সেই ঝড়ো সেঞ্চুরির কথা কখনও ভুলবেন না আশরাফুল
ঘরোয়া ক্রিকেটে অংশ নিচ্ছেন দেড়যুগেরও বেশি সময় ধরে। চলতি শতকের একদম শুরু থেকে। বলার অপেক্ষা রাখে না, তার ক্যারিয়ারের বড় অংশে ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট লিস্ট ‘এ’র মর্যাদা পায়নি। তখনও ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে ছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। সে সময়েও খেলেছেন বেশ কিছু উপভোগ্য চিত্তকর্ষক ইনিংস।
ঢাকা লিগ লিস্ট ‘এ’র মর্যাদা পাওয়ার আগে তার অন্তত ৫-৬ টি সেঞ্চুরি রয়েছে। সেগুলো ধরলে প্রিমিয়ার লিগ, জাতীয় লিগ, বিসিএল, বিপিএলসহ ঘরোয়া ক্রিকেটে আশরাফুলের শতরান ৩২ থেকে ৩৫টি। এর মধ্যে কোন ইনিংসটি বেশি প্রিয় তার? ঘরের ক্রিকেটে এমন কোন ইনিংস কি আছে, যার স্মৃতি এখনও সতেজ?
জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে মোহাম্মদ আশরাফুল জানিয়েছেন, ‘হ্যাঁ! একটি ইনিংস আছে যার কথা আমি কখনও ভুলব না। ঐ ইনিংসটি আমার অনেক প্রিয়। বলতে পারেন সবচেয়ে বেশি প্রিয়। চোখ বন্ধ করলেই সে ইনিংসের প্রতিটি মুহূর্ত চোখের সামনে ভেসে ওঠে। দেশের ক্রিকেটে আমার সে অতি প্রিয় ইনিংসটি আজ থেকে এক যুগেরও বেশি সময় আগে; সোনারগাঁও ক্রিকেটারসের হয়ে মোহামেডানের বিপক্ষে একটি সেঞ্চুরি করেছিলাম।’
‘সেটি ২০০৬ সালের ঘটনা। সেবার ঢাকার প্রিমিয়ার ক্রিকেটে প্রথম প্রিমিয়ার টি-টোয়েন্টি লিগ হয়েছিল। সেই আসরে আমার একটি সেঞ্চুরি আছে। সে শতরানের ইনিংসটিই ঘরোয়া ক্রিকেটে আমার সবচেয়ে প্রিয়। এখনও চোখে ভাসে সে ম্যাচের স্মৃতি। খেলা হয়েছিল ধানমন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। খোলা মাঠ ছিল দর্শকে ঠাসা। পুরো মাঠ জুড়ে ছিল দর্শক।’
‘বাঁহাতি ওপেনার জুনায়েদ সিদ্দিকীর সেঞ্চুরিতে মোহামেডান ঐ ম্যাচে ২২৬ রানের বিশাল পুঁজি গড়ে বসে। আমি যখন ব্যাটিংয়ে নামছিলাম, তখন দেখি অন্তত হাজারখানেক দর্শক নেই। আমাদের শুরুতে তিন উইকেটের পতন দেখে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, একতরফা ম্যাচ হবে। এই ভেবে প্রায় হাজারখানেক দর্শক চলে গেছেন। বিশ্বাস করুন, আমি ব্যাটিংয়ে নামার আগে ড্রেসিংরুমে বসে সতীর্থদের বলছিলাম, যারা চলে গেছেন, তারা নিজেরাই জানে না কী কি মিস করল? কাল তারা আক্ষেপ-অনুশোচনায় ভুগবে।’
