ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার গল্প শোনালেন সাবের হোসেন চৌধুরী

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশিত: ১০:০৪ এএম, ২৭ জুন ২০২০

কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের কিছু নেই। আজ থেকে দুই দশক আগে, ২০০০ সালের ২৬ জুন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের এক সোনালি দিন। ২০ বছর আগের সেই দিনেই ক্রিকেটে অভিজাত ফরম্যাটে পা রেখেছিল বাংলাদেশ, লাভ করেছিল টেস্ট মর্যাদা। বিশ্বের ১০ নম্বর টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে অভুদ্যয় ঘটেছিল বাংলাদেশের।

যা ছিল বাঙালির দীর্ঘ লালিত স্বপ্ন। কাজেই ২০০০ সালের ২৬ জুন ছিল স্বপ্নপূরনের দিন। মাঠের বাইরে এক কঠিন মিশনের সফল বাস্তবায়নের শুভক্ষণ। সেদিন যিনি ছিলেন বিসিবির সভাপতি, সেই ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ সাবের হোসেন চৌধুরীর জন্য সে দিন কতটা স্পেশাল ও স্মরণীয় ছিল?

শুক্রবার রাতে সেই টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার গল্প শুনিয়েছেন সাবের হোসেন চৌধুরী। ক্রীড়া সাংবাদিক নোমান মোহাম্মদের ইউটিউব লাইভ নট আউট নোমানে সে স্বপ্নপূরণের কাহিনী শুনিয়েছেন বিসিবির সাবেক ও সফল সভাপতি।

সাবের হোসেন চৌধুরীর ভাষায়, ‘সেটা ছিল এক স্বপ্নপূরণের দিন। অসাধারণ এক অন্যরকম দিন ছিল সেটা। আপনি যখন অনেকদিন ধরে কোন লক্ষ্য সামনে রেখে আগানোর চেষ্টা করেন, সেটা যেদিন পূরণ হয় সেদিন তো অন্যরকম এক বিশেষ দিন হয়ে যায়। ২৬ জুন ২০০০ সালের দিনটি আমার কাছে ঠিক তাই।’

তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেন, ঐ দিনটির অবস্থটা আসলে ছিল অনেকটা ফাইনাল পরীক্ষার মতো। তার ব্যাখ্যা, ‘কয়েক ঘন্টার মধ্যেই জেনে যাবেন আপনি যে প্রস্তুতি নিয়েছেন, সেগুলো আসলেই সাফল্যের মুখ দেখবে কি না? খুব স্বাভাবিকভাবেই তখন একটা মিশ্র অনুভুতি ছিল। সেখানে পাওয়ার প্রত্যাশা থাকায় তা নিয়ে টেনশন কাজ করেছে। আবার উত্তেজনাও ছিল যদি পেয়ে যাই তাহলে কী হবে?’

বিশ বছর আগে ২৬ জুন তারিখে বাংলাদেশ যে সভায় টেস্ট মর্যাদা পেয়েছিল, সেটা ছিল আসলে আইসিসি ‘অ্যানুয়াল কনফারেন্স।’ যেখানে আইসিসির পূর্ণাঙ্গ সদস দেশ, সকল সহযোগী সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তৎকালীন বিসিবির দক্ষ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল হকও ছিলেন বোর্ড প্রধান সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে।

সেই আইসিসি বার্ষিক কনফারেন্সের আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে এবং নিজের উদ্যোগে কী কী করেছেন, কোথায় যেতে হয়েছে, কী কী করতে হয়েছে?- তার বর্ণনা দিয়েছেন সাবের হোসেন চৌধুরী। পাশাপাশি আইসিসির যে কনফারেন্সে বিসিবির পক্ষ থেকে যে বিশেষ প্রেজেন্টেশন তুলে ধরা হয়, তা নিয়েও ধারণা দিয়েছেন।

এসব বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা আগেরদিন এবং সেদিন সকালেও ভাবছিলাম কীভাবে বিষয়টা তুলে ধরব, কীভাবে উত্থাপন করব? কেননা সেখানে কয়েকটা পর্ব থাকে। একটি হলো প্রেজেন্টেশন দিতে হয়, কেন আপনি এই আবেদনটা করলেন? সেই প্রেজেন্টেশনের পরে প্রশ্ন আসতে পারে এর যথার্থতা নিয়ে। সব মিলে একটা চাপ কাজ করেছে। আবার পাশাপাশি উত্তেজনাও ছিল। তবে আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। কারণ ঐ ধরনের আবেদনের আগে আমরা সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম।’

‘আমরা সব টেস্ট খেলুড়ে দেশের সঙ্গে নিজেরা গিয়ে কথা বলেছি। আমার মনে আছে, ওয়েলিংটন গিয়েছি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে কথা বলতে। দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েছি, অস্ট্রেলিয়া গিয়েছি। অস্ট্রেলিয়ার বোর্ড মিটিং হয় নর্দান টেরিটরিতে। তাদের বোর্ড ক্রিকেট দলের মতই চৌকশ ও পেশাদার। আইসিসির প্রতিটি সভার আগে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া নিজেদের মধ্যে সভা করে। সেখানে সম্ভাব্য সব বিষয় নিয়ে তারা বিশ্লেষণ করে।’

