মাহমুদউল্লাহ না মিঠুন, কে হাসবে শেষ হাসি?
কে হবে চ্যাম্পিয়ন? গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম নাকি জেমকন খুলনা? মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ নাকি মোহাম্মদ মিঠুন, কে হাসবেন শেষ হাসি? কোয়ালিফায়ার-১ এর মত আবারো অভিজ্ঞতারই জয় হবে?
বয়সে ‘বড়’ মাশরাফি, জহুরুল, ইমরুল আর মাহমুদউল্লাহরাই আবার ম্যাচ নির্ধারণে ভূমিকা নেবেন? নাকি মোহাম্মদ মিঠুনের নেতৃত্বে কোয়ালিফায়ারে ‘বড়দের’ দুর্দান্ত নৈপুণ্যের কাছে হারের ব্যর্থতা ঝেড়ে-মুছে ফাইনালে ঘুরে দাঁড়াবেন লিটন, সৌম্য, মোসাদ্দেক, শামসুর রহমান শুভ আর মোস্তাফিজরা?
এ কৌতূহলী প্রশ্ন সামনে রেখেই ১৮ ডিসেম্বর বিকেলে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি আসরের দিবা রাত্রির ফাইনালে মুখোমুখি হবে চট্টগ্রাম ও খুলনা।
শেষ পর্যন্ত এক নম্বর দল হয়ে কোয়ালিফায়ার-১ জিতে সরাসরি ফাইনাল নিশ্চিত করতে না পারলেও পুরো টুর্নামেন্টে ব্যক্তিগত নৈপুণ্য এবং ব্যাটিং-বোলিং পারফরম্যান্সে মোহাম্মদ সালাউদ্দীনের শিষ্যদের প্রাধান্য ছিল একচেটিয়া।
পুরো আসরে রাউন্ড রবিন লিগের ফিরতি পর্বে বেক্সিমকো ঢাকার কাছে হার আর কোয়ালিফায়ারে খুলনার অভিজ্ঞতার কাছে পর্যুদস্ত হওয়া ছাড়া চট্টগ্রাম ছিল প্রায় দুর্দমনীয়।
লিটন দাস আর সৌম্য সরকারের জুটি পুরো টুর্নামেন্টে সবচেয়ে ভালো উদ্বোধনী জুটি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ১০ ম্যাচে চারবার লিটন আর সৌম্য প্রথম উইকেটে ৫০ রানের বেশি পার্টনারশিপ গড়ে তুলেছেন।
রাজশাহীর অধিনায়ক ও ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত এবং তরুণ আনিসুল ইসলাম ইমনের ১৩১ রানের (বরিশালের বিপক্ষে ফিরতি পর্বে) সবচেয়ে বড় পার্টনারশিপের পর প্রথম উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (রাজশাহীর বিপক্ষে ১২২) জুটিটিই লিটন ও সৌম্যর। এছাড়া তাদের দুজনার ঢাকার বিপক্ষে ৭৯, খুলনার বিপক্ষে ৭৩ আর রাজশাহীর বিপক্ষে ৬২ রানের বড় পার্টনারশিপও আছে।
সবচেয়ে বড় কথা লিটন দাস ৯ ম্যাচে ৩ হাফ সেঞ্চুরিতে ৩৭০ রান করে এখনো আসরের টপ স্কোরার। তার ওপেনিং পার্টনার সৌম্য সরকারও ২৮০ রান করে রান তোলায় ছয় নম্বরে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, সেখানে খুলনার কোনো ব্যাটসম্যান রান তোলায় শীর্ষ সাতেও নেই। অভিজ্ঞ জহুরুল ৯ ম্যাচে ২৫৪ রান করে জায়গা করে নিয়েছেন আট নম্বরে। একই ভাবে চট্টগ্রামের প্রধান স্ট্রাইক বোলার মোস্তাফিজুর রহমানও সর্বাধিক (৯ ম্যাচে ২১) উইকেট শিকারি।
একই দলের দ্রুতগতির বোলার শরিফুল (৯ ম্যাচে ১৪ উইকেট) আছেন চার নম্বরে। অন্যদিকে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির পাঁচ নম্বর জায়গাটি খুলনার সেরা বোলার তরুণ পেসার শহিদুল ইসলামের (৭ খেলায় ১৩ উইকেট)।
পরিসংখ্যান জানান দিচ্ছে, রাউন্ড রবিন লিগে খুলনা ও চট্টগ্রাম লড়াইয়ে দুবারই জিতেছিল চট্টগ্রাম। প্রথমবার ৯ উইকেটে ও ফিরতি পর্বে ৩ উইকেটের ব্যবধানে; কিন্তু নকআউট পর্বে এসে বদলে যায় সমীকরণ। আগের দুবার না পারা খুলনার বয়সে ‘বড়’ পাঁচ ক্রিকেটার জহুরুল ইসলাম অমি (৫১ বলে ৮০), অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (৯ বলে ৩০), ইমরুল (১২ বলে ২৫), সাকিব (১৫ বলে ২৮), মাশরাফি (৫/৩৫) ঠিক জায়গা মতো জ্বলে ওঠেন।
নকআউট পর্বে স্নায়ুযুদ্ধে বয়সে সিনিয়র ও তুলনামূলক অভিজ্ঞ পারফরমারদের নৈপুণ্যের দ্যুতির কাছে ম্লান হন ইনফর্ম লিটন-সৌম্য, মোসাদ্দেক আর মোস্তাফিজ-শরিফুলরা। ৪৭ রানের বড় জয়ে ফাইনালের টিকিট কনফার্ম করে রিয়াদের জেমকন খুলনা।
এখন ফাইনালেও কি তাই হবে? যদিও এবার আর সাকিব নেই। শ্বশুরের খবর শুনে ফাইনাল না খেলেই চলে গেছেন যুক্তরাষ্ট্র। এ আসরে আগের সব কটা ম্যাচ খেলেও হয়তো সাকিব নিজেকে খুঁজে পাননি, একবারের জন্য তার কাছ থেকে কোন ম্যাচ উইনিং পারফরম্যান্স পায়নি খুলনা। তারপরও ফাইনালে টি-টোয়েন্টির অন্যতম বিশ্বসেরা স্পেশালিস্ট সাকিবের অভাব নিশ্চয়ই অনুভব করবেন অধিনায়ক রিয়াদ।
দেখা যাক নকআউট পর্বে দ্বিতীয় সাক্ষাতে কি হয়? আবারো ‘বিগ ম্যাচে’ অভিজ্ঞ, প্রতিষ্ঠিত ও আর বড় তারকারাই ব্যবধান গড়ে দেবেন? নাকি আগেরবারের ব্যর্থতা ঝেড়ে মুছে এবার ঠিক জ্বলে উঠবেন লিটন-সৌম্য, মোস্তাফিজ-শরিফুলরা?
এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম