লঙ্কাভূমিতে শুরু ক্যারিবীয় আধিপত্যের
বিশ্বব্যাপী ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগের দাপট তখন তুঙ্গে। নানান দেশে শুরু হয়ে গেছে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট। সেসব টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটারদের। কেনো সেই চাহিদা, তার প্রমাণ মিলতে শুরু করে ২০১২ সালের বিশ্ব টি-টোয়েন্টির আসর থেকে।
দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঘুরে কুড়ি ওভারের বিশ্ব আসরের ঠিকানা হয় শ্রীলঙ্কা। ২০০৯ সালের আসরের রানার্সআপ কিংবা স্বাগতিক দেশ হিসেবে শ্রীলঙ্কা ছিলো অন্যতম ফেবারিট। কিন্তু তাদেরই মাঠে তাদেরকে হতাশায় ডুবিয়ে ড্যারেন স্যামির নেতৃত্বে ক্যারিবীয় রুপকথা লেখেন ক্রিস গেইল-মারলন স্যামুয়েলসরা।
অথচ গ্রুপপর্বেই বাদ পড়ে যেতে পারতো ক্যারিবীয়রা। প্রথমে অস্ট্রেলিয়ার কাছে বৃষ্টি আইনে ১৭ রানের হারের পর একই কারণে পরিত্যক্ত হয়ে যায় আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ। তবে আইরিশরা অস্ট্রেলিয়ার কাছে বড় ব্যবধানে হারায় নেট রানরেটের ভিত্তিতে সুপার এইটের টিকিট পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ঘরের মাঠের আসরে অবশ্য দুর্দান্ত খেলেই এগুচ্ছিলো স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। বিশেষ করে গ্রুপপর্বের ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য বোলিংয়ের গল্প লেখেন রহস্য স্পিনার অজান্থা মেন্ডিস। নিজের চার ওভারে দুই মেইডেনসহ মাত্র ৮ রান খরচায় নেন ৬টি উইকেট। যা এখনও বিশ্ব টি-টোয়েন্টিতে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড।
বিশ্ব টি-টোয়েন্টির চতুর্থ আসরটি বাংলাদেশের জন্য ছিলো হতাশাময়। গ্রুপপর্বের দুই ম্যাচেই বাজে বোলিংয়ের মাশুল দিয়ে পেতে হয় করুণ পরাজয়। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই সেঞ্চুরি হাঁকান নিউজিল্যান্ডের বিধ্বংসী ওপেনার ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। তার ৫৮ বলে ১২৩ রানের ইনিংসটি এখনও বিশ্ব টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ।
গ্রুপে নিজেদের পরের ম্যাচে ব্যাট হাতে বেশ ভালো করেছিলো বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে সাকিব আল হাসানের ব্যাট থেকে আসে ৫৪ বলে ৮৪ রানের ইনিংস। কিন্তু বোলাররা হতাশ করলে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ১৮.৩ ওভারেই বাংলাদেশের করা ১৭৫ রান টপকে যায় পাকিস্তান।
সুপার এইট রাউন্ডে একই গ্রুপে দেখা হয়ে যায় আসরের দুই ফাইনালিস্ট ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কার। গ্রুপের অন্য দুই দল নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডকে বাড়ি ফেরার টিকিট ধরিয়ে সেমিফাইনালে উঠে যায় এ দুই দলই। এই রাউন্ডে শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ একটি করে ম্যাচ জেতে সুপার ওভারে গিয়ে। কাকতালীয়ভাবে সেই দুইটি ম্যাচই ছিলো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।
অন্য গ্রুপে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হতাশ করে সেরা চারে নাম লেখায় অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তান। তবে সমান ৪ পয়েন্ট করে ছিলো ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানের। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার কাছে বড় ব্যবধানে হেরে নেট রান রেটে পিছিয়ে পড়ায় সুপার এইটেই থামে ভারতের যাত্রা।
প্রথম দল হিসেবে বিশ্ব টি-টোয়েন্টির চার আসরেই সেমিফাইনালে ওঠে পাকিস্তান। তবে সেখান থেকে শিরোপা পুনরুদ্ধারের জন্য ফাইনালে উঠতে পারেনি তারা। স্বাগতিকদের করা ১৩৯ রানের জবাবে মাত্র ১২৩ রানে থামে মোহাম্মদ হাফিজের দল। ফলে বেজে যায় বিদায়ঘণ্টা।
অন্য সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলাই করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্রিস গেইলের অপরাজিত ৪১ বলে ৭৫ রানের ইনিংসের সঙ্গে কাইরন পোলার্ডের ১৫ বলে ৩৮ রানের ঝড়ে আসরের সর্বোচ্চ ২০৫ রান করে ফেলে ক্যারিবীয়রা। জবাবে ২০ বল আগেই ১৩১ রানে গুটিয়ে যায় অসিরা।
ফাইনালে আগের তিন আসরের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে শ্রীলঙ্কায় হওয়া টুর্নামেন্টেও, দেখা মেলে লো স্কোরিং এক ফাইনাল ম্যাচের। যেখানে মারলন স্যামুয়েলসের ৭৮ রানের ইনিংসের পরও ১৩৭ রানের বেশি হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ।
তবে এই ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়েও হোঁচট খায় স্বাগতিকরা। মাত্র ৯ রানে ৩ উইকেট নেন সুনিল নারিন, অধিনায়ক ড্যারেন স্যামির শিকার ৬ রানে ২ উইকেট। শ্রীলঙ্কা অলআউট হয় ১০১ রানে আর প্রেমদাসায় উদ্দাম গ্যাংনাম নৃত্যে মেতে ওঠেন স্যামি, গেইল, স্যামুয়েলসরা।
একনজরে ২০১২ বিশ্ব টি-টোয়েন্টি
চ্যাম্পিয়ন: ওয়েস্ট ইন্ডিজ
রানার্সআপ: শ্রীলঙ্কা
সর্বোচ্চ রান: শেন ওয়াটসন (২৪৯ রান)
সর্বোচ্চ উইকেট: অজান্তা মেন্ডিস (১৫)
সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ (২০৫/৪)
সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ: আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ড (৮০)
সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ: ব্রেন্ডন ম্যাককালাম (১২৩)
ম্যাচে সেরা বোলিং: অজান্থা মেন্ডিস (৮ রানে ৬ উইকেট)
ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়: মারলন স্যামুয়েলস (৭৮ রান ও ১ উইকেট)
টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়: শেন ওয়াটসন (২৪৯ রান ও ১১ উইকেট)
এসএএস/আইএইচএস/