ঢাকাকে বিদায় করে ফাইনালে চট্টগ্রাম, প্রতিপক্ষ খুলনা
২২ দিনে ২৩ ম্যাচ খেলার পর অবশেষে জানা গেল, কোন দুই দল খেলবে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের ফাইনালে। আজ (মঙ্গলবার) দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে বেক্সিমকো ঢাকাকে ৭ উইকেটে হারিয়ে দ্বিতীয় দল হিসেবে ফাইনালের টিকিট পেয়েছে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম। সোমবার প্রথম কোয়ালিফায়ারে চট্টগ্রামকে হারিয়ে আগেই ফাইনালে চলে গেছে জেমকন খুলনা।
ফাইনালে ওঠার মিশনে আগে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১১৬ রানেই অলআউট হয়ে যায় ঢাকা। জবাবে মন্থর উইকেটে রান তুলতে বেগ পেতে হয়েছে চট্টগ্রামকেও। তবে ধৈর্য ধরে উইকেটে থেকে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে গেছেন লিটন দাস, মোহাম্মদ মিঠুনরা এনে দিয়েছেন ফাইনালের টিকিট। আগামী শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে লড়বে খুলনা ও চটগ্রাম।
রান তাড়া করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ৪৪ রান যোগ করেন সৌম্য সরকার ও লিটন দাস। ইনিংসের সপ্তম ওভারে আকবর আলীর দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে রানআউট হন সৌম্য। তার ব্যাট থেকে আসে ৫ চারের মারে ২৩ বলে ২৭ রান। এরপর ধীর জুটি গড়েন মিঠুন ও লিটন। রানের চাপ না থাকায় এতে সমস্যা হয়নি দলের।
তেড়েফুঁড়ে মেরে জেতার চেয়ে দেখেশুনে খেলে ম্যাচ শেষ করার দিকেই মনোযোগী ছিলেন মিঠুন ও লিটন। তবে দুজনের কেউই শেষ পর্যন্ত খেলতে পারেননি। লিটন ও মিঠুনের জুটিতে আসে ৬৪ বলে ৫৭ রান। দলীয় ১০১ রানের সময় লিটন আউট হন ৪৯ বলে ৪০ রান করে। ম্যাচ জিততে ৯ রান বাকি থাকা অবস্থায় মিঠুন ফেরেন ৩৫ বলে ৩৪ রান করে। বাকি কাজ সারেন শামসুর রহমান শুভ ও মোসাদ্দেক সৈকত। পাঁচ বল হাতে রেখেই ম্যাচ জিতে নেয় চট্টগ্রাম।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে চট্টগ্রামের বোলিং পরিকল্পনা এলোমেলো করে দিতে সাব্বির রহমানের সঙ্গে বাঁহাতি নাঈম শেখের বদলে চমক হিসেবে মুক্তার আলিকে ওপেনিংয়ে নামায় ঢাকা। তবে তাদের এই চমক কাজে লাগেনি।
দলের রান মাত্র ১৯ হতেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন দুই ওপেনার। তৃতীয় ওভারের পঞ্চম বলে সাব্বিরকে (১১ বলে ১১) সাজঘরে ফেরান শরিফুল ইসলাম। পরের ওভারের প্রথম বলে নাহিদুলের বলে আউট হন ৭ বলে ৭ রান করা মুক্তার।
তিন নম্বরে নেমে শুরু থেকেই রানের জন্য হাপিত্যেশ করতে থাকেন নাঈম। মোস্তাফিজুর রহমানকে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে প্রাথমিক চাপটা সরান, কিন্তু ডট বল খেলতে থাকেন একের পর এক। বাঁহাতি স্পিনার রাকিবুল হাসানকে ছক্কা মারার চেষ্টায় ডিপ মিড-উইকেটে ধরা পড়েন নাঈম, দুর্দান্ত ক্যাচ নেন নাদীফ চৌধুরী। আউট হওয়ার আগে ১৭ বলে ১২ রান করেন নাঈম। ইনিংসের ৮.২ ওভারে দলীয় ৫০ পূরণ হয় ঢাকার।
নাঈমের মতো অবস্থা হয় অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমেরও। একদিকে শেষ হচ্ছিল ওভার, সে তুলনায় বোর্ডে উঠছিল না রান। রানের গতি বাড়ানোর তাগিদে মোসাদ্দেক সৈকতের ওভারে স্লগ সুইপ খেলেন মুশফিক, কিন্তু সীমানাছাড়া হয়নি। ডিপ স্কয়ার লেগে ফ্রন্ট ডাইভ দিয়ে অসাধারণ ক্যাচ ধরেন রাকিবুল, শেষ হয় মুশফিকের ৩১ বলে ২৫ রানের ইনিংস।
মুশফিক-নাঈমের তুলনায় শুরু থেকেই সাবলীল ছিলেন ফর্মে থাকা ইয়াসির আলি রাব্বি। একটি করে চার ও ছয়ের মারে রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সফল হননি পুরোপুরি, ইনিংসের ১৬তম ওভারের প্রথম বলে তাকে ফেরান মোস্তাফিজ। ইয়াসিরের ব্যাট থেকে আসে ২১ বলে ২৪ রান। আগের ম্যাচগুলোতে ঝড়ো ক্যামিও উপহার দিলেও, আজ ৩ বলে ২ রান করে আউট হয়েছেন আকবর।
শেষদিকে চেষ্টা করেছিলেন আলআমিন জুনিয়র। মোসাদ্দেককে ছক্কা, মোস্তাফিজকে চার ও ছয় মেরে ইতিবাচক ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনীই করছিলেন তিনি। তাকে থামান মোস্তাফিজ।
দারুণ এক কাটারে সোজা বোল্ড হন ১৮ বলে ২৫ রান করা আলআমিন। পরের বলে নাসুম আহমেদের মিডল স্ট্যাম্প ভেঙে দেন মোস্তাফিজ। হ্যাটট্রিক বলে রুবেল হোসেনের আউটসাইড এজ হলেও সেকেন্ড স্লিপ দিয়ে চলে যায় বল, বঞ্চিত হন মোস্তাফিজ। শেষপর্যন্ত ঢাকার ইনিংস থামে ১১৬ রানে।
নিজের ৪ ওভারে ৩২ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন মোস্তাফিজ। চলতি আসরে সবমিলিয়ে ২১ উইকেট হলো তার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মুক্তারের চেয়ে ৫ উইকেট বেশি তার। এছাড়া শরিফুল ২, রাকিবুল, মোসাদ্দেক, সৌম্য ও নাহিদুল নিয়েছেন ১টি করে উইকেট।
এসএএস/এমএমআর/এমএস