ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

৮ উইকেটে ২৯৪, সেই মাহমুদউল্লাহই শেষ ভরসা

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৯:১৬ পিএম, ০৭ জুলাই ২০২১

তিনি টেস্ট দলেই ছিলেন না। শেষ মুহূর্তে দুই তিনজনের চোট সমস্যার কথা ভেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। মাঠে নেমে সেই মাহমুদউল্লাহই দেখালেন, অভিজ্ঞতা বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না।

হারারে টেস্টের প্রথম দিনে বাংলাদেশের নায়ক লিটন দাস। মাত্র ৫ রানের জন্য সেঞ্চুরিটা ছুঁতে পারেননি। কিন্তু ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসে ঠিকই দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন।

তবে অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে এই লিটনকে যিনি সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহসটা দিয়েছেন, তার নামটি মাহমুদউল্লাহ। প্রাথমিক বিপর্যয়টা সামলেছিলেন মুমিনুল হক। টাইগার অধিনায়ক ৭০ রানের দারুণ একটি ইনিংস খেলেন।

তারপরও কিন্তু বেশ বিপদে পড়েছিল বাংলাদেশ। মুমিনুল যখন সাজঘরের পথ ধরেছেন ১৩২ রানে ৬ উইকেট নেই টাইগারদের। মনে হচ্ছিল, দুইশ ছোঁয়াই কঠিন হয়ে যাবে।

সেই পরিস্থিতি থেকে দলকে উদ্ধার করেছেন লিটন আর মাহমুদউল্লাহ। তাদের ১৩৮ রানের জুটিতেই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। লিটন দিনের শেষ সময়ে এসে আক্ষেপ নিয়ে ফিরেছেন।

কিন্তু মাহমুদউল্লাহ ক্যারিয়ারের ১৭তম টেস্ট হাফসেঞ্চুরি তুলে উইকেটে রয়ে গেছেন শেষ ভরসা হয়ে। ১৪১ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ৫৪ রানে অপরাজিত ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান, তার সঙ্গে ১৩ রান নিয়ে তাসকিন আহমেদ।

৮ উইকেটে ২৯৪ রান নিয়ে প্রথম দিন শেষ করে বাংলাদেশ। লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে মাহমুদউল্লাহ দ্বিতীয় দিন কতটা লড়াই করতে পারেন, তার ওপরই নির্ভর করছে টাইগারদের পুঁজিটা কোথায় গিয়ে ঠেকবে।

হারারে টেস্টে প্রথম সেশনের চেয়ে দ্বিতীয় সেশনটা অপেক্ষাকৃত ভালো কেটেছিল বাংলাদেশের। প্রথম সেশনে ২৩ ওভারে ৭০ রানে ৩ উইকেট হারিয়েছিল টাইগাররা। দ্বিতীয় সেশনে ২৬ ওভারে রান তুলে ৯৭। উইকেট খোয়ায় আরও তিনটি। তৃতীয় সেশনটা কেটেছে তার চেয়েও ভালো। এই সেশনে ১২৭ রান যোগ করে ২ উইকেট হারিয়েছে মুমিনুল হকের দল।

jagonews24

হারারের অনেকটাই অপরিচিত উইকেটে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। কিন্তু প্রথমবারের মতো জিম্বাবুয়েতে টেস্ট খেলতে যাওয়া সাইফ-শান্তরা যেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না।

ইনিংসের প্রথম ওভারের পঞ্চম বলেই ব্লেসিং মুজারবানির দারুণ এক ডেলিভারিতে বোকা বনেন সাইফ। ডিফেন্ড করতে চেয়েছিলেন, ব্যাটটা যেন একটু দেরিতে আসে। আর ততক্ষণে বল স্ট্যাম্পে আঘাত হানে সহজেই। টেস্ট ক্যারিয়ারের আট নম্বর ইনিংসে তৃতীয় শূন্যের দেখা পান সাইফ।

নাজমুল হোসেন শান্তও আরও একবার যেন বুঝিয়ে দিয়েছেন, নতুন বলে তিনি বেশ বেমানান। মুজারবানিরই এক ডেলিভারি ডিফেন্ড করতে গিয়ে তৃতীয় স্লিপে ক্যাচ হন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান, মাত্র ২ রান করে।

