ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

এক টাকাও দেয়নি চার ক্লাব, চরম অর্থকষ্টে ক্রিকেটাররা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশিত: ০৭:৪৬ পিএম, ০২ মে ২০২০

আগে বহুবার বলা হয়েছে, ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের একমাত্র ৫০ ওভারের আসর প্রিমিয়ার লিগই দেশের অন্তত ১০০ থেকে সোয়াশো ক্রিকেটারের ‘রুটি রুজির’ মূল ও একমাত্র উৎস। এই লিগ খেলে যে পারিশ্রমিক পান সেটাই তাদের সারা বছরের আয় এবং তা দিয়েই তাদের নিজ পরিবারের ভরন-পোষণের ব্যবস্থা হয়।

এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে প্রিমিয়ার লিগ শুরুর পর এক ম্যাচ হয়েই বন্ধ হয়ে গেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই ক্রিকেটারদের হাত টানাটানি। শতাধিক ক্রিকেটার এখন পড়ে গেছেন চরম অর্থকষ্টে।

যদিও বিসিবি এরমধ্যে ৯৬ ক্রিকেটারকে এককালিন ৩০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দিয়েছে; কিন্তু প্রিমিয়ার লিগ খেলেতো এর চেয়ে অনেক বড় অংকের টাকা মেলে ক্রিকেটারদের।

প্রিমিয়ার লিগ ঠিকমত চললে এতদিনের সুপার লিগে গড়াতো, তাতে করে ক্রিকেটাররা গড়ে ৬০ থেকে ৭৫ ভাগ পারিশ্রমিকও পেয়ে যেতেন।

কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই মেলেনি। কিছু ক্রিকেটার অবশ্য দল বদলের আগে ২৫ থেকে ৩০ ভাগ অগ্রিম পারিশ্রমিক পেয়েছেন। যদিও বড় একটি অংশ কোন টাকাই পায়নি।

সব ক্লাবের পেমেন্ট সিস্টেমও সমান ছিল না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোট ১২ ক্লাবের মধ্যে ৪ থেকে ৫ ক্লাব সে অর্থে কোন অগ্রিম পেমেন্টই করেনি। যে কারণে ওই দলগুলোর ক্রিকেটাররা এখন পর্যন্ত একট টাকাও পাননি।

৬ থেকে ৭ টি ক্লাব দলবদল শুরুর আগে নিয়মমেনে অগ্রিম পেমেন্ট দিয়েছে। সে তালিকায় আবাহনী, প্রাইম ব্যাংক, প্রাইম দোলেশ্বর, গাজী গ্রুপ, মোহামেডান ও খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সংঘ আছে। এ ৬টি ক্লাব দল বদলের আগে নিয়ম মেনে গড়-পড়তা ২০ থেকে ৩০ ভাগ অগ্রিম পেমেন্ট দিয়ে দিয়েছে।

কারো কারো ক্ষেত্রে ওই অগ্রিম অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ ৪০ শতাংশেরও বেশি। ওই দলগুলোর বাইরে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ নতুন দলে আসা ক্রিকেটারদের অগ্রিম পারিশ্রমিক দিয়েছে; কিন্তু যারা দলে থেকে গেছেন, তাদের কোনোই পেমেন্ট দেয়নি।

ক্রিকেটারদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে ব্রাদার্স ইউনিয়ন, শেখ জামাল, শাইনপুকুর আর ওল্ডডিওএইচএস- এই চার দলের ক্রিকেটাররা এখন পর্যন্ত কিছুই পাননি।

ব্রাদার্সের ক্রিকেটারদের মধ্যে একমাত্র জুনায়েদ সিদ্দিকীকে তার মোট পারিশ্রমিকের তিন ভাগের একভাগ অগ্রিম দেয়া হয়েছে। বাকিরা এক টাকাও পাননি। একইভাবে শেখ জামালের ক্রিকেটারদের হাতেও এখন পর্যন্ত একটি টাকাও ওঠেনি।

পেমেন্ট না পাওয়া নিয়ে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে ব্রাদার্সের সিনিয়র ক্রিকেটার তুষার ইমরান জানান, ‘আমার জানামতে, আমরা যারা রেজিস্টার্ড ক্রিকেটার আছি, তাদের মধ্যে শুধু দলবদলের আগে জুনায়েদ সিদ্দিকী একটা পেমেন্ট পেয়েছেন। এছাড়া আর কাউকে একটি টাকাও দেয়া হয়নি।’

