আলোচিত সেই লিখন সুযোগ পেয়ে কেমন করলেন?
প্রস্তুতি ম্যাচের জয় পরাজয় কোন সময়ই তেমন গুরুত্ব পায় না। আর সেটা যদি দুই দিনের ম্যাচ হয়, তাহলে তো কথাই নেই। কারণ সবাই ধরেই নেয়, ফল হবে না। খেলা হবে নিষ্ফলা।
নিষ্প্রাণ ড্র না, ব্যাটসম্যান বা বোলারের পারফরমেন্সের ঔজ্জ্বল্যে রাঙানো- সেটাই দেখার বিষয় হয়। বাংলাদেশের সাথে এক ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলার আগে চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে বিসিবি একাদশের বিপক্ষে আফগানিস্তানের দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচটিও ঠিক তেমন।
ফল কি হলো, আফগানরা না স্বাগতিক বিসিবি একাদশ কে কি করলো না করলো, তা নিয়ে কারোরই মাথা ব্যথা নেই। দেখার বিষয় ছিল দুটি। বাংলাদেশে প্রথমবার দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচ মানে টেস্ট খেলতে আসা আফগানদের অ্যাপ্রোচ-এপ্লিকেশন কেমন?
দুই দিনের ম্যাচে তাদের ব্যাটিং-বোলিং সম্পর্কে পূর্ব ধারণাই ছিল মূল। আর দ্বিতীয়ত হলো, অনেক দিন পর বিদেশি দলের বিপক্ষে সুযোগ পাওয়া লেগস্পিনার জোবায়ের হোসেন লিখন কি করেন? চার বছর ধরে জাতীয় দলে নেই। এর মধ্যে একবার ‘এ’ দলের হয়ে আয়ারল্যান্ড গিয়েও কিছু করতে পারেননি।
এবার দেশের মাটিতে আবার সুযোগ পেয়ে লেগস্পিনার লিখন কি করেন, তা দেখতে অনেকেই উন্মুখ হয়ে ছিলেন। লিখনের আজ রোববার কিছু করে দেখানোর সুযোগও ছিল। কারণ আজ ম্যাচে বিসিবি একাদশ ছিল ফিল্ডিংয়ে।
কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। লেগি লিখন কিছুই করতে পারেননি। ৫-৭ ওভার বোলিং করলে বলা যেত, অনেক দিন পর বিদেশি দলের বিপক্ষে খেলতে নেমেছেন, তাই নিজেকে ফিরে পেতে সময় লাগছে। লম্বা সময় বল করলে হয়তো পারবেন। কিন্তু তা বলার অবকাশ নেই। সারা দিনে ১৯ ওভার বল করেছেন লিখন। অথচ একটি উইকেটের পতনও ঘটাতে পারেননি।
উইকেট পাবাই শেষ কথা নয়। কেমন বল করেছেন? লাইন-লেন্থ কেমন ছিল? বল ঘুরাতে পেরেছেন কতটা? গুগলি-ফ্লিপারের মিশ্রণে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের বিব্রত করতে পেরেছেন কি? বলে ধার ছিল কতটা?
এসব প্রশ্নর জবাব যারা জানতে কৌতুহলি, তাদের জন্য বলা, দুই দিনের ম্যাচে একজন লেগস্পিনারের জন্য একদিনে ১৯ ওভার কম নয়। বেশ। উইকেট না পেলেও স্বাগতিক অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান তাকেই সবচেয়ে বেশি ওভার বোলিং করিয়েছেন। কিন্তু জোবায়ের লিখন কিছুই করতে পারেননি। মাত্র একটি ওভারই মেডেন নিয়েছেন। সবমিলিয়ে ৬৮ রান দিয়েও উইকেটশূন্য।
ভাল জায়গায় বল ফেলে আফগানদের স্বচ্ছন্দ্যে রান করা থেকে বিরত রাখা সম্ভব হয়নি। বলে কারুকাজও ছিলনা তেমন। লেগব্রেক, গুগলি আর ফ্লিপারের মিশ্রণও তেমন চোখে পড়েনি। আর সবচেয়ে বড় কথা, ধারাবাহিকভাবে ভাল জায়গায় বল ফেলতে পারেননি জোবায়ের লিখন।
প্রায় প্রতি ওভারেই অন্তত একটি করে আলগা ডেলিভারি ছুড়েছেন। ক্রিকেটীয় ভাষায় যাকে বলা হয় ‘লং হপ’। হয় অফস্টাম্পের বেশি বাইরে বল ফেলে বাউন্ডারি হজম করেছেন। না হয়, খাটো লেন্থে বল ফেলে আফগান ব্যাটসম্যানদের পিছনের পায়ে গিয়ে অনায়াসে স্বচছন্দে স্কোয়ার কাট, পুল খেলার পর্যাপ্ত সময় ও জায়গা দিয়ে ফেলেছেন। আর তাতে অসহায়ের মত মারও খেয়েছেন।
সব মিলে উইকেট শূন্যই শুধু নন, জোবায়ের হোসেন লিখনের আবার কোন টেস্ট দলের বিপক্ষে মাঠে ফেরার দিনটি ভাল কাটেনি একদমই। তবে কি লিখন আসলেই হারাতে বসেছেন? বয়স মাত্র ২৩। সামনে অফুরন্ত সময়। লিখনের এখনই হতাশ হওয়ার সময় হয়তো আসেনি। তবে আন্তর্জাতিক আঙিনায় আবারও ফিরতে হলে তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে নিঃসন্দেহে।
এআরবি/এমএমআর/জেআইএম