সাকিব ঢাকা ছাড়ার কারণেই বিপিএলে এত বড় রদবদল, কি বলছেন বড় কর্তারা?
তিনি ঢাকা ডায়নামাইটসের ফ্র্যাঞ্চাইজি বেক্সিমকো ফার্মার অন্যতম প্রধান ব্যবস্থাপক। তারপরও তিনি বিপিএলে ঢাকার ব্যবস্থাপনার সাথে মোটেও জড়িত নন। অতিবড় সমালোচকও বলতে পারবেন না বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন ঢাকাকে বেশি সুবিধা দেন। এমনকি তার খুব কাছের জন বলে পরিচিত ইসমাইল হায়দার মল্লিকও ঢাকা ম্যানেজমেন্টে নেই। তিনি বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা; সদস্য সচিবও।
তারপরও সমালোচকদের একটা অংশ ঢাকাকে বরাবরই ‘কমিটির টিম’ বলে অভিহিত করে থাকেন। একটা জনশ্রুতি আছে, বিপিএলে ঢাকাই বিসিবির শীর্ষ কর্তাদের সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাওয়া দল। এমনও অভিযোগ আছে ঢাকাকে সুবিধা দেয়ার জন্যই বাইলজ এবং প্লেয়িং কন্ডিশন তৈরি করা হয়।
আর সে কারণেই তিন বছর খেলে সাকিব আল হাসান ঢাকা ছাড়ার পর বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের গতকাল রোববার বিকেলে নেয়া সিদ্ধান্তটি অনেক বেশি ‘গন্ধ’ ছড়িয়েছে। ঢালাওভাবে বলা হচ্ছে, ‘এই তো সাকিব ঢাকা ছেড়ে গেছেন, তাই বিপিএল কর্তৃপক্ষ সব ফ্র্যাঞ্চাইজির সাথে ক্রিকেটার ও কোচের চুক্তি বাতিল করে দিয়ে নতুন ভাবে চুক্তির কথা বলেছেন।’
সাকিব ঢাকা ছাড়ার কারণেই যত বিপত্তি বেঁধেছে। সাকিব ঢাকায় থেকে গেলে আর এই নতুন করে সব কিছু করার ঘোষণা আসতো না। গতকাল পড়ন্ত বিকেল থেকে অনেকের মুখেই এসব কথা-বার্তা। ‘ডেঙ্গু’ নিয়ে যখন তটস্ত পুরো দেশ। ডেঙ্গুই যখন টক অফ দ্য কান্ট্রি। তখন এর মধ্যেও বিপিএল কর্তৃপক্ষের নতুন সিদ্ধান্ত ও ঘোষণা, গত ২৪ ঘন্টায় সবচেয়ে আলোচিত-আলোড়িত ইস্যু।
এবং ধরেই নেয়া হয়েছে, সাকিব ঢাকা ছাড়াতেই নাকি বোর্ডের শীর্ষ সংস্থা, তথা বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল নড়ে চড়ে বসেছেন। আর সে কারণে ঢাকাকে সুবিধা দিতেই সব ফ্র্যাঞ্চাইজির সাথে নতুন চুক্তির ঘোষণা এসেছে।
এমন গুঞ্জনে মুখরিত ক্রিকেট পাড়া। এখন প্রশ্ন হলো, যা শোনা যাচ্ছে, সেটা কি শুধুই অভিযোগ? এক পক্ষীয় কথা? সত্যিই সাকিব ঢাকা ছেড়ে চলে যাওয়ায় বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল নতুন করে চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে। নাকি এর পেছনে অন্য কোন যৌক্তিক কারণও আছে?
