ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

তুষার ইমরানের স্মৃতিতে অমলিন ঘোরলাগা সে দুই ইনিংস

আরিফুর রহমান বাবু | প্রকাশিত: ০১:১২ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০২০

দেখতে দেখতে কেটে গেছে ২০টি বছর। ঠিক ২০০০ সালে শুরু হয়েছিল তার ক্রিকেট জীবন। দেড়যুগের বেশি সময়ের শত স্মৃতি, নানা ঘটনা মনে দাগ কেটে আছে। কিছু স্মৃতি মনের আয়নায় গাঁথা আছে। চোখ বন্ধ করলেই যেন দেখতে পান। ফিরে যান সেই পেছনে ফেলে আসা দিনগুলোকে।

এর মধ্যে দুটি ইনিংসের কথা কিছুতেই ভুলতে পারেন না দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান তুষার ইমরান। হঠাৎ অবসরে চোখের সামনে ফুটে ওঠে দুটি বিশেষ দিনের স্মৃতি। দুটিই অনেক আগের ঘটনা। যার প্রথম দিনটি ১৯ বছর আগে এই এপ্রিল মাসে; ২০০১ সালের ৭ এপ্রিল। আর পরের স্মরণীয় ইনিংসটি ভারতের পুনেতে, সময় কাল ২০০২ সাল।

প্রথম ঘটনাটি ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ও আকর্ষণীয় টুর্নামেন্ট প্রিমিয়ার লিগে। ঢাকায় তখন প্রিমিয়ার লিগের ২০০১ সালের আসর চলছিল। ৭ এপ্রিল বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার আগেই ঢাকা তথা দেশের ক্রীড়াকেন্দ্র বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম ও তার আশপাশ চাউর হয়ে গেল ‘তুষার ইমরান’ নামের কে একজন একাই মোহামেডানকে হারিয়ে দিয়েছেন।

বলার অপেক্ষা রাখে না, মোহামেডান তখন অনেক ভাল দল। দেশের সবসময়ের অন্যতম সফল তারকা মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর নেতৃত্বে মতিঝিলের ক্লাবপাড়ার সাদাকালো শিবিরে তখন কেনিয়ান সুপার স্টার স্টিভ টিকোলো, বাংলাদেশের সে সময়ে জাতীয় দলের সদস্য জাভেদ ওমর, সানোয়ার হোসেন, শফিউদ্দিন বাবু, তাপস বৈশ্য- প্রমুখ খেলেন। সেই তারকায় ঠাসা দল হারল ধানমন্ডি ক্লাবের মতো মধ্যম সারির এক তারুণ্য নির্ভর দলের কাছে। যশোরের ১৮ বছরের এক উচ্ছল তরুণ উইলোবাজ তুষার ইমরানের উইলোই শাসস করল মোহামেডানকে বোলিংকে।

ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট তখন বিদেশি ক্রিকেটারে সয়লাব। ভিনদেশিদের দাপটও ছিল প্রচুর। একদম নতুন কেউ একটু বেশি ভাল খেললে, ম্যাচ জেতানো ইনিংস উপহার দিলে তখনকার ক্রিকেট অনুরাগীর বড় অংশ ধরে নিতেন কোন বিদেশি ক্রিকেটার হয়তো ঐ দুর্দান্ত ব্যাটিং নৈপুন্য দেখিয়েছেন। তুষার ইমরান যেদিন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে নান্নু-টিকোলোর মোহামেডানের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুুরি উপহার দিলেন, তখন অনেকেরই ধারণা ছিল, নির্ঘাত এটা কোন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান হবেন।

tusher1

গুঞ্জন নয়। পত্রিকায় এ কথা লেখাও হয়েছিল। কেন লেখা হবে না? ঢাকা লিগে তখন ২৫০+ রান মানেই ছিল বিগ স্কোর। আর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের বড় আউটফিল্ডে ২২০-২৩০ রানকে ধরা হতো মোটামুটি লড়াকু স্কোর। সেই ম্যাচে মোহামেডান ২২১ রানে অলআউট হওয়ার পর কয়েক হাজার সমর্থক সম্ভাব্য জয় ধরেই স্টেডিয়াম পাড়ার ইসলামিয়া, ক্যাফে স্টেডিয়াম, নবান্ন, প্রেসিডেন্ট আর আল ইসলাম রেস্তোরায় গেলেন লাঞ্চে। ভাবনা ছিল, আরে এই রানই যথেষ্ঠ।

