ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

মাশরাফির ভুতের ভয়ে কেঁদেই দিয়েছিলেন সুমন-জাভেদরা!

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশিত: ০৭:০৫ পিএম, ২৮ মে ২০২০

আজকের অতি জনপ্রিয় ও সফল ক্রিকেটার ও আদর্শ অধিনায়ক মাশরাফি কিন্তু এক সময় যথেষ্ঠ দুষ্টুমিও করতেন। দুষ্টুমি করে সহযোগি ক্রিকেটারদের ভয় দেখানোর মত কাজও করতেন অবলীলায়।

শুনে অবাক হবেন, মাশরাফির দুষ্টুমিতে ভয়ে কুঁকড়ে গিয়েছিলেন হাবিবুল বাশার সুমন আর জাভেদ ওমর বেলিমের মত সিনিয়র ক্রিকেটাররাও। সমবয়সি মোহাম্মদ আশরাফুল, নাফিস ইকবাল, শরীফ আহমেদ ও আফতাব আহমেদরাও মাশরাফির দেখানো ভয়ে আঁতকে উঠতেন।

গতকাল বুধবার রাতে ক্রীড়া সাংবাদিক নোমান মোহাম্মদের ইউটিউব লাইভে এসে নিজের খেলোয়াড়ি জীবনের অনেক বিষয় নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সহযোগি ক্রিকেটারদের ভুত-প্রেতের ভয় দেখানোর গল্পও শোনালেন মাশরাফি।

তার ভুতের অভিনয় দেখে কিভাবে সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন এবং সিনিয়র ক্রিকেটার জাভেদ ওমর বেলিম ভয় পেয়ে কেঁদে-কেটে একাকার হয়ে গিয়েছিলেন- সে গল্প শুনিয়েছেন সদ্য সাবেক হওয়া বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক।

সে গল্প করতে গিয়ে মাশরাফি জানান, সেটা ছিল ২০০৫ সালের কথা। বাংলাদেশ দল গিয়েছিল ইংল্যান্ড সফরে। সেখানে ডারহামের এক হোটেলে ভুত-প্রেতের আনাগোনার গল্প শোনা যেত আগে থেকেই। সেটাকে পুঁজি করে মাশরাফির মাথায় চেপেছিল দুষ্টু বুদ্ধি। তিনি চিন্তা করলেন, আমি ভুত সেজে অন্যদের ভয় দেখাবো। যেমন ভাবা তেমন কাজ।

টেস্ট ম্যাচের আগের কথা। প্রয়াত ক্রিকেটার ও মাশরাফির খুব কাছের বন্ধু মানজারুল ইসলাম রানার গলাটা ছিল ভিন্ন রকমের। সেটাকে রেকর্ড করে দুই সিনিয়র হাবিবুল বাশার সুমন ও জাভেদ ওমর বেলিমকে ভুতের ভয় দেখিয়েছিলেন মাশরাফি। তারা দুজন ভয়ে তটস্থ হয়ে রীতিমত কেঁদে দিয়েছিলেন।

সে গল্প করতে গিয়ে মাশরাফি জানান, মানজার রানার গলাটা ছিল ভাঙ্গা ভাঙ্গা। ঠিক পুরুষদের মত ছিল না। ওর একটি মোবাইল ছিল, যা দিয়ে রেকর্ডিং করা যেত। এখন যেমন সব মোবাইলেই ওই রেকর্ডিং অপশন আছে, তখন তা ছিল না। তবে মানজার রানার মোবাইলে রেকর্ড করা যেত দেখে আমি তার কন্ঠের কান্নার রেকর্ড করে ফেলি। ওই রেকর্ড শুনে মনে হতো যেন কোন মেয়ে কাঁদছে।

হোটেলে একটি ভয়ের গল্প প্রচলিত ছিল। ওই হোটেলটি ছিল এক ধনাঢ্য ব্যক্তির। ওই বিত্তবান তার এক পরিচারিকাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। নানা ঘটনায় ওই পরিচারিকা ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করে। প্রায় রাতেই নাকি সেই হোটেলে তার বিলাফ শোনা যেত।

