ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

ঈদের নামাজ পড়ে নামিবিয়ার সাথে ম্যাচ খেলেছিলাম : হাবিবুল বাশার

আরিফুর রহমান বাবু | প্রকাশিত: ০৫:৪০ পিএম, ১৪ মে ২০২১

টেস্ট মর্যাদা পাবার পর ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে কানাডার কাছে হেরে ঈদ-উল আজহা বা কোরবানীর ঈদ মাটির ঘটনা আছে। খেলা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানের কিংসমিডে; ঠিক কোরবানির ঈদের আগের রাতে হওয়া সেই বিশ্বকাপের গ্রুপ ম্যাচে আইসিসির সহযোগি সদস্য ও একঝাঁক অপেশাদার ক্রিকেটারে গড়া কানাডার সঙ্গে অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে গিয়েছিল খালেদ মাসুদ পাইলটের দল।

খুব স্বাভাবিকভাবেই সে পরাজয়ের ধাক্কা গিয়ে লেগেছিল গোটা বাংলাদেশে। সারা জাতির ঈদ আনন্দ সেবার ম্লান হয়ে গিয়েছিল। এমন দুঃখজনক ঈদ না কাটলেও ঈদের দিন জাতীয় যুব দলের (অনূর্ধ্ব-১৯) যুব বিশ্বকাপে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার নজিরও আছে। ২০০০ সালে হান্নান সরকারের নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কায় ঈদেরদিন সকালে নামাজ পড়ে গা গরমের ম্যাচ খেলেছিলেন হান্নান, রাজিন সালেহ, বিকাশ ও আশরাফুলরা।

কিন্তু ঈদের দিন জাতীয় দল কোন প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক ম্যাচ খেলেছে, এমন ঘটনা আগে শুনেছেন কী? সেটাই শেষ নয় ঈদের জামাত ধরার কারণে কোন ট্যুর ম্যাচ নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে শুরুর কথাই বা ক’জনার জানা আছে ?

প্রায় দেড়যুগ পর ঈদ-উল ফিতর বা রোজার ঈদের ঠিক আগের দিন এমন অজানা তথ্যই দিলেন হাবিবুল বাশার। জাগো নিউজের সাথে ছেলেবেলা ও খেলোয়াড়ি জীবনের ঈদ নিয়ে একান্তে কথা বলতে গিয়ে হাবিবুল বাশার সুমন জানালেন এ অজানা তথ্য।

Habibul Bashar

বাশারের কথা, সালটা সম্ভবত ২০০৪। আমরা সেবার নামিবিয়া সফরে গিয়েছিলাম ৫ ম্যাচের সিরিজ খেলতে। ঠিক কোন ম্যাচে মনে নেই। তবে একটি ম্যাচ পড়ে যায় ঠিক ঈদের দিন। সেটা রোজার না কোরবানির ঈদ, তা মনে করতে পারেননি জাতীয় দলের এ সাবেক অধিনায়ক।

তার বক্তব্য, ‘সেটা ঠিক মনে নেই। তবে সালটা সম্ভবত ২০০৪ হবে (ইতিহাস ও পরিসংখ্যান জানাচ্ছেন সন ঠিক আছে)। আমরা নামিবিয়ার বিপক্ষে ৫ ম্যাচের সিরিজ খেলতে গিয়ে জানলাম একটি ম্যাচ পড়েছে একদম ঈদের দিন।’

‘এখন কি করবো? ঈদের খাওয়া দাওয়া, হইচই আনন্দ না হয় পরে করলে চলবে; কিন্তু ঈদের নামাজটা তো পড়তে হবে। সেটাতো আর বাদ দেয়া চলবে না। এখন কী করি?’

