ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

জোড়া সেঞ্চুরিতে নিউজিল্যান্ডের রেকর্ড, বিশাল লক্ষ্য বাংলাদেশের

ক্রীড়া প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৭:৫৬ এএম, ২৬ মার্চ ২০২১

সকালের সূর্য যে সবসময় দিনের আভাস দেয় না, তার-ই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তীতে খেলতে নেমে সিরিজের শেষ ওয়ানডের শুরুটা দুর্দান্ত করেছিল টাইগাররা। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের ইনিংস শেষে আর সেই হাসিটা রইল না রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদদের মুখে।

ডেভন কনওয়ে ও ড্যারেল মিচেলের জোড়া সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩১৮ রান করেছে নিউজিল্যান্ড। ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে ওয়ানডে ম্যাচে এটিই সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড। এতদিন ধরে এ মাঠে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডও নিউজিল্যান্ডেরই ছিল। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১৮ সালে ৩১৫ রান করেছিল কিউইরা।

দলীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ার পাশাপাশি পঞ্চম উইকেটে বেসিন রিজার্ভের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের জুটিও গড়েছেন কনওয়ে-মিচেল। যার ফলে এখন বাংলাদেশকে সান্ত্বনার জয়ের জন্য টপকাতে হবে বিশাল লক্ষ্য। এ মাঠে সর্বোচ্চ ২৫৪ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ডও নিউজিল্যান্ডের। যা তারা করেছিল ১৯৮৯ সালে। ফলে বাংলাদেশের কাজটি রীতিমতো অসম্ভবের পর্যায়েই চলে গেছে।

বেসিন রিজার্ভে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে সহজেই রান তুলতে থাকেন দুই ওপেনার হেনরি নিকলস ও মার্টিন গাপটিল। তাসকিন আহমেদ বেশ কিছু ভালো ডেলিভারি করলেও রানের চাকা আটকাতে পারেননি। যার ফলে প্রথম ছয় ওভার থেকে ৩৩ রান করে ফেলে নিউজিল্যান্ড।

সপ্তম ওভারে প্রথমবারের মতো বোলিং আক্রমণে পরিবর্তন আনেন তামিম ইকবাল, বল তুলে দেন রুবেল হোসেনের হাতে। আর এতেই আসে সাফল্য। রুবেল ও তাসকিনের গতিময় বোলিংয়ের সামনে রীতিমতো খাবি খেতে শুরু করেন কিউই ব্যাটসম্যানরা। রুবেলের প্রথম ওভারে আসে ৭ রান।

তবে এর পরের ওভারেই তাসকিন দেখান তার জাদু। দ্বিতীয় বলে এগিয়ে মারতে গিয়ে আউটসাইড এজ হন নিকলস। কিন্তু সেটি নিজের গ্লাভসে রাখতে পারেননি মুশফিক। উল্টো বল চলে যায় বাউন্ডারিতে। জীবন পাওয়ার সঙ্গে বোনাস চারটি রানও যোগ হয় নিকলসের নামের পাশে।

অবশ্য সৌভাগ্যে ভর করে বেশি দূর যেতে পারেননি বাঁহাতি নিকলস। সে ওভারের চতুর্থ বলে আবারও বাইরের কিনারায় লাগে বল। এবার চলে যায় গালি অঞ্চলে। যেখানে কোনো ভুল করেননি লিটন। তার নিরাপদ হাতে ধরা দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন ১৮ রান করা নিকলস।

তাসকিন উইকেটের খাতা খোলার পরের ওভারে আরেক ওপেনার গাপটিলকে ফেরান রুবেল। তার হালকা লাফিয়ে ওঠা ডেলিভারিতে পুল শটের চেষ্টা করেন গাপটিল। কিন্তু টাইমিংয়ে হয় গড়বড়, বল চলে যায় মিডঅফে। যেখানে প্রস্তুত ছিলেন লিটন। আবারও ক্যাচ নিয়ে ফেরান ২৬ রান করা গাপটিলকে।

দুই ওপেনারকে ফেরানোর পর আসে এক ওভার বিরতি। দশ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৫১ রান। এগারতম ওভারের চতুর্থ বলে শর্ট মিডঅনে দাঁড়ানো মোস্তাফিজুর রহমানের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন অভিজ্ঞ রস টেলর। কিন্তু অতি দ্রুত আসায় সেটি ধরতে পারেননি মোস্তাফিজ।