এটা হচ্ছে তাদের কথা; কিন্তু আমাকে তো আর ওই ভুতের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমি এসেছি নড়াইল থেকে। নানা ভুত-প্রেতের গল্প শুনেই আমার বেড়ে ওঠা। আমি করছি কি আফতাব, নাফিস ইকবাল, রাজিন সালেহসহ আরও একজন একসাথে ঘুমাবে। আমার ঘরের জানালার কোন গ্রিল নেই। শুধু কাঁচ দেয়া। আমি ওদের ভয় দেখাতে ওই জানালা কিছুটা খুলে পর্দা টেনে দিয়ে বললাম আমি একটু পরে আসছি।

আর রাত বারোটার কিছুক্ষণ পরে একটি সাদা চাদর নিয়ে ওই জানালাটা আরও খুলে ওই রেকির্ডংটা ওপেন করে কান্নার আওয়াজ ছেড়ে দিয়ে চাদরটা সারা শরীরে চড়িয়ে দু’হাত ওপরে তুলে শুধু চোখ দুটি বের করে রেখেছি। আর তা দেখে ও কান্নার আওয়াজ শুনে সবাই তো ভয়ে শেষ।
‘ওমা গো, ওমা ... বলে চিৎকার। চেঁচামেচি শুরু করে দেয় তারা। সবাই এক দৌড়ে আমার রুম থেকে বেরিয়ে সোজা রিসিপশনে গিয়ে হাজির। বলে আমাদের রুমের বাইরে ভুত। কান্নাকাটি করছে।

রিসিপশন থেকে লোকজন গিয়ে খুঁজে দেখলো; কিন্তু কিছুই দেখলো না। আমি ততক্ষণে সোজা রুমের কাছে। আমাকে দেখে সবাই বলে, এই মাশরাফি এটা কি তুই করেছিস? আমি বললাম না আমি কেন করবো? ওরা বলে, জানিস কি হয়েছে? এ কথা বলে, সব খুলে বলতে শুরু করলো আমার কাছে।

এরপর গেলাম দোতলায়। সেখানে জাভেদ ভাই (জাভেদ ওমর বেলিম) আর সুমন ভাই (হাবিবুল বাশার সুমন)-এর রুম পাশাপাশি। তাদের সাথে ওই ট্যুরে ভাবিরাও ছিলেন।

আমি তাদের রুমের ঠিক বাইরে থেকে দরোজায় নক করেছি আর সেই নারী কন্ঠের কান্নার রেকর্ড বাজাতে শুরু করি। শুনে তো ভয়ে সুমন ভাইয়ের বউও কাঁদতে শুরু করেন। জাভেদ ভাইয়ের বউও কান্না জুড়ে দেন ভয়ে। জাভেদ ভাই একবার ভাবছেন, এটা আমি মানে মাশরাফি করছে। কিন্তু আবার ভয়ও পাচ্ছেন। ডরে-ভয়ে দরোজা খুলে বাইরে আসার সাহসও পাচ্ছেন না। শুধু মুখে বলছেন, দেখ মাশরাফি তুই এটা করিস না। তোর ভাবি প্রচন্ড ভয় পাচ্ছে। সে ভিতরে শুয়ে থেকেই বলছেন, মাশরাফি তুই এটা করিস না।

আর সুমন ভাইতো ভিতু লোক। সে রিসিপশনে ফোন দিয়ে বলেছে, প্লিজ দেখো তো আমার রুমের বাইরে থেকে কে যেন নক করছে আর নারী কন্ঠের কান্নার শব্দ পাচ্ছি। রিসিপশন থেকে লোকজন আসার আগেই আমি আরেক ক্রিকেটারের রুমে ঢুকে গেছি। আমাকে আর পায় কি করে?

রিসিপশনের লোকজন এসে সুমন ভাইকে বলে, স্যরি কেউ তো নেই। এক পর্যায়ে আমি ওই সাদা চাদর- যেটা দেখতে অনেকটা কাফনের কাপড়ের মত, তা শরীরে পেঁচিয়ে তার দরোজার বাইরে এসে আবার সেই কান্নার রেকর্ড বাজাই। এবার সুমন ভাই কাঁদো কাঁদো গলায় দরোজা খুলে বেরিয়ে এসে আমাকে লাথি মারতে থাকে। লাথি মেরেই দরজা বন্ধ করে সোজা বিছানায়।’

‘ওই ঘটনার পর দিন সকালে আমি আর নাস্তার টেবিলে যাইনি। সবার খাওয়া শেষে আমি নাস্তার টেবিলে গেছি।’

এআরবি/আইএইচএস