ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

আরও একবার সাকিবে উদ্ভাসিত হোক বাংলাদেশ

সাজ্জাদ হোসেন সাব্বির | প্রকাশিত: ১০:১৮ এএম, ১০ অক্টোবর ২০২১

দীর্ঘ ক্রিকেট ক্যারিয়ারে কত মহারথীকেই তো পেছনে ফেলেছেন সাকিব আল হাসান। কখনো সেটা ব্যাট হাতে, কখনো আবার বল। তবে বিতর্ক নামক শব্দটিকে কখনোই পেছনে ফেলতে পারেননি তর্কাতীতভাবে দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা এই ক্রিকেটার। অতিরিক্ত তারকাখ্যাতি পেয়েছেন বলেই কি-না, সাকিব যাই করেন তাতেই খুঁত ধরার লোক হুমড়ি খেয়ে পড়ে। সাকিবের নিজেরও তাতে দায় আছে অবশ্য। নিজের দোষেই সিংহভাগ সময় রোষানলে পড়েছেন তিনি।

তবে সেই বিতর্ক দূরে ঠেলে অলরাউন্ডার সাকিবের আরও একবার জ্বলে ওঠার সময় চলে এসেছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলগত সাফল্য পেতে চাইলে, তার জ্বলে ওঠার বিকল্প যে আর কিছু নেই! যেমনটা তিনি করেছিলেন ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে। সেই বিশ্বকাপ শেষ করে এসে, তখনকার বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছিলেন, সাকিবের জন্য খারাপ লাগছে তার। তার এমন অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের পরও বাংলাদেশ গ্রুপ পর্ব পেরোতে পারেনি। সে জন্যই তার ওই খারাপ লাগা।

সেই খারাপ লাগা কাজ না করা রীতিমতো অপরাধের মধ্যে পড়ত। কেননা যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত শেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে সাকিব যা করেছেন, তা স্বপ্নেরও অতীত। অন্য প্রতিটি খেলোয়াড়ই তেমন কিছু পারফরম্যান্স করার স্বপ্ন দেখেন।

দুই সেঞ্চুরিসহ ৮ ম্যাচে ৬০৬ রান। ৯৬ স্ট্রাইক রেটে আসরের তৃতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রাহক ছিলেন সাকিব। অথচ তার দলই কি-না গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়! বল হাতেও নিজেকে মেলে ধরেছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ৮ ম্যাচে ঝুলিতে পুরেছিলেন ১১ উইকেট। এর মধ্যে ছিল একটি ফাইফারও।

কে জানে, বাংলাদেশ কোনোভাবে যদি বিশ্বকাপে নকআউট পর্বে চলে যেত, তবে হয়তো আসর সেরা খেলোয়াড়ের খেতাবটাও বসত তার নামের পাশেই। কেননা তার চেয়ে ব্যাট-বল হাতে এমন স্বপ্নিল আসর যে কেউই কাটাতে পারেনি! অথচ এই বিশ্বকাপের আগে, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ- আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে নিয়মিত একাদশেই সুযোগ পেতেন না সাকিব। সেই ক্ষোভেই কি-না, নিজেকে প্রমাণে মরিয়া সাকিবের ব্যাট স্ফুলিঙ্গ হয়ে জ্বলে উঠল বিশ্বকাপে। আসর মাতালেন একের পর এক অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে।

সেবার ছিল ওয়ানডে বিশ্বকাপ, এবার টি-টোয়েন্টি। দুই ফরম্যাটের মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকলেও- কাকতালীয়ভাবে দুটি বিষয়ে চাইলে মিল খুঁজে নেয়াই যায়। একটি, এবারো বাংলাদেশ দলের প্রাণভোমরা হিসেবেই দেশের হয়ে বিশ্বকাপ খেলতে নামবেন সাকিব। আরেকটি, এই বিশ্বকাপের আগেও আইপিএলে নিয়মিত একাদশের বাইরে তিনি। সাকিব সেবার যেমন ব্যাট হাতে হায়দরাবাদের সমস্ত অপমানের জবাব দিয়েছিল, এবার তো কলকাতাকেও তেমনটা দিতে চাইবেন।