শফিউদ্দিন বাবুর (৯৯’র বিশ্বকাপ খেলা) দুর্দান্ত গতি, তাপস বৈশ্য আর আশিকের সুইং, স্টিভ টিকোলোর মিডিয়াম পেস, অধিনায়ক নান্নুর স্লো মিডিয়াম, মোস্তাদির লিটুর বাঁহাতি স্পিন ও সানোয়ারের অফস্পিনের সামনে কি আর কুলিয়ে উঠতে পারবে একঝাঁক তরুণের ধানমন্ডি। বলে রাখা ভাল, ধানমন্ডিতে তখন আনিসুল হাকিম, সেতু, তুষার ইমরান, ফয়সাল হোসেন ডিকেন্স, তারেক আজিজ ও দেবব্রত পালের মত একঝাঁক তরুণের দল।

কিন্তু ধানমন্ডির ব্যাটিং শুরুর কিছুক্ষণ পর থেকেই বিস্ময়ে হতভম্ব, বিমূঢ় মোহামেডান সাপোর্টাররা। তুষার ইমরান নামের এক কৈশোর পেরুনো ১৮ বছরের যুবার ব্যাট যেন খোলা তরবারি! তার সাহসী, সাবলীল আর স্বচ্ছন্দ ব্যাটিংয়ের সামনে কর্পূরের মত উবে গেল মোহামেডানের বোলিং।

১০২ বলে ১৩১ রানের দারুণ ইনিংস খেলে মোহামেডানকে ঐ লিগে প্রথম পরাজয়ের তেঁতো স্বাদ দিলেন তুষার। ঐ ইনিংসে ছিল চার ও ছক্কার ফুলঝুরি । না দৌড়ে শুধু বাউন্ডারি (১৬টি) আর ওভার বাউন্ডারি (৫টি) হাঁকিয়েই ৯৪ রান তুলে নেন তুষার। ধানমন্ডি পেল ৩ উইকেটের স্মরণীয় জয়। তুষারের ঝড়ো উইলোবাজির কারণে ম্যাচ শেষ হলো ৭০ বল আগে।

সেদিন সন্ধ্যায়ই সাড়া পড়ে গেল দেশের ক্রিকেটে যশোর থেকে সবে কৈশোর পার হওয়া এক দারুণ সাহসী ও ফ্রি স্ট্রোকমেকার এসেছেন, অল্পবয়স কিন্তু বুক ভরা সাহস। শটস খেলার সামর্থ্যও প্রচুর। পা এগিয়ে কভার ড্রাইভ, ধেয়ে আসা বাউন্সারের বিপক্ষে সুনিয়ন্ত্রিত পুল, পায়ের পাতার আশপাশে কব্জির মোচড়ে ফ্লিক ও হাঁটু মুড়ে সুইপে সীমানার বাইরে পাঠাতে ওস্তাদ।

আজকে প্রায় ২০ বছর পর তার নামের পাশে প্রায় তিন ডজন সেঞ্চুরি। শুধু প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেই তুষার ইমরানের আছে ৩১টি শতক, সঙ্গে ৬২ হাফসেঞ্চুরি। আর লিষ্ট ‘এ’ ক্রিকেটেও আছে এক সেঞ্চুরির সঙ্গে ৩০ হাফসেঞ্চুরি।

