ট্রেসকোথিকের বিদায়ী ম্যাচে শিরোপার হাসি কুকের
ক্রিকেট মাঠ থেকে বিদায়টা দুর্দান্ত হতে পারতো ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মার্কাস ট্রেসকোথিকের। কিন্তু বাধ সাধল বেরসিক বৃষ্টি। যে কারণে কাঙ্ক্ষিত জয় পেল না ট্রেসকোথিকের সমারসেট, অল্পের জন্য হাতছাড়া হলো শিরোপা। সবধরনের ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর ম্যাচটি শিরোপা জয়ের আনন্দে শেষ করতে পারলেন না ট্রেসকোথিক।
সমারসেট শিরোপা জিততে ব্যর্থ হলেও, বৃষ্টি আবার আশীর্বাদ হয়ে এসেছে আরেক ইংলিশ কিংবদন্তি অ্যালিস্টার কুকের জন্য। তার দল এসেক্সের শিরোপা জয়ের জন্য দরকার ছিলো শেষ ম্যাচটি ড্র করা। বৃষ্টি নেমে কাজ সহজ হয়ে যায় আরও। শেষদিন ১৮ ওভার নিরাপদে ব্যাট করে সেই ড্র তুলে নিয়েছে কুকের এসেক্স, মেতেছে শিরোপা জয়ের আনন্দে।
কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ ডিভিশন ওয়ানের শেষ রাউন্ডের ম্যাচের শেষ দিন ছিলো বৃহস্পতিবার। এ রাউন্ডে শিরোপার লড়াই ছিলো ট্রেসকোথিকের সমারসেট ও স্যার কুকের এসেক্সের মধ্যে। আগেই পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকায় এ রাউন্ডে স্রেফ ড্র করলেই হতো এসেক্সের। অন্যদিকে জয়ব্যতীত অন্যকিছু ভাবার সুযোগ ছিলো না সমারসেটের সামনে।
এদিকে মৌসুমের শুরুর দিকেই ট্রেসকোথিক জানিয়ে দিয়েছিলেন, আসরের শেষেই তিনি থামিয়ে দেবেন ২৭ বছরের যাত্রা। মৌসুমের শেষ ম্যাচটি অবশ্য খেলেননি তিনি। বলা ভালো, গত জুনের পরে আর সমারসেটের প্রথম একাদশের হয়েই খেলতে নামেননি ট্রেসকোথিক।
তবু তার বিদায়ী ম্যাচে শিরোপা জেতার জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিলো সমারসেটের সকল খেলোয়াড়। কিন্তু বৃষ্টির কারণে চারদিনে ৩৬০ ওভারের মধ্যে খেলা হয় কেবল ১৫৮ ওভার। এই অল্প সময়ের মধ্যেও অবশ্য ম্যাচের ফল বের করার ফন্দি এঁটেছিল সমারসেট। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমে ৭২.৪ ওভারে ২০৩ রানে অলআউট হয় সমারসেট।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে ম্যাচের শেষদিন ১৪১ রানে অলআউট হয় এসেক্স। স্যার অ্যালিস্টার কুকের ব্যাট থেকে আসে ৫৩ রানের ইনিংস। বৃষ্টির কারণে তৃতীয় দিনে এক বলও মাঠে গড়ায়নি। চতুর্থ দিনও এসেক্সকে অলআউট করতে করতে চলে আসে ম্যাচের শেষ ঘণ্টা। ফলে ৬২ রানে এগিয়ে থাকায় নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে আর ব্যাট করতে নামেনি সমারসেট, ১৮ ওভারে ৬৩ রানের লক্ষ্য দেয়া হয় এসেক্সের সামনে।
মারকাটারি যুগের ক্রিকেটে এ লক্ষ্য তেমন কঠিন কিছু নয়। কিন্তু ম্যাচ হেরে গেলেই শিরোপা চলে যাবে সমারসেটের ঘরে। এ চিন্তায় আর লক্ষ্যের পেছনে ছোটেনি এসেক্স। দুই ওপেনার নিক ব্রাউন ও অ্যালিস্টার কুক ১৬.২ ওভারে যোগ করেন ৩৮ রান। ব্রাউন ৫৫ বলে ১০ রান করে আউট হলেও, কুক অপরাজিত থাকেন ৩০ রান করে। এ ড্রয়ের সঙ্গে শিরোপা নিজেদের ঘরে তোলে এসেক্স।
এ ম্যাচে না খেললেও, ট্রেসকোথিককে বিদায় জানানোর সকল আয়োজনই করেছিল সমারসেট। ম্যাচ শেষে তাকে গার্ড অনার দেয় দলের সকল খেলোয়াড়। নিঃসন্দেহে ক্লাবটির ইতিহাসের কিংবদন্তি মার্কাস ট্রেসকোথিক।
১৯৯৩ সালে সমারসেটের হয়ে কাউন্টি ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকে এখনও পর্যন্ত এ ক্লাবেই খেলছেন ট্রেসকোথিক। ক্রমেই নিজেকে পরিণত করেছেন কাউন্টির ইতিহাসের অন্যতম সেরা এক ক্রিকেটারে। কাউন্টি পর্যায়ে অসংখ্য রেকর্ড গড়া ট্রেসকোথিক ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে খেলেছেন ৭৬ টেস্ট ও ১২৩টি ওয়ানডে ম্যাচ।
জাতীয় দলের হয়ে তিনি খেলতে পারতেন আরও অনেক ম্যাচ। কিন্তু অবসাদজনিত কারণে ২০০৮ সালে মাত্র ৩১ বছর বয়সেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেতকে বিদায় জানিয়ে দেন সমারসেটে এ কিংবদন্তি ক্রিকেটার। সমারসেটের কাউন্টি গ্রাউন্ডে ট্রেসকোথিকের সম্মানার্থে একটি স্ট্যান্ডের নাম দেয়া হয়েছে তার নামে।
ক্লাবটির ইতিহাসে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড হারল্ড গিমব্লেটের দখলে থাকলেও, সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির (৫২) রেকর্ডটি ঠিকই ট্রেসকোথিকের নামের পাশে। এছাড়া সমারসেটের হয়ে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটের সর্বোচ্চ ১২২২৯ রানও করেছেন তিনি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার রানসংখ্যা ২৬২৩৪। এছাড়া রেকর্ডসংখ্যক ৫৬০টি ক্যাচও তালুবন্দি করেছেন তিনি।
ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে বাঁহাতি এ ওপেনারের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু হয় ২০০০ সালে। পরে ২০০৮ সাল পর্যন্ত টেস্টে ৪৩.৭৯ গড়ে ৫৮২৫ এবং ওয়ানডেতে ৩৭.৩৭ গড়ে ৪৩৩৫ রান করেছেন তিনি। ২০০৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ কিংবা ২০০৫ সালের অ্যাশেজে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন ট্রেসকোথিক।
এসএএস/এমকেএইচ