উচ্চতা দিয়েই কাবু করবেন জেমিসন!
টি-টোয়েন্টি খেলেছেন মাত্র ৮টি। এর মধ্যে উইকেট শিকার ৪টি। গড় ৭০ এর ওপর। ইকোনমিও রেটও বেশ বাজে, ৯.৮০! অলরাউন্ডার হলেও, বোলিংটা যার শক্তির জায়গা হয়, তার এমন পারফরম্যান্স অবশ্যই ব্যর্থতার জানান দেয়।
তবে এত অল্প অভিজ্ঞতা এবং কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে বাজে পারফরম্যান্স করেও ঠিকই কিন্তু নিউজিল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নিয়েছেন উঠতি তারকা কাইল জেমিসন!
জেমিসন ব্যাটিং করেন লোয়ার মিডল অর্ডারে। স্লগ ওভারে খেলার মতো হাতে বড় শট আছে বটে। তবে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তার বোলিং পরিসংখ্যান মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়। তবুও কেন ২৬ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারকে বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে রাখা? আবার কেনই বা এই পেসারকে আইপিএলে বিরাট কোহলির দল রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু কিনেছিল ১৫ কোটি রুপি দিয়ে?
এর উত্তরটা যারা জেমিসনের খেলা দেখেছেন তারা সহজেই দিতে পারবেন। গেল বছর ভারতের বিপক্ষে এক সিরিজে ওয়ানডে ও টেস্ট দলে অভিষেক তার। ওয়ানডেতে যেমন-তেমন, ক্রিকেটের কুলীন ফরম্যাট টেস্টে তার ব্যাটিং-বোলিং মুগ্ধ করেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুস্কর।
কখনো ব্যাট, কখনো বল- অভিষেক সিরিজেই ভারতের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন দীর্ঘকায় এই পেসার। ৮ টেস্টে তার নামের পাশে ৪৬ উইকেট। গড় ১৪.১৭! ৪২ গড়ে রান করেছেন ২৫৬। যিনি কি-না ক্রিকেটের সেরা সংস্করণে এত দুর্দান্ত, তার যোগ্যতা নিয়ে কি প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ থাকে? রাখেওনি নিউজিল্যান্ড। তাই তো সংক্ষিপ্ত ওভারের ক্রিকেটে মন্দ শুরুর পরও তাকে বিশ্বকাপ দলে রাখা, উদীয়মান থেকে তারকা বনে যাওয়ার পথ করে দেয়া।
বর্তমান ক্রিকেট দুনিয়ায় সবচেয়ে লম্বা বোলারদের একজন জেমিসন। ৬ ফিট ৮ ইঞ্চি উচ্চতাসম্পন্ন এই বোলার বল ছুঁড়লেই তো আতঙ্কে থাকেন ব্যাটাররা। কেননা এত উঁচু থেকে আসা বল সচরাচর খেলাই হয় না। আর এই উচ্চতার জন্য জেমিসন উইকেট থেকে আদায় করে নিতে পারেন বাড়তি বাউন্স। উচ্চতার কারণে বাউন্স তো এমনিতেই পান জেমিসন, তবে তার গুণ আছে আরও। নিজের মেধা, প্রজ্ঞাকে কাজে লাগিয়ে ফুলার লেন্থে দুর্দান্ত সব ডেলিভারি করতে পারেন তিনি, সেটাও আবার ধারাবাহিকভাবে।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত জেমিসনের পারফরম্যান্স মলিন হলেও, ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্ল্যাকক্যাপস খেলোয়াড়দের মধ্যে সেরা বোলিং ফিগারের মালিক তিনিই। ক্যান্টারবুরির হয়ে ২০১৯ সালে সুপার স্ম্যাশে ৪ ওভারে মাত্র ৭ রান খরচায় ৬ উইকেট নিয়ে আলোড়ন ফেলে দেন তিনি। গড়েন জাতীয় রেকর্ড। তাতেই জাতীয় দলের নির্বাচকদের নজরে আসেন জেমিসন। ফলাফল পরের বছরই জাতীয় দলে ডাক পড়ে তার।
চলতি আইপিএলে ১৫ কোটি রুপির খেলোয়াড় হিসেবে তেমন নজর কাড়তে পারেননি কিন্তু জেমিসন। ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে মোটে ম্যাচ খেলেছেন ৯টি। ৯ ম্যাচে উইকেটও পেয়েছেন ৯টি। সেরা পারফরম্যান্স ৪১ রানে ৩ উইকেট।
নিউজিল্যান্ড দলের হয়ে এটাই প্রথম বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে জেমিসনের। মাত্র দুই বছরের ছোট্ট আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার বলে এখনো উঠতি তারকার তকমা তার গায়ে। সেই উঠতি তারকা থেকেই তারকা হওয়ার সুযোগ জেমিসনের সামনে। একটা সময় ছিলেন ব্যাটিং-অলরাউন্ডার।
তবে কিউই কিংবদন্তি স্যার রিচার্ড হ্যাডলির ভাই ডায়েল হ্যাডলি তাকে বোলিংয়ে বেশি মনোযোগ দিতে বলেন। সেটা তার উচ্চতার কারণে। ইতোমধ্যেই এক উচ্চতা দিয়ে যাদের বিপক্ষে খেলেছেন, তাদের মনে ভয়ভীতি ঢুকিয়ে দিয়েছে জেমিসন। বিশ্বমঞ্চেও সেই উচ্চতার সঙ্গে নিজের মেধা-বুদ্ধি খাটিয়ে জেমিসন প্রতিপক্ষের আতঙ্ক হবেন, এখন সেটাই একমাত্র চাওয়া নিউজিল্যান্ড ভক্তকুলের।
এসএস/আইএইচএস/