জীবন পেয়ে ঠিক পরের বলেই চার মেরে দেন টেলর। অবশ্য এতে সমস্যা হয়নি। ওভারের শেষ বলটিতে টেলরকে উইকেটের পেছনে সহজ ক্যাচে পরিণত করেন রুবেল। এবার আর ভুল করেননি মুশফিক। তার হাতে ধরা দিয়ে সাজঘরে ফেরেন নিউজিল্যান্ডের অভিজ্ঞতম ব্যাটসম্যান।

এরপর আবার দ্বিতীয় ম্যাচের মতো বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ান টম লাথাম ও ডেভন কনওয়ে। দুজন মিলে স্বাচ্ছন্দ্যে রান তুলতে থাকেন। বিশেষ করে মোস্তাফিজুর রহমানের করা ১৯তম ওভারে পরপর তিন চারসহ মোট ১৪ রান তুলে নেন কনওয়ে। পরের ওভারে চার মেরে ২০ ওভারেই পূরণ করেন দলীয় শতক।

নিয়মিত বোলারদের দিয়ে জুটি ভাঙতে না পারায় ইনিংসের ২৪তম ওভারে পার্টটাইমার সৌম্য সরকারের দ্বারস্থ হন তামিম, সাফল্য পান হাতে নাতে। বল হাতে নিয়ে নিজের প্রথম বলেই মূল্যবান ব্রেকথ্রু দেন সৌম্য। এতে অবশ্য বড় অবদান গালিতে দাঁড়ান ফিল্ডার মেহেদি মিরাজের।

সৌম্যর অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলটি ড্রাইভ করেছিলেন কিউই অধিনায়ক লাথাম। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ব্যাট ঘুরে যাওয়ায় বল চলে যায় গালি অঞ্চলে। সেখানে নিজের বাম দিকে বাজপাখির মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে বলটি তালুবন্দী করেন মিরাজ। ফলে বিদায়ঘণ্টা বাজে ৩৩ বলে ১৮ রান করা আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান লাথামের।

এরপর আর মেলেনি সাফল্য। জিমি নিশামকে নিচে রেখে ড্যারেল মিচেলকে প্রমোশন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নিউজিল্যান্ড। যা কাজে লেগে যায় পুরোপুরি। ইনিংসের মাঝপথ পেরুনোর আগেই ৪ উইকেট হারালেও কনওয়ে-মিচেলের রেকর্ডগড়া জুটিতেই বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করাতে পেরেছে কিউইরা।

ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেছেন কনওয়ে, প্রথম ফিফটির দেখা পেয়েছেন মিচেল। ইনিংসের ৪৩তম ওভারে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরিতে পৌঁছান কনওয়ে। এরপর ব্যক্তিগত ১০৫ রানের মাথায় তাসকিনের বলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান তিনি।

জীবন পাওয়ার পর আরও ২১ রান করেন কনওয়ে। দলীয় ২৭৯ রানের সময় তাকে সাজঘরে পাঠান মোস্তাফিজ। ডিপ মিড উইকেটে দাঁড়িয়ে ক্যাচ ধরতে ভুল করেননি আফিফ হোসেন ধ্রুব। যার ফলে সমাপ্তি ঘটে কনওয়ের ১১০ বলে ১৭ চারের মারে ১২৬ রানের ইনিংসের।

কনওয়ের বিদায়ে ভাঙে ১৫৯ রানের পঞ্চম উইকেট জুটিও। বেসিন রিজার্ভে যেকোনো উইকেটে এটিই সর্বোচ্চ রানের জুটি। ফলে ইনিংস শেষ করার দায়িত্ব বর্তায় মিচেলের কাঁধে। এর মাঝে জিমি নিশাম ৪ বলে ৪ রান করে আউট হন। তবে থামেননি মিচেল। মারমুখী ব্যাটিংয়ে দলকে ৩০০ পার করান তিনি।

শেষ ওভারে তার ব্যক্তিগত সেঞ্চুরির জন্য প্রয়োজন ছিল ১৭ রান। প্রথম তিন বলে তিন চার হাঁকিয়ে ৯৫ রানে পৌঁছে যান তিনি। পরের দুই বল থেকে নেন আরও ৩ রান। ইনিংসের শেষ বলে বাকি থাকা ২ রান নিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দেন ২৯ বছর বয়সী এ অলরাউন্ডার। শেষপর্যন্ত ৯২ বলে বলে ঠিক ১০০ রানে অপরাজিত থাকেন মিচেল। নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ থেমেছে ৬ উইকেটে ৩১৮ রানে।

বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন রুবেল হোসেন। এছাড়া একটি করে উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ, তাসকিন ও সৌম্য। দশ ওভারে ৮৭ রান খরচ করেছেন ফিজ। যা তার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে রান খরচের রেকর্ড।

এসএএস/