ফাইনালে জ্বলে উঠলেন রিয়াদ, খুলনার লড়াকু সংগ্রহ
ইনিংসের প্রথম বলেই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল খুলনা, দলীয় পঞ্চাশের আগেই হারায় ৩ উইকেট। একসময় মনে হচ্ছিল, দেড়শ রানও করতে পারবে না তারা। দলের কঠিন সময়ে চওড়া ব্যাটে প্রতিরোধ গড়েছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তার অপরাজিত ফিফটিতে খুলনা পেয়েছে ১৫৫ রানের লড়াকু সংগ্রহ। চ্যাম্পিয়ন হতে চট্টগ্রামকে করতে হবে ১৫৬ রান।
শিরোপা নির্ধারণী এই ম্যাচে টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন চট্টগ্রাম অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন। টুর্নামেন্টের অন্যান্য ম্যাচগুলোর মতোই প্রথম ওভার তিনি তুলে দেন অফস্পিনার নাহিদুল ইসলামের হাতে। অধিনায়কের মুখে হাসি ফোটাতে একটি বলও নষ্ট করেননি নাহিদুল। প্রথম বলেই হাওয়ায় ভাসিয়ে খেলেন জহুরুল। মিড অফ থেকে খানিক পেছনে দৌড়ে গিয়ে তার ক্যাচ তালুবন্দী করেন মোসাদ্দেক সৈকত।
আগের দুই ম্যাচে যথাক্রমে ৫৩ ও ৮০ রানের ইনিংস খেললেও ফাইনালে এসে ব্যর্থ হলেন জহুরুল। প্রথম বলেই ওপেনারকে হারানোর পরেও আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে পিছপা হননি জাকির হাসান। নাহিদুলের প্রথম ওভারে আসে ২ রান। শরীফুল ইসলামের করা পরের ওভারের চতুর্থ বলে কাট করে পয়েন্ট দিয়ে চার মারেন জাকির। শেষ বলে টপ এজে কিপারের মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা পেয়ে যান ইমরুল।
তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে লংঅন দিয়ে দৃষ্টিনন্দন এক ছক্কা হাঁকান জাকির। শুরুর চাপটা কাটিয়ে ওঠার আভাস দিতে থাকে খুলনা। কিন্তু সে ওভারেই চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টায় লংঅফে সৌম্য সরকারের হাতে ধরা পড়েন ইমরুল। আউট হওয়ার আগে ইমরুল করেন ৮ বলে ৮ রান। চমক হিসেবে চার নম্বরে নামানো হয় আরিফুল হককে।
খুলনার চাপ আরও বাড়তে পারত চতুর্থ ওভারে। প্রথমবারের মতো আক্রমণে আসা রাকিবুল হাসানের করা ওভারের চতুর্থ বলটি ছিল খানিক শর্ট পিচড, সপাটে পুল করেন জাকির, তবে জোর পাননি তেমন; অবশ্য কপাল ভাল ছিল তার, মিডউইকেটে ঝাপিয়েও বলটি তালুবন্দী করতে পারেননি চট্টগ্রাম অধিনায়ক মিঠুন। তখন ১১ রানে খেলছিলেন জাকির।
নাহিদুলের পরের ওভারে জোড়া বাউন্ডারি হাঁকিয়ে চট্টগ্রামের হতাশা বাড়ান এ বাঁহাতি ওপেনার। তবে বেশিদূর যেতে পারেননি তিনি। পাওয়ার প্লে'তে খুলনা করে ২ উইকেটে ৪২ রান। সপ্তম ওভারে ফের চট্টগ্রামকে আনন্দে ভাসান মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তার প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে ডিপ মিডউইকেটে মাহমুদুল হাসান জয়ের হাতে ক্যাচ তুলে দেন জাকির। তার ব্যাট থেকে আসে ৩ চার ও ১ ছয়ের ২০ বলে ২৫ রান।
দলীয় পঞ্চাশের আগেই ৩ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় খুলনা, যেতে পারত চতুর্থ উইকেটও। ইনিংসের অষ্টম ওভারের দ্বিতীয় বলে মাহমুদউল্লাহকে লেগ বিফোর আউট দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান খুলনা অধিনায়ক। পরে চতুর্থ উইকেটে রয়েসয়ে খেলতে শুরু করেন মাহমুদউল্লাহ ও আরিফুল। এরই মাঝে মোসাদ্দেকের করা ১১তম ওভারে পরপর দুই বলে ছয় ও চার মেরে রানরেট সাতে তোলেন মাহমুদউল্লাহ।
যখন চাপ কাটিয়ে বড় সংগ্রহের পথে এগুনোর দিকে মন দিচ্ছিল খুলনা, তখনই তারা হারায় আরিফুলের উইকেট। শরীফুলের বোলিংয়ে দুর্দান্ত এক স্ট্রেইট ড্রাইভে চার মারার পরের বলেই উইকেটের পেছনে লিটন দাসের দুর্দান্ত ক্যাচে সাজঘরের পথ ধরেন ২৩ বলে ২১ রান করা আরিফুল। তার বিদায়ে উইকেটে আসেন শুভাগত, মুখোমুখি পঞ্চম বলে হাঁকান ছক্কা। কিন্তু তিনিও পারেননি বেশিক্ষণ থাকতে। ইনিংসের ১৬তম ওভারে শুভাগত ফেরেন ১২ বলে ১৫ রান করে।
অন্যপ্রান্তে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ হয়ে যান নিঃসঙ্গ যোদ্ধা। এরই মাঝে নিজের মুখোমুখি প্রথম বলেই ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হন তরুণ শামীম পাটোয়ারি। শহীদুল ইসলামের আগে নামিয়ে দেয়া হয় মাশরাফিকে। তিনি এক চারের মারে ৫ রান করে আউট হয়ে যান। মাশরাফি ফিরে যাওয়ার পরের বলেই চার মারেন মাহমুদউল্লাহ, পৌঁছে যান ব্যক্তিগত পঞ্চাশে। মোস্তাফিজের করা ১৯তম ওভারটিতে আসে ৭ রান।
শেষ ওভারে বোলিংয়ে আনা হয় সৌম্য সরকারকে। প্রথম বল ডট গেলেও, পরের চার বলে যথাক্রমে ২, ৪, ৬ ও ৪ মেরে দেন মাহমুদউল্লাহ। শেষ বলেও চেষ্টা করেছিলেন বাউন্ডারির, আসে ১ রান। সবমিলিয়ে শেষ ওভারে ১৭ রান তুলে দলীয় সংগ্রহটা ৭ উইকেটে ১৫৫ রানে পৌঁছে দেন খুলনা অধিনায়ক। তিনি শেষপর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৮ চার ও ২ ছয়ের মারে ৪৮ বলে ৭০ রান করে।
বল হাতে চট্টগ্রামের পক্ষে ২টি করে উইকেট নেন নাহিদুল ইসলাম ও শরীফুল ইসলাম। এছাড়া মোসাদ্দেক ও মোস্তাফিজুর নেন ১টি করে উইকেট। সবমিলিয়ে টুর্নামেন্টের উইকেটসংখ্যা দাঁড়াল ২২।
এসএএস/আইএইচএস/জেআইএম