নামটা সাকিব বলে, তা অবশ্যই সম্ভব। বাংলাদেশের হয়ে সর্বশেষ সিরিজে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্লিক করেনি সাকিবের ব্যাট। বল হাতেও ছিলেন অনেক মলিন। তবে এর আগেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হয়েছিলেন সিরিজ সেরা। সাম্প্রতিক ফর্ম যেমনই হোক, আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থেকেই বাংলাদেশ ও সাকিব যাচ্ছেন সংযুক্ত ওমান-আরব আমিরাতে। সর্বশেষ তিন টি-টোয়েন্টি সিরিজই জিতেছে বাংলাদেশ। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের এবারই এই ফরম্যাটে এমন কোনো কীর্তি গড়েছে টাইগাররা।

সাকিব নিজে একজন ম্যাচ উইনার, দলের কি-ফ্যাক্টর। আর বিশ্বকাপটা যেহেতু অনেকটা নিজেদের চেনা কন্ডিশনে হচ্ছে, সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্নও দেখছেন তিনি। কিছুদিন আগে নিজের বিশ্বকাপ ভাবনার কথা জানাতে গিয়ে এই অলরাউন্ডার বলেন, ‘সামনের তিন বিশ্বকাপের দুটিতেই সেমিতে ওঠার যোগ্যতা আছে বাংলাদেশের, আমার কাছে মনে হয় এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আর ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে আমাদের ভালো করার সম্ভাবনা বেশি। এমন না যে ২০২২-এর টায় সুযোগ নেই। তবে ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় খেলা হওয়ায় আমাদের জন্য একটু কঠিন হওয়া স্বাভাবিক। যদিও ছন্দে থেকে ভালো ক্রিকেট খেলতে পারলে সেরা চারে যাওয়া অসম্ভব হবে না। আমরা তো এখন পরিণত দল। ক্লিক করলে আরও বেশি কিছুর চিন্তা করা যেতে পারে।’

সেই ক্লিক করাদের একজন সাকিব নিজে। দেশের জন্য তাই আরেকবার সাকিবকে দিতে হবে নিজের সেরাটা। যেমনটা তিনি দিয়ে আসছেন, গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত, মনে রাখার মতো কোনো অর্জনই নেই বাংলাদেশের। তবে দলে একটা সাকিব আছে বলে, স্বপ্ন দেখতে মানা কোথায়? দল হিসেবে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যেমন-তেমন, সেই দলের সর্বোচ্চ রান কিংবা উইকেট শিকার-সবই আবার সাকিবের দখলে। বিশ্বকাপে ২৫ ম্যাচ খেলে ২৮ গড়ে এই বাঁ-হাতির ব্যাট থেকে এসেছে ৫৬৭ রান। বল হাতে শিকার ৩০ উইকেট।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেরা বোলার পেসার আল-আমিন হোসেনের উইকেট সংখ্যা যেখানে ১৮ টি, সাকিবের সেখানে ৩০। ছোট্ট এই তুলনাই কি বলে দেয় না, সাকিব দলের কী?

তুলনা কিংবা পরিসংখ্যান আপাতত তোলাই থাক। কেননা সেটা যে এই বিশ্বকাপ শেষে সাকিব আরও সমৃদ্ধ করবেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সে সঙ্গে টাইগার ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রার্থনা, বাংলাদেশের প্রাণ, বাংলাদেশের জান-সাকিব আল হাসান, আরেকবার জান বাজি লাগাক দেশের জন্য। তবেই তো সাকিবে উদ্ভাসিত অন্য এক বাংলাদেশকে দেখবে ক্রিকেট বিশ্ব।

এসএস/আইএইচএস/