ব্যাটসম্যান হিসেবে যতগুলো রেকর্ড গড়া সম্ভব একজনের পক্ষে, বাংলাদেশের ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে তুষার ইমরান একাই তা করে দেখিয়েছেন। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি (১৭৭ ম্যাচে ১১৭০৪ রান, সর্বোচ্চ ২২০, গড় ৪৩.০২) রানও তার।

সেই রেকর্ড গড়ার কারিগর তুষার ইমরানের স্মৃতিতে এতগুলো ফার্স্ট ক্লাস সেঞ্চুরির কথা নেই। সেই কবে মোহামেডানের বিপক্ষে ক্লাব লিগে এক ম্যাচ জেতানো শতরান করেছিলেন- আছে তার কথা, সেই সুখস্মৃতি। কেন সেটা এত বড়? কী কারণে তুষার ইমরান এখনও সেই ম্যাচের সুখস্মৃতি বয়ে বেড়ান। জানতে ইচ্ছে করছে, তাই না?

তুষারের মুখ থেকেই শোনা যাক, ‘আসলে ২০০১ সালের প্রিমিয়ার লিগটি ছিল ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে আমার প্রথম বছর। আর মোহামেডানের বিপক্ষে ধানমন্ডির হয়ে সেঞ্চুরিটিও ছিল ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে আমার প্রথম শতরান। খুব স্বাভাবিকভাবেই সে ম্যাচের স্মৃতি, তখনকার অনেক বড় দল মোহামেডানকে হারানো এবং নিজের প্রিমিয়ারের প্রথম শতরানের কথা মনে বিশেষভাবে দাগ কেটে আছে। আমি সে সুখস্মৃতি বয়ে বেড়াই এখনও। আমার সংগ্রহে ২০০১ সালের ৮ এপ্রিলের পেপার কাটিংও আছে। মাঝেমাঝে তা বের করে দেখি। জীবনে কত শতবার পত্রিকায় ছবি ছাপা হয়েছে, টিভির পর্দায় আমাকে দেখিয়েছে, কিন্তু সেই দিনটির কথা, ঐ ম্যাচ রিপোর্ট আর পত্রিকায় ছাপা হওয়া গ্রুপ ছবিটা এখনও মাঝেমধ্যে বের করে দেখি। ভাববেন না শুধু প্রথম বছর প্রিমিয়ার লিগ খেলতে নেমে মোহামেডানের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেছিলাম, তাই এটি এত স্পেশাল। সে ম্যাচটি আসলে আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারকেই পাল্টে দিয়েছিল। বলতে পারেন, ক্রিকেটার তুষার ইমরানের ক্যারিয়ারের ‘টার্নিং পয়েন্ট’ ঐ সেঞ্চুরি।’

tushar-imran-3.jpg

কেন টার্নিং পয়েন্ট? ওটা তো ছিল আপনার ক্যারিয়ারের প্রথম লিগ সেঞ্চুরি। তারপরে অন্তত হাফ ডজনের বেশি সেঞ্চুরি আছে আপনার ঢাকা লিগে। কেন মোহামেডানের বিপক্ষে সেই ১৯ বছর আগে খেলা ম্যাচ জেতানো ইনিংসটিই আপনার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট?

জবাব দেন তুষার, ‘আবেগতাড়িত হয়ে বলছি না। অতি অবশ্যই ঐ টার্নিং পয়েন্ট। কারণ ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুুরি তো অনেক দূর, মোহামেডান ম্যাচে আমার রান করা ছিল খুব জরুরি। ঐ ম্যাচে যদি রান না করতাম তাহলে আমার ক্যারিয়ার ঝুলে যেত। হয়তো আমি অতলে তলিয়ে যেতাম। জাতীয় দলে খেলা বহু দূরে, ঢাকার প্রিমিয়ার লিগেই আর নিয়মিত খেলতে পারতাম কি না সন্দেহ।’