একই কথা বলেন শেখ জামাল ধানমন্ডির অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানও। আজ বিকেলে জাগো নিউজকে সোহান জানিয়েছেন, ‘আমরা একজন ক্রিকেটারও এখন পর্যন্ত একটি পয়সাও পাইনি। বলা হয়েছিল, লিগ শুরুর পর এক পার্ট পেমেন্ট দেয়া হবে; কিন্তু এক ম্যাচে হয়ে লিগ বন্ধ হবার পর আর কোন টাকা পয়সা পাইনি। তবে আমাদের অফিসিয়ালসরা জানিয়েছেন, লিগ আবার শুরু হলেই আমাদের পারিশ্রমিকের একটা অংশ দিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু লিগ কবে শুরু হবে কে জানে! এদিকে সামনে ঈদ। আমি একা নই, ক্রিকেটারদের হাত একদমই খালি। কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না।’

প্রসঙ্গতঃ প্লেয়ার্স বাই চয়েজ থেকে এবার আবার পুরোন ফর্মুলায় ফিরে গিয়ে দল বদল হয়েছিল। সেখানে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক প্রদানের একটি অলিখিত নিয়ম বেধে দেয়া হয়েছিল। দলবদল শুরুর আগে বা সঙ্গেসঙ্গেই ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিকের অন্তত তিন ভাগের এক ভাগ দিয়ে দেয়ার কথা পরিষ্কার বলা ছিল। আর লিগের মাঝামাঝি আরও একভাগ, আর লিগ শেষ হওয়ার পরপরই বাকি একভাগ পারিশ্রমিক দিতে বলা হয়েছে।

১২ ক্লাবের মধ্যে ৬/৭ টি ক্লাব তা মেনে তিন ভাগের এক ভাগ না হলেও গড়ে চার ভাগের এক ভাগ কিংবা ৩০ ভাগ পারিশ্রমিক অগ্রিম দিয়েছে। কিন্তু শেখ জামাল, ব্রাদার্স, ওল্ডডিওএইচএস আর শাইনপুকুর কোন অগ্রিম পেমেন্ট দেয়নি। ওই ক্লাবের ক্রিকেটারদের সাথে কথা বলা জানা গেছে, কর্মকর্তারা বলছেন- ‘লিগ বন্ধ, তাই পেমেন্ট হচ্ছে না। লিগ আবার শুরু হলেও টাকা দিয়ে দেয়া হবে।’

এদিকে করোনায় আচ্ছন্ন চারপাশ। সব কিছু বন্ধ। ফলে লিগ কবে শুরু হবে, কিংবা এ বছর আদৌ হবে কি না? তা নিয়েও রাজ্যের সংশয়। তাতেই তুষার ইমরান আর নুরুল হাসান সোহানের মত প্রায় শ’খানেক ক্রিকেটার ভুগছেন চরম অর্থকষ্টে।

তাদের মনে রাজ্যের হতাশা। তুষার ইমরান তো আফসোস নিয়ে বলেই ফেলেছেন, ‘যদি লিগ শুরুর পর একটি টাকাও হাতে না পাই, আর এই যদি হয় ওপেন দলবদলের নমুনা, তাহলে তো প্লেয়ার্স বাই চয়েজই ভাল ছিল।’

একটি পয়সা না পাওয়া ক্রিকেটারদের সবার জিজ্ঞাসা, ‘লিগ কবে শুরু হবে, কিংবা আদৌ হবে কি না, তার নিশ্চয়তা নেই। তাহলে আমাদের কি হবে? আমরাতো লিগ শুরুর প্রহর গুনছি।’

এদিকে সামনে ঈদ, ক্রিকেটাররা তাকিয়ে বোর্ডের দিকে। তাদের আশা, সিসিডিএম আর বিসিবি মিলে ঈদের আগে ক্রিকেটারদের একটা আংশিক পেমেন্টের ব্যবস্থা করলে অন্তত ঈদটা করা যেত।

এআরবি/আইএইচএস