সেই জায়গা থেকে প্রতিরোধ মুমিনুল আর সাদমানের। তৃতীয় উইকেটে ৬০ রানের জুটি গড়েন তারা। সেই জুটিটি ভাঙে লাঞ্চের একটু আগে। এনগারাভার অফস্ট্যাম্পের চ্যানেলে করা বল সাদমানের ব্যাটে লেগে চলে যায় প্রথম স্লিপে। ৬৪ বলে ৪ বাউন্ডারিতে বাঁহাতি এই ওপেনার তখন ২৩ রানে।

২৩ ওভারে ৩ উইকেটে ৭০ রান নিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। বিরতির পর অভিজ্ঞ মুমিনুল-মুশফিকের জুটিটির দিকে তাকিয়ে ছিলেন সমর্থকরা। কিন্তু হতাশ করেন মুশফিক।

মুজারবানির তৃতীয় শিকার হন টাইগার দলের অভিজ্ঞ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। লাইন বুঝতে না পেরে হাত উঁচু করে বলটি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন মুশফিক, কিন্তু সেটি আঘাত হানে প্যাডে। আবেদনে সঙ্গে সঙ্গে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। মুশফিক খুব একটা খুশি ছিলেন না, কিন্তু রিভিউ না থাকায় ১১ রানেই থামতে হয় তাকে।

এর পরের ওভারেই উইকেট বিলিয়ে দেন সাকিব আল হাসান। নিয়াচির বাইরে থাকা বলটি স্কোয়ার ড্রাইভ করতে গিয়ে এজ হয়ে উইকেটকিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, করেন ৩ রান। ১০৯ রানেই ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

এই দুই ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার আগেই অবশ্য হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন মুমিনুল। ইনিংসের ২৭তম ওভারে মুজারবানিকে স্কয়ার লেগ দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ক্যারিয়ারের ১৪তম ফিফটি পূরণ করেন টাইগার দলপতি।

লিটন দাসকে সঙ্গে নিয়ে একটি জুটিও গড়তে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বড় হয়নি জুটিটি তারই ভুলে। নিয়াচিকে কাট করতে গিয়ে গালিতে ক্যাচ হন মুমিনুল। ৯২ বলে গড়ে তার ৭০ রানের ইনিংসটিতে ছিল ১৩টি বাউন্ডারির মার।

এরপর দলের হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ আর লিটন দাস। দুজনই দেখেশুনে খেলে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন। মিলটন শাম্বাকে দারুণ এক স্লগ সুইপে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ক্যারিয়ারের নবম ফিফটি তুলে নেন লিটন, সেইসঙ্গে বাংলাদেশকেও ছুঁইয়ে দেন দুইশর ঘর।

মাহমুদউল্লাহ আর লিটন দাসের এই জুটি অনেকটা সময় দলকে ভরসা দিয়েছে। ১৩৮ রানের এই জুটিটি শেষ পর্যন্ত ভেঙেছেন ডোনাল্ড তিরিপানো। লিটন সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ভুল শট খেলে বসেন।

তিরিপানোর শর্ট বল দেখে লোভ সামলাতে পারেননি। করেন পুল, আর ফাইন লেগে ফিল্ডার নিয়াচি দৌড়ে এসে ডাইভ দিয়ে নেন দারুণ এক ক্যাচ। ১৪৭ বলে লিটনের ৯৫ রানের চোখ ধাঁধানো ইনিংসটিতে ছিল ১৩টি বাউন্ডারির মার।

দারুণ খেলছিলেন। একসাথে হাতছানি দিচ্ছিল দুটি মাইলফলকের। নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি, সেইসঙ্গে জিম্বাবুয়ের মাটিতে প্রথম কোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি।

হলো না। মাত্র ৫ রানের জন্য তিন অংকের ম্যাজিক ফিগারটা ছুঁতে পারলেন না লিটন। ডানহাতি এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার ঠিক পরের বলেই শূন্যতে সাজঘরের পথ ধরেন মেহেদি হাসান মিরাজ।

জিম্বাবুইয়ান বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল মুজারবানি। ৩টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। দুটি করে উইকেট শিকার ডোনাল্ড তিরিপানো আর ভিক্টর নিয়াচির।

সংক্ষিপ্ত স্কোর (প্রথম দিন)
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৮৩ ওভারে ২৯৪/৮ (লিটন দাস ৯৫, মুমিনুল হক ৭০, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৫৪*, সাদমান ইসলাম ২৩, তাসকিন আহমেদ ১৩*; মুজারবানি ৩/৪৮)

এমএমআর/এমএস