আইপিএলে খেলতে গিয়েই কি ফাঁসলেন সাকিব?
বাকি সব ইস্যু ধামাচাপা। সাকিব আল হাসানের এক ইস্যু নিয়ে তোলপাড় বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন। জুয়াড়িদের কাছ থেকে সাকিব ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন, সেটি গ্রহণ না করলেও কেন চেপে গেলেন? এই অপরাধে আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় পড়তে পারেন ১৮ মাসের জন্য।
তবে আইসিসি এখন পর্যন্ত এই ইস্যুতে কিছুই জানায়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি)। সাংবাদিকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলাপচারিতায় বিসিবির সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন বলেন, ‘বিসিবিকে এখন পর্যন্ত আইসিসি কিছু জানায়নি।’
তাহলে আপনারা কোথা থেকে জানলেন? একটু খানিক ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া উত্তর বিসিবি সিইওর, ‘এসব ক্ষেত্রে যদি কেউ জাতীয় দলের পক্ষে খেলতে গিয়ে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পান কিংবা সে দেশের ঘরোয়া কোনো লিগে জুয়াড়িদের কাছ থেকে ম্যাচ বা স্পট ফিক্সিংয়ের কোনো প্রস্তাব আসে, তাহলে সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে জানানো হয় আগে।’
বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরীর কথার ভাবটা এমন, যেহেতু আমাদের জানানো হয়নি, তাই ধরে নেয়া যায় এটা বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে কোনো ম্যাচ খেলার সময়ের ঘটনা নয়। একইসাথে আমাদের কোনো লিগ এমনকি বিপিএলের সময়েরও নয়।
খুব প্রাসঙ্গিকভাবে প্রশ্ন ওঠলো-তাহলে অভিযোগটা কোথা থেকে এসেছে? বিসিবি সিইওর কূটনৈতিক জবাব, ‘হয়তো কোনো ভিনদেশি লিগ থেকে।’ স্পষ্টতই ইঙ্গিতটা ভারতের ফ্র্যাঞ্জাইজি লিগ আইপিএলের দিকেই।
কিন্তু সাকিবই যে আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন, সেটা তাহলে কি করে চাউর হলো? এর জবাবে বিসিবি সিইও যে ব্যাখ্যা দাঁড় করান, তার ভাবার্থ দাঁড়ায়, সাকিবের কাছ থেকেই হয়তো তারা জেনেছেন।
সাকিবই আমাদের জানিয়েছে-এমন কথা সরাসরি না বললেও নিজামউদ্দিন সুজন আরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। যা শুনে মনে হলো, এই সম্পর্কিত ব্যাপারগুলো সাকিবই জানিয়েছেন। কারণ এসব ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ক্রিকেটারের সঙ্গে আইসিসির দুর্নীতি দমন কমিশন (আকসু) সরাসরি কথা বলে এবং তাকেই সর্বপ্রথম জানানো হয়, অমুক দিন অমুক জুয়াড়ির ফোন বা মেসেজ এসেছিল আপনার কাছে।
এদিকে আজ সকাল এগারটা থেকেই শেরে বাংলায় মিডিয়া কর্মীদের ভিড়। প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক্স ও অনলাইন মিডিয়ার শতাধিক সাংবাদিক এখন বিসিবি অফিসের নিচ ও দো-তলায় অবস্থান করছেন। সবার একটাই কৌতুহল-বোর্ড কি জানাবে?
সেখানেই আট দশজনের জটলায় ঘুরে ফিরে সাকিব প্রসঙ্গ। বেলা পৌনে দুইটা নাগাদ বোর্ডে এসেছেন নাজমুল হাসান পাপন। ধারণা করা হচ্ছে, বোর্ড কর্তাদের সাথে কথা বলে এবং আইসিসির সর্বশেষ আপডেট নিয়েই তিনি হয়তো সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন।
ক্রিকেটপাড়ায় আরেকটি খবর মোটামুটি চাউর হয়ে গেছে যে, আইসিসির দুর্নীতি দমন কমিশনের (আকসু) কাছে প্রথমে ম্যাচ পাতানোর ফোন পাওয়ার কথা মনে করতে পারেননি সাকিব। কিন্তু আকসু থেকে পরিষ্কার তথ্য প্রমাণ উপস্থাপনের পর সাকিব বলেন-হ্যাঁ, মনে পড়েছে।
সেটা ঠিক কোন ম্যাচের তা জানা না গেলেও ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সেটা আইপিএলের গত কিংবা তার আগের আসরের। এবং যে জুয়াড়ির কাছ থেকে ফোনটি এসেছিল, আইসিসির লিস্টে সে একজন অন্যতম শীর্ষ জুয়াড়ি বলে প্রতিষ্ঠিত। কাজেই বিষয়টি পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এসব ক্ষেত্রে চার্জ গঠন করলেই তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হবে, প্রাথমিক অবস্থায় অভিযু্ক্ত ক্রিকেটারকে বলা হবে-দোষ স্বীকার করে নেবেন নাকি নিজেকে ‘নির্দোষ’ দাবি করবেন? যদি নির্দোষ দাবি করেন, তবে ট্রাইবুনাল গঠন হবে, সেখানে তদন্তের পর শুনানি।
আর যেহেতু আকসুর কাছে তথ্য প্রমাণ আছে, তাই এসব ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ক্রিকেটারই ভুল বা দোষ স্বীকার করে নেন এবং যতটা কম সম্ভব শাস্তির আবেদন করেন। তবে আইসিসির কোড অব কন্ডাক্টের ধারা অনুযায়ী, শাস্তিটি সাধারণত ১৮ মাসের হয়। কম হলেও ৬ মাস হবে।
সাকিবের ক্ষেত্রে কি হবে, সেটা সময়ই বলে দেবে।
এআরবি/এমএমআর/পিআর