‘ধানমন্ডির হয়ে আগের ৫-৬ ম্যাচে আমি রান পাইনি একদমই। সাকুল্যে ৪০-৪২ রান হয়তো হবে। মোহামেডান বিগ টিম। কাজেই আমাকে খেলানো হবে কি না?- তা নিয়েই ছিল সংশয়। টিম ম্যানেজমেন্ট খেলাতে চায়নি। চাওয়ার কথাও না। একজন আগের ম্যাচগুলোতে লিগ টেবিলের নিচের দিককার দলের সঙ্গে রান করতে পারেনি, যার গড়পড়তা রান ৬-৭, তাকে মোহামেডানের মতো শক্তিশালি আর লিগ ট্রফি জেতার দাবিদারের বিপক্ষে খেলানো যে রীতিমত ঝুঁকির। আমিও আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম প্রায়। মনে মনে ধরেই নিয়েছিলাম মোহামেডানের বিপক্ষে খেলা হয়তো হবে না।’

‘পরে আমাদের তখনকার কোচ জালাল স্যার (দেশবরেণ্য ক্রিকেট বোদ্ধা, বিশ্লেষক, প্রশিক্ষক ও ক্রিকেট লেখক জালাল আহমেদ চৌধুরী) প্রায় জোর করেই আমাকে খেলালেন। বুঝতে পারছিলাম, মোহামেডানের সঙ্গে রান করতে না পারার অর্থ, ক্যারিয়ারের ‘বারোটা’ বেজে যাওয়া। হয়তো আর আমার প্রিমিয়ার লিগ খেলা হবে না। প্রথম বিভাগ লিগ খেলাই সার হবে।’

‘আমি মাঠে নামলাম। জালাল স্যার সাহস দিলেন। আমি সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে সফল হলাম। এখনও মনে আছে ঐ ম্যাচে আমি বেশ কয়েকটি (৫টি) ছক্কাও হাঁকিয়েছিলাম। যার তিনটি ছিল সম্ভবত এক ওভারে। মোহামেডানের কোন এক স্পিনারকে সুইপ খেলে দু-তিনটি ছক্কা হাঁকানোর স্মৃতি খুব মনে আছে। জালাল স্যারের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। সেদিন আমাকে একপ্রকার ঝুঁকি নিয়েই, সুযোগ না দিলে আমার ক্যারিয়ারের কী হতো জানা নেই। ঐ ইনিংস খেলার পর আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল আমি পারব। দেশের ক্রিকেটে বড় মঞ্চে পারফরম করার সামর্থ্য আছে আমার। কাজেই সে ইনিংসের কথা ভুলি কী করে? মোহামেডানের সঙ্গে সেই ম্যাচেই যে উন্মেষ ঘটেছিল আমার সামর্থ্যের।’

তুষার ইমরানের সেই যে শুরু। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি, ‘মোহামেডানকে হারানোর পর ঐ বছর লিগে আমি একা শুধু না, আমাদের দল ধানমন্ডি ক্লাবও অন্যরকম ছন্দ খুঁজে পেয়েছিল। এখনও মনে আছে আমরা মোহামেডানের পর দুই জায়ান্ট বিমান আর ব্রাদার্সকে হারিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম সুপার লিগে। ব্রাদার্সের বিপক্ষেও আমি সম্ভবত ৮৫-৮৭ রানের ইনিংস খেলে দল জিততে সাহায্য করেছিলাম।’

‘সেই ম্যাচে ব্রাদার্সের ক্যাপ্টেন ছিলেন আতহার ভাই (আতহার আলী), আর পেসার ছিলেন দুলু ভাই (জাতীয় দলের সাবেক বাঁহাতি পেসার জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার দুলু) আর কর্ণেল ভাই (আহমেদ কামাল কর্ণেল, জাতীয় দলের সাবেক পেসার)। আমার মারের তোড়ে দুলু ভাই তো একবার ঢাকাইয়া ভাষায় গালিই দিয়ে ফেললেন। আতহার ভাই বললেন, দুলু ভাল জায়গায় বল ফেল। দুলু ভাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ক্রুর ভাষায় বলেছিলেন, আরে কী করুম? কোত্থেকে আইছে এই পোলা? যেখানে বল ফালাই, ঐখানেই মারে। কই বল ফালামু । কর্ণেল ভাইও বলছিলেন, ‘তুষার আর সবাইরে চালা (শটস খেল), আমারে মারিস না ভাই।’

