলা বাদ দিয়ে অনসাইডে স্কোয়ার লেগের আশপাশে মাঠের সবচেয়ে ছোট জায়গা দিয়ে সীমানার ওপারে পাঠানোর চেষ্টা করলেন লিটন দাস। সেটাই কাল হলো।
অফস্ট্যাম্পের ঠিক বাইরের বলকে টেনে স্কোয়ার লেগ ও মিড উইকেটের ওপর দিয়ে চালাতে গেলেন। তাও উঁচু করে মেরে। বল ব্যাটের ওপরের দিকে লেগে উঠে গেল আকাশে। ২ বাউন্ডারিতে ৯ রান করে বিদায় নিলেন লিটন দাস।
ঠিক পরের বলে মঈন আলিকে আবার উইকেট দিলেন নাইম শেখ। তবে লিটন যে জায়গায় চালিয়েছিলেন, সেখানে নয়, উল্টো দিকে। নাইম (৫) জায়গায় দাঁড়িয়ে মঈন আলির গুডলেন্থ ডেলিভারিকে তুলে মারতে গেলেন মিড অনের ওপর দিয়ে। তা চলে গেল সোজা ফিল্ডার ক্রিস ওকসের হাতে।
তৃতীয় ওভারে ১৪ রানে ২ উইকেট পতনের পর মনে হচ্ছিল পাওয়ার প্লে’তে আর ঝুঁকি নিয়ে খেলবে না বাংলাদেশ। কিন্তু সাকিব হাঁটলেন উল্টো পথে। পাওয়ার প্লে’তে ৩০ গজের ভিতরে ৯ জন ফিল্ডার, ফাইন লেগের ওপরে তার আশপাশ কিংবা মাথার ওপর দিয়ে পাঠাতে পারলেই বাউন্ডারি, এই চিন্তায় আবার স্কুপ, ফ্লিক আর পুলের মাঝামাঝি শট খেলতে গেলেন সাকিব। সেটাই কাল হলো।
মনে করে দেখুন, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আগের ম্যাচে লেগস্ট্যাম্প ওপেন করে হয়েছিলেন বোল্ড। আর আজকে ইংলিশ ফাস্ট বোলার ক্রিস ওকসের বলে পুল, ফ্লিক আর স্কুপের মাঝামাঝি শট খেলে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ সাকিবের। যদিও লেগি আদিল রশিদের মত ‘স্লো ম্যুভার’ পিছনে শরীর ফেলে দারুণ এক ক্যাচ ধরেছেন, তারপরও চরম বিপদে সাকিবের মাপ ও মানে খুবই আলগা শট। চোখে লাগে বৈ কি।
সব মিলিয়ে ৬ ওভারের পাওয়ার প্লে’তে তিনজন আউট। বোর্ডে রান ২৭। সেখান থেকে সামনে আগানোর সুযোগ ও সম্ভাবনা ছিল দলের দুই সিনিয়র ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সামনে। নিজেদের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বহুবার সংকটে বিপদে হাল ধরার নজির আছে তাদের। আজও সিঙ্গেল, ডাবলসে খেলে খেলে এগুচ্ছিলেন রিয়াদ আর মুশফিক। সাকিবের পর ভুল পথে হাঁটেন মুশফিকুর রহিম।
উইকেটে থিতু হয়ে রিভার্স সুইপ খেলতে গেলেন মুশফিক (৩০ বলে ২৯)। আর তাতেই লেগবিফোর উইকেটের ফাঁদে জড়িয়ে পড়লেন। মুশফিক উইকেটের সামনে ও দুদিকে সমান স্বচ্ছন্দে খেলতে পারেন।
সারোয়ার ইমরান আর নাজমুল আবেদিন ফাহিম সহ বাংলাদেশের সব কোচরা মনে করেন মুশফিক ‘ভি’তে খেলেই ১২০ প্রাস স্ট্রাইকরেটে ইনিংস সাজাতে পারেন। তার ওই স্লগ সুইপ, রিভার্স সুইপ আর স্কুপ খেলার দরকার পড়ে না।
শুধু ওই দুই কোচ নন। সবার ধারনা মুশফিক ওই শট খেলা থেকে বিরত থাকলে কিংবা একদম না খেললে আরও সফল হতে পারেন। তার যে ইনিংসগুলো ২০-২২ আর ২৫ ‘র আশপাশে থেমে যাচ্ছে , সেগুলো নির্ঘাত বড় হতো। এই যেমন আজ। অফস্পিনার লিভিংস্টোনের বলে মুশফিক হঠাৎ রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে লেগবিফোর উইকেটের ফাঁদে জড়িয়ে গেলেন ।
তারপর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সাথে ডাবলস নিতে গিয়ে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হলেন আফিফ হোসেন ধ্রুবও (৫)। এরপর ক্যাপ্টেন রিয়াদও (২৪ বলে ১৯), শেখ মাহদি (১০ বলে ১১), নুরুল হাসান সোহান (১৮ বলে ১৬) কিছু করতে পারেননি।
বাঁ-হাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ শেষ দিকে ৯ বলে ১৬ করায় স্কোরটা ১২০’র ঘরে গেছে।
এআরবি/আইএইচএস/