‘শেষ পর্যন্ত আমাদের টিম ম্যানেজমেন্টের তরফ থেকে নামিবিয়ার ক্রিকেট বোর্ডকে অনুরোধ করা হলো যে খেলার সময় বদলাতে। আমরা যাতে সকালে নামাজ পড়ে তারপর খেলতে পারি, তেমন সময়ে ম্যাচ শুরুর কথা বলা হলো। নামিবিয়ান ক্রিকেট বোর্ডও শুরুতে রাজি ছিল না। স্বীকৃত ওয়ানডে ম্যাচের সূচি ও সময় পাল্টানোর নজির নেই, তারওপর ঈদের জামাতের কারণে, শুরুর সময় পিছিয়ে দেয়া- স্বাগতিকরা কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না। পরে অনেক বলেকয়ে তাদের রাজি করানো হলো।’

সেই নামাজ পড়তে গিয়েও এক ভিন্ন অভিজ্ঞতার সম্মুখিন হবার ঘটনা ঘটেছিল। বাংলাদেশের টিম লিঁয়াজো ভুলক্রমে শিয়া মসজিদে নিয়ে গিয়েছিলেন দলকে। শিয়াদের নামাজের ধরণ একটু আলাদা। যার সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কারোই তেমন পরিচয় ছিল না। দলের সবাই সুন্নি। নামাজের ধরনের সেই ভিন্নতা বড় ধরনের বিব্রতকর অবস্থার উদ্রেক না ঘটালেও বুঝতে একটু হলেও সমস্যা হয়েছিল ক্রিকেটারদের। সুমন জানালেন, ‘আমরা নামাজের ভিতরই একজন আরেক জনের দিকে তাকাচ্ছিলাম।’

যা হোক পরে নামাজ শেষে সরাসরি মাঠে চলে গেলাম এবং টসের পর খেলতে নামলাম। এবং শুরুর পর ব্যাটিং বিপর্যয়।

বলার অপেক্ষা রাখে না তখনকার কোচ ছিলেন সম্ভবত ডেভ হোয়াটমোর। তিনি ঈদের দিন সকালে নামাজ পড়ায় আপত্তি করেননি; কিন্তু ব্যাটিংয়ে নেমে অল্প সময় ও সংগ্রহে ৪ উইকেট হারিয়ে বসার পর বেশ রেগে গিয়েছিলেন। ড্রেসিং রুমে তার কথা-বার্তার ধরনটা ছিল এমন, ‘ওই ঈদের নামাজ পড়তে গিয়েই সবার মনোযোগ-মনোসংযোগ গিয়েছিল কমে। তাই মাঠে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়তে হলো।’ অবশ্য পরে আর সমস্যা হয়নি। ওই শুরুর ধাক্কা সামলে ঠিক বড়সড় স্কোর গড়ে ম্যাচ জিতেছিল টাইগাররা।

পাঠকদের অনেকেই হয়ত এটুকু পড়ে ক্রিকইনফো বা ক্রিকবাজ খোঁজাখাজি শুরু করে দিয়েছেন। তবে কোথাও নামিবিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের তথ্য পাননি। সেটা নিয়ে একটা বিভ্রান্তি আছে খোদ বাশারেরও। তার জানা ছিল, সেটা ছিল ওয়ানডে সিরিজ। পরে জানা হলো যে, নামিবিয়ার তখন ওয়ানডে স্ট্যাটাস ছিল না। তাই ম্যাচগুলো ওয়ানডে মর্যাদা পায়নি।

ঈদের দিন নামাজ পড়ে সরাসরি খেলতে মাঠে যাবার ঘটনাই শুধু নয়, হাবিবুল বাশার সুমনের খেলোয়াড়ী জীবনে অন্যরকম ঈদের স্মৃতিও আছে। সেটা ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে, কানাডার কাছে হারের তেতো অভিজ্ঞতা। দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে কানাডার কাছে হেরেছিল টেস্ট খেলুড়ে দল বাংলাদেশ।

Habibul Bashar

পর দিন ছিল কোরবানীর ঈদ। কানাডার কাছে বিশ্বকাপের প্রথম গ্রুপ ম্যাচের সে অপ্রত্যাশিত পরাজয়ের কারণে গোটা দেশে ঈদ আনন্দ মাটি হয়ে গিয়েছিল।