আরও একটি ম্যাচের সুখস্মৃতি এখনও সঙ্গী তুষারের। সেটা দেশের বাইরে, ভারতে। দিনতারিখ ঠিক মনে নেই। তবে বছর সম্ভবত ২০০২। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে ভারতে খেলতে গিয়ে পুনের রঞ্জি দলের বিপক্ষে তিনদিনের ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুুরি করেছিলেন তুষার। খালেদ মাহমুদ সুজনের নেতৃত্বে সে দলটি ছিল আসলে ‘এ’ দলের মোড়কে ছায়া জাতীয় দল। মাশরাফি বিন মর্তুজা, মেহরাব হোসেন অপি, মোহাম্মদ আশরাফুল, সানোয়ার হোসেন, হাসানুজ্জামান ঝড়ু– প্রমুখ ক্রিকেটার ছিলেন ঐ দলে।

জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে সে ম্যাচের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তুষার বলেন, ‘জানেন, পুনের ঐ ম্যাচের সেই ডাবল সেঞ্চুুরিও কিন্তু আমার ক্যারিয়ারের একটি টার্নিং পয়েন্ট। ঐ ডাবল সেঞ্চুরির পরপরই জাতীয় দলে ঢুকে যাই। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’

সে ম্যাচের ঘটনা বলতে গিয়ে তুষার বলে ওঠেন, ‘ঐ সফরে অন্য কোন এক ম্যাচে সেঞ্চুুরি করেছিলেন সানোয়ার ভাই। তিনি সেঞ্চুুরির পর ড্রেসিংরুমের দিকে ব্যাট তুলে দেখালেও হেলমেট খোলেননি। দলের সঙ্গে যাওয়া জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক শ্রদ্ধেয় রকিবুল ভাই (রকিবুল হাসান) বলেছিলেন, দেখলা সানোয়ার হেলমেট খোলেনি। মানে তার লম্বা ইনিংস খেলার ইচ্ছে আছে। শতরান পূরণেই ক্ষান্ত দিতে চায় না সে। আমার মনেও জন্ম নিলো একটা নতুন ভাবনা, যদি আমি কোন ট্যুর ম্যাচে সেঞ্চুুরি করি, তাহলে থামব না। যতক্ষণ পারি ব্যাট করবো, দেড়শ-দুইশ করেই সাজঘরে ফিরবো। তাই আমিও পুনের বিপক্ষে শতরানের পর হেলমেট খুলিনি। একবারে ডাবল সেঞ্চুুরির পর খুলেছিলাম।’

‘তারপর ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে আরও বেশ কটি বড় ইনিংস (ডাবল সেঞ্চুুরি) আছে আমার। কিন্তু পুনের সেই ডাবল সেঞ্চুরিটি বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে আছে। কারণ পুনের ঐ ডাবল সেঞ্চুরির পরই আমার মনে সাহস এসেছিল, শুধু শটস খেলাই নয় আমার দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটেও ভাল খেলার পর্যাপ্ত সামর্থ্য আছে। আর নির্বাচকরাও বুঝে গিয়েছিলেন, আমার ব্যাটিং স্টাইল, ধরন শুধু সীমিত ওভারের ফরম্যাট উপযোগীই না, টেস্টেও চলনসই। আর তারই ফলশ্রুতিতে ২০০২ সালের জুলাইতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট দলে জায়গা পাই। সে সফরে কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে অভিষেক ঘটে।’

এআরবি/এসএএস/এমএস