‘অস্ট্রেলিয়ার বোর্ডসভার সময় আমি গিয়েছি। যেহেতু বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার বিষয়টি ছিল আইসিসির পরের সভার অন্যতম আলোচিত ইস্যু, তাই ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সভাতেও ছিল সে ইস্যু। তারা আমাকে অনেক প্রশ্ন করেছে। তিন-চার ঘন্টা ধরে শুধু বাংলাদেশের ওপর নানান বিষয় জানতে চেয়েছে। আমি মনে করি, সেটা আমার জন্য একধরনের ওয়ার্মআপ ছিল। ঐ ধরনের পরিবেশে তো আগে ছিলাম না। এটা আমার জন্য খুব ভাল এক্সপেরিয়েন্স ছিল।’

‘আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার তিন দল ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সমর্থন তো ছিলই। জিম্বাবুয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলাম। কেননা জিম্বাবুয়ে ছিল আমাদের আগে সর্বশেষ টেস্ট মর্যাদা পাওয়া দেশ। ইংল্যান্ড অন্যরকম চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ ইংলিশরা সবসময়ই চাপা থাকে। নিজেদের মতামত খুব একটা খোলাসা করে না। তবে সব মিলে একটা কনফিডেন্স ছিল যে, আমাদের যা যা করার মোটামুটি তা করেছি। আসলে এর বেশি কিছু আর করারও ছিল না। তবুও সব শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসলে কিছুই শেষ হয় না। তাই একটা অন্যরকম টেনশন ও উত্তেজনা ছিল।’

যখন শেষটা হলো, সর্বসম্মতিক্রমে যখন বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়ে গেল তখন কেমন মনে হয়েছিল? সাবের চৌধুরী জানান, আগে-পরে যতরকম দৌড়াদৌড়ি, ছুটোছুটি ও নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠার লড়াই-সংগ্রাম করা হোক না কেন, আসল ছিল ঐ আইসিসির কনফারেন্সের টেস্টখেলুড়ে ৯ দেশের অন্তত ৭টির সমর্থন আদায় করে নেয়া। কারণ ঐ কনফারেন্সের একপর্যায়ে টেস্টখেলুড়ে দেশের মধ্যে ভোটাভুটি হয়, কারা পক্ষে ও বিপক্ষে তা নিরুপণের জন্য। সেখানে ৭ দেশের ভোটের জন্য আগে থেকেই প্রাণপন চেষ্টা চালিয়েছেন সাবের হোসেন চৌধুরী।

এর বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আইসিসির ঐ বার্ষিক সভায় সহযোগি সদস্যদের কাছ থেকে শোনা হয়, তাদের মতামত নেয়া হয়। তবে তাদের কোন ভোটাধিকার থাকে না। সুতরাং আমাদের টার্গেট ছিল অন্তত ৭টি টেস্ট দল যেন আমাদের পক্ষে থাকে। নয় জনের মধ্যে যদি ৭ জন আমাদের ভোট দেয় তাহলে হয়ে যাবে। আমরা ঐ সাত সংখ্যা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। কখন আমরা সাতে যাব। আমার মনে হয় সাতে যাওয়ার পর ধারাবাহিকভাবে ছিল ইংল্যান্ড আর নিউজিল্যান্ড। তারাও বললো, হ্যাঁ! আমরা এটাকে সমর্থন করি। তখন এটা সর্বসম্মতিক্রমে হয়ে গেল। কারও কোন আপত্তি ছিল না। অসাধারণ অনুভুতি ছিল তখন।’

‘এই পর্ব শেষ হলো। তখন মনে হলো ভবিষ্যতের যাত্রা শুরু করব। মানে এটা নিয়ে সারা দেশে ছিল অন্যরকম উত্তেজনা। এমনকি ইংল্যান্ডে অবস্থানরত প্রবাসী বাঙালিদের অনেকে সেদিন প্রবল আগ্রহে লর্ডসে ছুটে গিয়েছিলেন কী হয় জানতে? তখন তো আর এখনকার মত এত বেশি টিভি চ্যানেল ছিল না। অনেক দিনের অপেক্ষা, আজকে হবে কি হবে না? একটা অসাধারণ অনুভূতি। সেটা একটা লক্ষ্যপূরণের ক্ষণ।’

‘আমরা ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি বিজয়ের পর বলেছিলাম তিন বছরের মধ্যে টেস্ট স্ট্যাটাস চাই। আমার সব সময় টার্গেট বা গোল সেট করা ছিল। আমরা নিজেদের একটা গোল সেট করেছিলাম। তবে এটা যে তিন বছরের মধ্যেই হয়ে যাবে, সেটা এখন মনে হয় আসলেই কি আমাদের এত দুঃসাহস ছিল? তারপর তো হয়েই গেছে। বাকিটা ইতিহাস।’

এআরবি/এসএএস/এমএস