খালেদ মাসুদ পাইলট, খালেদ মাহমুদ সুজন, হাবিবুল বাশার, আল শাহরিয়ার রোকন, অলক কাপালি, মোহাম্মদ আশরাফুল, মঞ্জুরুল ইসলাম, এহসানুল হক সেজানসহ আর যারা সেই ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ দলে ছিলেন, তারা কেউ এখনো কানাডার কাছে হারের সে দুঃখ স্মৃতি ভুলতে পারেননি।

সেই পরাজয়ের ঘা রয়ে গেছে এখনো। কানাডার মত আইসিসির সহযোগি দলের কাছে হার- পুরো দল বিমর্ষ বিনিদ্র রজনী পার করেছিল টিম বাংলাদেশের। পরের দিন ঈদের নামাজ পড়তে পর্যন্ত ইচ্ছে করেনি। বাংলাদেশ বহরের তিনজন মাত্র ক্রিকেটার খালেদ মাহমুদ সুজন, হাবিবুল বাশার আর মঞ্জুরুল ইসলাম শুধু রাত পোহানোার পর ঈদের নামাজ পড়তে ডারবানের মসজিদে গিয়েছিলেন।

সে পরাজেয়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আরও এক অন্যরকম তথ্য দিলেন হাবিবুল বাশার। জানালেন তার নিজের এক বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যাবার কথা। ভাবছেন হারলো পুরো দল আর বিব্রতকর অবস্থায় পতিত হয়েছিলেন হাবিবুল বাশার সুমন একা - সে কি কথা!

বাশার অধিনায়ক থাকলে তাও একটা কথা ছিল। ক্যাপ্টেন ছিলেন খালেদ মাসুদ পাইলট। তাহলে কী সেই বিড়ম্বনা? বাশারের মুখ থেকেই শুনুন সে কথা, ‘আসলে কানাডার কাছে হারের পরদিন কোরাবনীর ঈদ। সবার মন খারাপ। আমরা বিমর্ষ। প্রত্যেকের মন খারাপ। দল হিসেবে যারা আমাদের ধারে কাছেও না, তাদের সাথে না পারায় চরম হতাশায় মূহ্যমান সবাই। এর মধ্যে একটি ফোন পেলাম আমি। আমার আপন সেজ ভাই এনামুল বাশার রুহিন ভাইয়া ফোন করলেন আমেরিকা থেকে। তিন এখন কানাডা প্রবাসী। তখন থাকতেন যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি ছাড়া আরও অনেকেই ক্রিকেটারদের কাছে ফোন করে সহানুভুতি জানিয়েছিলেন। আমি ভাবলাম রহিন ভাইয়াও বুঝি সে রকম সহানুভুতি জানাতেই ফোন দিয়েছেন। কিন্তু আমার সেজ ভাইয়া ফোনে এতটুকু সহানুভুতি বা সহমর্মিতা প্রকাশ না করে রীতিমত রাগ করলেন। বকাবকি করলেন। এবং রাগতঃ স্বরে বলে উঠলেন, তোমরা এটা কি করলা? কানাডার সাথে হারলা? জান তোমাদের হারে আমাদের মন কত খারাপ হয়েছে যে, আমরা ঈদই করতে পারিনি। এখনো সেজ ভাইয়ার সে বকাবকির কথা কানে বাজে।’

প্রায় দুই বছর পর এবার নিজের বাড়ি কুষ্টিয়ায় গিয়ে ঈদ-উল ফিতর পালন করেছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক এবং বর্তমান নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন। তিনি নিজেই জাগোনিউজকে জানিয়েছেন এ তথ্য। গত তিন বছরে হাবিবুল বাশার সুমন হারিয়েছেন তার মা-বাবা এবং মেজ ভাইকে। এবার দুই বছর পর ভাই এবং ভাতিজাদের সাথে ঈদ করলেন তিনি কুষ্টিয়ায়।

এআরবি/আইএইচএস