দুই বছর আগে শচিনকে সেঞ্চুরি ‘উপহার’, পরে ‘ছিনতাই’
ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা আম্পায়ারদের তালিকা করলে তর্কযোগ্যভাবে এক নম্বরে রাখা যায় সাবেক অস্ট্রেলিয়ার আম্পায়ার সাইমন টফেলেকে। অন্তত ২০০৪ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত টানা পাঁচ বছরের আইসিসির বর্ষসেরা আম্পায়ার হওয়ার কীর্তি এ কথারই সাক্ষী দেয়। মাঠ ও মাঠের বাইরে অসাধারণ ব্যক্তিত্বের কারণেও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলেন টফেল।
ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই আম্পায়ারই দুই বছরের ব্যবধানে দুইটি ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছেন ভারতের ব্যাটিং ঈশ্বর শচিন টেন্ডুলকার উইকেটে থাকাকালীন। যার প্রথমটা সেঞ্চুরি উপহার দিয়েছিল মাস্টার ব্লাস্টারকে আর পরেরটিতে ছিনতাই হয়ে গেছে সম্ভাব্য একটি সেঞ্চুরি।
প্রথম ঘটনা ২০০৫ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দিল্লি টেস্টের। যেখানে টফেলের ভুল সিদ্ধান্তের কল্যাণে সেঞ্চুরি পেয়ে যান শচিন। পরেরটি দুই বছরের ব্যবধানে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ট্রেন্টব্রিজ টেস্ট। যেখানে সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে টফেলের ভুল সিদ্ধান্তে শচিন আউট হয়ে যান ৯১ রান করে।
প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় পর সে দুই ভুল সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আলোচনা করেছেন টফেল নিজেই। গৌরব কাপুরের সঙ্গে ইউটিউব শোতে সে দুই সিদ্ধান্তের আদ্যোপান্ত নিয়েই কথা বলেছেন টফেল। স্বীকার করেছেন নিজের ভুলের কথা এবং এসব সিদ্ধান্তের পর শচিনের সঙ্গে তার কথোপকথনের ব্যাপারেও।
২০০৭ সালের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে টফেলের ভাষ্য, ‘আমি তখন ভাবছিলাম, যেহেতু (শচিন) বল না খেলে ছেড়ে দিয়েছে তাই বেনেফিট অব ডাউট বোলারের পাওয়া উচিৎ। যে কারণে খানিক ভেবে আঙুল তুলে দেই। অবশ্যই এ সিদ্ধান্তে শচিন সন্তুষ্ট ছিল না। সাধারণত সে উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকে না কিন্তু সেদিন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েছিল এবং পরে চলে যায়। আমি দেখতে পাচ্ছিলাম, সে মোটেও সন্তুষ্ট নয়।’
‘পরে হকআইতে দেখা গেল বলটা স্ট্যাম্পে লাগত না। বরং এক ইঞ্চির জন্য অফ স্ট্যাম্পের বাইরে দিয়েই চলে যেত। আমি তখনই বুঝে যাই এর প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে। তাই আমি আর ক্রিকইনফো খুলিনি, কোনো খবরের কাগজও পড়িনি। আমি বুঝতে পারছিলাম, আগামী এক মাস মিডিয়াতে আমাকে তুলোধুনো করা হবে।’
‘তবে পরদিন সকালে নিয়মিত প্রাতঃভ্রমণের সময় শচিনের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় আমার। নিজ থেকে ওর কাছে যাই এবং বলি, দেখো গতকাল আমার সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল। আমি বুঝতে পারছি, ভুল হয়েছে। শচিন আমাকে বলল, দেখো সাইমন, আমি জানি তুমি ভালো আম্পায়ার এবং তেমন একটা ভুল হয় না তোমার। এটা নিয়ে চিন্তা করো না বেশি।’
‘শচিনের সঙ্গে এই কথাটা কিন্তু তার কাছে ক্ষমা চাওয়া বা তাকে ভালো অনুভব করানোর জন্য ছিল না। বরং এটা একটা বিবৃতি ছিল যে, ঐ ম্যাচে আমরা দুজনই নিজেদের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করছি। এটাই আসলে খেলা এবং আমি ওকে জানাতে চাচ্ছিলাম যে ওর মন খারাপের বিষয়টা আমি বুঝতে পেরেছি। একইসঙ্গে এ ভুল যেন আর না হয়, সে ব্যাপারেও বদ্ধ পরিকর ছিলাম।’
‘আমি কিন্তু সেবারই শচিনের ব্যাপারে ভুল সিদ্ধান্ত নেইনি। এর আগেও ভুল হয়েছে আমার। তবু আমাদের মধ্যে সবসময় শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। কেননা নিজেদের সামর্থ্য সম্পর্কে জানি আমরা। আমি এসব নজির থেকেই শিখেছি। আমাদের সম্পর্কের যে শ্রদ্ধাবোধ এবং বিশ্বাস- এটা সবসময় আমার মনে থাকবে।’
তখন নিজ থেকেই ২০০৫ সালের দিল্লি টেস্টের প্রসঙ্গ আনেন টফেল। যে ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ১০৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন শচিন। সেই ইনিংস খেলার পথে ২৪ ও ৩৮ রানের মাথায় লেগ বিফোরের জোরালো আবেদন থেকে বেঁচে যান তিনি। আম্পায়ার ছিলেন টফেল। তার মনে নেই কোন সিদ্ধান্তটা ভুল দিয়েছিলেন, তবে একটি যে ভুল ছিল তা ঠিকই স্বীকার করেছেন টফেল।
তিনি বলেছেন, ‘ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়ামে ভারত এবং শ্রীলঙ্কার মধ্যকার একটি ম্যাচ পরিচালনা করছিলাম। ইনিংসের শুরুতেই শচিনের পায়ে লাগে এবং আমি তাকে নটআউট দেই। পরে সে রেকর্ডগড়া সেঞ্চুরি করে ফেলে। কিন্তু কেউই সেই ম্যাচের ঘটনা মনে রাখেনি, এমনকি ইউটিউবেও নেই।’
‘সবাই বলে যে ট্রেন্টব্রিজে ৯১ রানে থাকতে শচিনের সেঞ্চুরি ছিনতাই করা হয়েছে। কিন্তু কখনও বলে না, আমি নটআউট দেয়ায় যে একবার সেঞ্চুরিও করতে পেরেছে। তখনকার শ্রীলঙ্কান কোচ টম মুডি ঐ সিদ্ধান্তের কারণে আমার ওপর বেশ নাখোশ হয়েছিল।’
এসএএস/পিআর