‘পরে আমি ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথমেই শান্ত ভাইয়ের (পেসার হাসিবুল হোসেন শান্ত) এক ওভারে নিলাম ২৭। তারপর অফস্পিনার আলী আরমান রাজনের ওপরে চড়াও হয়ে আবার ২৭ রান তুলে নিলাম। মানে ২ ওভার থেকেই আসলো ৫৪ রান। আমার সঙ্গে মার্শাল আইয়্যুব ব্যাট করছিল। তাকে বলেছিলাম, একটুও চিন্তা করবি না, উইকেট ভাল। অমাদের ওভার পিছু ১০-১১ লাগে। এই রান করা ব্যাপার না। তুই খালি সাপোর্ট দিয়ে যা। যা করার আমিই করব। করছিলামও, ইচ্ছেমত খেলেছি। যাকে যেখান দিয়ে মারতে চেয়েছি, সেটাই হয়েছে।’
‘আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে আগে কখনও টি-টোয়েন্টির আসর বসেনি। সেই আসরের এক ম্যাচে ২২৭ রানের টার্গেট যে তখন অনেক বড়, খুব কঠিন। কিন্তু বিশ্বাস করেন, আমি সেই কঠিন কাজটিও অবলীলা করে ফেলছিলাম প্রায়। আমরা সেই লক্ষ্যের দিকেই আগাচ্ছিলাম। খুব মনে আছে, এমন কোন ওভার ছিল না, যেখানে আমার ব্যাট থেকে একটি বাউন্ডারি আসেনি। আমি একদম লক্ষ্যের খুব কাছেই ছিলাম। পরে আমি আউট হয়ে যাই। তারপর খুব কাছে গিয়েও আর পারিনি। তবে লড়াই হয়েছিল সমানে সমান। যে কেউ জিততে পারত। সেই ইনিংসটির কথা এখনও মাঝেমাঝে মনে হয়। অজান্তেই নিজের কাছে ভাল লাগে। মনে হয় কী দারুণ সব শট খেলেছি সেদিন।’
‘সঠিক মনে নেই, তবে যতদূর মনে পড়ে জুনায়েদ ১০০ করেছিল ৫১ বা ৫৩ বলে। আর আমি ১০০ পূর্ণ করি ৪১ বলে। যদিও সেটা স্বীকৃত ক্রিকেটের বাইরে ছিল। তাই রেকর্ডের পাতায় আসেনি। তবে আমার মনে হয়, আমি যে ৪১-৪২ বলে (খুব সম্ভবত ৪৪ বল হবে) সেঞ্চুরি করেছিলাম, সেটাই হয়তো বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের দ্রুততম সেঞ্চুরি। আমাদের এখনকার প্রতিষ্ঠিত ও নামী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দীন ভাই ঐ ম্যাচে আমার ব্যাটিং দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি ছবি তুলে রেখেছিলেন। বলছিলেন এমন অতি আকর্ষণীয় ঝড়ো গতির ব্যাটিং হচ্ছে, ছবি তুলে রাখি।’
পাঠক, ঐ ম্যাচের কিছু সংক্ষিপ্ত আলোচনা করলে দৃশ্যপট পরিষ্কার হবে। শুরুতে ব্যাটিংতান্ডবে ধানমন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আলোড়ন তুলেছিলেন মোহামেডানের তখনকার বাঁহাতি ওপেনার জুনায়েদ সিদ্দিকী। তার ব্যাট থেকে এসেছিল ১৩৪ রানের হ্যারিক্যান ইনিংস। ৬৪ বলে সাজানো ঐ ইনিংসে ছিল রেকর্ড ১১ ছক্কা আর ৬ বাউন্ডারি।
এই তো ২০১৮ সালের বিপিএল ফাইনালে তামিম ইকবাল ১১ ছক্কা হাঁকিয়ে জুনায়েদের সে রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন। পরে পাল্টা জবাব দিতে নেমে আশরাফুল উপহার দিয়েছিলেন ৪৭ বলে ১০৪ রানের একটি ঝড়ো ইনিংস। যার মধ্যে ছিল ১৬ বাউন্ডারি।
এআরবি/এসএএস/জেআইএম