বিসিবির তড়িঘড়ি অনুশীলন ভাবনার পেছনের কারণ কী?
করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা কমেনি একটুও, বরং বেড়েছে। করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। মৃত্যুর সংখ্যাও আগের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি। এরকম সংকটে সবাই তটস্ত। সবধরনের বিনোদনমূলক কার্যক্রম বিশেষ করে ঘরোয়া খেলাধুলা বন্ধ। কিন্তু এরকম সংকট ও উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতেও হঠাৎ করেই জাতীয় ক্রিকেট দলের অনুশীলনের চিন্তা ভাবনার খবর শোনা যাচ্ছে।
যদিও যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলে দিয়েছেন, সরকার সতর্ক। জুনে ঘরোয়া খেলাধুলা শুরুর কোন চিন্তা নেই সরকারের। করোনার এ ভয়াবহতায় চলতি মাসে দেশের খেলাধুলা (অনুশীলনও অবশ্যই এর অন্তর্ভুক্ত) চালুর কোন সম্ভাবনা নেই। ক্রীড়ামন্ত্রীর কথায় আভাস জুলাইতে হতে পারে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত।
ওদিকে বিসিবি প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর মুখেও প্রায় একই কথা। তিনিও দুদিন আগে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, এখন করোনার যে ভয়াবহ রুপ, তাতে কোন ধরনের ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ড আয়োজন, জাতীয় দলের (হোক তা সংস্পর্শবিহীন) অনুশীলন কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব না।
নান্নু আরও জানান, পরিস্থিতির উন্নতি হলে এবং সরকারের অনুমতি মিললেই কেবল অনুশীলন শুরু হবে। যেখানে অনুশীলন চলবে দুই ভাগে। প্রথম তিন সপ্তাহ ধরে হবে ফিজিক্যাল ট্রেনিং। ক্রিকেটাররা করোনাকালীন সময় বাসায় অবশ্যই ফিটনেস ট্রেনিং করেছেন। তারপরও সত্যিকার ফিটনেস ট্রেনিং করার সুযোগ ছিল না। তাই তাদের ফিটনেস লেভেল ঠিক করতে ২১ দিন টানা জিম ও ফিটনেস ট্রেনিং করানো হবে। তারপর দুই সপ্তাহর স্কিল ট্রেনিং চলবে।
প্রশ্ন হলো, করোনায় অন্য সবকিছুর মত দেশের ক্রিকেটের একমাত্র ৫০ ওভারের আসর প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ বন্ধ। যে আসর শুধু একটি ক্রিকেট লিগই নয়, অন্তত শতাধিক ক্রিকেটারের রুটি রুজির উৎস- সেই আসরের খবর নেই, কিন্তু জাতীয় দলের অনুশীলন নিয়ে সবাই ব্যস্ত। আইসিসির প্রেসক্রিপশন মেনে বোর্ডের প্রধান চিকিৎসক দেবাশিষ চৌধুরীও ছক কষে দিয়েছেন, কীভাবে একজন আরেকজনের শারীরিক সংস্পর্শে না এসেও ট্রেনিং করতে পারবেন।
এসব দেখে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগছে, হঠাৎ জাতীয় দলের অনুশীলন নিয়ে বিসিবির কেন এ তৎপরতা? কেউ সরাসরি মুখ ফুটে জবাব না দিলেও ভেতরের খবর, আসলে বিসিবি শ্রীলঙ্কা সফরের কথা ভাবছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে তিন ম্যাচের আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে শ্রীলঙ্কা যাওয়ার কথা আছে বাংলাদেশের। এখন পর্যন্ত সে সিরিজ বাতিল হয়নি।
লঙ্কান বোর্ড কায়মনে চাচ্ছে জুনের শেষদিকে ভারত আর জুলাইয়ের শেষদিকে বাংলাদেশ তাদের দেশে খেলতে যাক। লঙ্কান বোর্ড থেকে বারবার ঐ দুই সিরিজ আয়োজনের সবরকম আশ্বাস দেয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, ভারত ও বাংলাদেশের তুলনায় শ্রীলঙ্কায় করোনা সংক্রমণ অনেক কম। তাই লঙ্কান বোর্ড এ দুই সিরিজ আয়োজনে তৎপর।
একইসঙ্গে এটাও নিশ্চিত যে, বিসিবি ভেতরে ভেতরে সেই আইসিসি ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেয়া মানে শ্রীলঙ্কা সফরের কথাই ভাবছে। তাই করোনা সংক্রমণ বাড়ার পরও ছক কষে জাতীয় দলের অনুশীলন শুরুর চিন্তা ভাবনা।
তার প্রমাণ মিলেছে প্রধান নির্বাচকের কথায়ও। তিনি ৪৮ ঘন্টা আগে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে জানিয়েছেন, এখন করোনার কারণে অনুশীলন শুরু করা সম্ভব না। তবে তারা মোট ৫ সপ্তাহের প্রস্তুতি ক্যাম্প পরিচালনার চিন্তায় আছেন। আপাতত শুরু করা না গেলেও আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে প্র্যাকটিস শুরুর কথা বেশ জোর দিয়েই বলেছেন নান্নু।
দিনক্ষণ গুনে হিসেব করুন, জুনে সম্ভব না হলেও জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকেও যদি অনুশীলন শুরু করা যায়, তাহলে ৫ সপ্তাহ ট্রেনিং করে জুলাইয়ের মাঝামাঝি শ্রীলঙ্কা যাবার লক্ষ্যেই অমনটা ভাবা হচ্ছে।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসির উদ্যোগ। টেস্ট খেলিয়ে দেশ হিসেবে তাতে অংশগ্রহণের বাধ্যবাধকতাও আছে। তাই বলে করোনার ভয়বাহতার ভেতরে ক্রিকেটারদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খেলতে যেতে হবে?
শ্রীলঙ্কায় করোনার প্রকোপ কম বলেই লঙ্কান বোর্ড অতি উৎসাহি। কিন্তু বাংলাদেশকে নিজ দেশের অবস্থা খুঁটিয়ে দেখতে হবে সবার আগে। অবশ্য সে সফরে বিসিবির চিন্তাভাবনাই শেষ কথা নয়। সরকারের সর্বোচ্চ মহলের সবুজ সংকেত ছাড়া সফর হবে না। করোনার এখন যে অবস্থা, তা বাড়লে তো প্রশ্নই আসে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় দলের অনুশীলন শুরুর সম্ভাবনাও খুব কম। তখন সফর বাতিল না হলেও পিছিয়ে যাবে অবশ্যই।
এআরবি/এসএএস/এমএস