হাথুরু-রোডসের তুলনায় শুরুতে সহজ প্রতিপক্ষ পাচ্ছেন ডোমিঙ্গো
কাগজ কলমের কাজ শেষ। চুক্তি-রফা হয়ে গেছে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও শেষ। সবে কোচ হয়েছেন। আর মাত্র ৪৮ ঘন্টা। ২১ আগস্ট পথচলা শুরু হবে রাসেল ডোমিঙ্গোর।
এখন কাজ শুরুর অপেক্ষা। বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন কোচ হিসেবে কাজ শুরু করবেন এ দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ। শুরুই হয়নি। তাই এখনো চরম মন্তব্য বহুদূরে। তারপরও সবার কৌতুহলি চোখ ভবিষ্যতের দিকে। সবাই উন্মুখ হয়ে আছেন ডোমিঙ্গোর শুরু দেখতে।
এ প্রোটিয়া কতদূর যাবেন, কোথায় গিয়ে থামবেন? সময়ই তা বলে দেবে। তবে এখনকার খবর হলো, ডোমিঙ্গো নিজেকে খানিক সৌভাগ্যবান ভাবতেই পারেন। কারণ, তার আগের দুই কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে আর স্টিভ রোডসের তুলনায় রাসেল ডোমিঙ্গো তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষর সাথে অনুকূল পরিবেশে কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন।
তার প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট হচ্ছে বাংলাদেশের মাটিতে। তুলনামূলক খর্বশক্তির আফগানিস্তানের সাথে একমাত্র টেস্ট আর জিম্বাবুয়ের মত দুর্বল দলকে নিয়ে তিন জাতি টি-টোয়েন্টি সিরিজ।
কেউ কেউ হয়তো ইতিহাস হাতড়ে বলবেন, কেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহেও তো দেশের মাটিতে কাজ শুরু করেছিলেন! হ্যাঁ, তাই। ইতিহাস জানাচ্ছে, হাথুরুসিংহে ২০১৪ সালের মে মাসে কোচ হন বাংলাদেশের। আর ঠিক পরের মাস মানে জুনে ঢাকায় ভারতের সাথে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ছিল। একটি ম্যাচ বৃষ্টিতে ধুয়ে মুছে যায়।
সেটি ছিল ফাস্টবোলার তাসকিন আহমেদের অভিষেক সিরিজ। ভারত এসেছিল সুরেশ রায়নার নেতৃত্বে, এক ভাঙ্গাচোরা দল নিয়ে। সে দলে ভারতের ফ্রন্টলাইনের চার থেকে পাঁচজন ক্রিকেটার ছিলেন না।
প্রথম ম্যাচে ৭ উইকেটে জেতার পর দ্বিতীয় ম্যাচটিতে সুরেশ রায়নার দল জিতেছিল ৪৭ রানে। তবে বৃষ্টিভেজা সে ম্যাচটি হতে পারতো বাংলাদেশের। তাসকিন আহমেদ আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্যারিয়ারের অভিষেকে ২৮ রানে ৫ উইকেট শিকার করে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন।
তাসকিনের ঐ আগুন ঝড়ানো বোলিংয়ে ভারতীয়রা মাত্র ১০৫ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতের মিডিয়াম পেসার স্টুয়ার্ট বিনির বিধ্বংসী (৪ রানে ৬ উইকেট) বোলিংয়ে বাংলাদেশও অলআউট হয় মাত্র ৫৮ রানে।
তবে বাংলাদেশের সাবেক কোচ হাথুরুসিংহের সত্যিকার অভিষেক হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টেস্টে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে। সেখানে বাংলাদেশ খুব বাজেভাবে ১০ উইকেট আর ২৯৬ রানে হার মানে ক্যারিবীয়দের কাছে। কিংসটাউনে প্রথম টেস্টে ১০ উইকেটে হারলেও প্রথম ইনিংসে ১৮২ রান করা বাংলাদেশ পরের ইনিংসে ৩১৪ পর্যন্ত গিয়েছিল। আর গ্রসআইলেটে পরের ম্যাচে একবারের জন্য ২০০ করতে না পারা বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ১৬১ ও ১৯২ রানে।
কাজেই হাথুরুসিংহের সত্যিকার অর্থে কোচ হিসেবে যাত্রা মোটেই শুভ হয়নি। বরং চরম দুর্যোগ আর বন্ধুর পথে হেঁটেই তাকে সাফল্যের পথ খুঁজে বের করতে হয়েছে।
একই অবস্থা সর্বশেষ কোচ স্টিভ রোডসেরও। তারও পথচলা মসৃণ ছিল না। শুরু হয়েছিল বেশ খারাপ। ২০১৮ সালে ৮ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কোচ হবার পর জুলাইতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর দিয়ে শুরু। সেটা ছিল এক বিভীষিকাময় সিরিজ ।
কোচ স্টিভ রোডস প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই টাইগার ব্যাটসম্যানদের চরম দৈন্যদশা প্রত্যক্ষ করেন। নর্থ সাউন্ডে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে মাত্র ৪৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। পরের ইনিংসে ১৪৪ রানে গুটিয়ে গিয়ে ইনিংস ও ২১৯ রানে হার হয় সঙ্গী। পরের টেস্টেও কিংস্টনে ১৬৬ রানে হার থাকে সাথী হয়ে। দু'বারের মধ্যে একবারও ২০০ (১৪৯ ও ১৬৮) করা সম্ভব হয়নি।
কিন্তু পরিসংখ্যান বলে, শুরুর সেই ধাক্কা সামলে হাথুরুসিংহে আর স্টিভ রোডস ঠিকই পরে সাফল্যের পথ খুঁজে পেয়েছিলেন। এবং তাদের কোচিংয়ে বাংলাদেশের ওয়ানডে পারফরম্যান্সে একটা চমৎকার ধারাবাহিকতা চলে আসে।
২০১৫ সালে হাথুরুসিংহে কোচ থাকাকালীন ঘরের মাঠে ভারত, পাকিস্তান আর দক্ষিণ আফ্রিকার মত ক্রিকেটের তিন পরাশক্তির বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ বিজয়ের কৃতিত্ব দেখায় বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে টেস্টে ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার মত বিশ্ব সেরা দলকেও হারায়। একইভাবে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টারফাইনাল ও ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল খেলার বড় সাফল্যটাও কিন্তু হাথুরুর কোচিংয়েই।
প্রায় একই ধারা অব্যাহত ছিল স্টিভ রোডসের আমলেও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ আর দেশের মাটিতে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজ বিজয়ের বড় সড় সাফল্য ধরা দেয় স্টিভ রোডসের অধীনে।
এখন দেখা যাক, আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট আর জিম্বাবুয়ে আর আফগানিস্তানের মত তুলনামূলক কমজোরি দলের সাথে কেমন শুরু হয় রাসেল ডোমিঙ্গোর!
এআরবি/এমএমআর/জেআইএম