ফ্র্যাঞ্চাইজিদের নতুন করে চুক্তি করতে হবে। পুরনো চুক্তি বাতিল। এখন দল হিসেবে নিবন্ধন, বোর্ডের সাথে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকানার নতুন করে চুক্তি এবং দল নিবন্ধন আগে। তারপর ক্রিকেটার ও কোচ দলে ভেড়ানো- কাল রোববার বিসিবির যে অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা বিপিএলের এ গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছেন, সেই মাহবুব আনাম এসব গুঞ্জনকে অসাঢ় ও ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন।
তিনি পরিষ্কার জানিয়েছেন, না না। কাউকে সুবিধা দেয়ার প্রশ্নই আসে না। আর সাকিব ঢাকা ছেড়ে চলে যাওয়ায় আমরা নতুন করে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সাথে চুক্তি করতে যাব কেন? সাকিব কি একমাত্র তারকা ক্রিকেটার যে নতুন দল ছেড়েছে? আরও ক’জন নামি ও দামি ক্রিকেটারও তো নতুন মৌসুমে নতুন ঠিকানা বেছে নিয়েছেন। তাদের কথা আসছে না কেন? শুধু সাকিব একা তো আর দল বদলায়নি। কাজেই এমন বলার কোনই ভিত্তি নেই। আমরা কোনো দলকে সুবিধা দেয়ার জন্য আর কাউকে ক্ষতি করতে গিয়ে এতবড় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে যাব- এমন ভাবার কোনই কারণ নেই। আমরা কেন তা করতে যাব? তা করে আমাদের লাভ বা ফায়দা কি?’
মাহবুব আনাম আরও যোগ করেন, কেউ এমন অভিযোগ করলে সেটা হবে দুঃখজনক। তার কথা, ‘পক্ষ-বিপক্ষের বিষয় নয়। বিপিএলের বৃহত্তর স্বার্থে নতুন করে চুক্তির কথা বলা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সাথে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখন আবার সব কিছু নতুনভাবে শুরু করা ছাড়া কোনই উপায় নেই।’
দলগুলোর মালিকদের চিঠি দিয়ে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয়া হবে, চার বছরের জন্য চুক্তি করতে হবে। সেখানে সব কিছুই স্পষ্ট থাকবে। ফ্র্যাঞ্চাইজি স্বত্ত্ব হবে চার বছরের। একটি মালিক জানবে তারা চার বছরের জন্য ওই দলের ফ্র্যাঞ্চাইজি। তাদের ব্র্যান্ডিং ও মার্কেটিংসহ অন্য কাজ-কর্ম করাও অনেক সহজ হবে। একই ফ্র্যাঞ্চাইজির অধীনে যখন কোন দল থাকবে, তখন সেই দলের সমর্থন বাড়ার সম্ভাবনাও থাকবে বেশি। কাজেই আমরা অনেক ভেবে-চিন্তেই পুরনো চুক্তি শেষ হবার পর নতুন করে চুক্তির ঘোষনা দিয়েছি।’
মাহবুব আনামের শেষ কথা, বিপিএলকে একটা স্বচ্ছ ও সুন্দর ব্যবস্থাপনায় আনতে হলে সব কিছুই ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইটে থাকার উচিৎ। কোন বাইলজ-প্লেয়িং কন্ডিশনে খেলা হবে। খেলোয়াড় দলে ভেড়ানোর নিয়ম কানুন কি হবে- সব একটা পাকাপোক্ত নিয়েমের মধ্যে চলে আসলে আর কোনরকম ঝক্কি-ঝামেলা হবার সম্ভাবনাও যাবে কমে।
বিপিএল টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান ও বিসিবির অন্যম শীর্ষ পরিচালক জালাল ইউনুসও মাহবুব আনামের সুরেই কথা বলেছেন। তারও একই কথা। আজ সন্ধ্যায় জাগো নিউজের সাথে আলাপে জালাল বলেন, ‘না না সাকিবের ঢাকায় থাকা আর না থাকার সাথে আমাদের সিদ্ধান্ত ও ঘোষণার কোনই সম্পর্ক নেই। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি অনেক ভেবে চিন্তে, বুঝে, শুনে।’
চুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ফ্র্যাঞ্চাইজিদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আমরা চিঠি দিচ্ছি। যদি কেউ কন্টিনিউ করতে চায়, তাহলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে হবে। তাও এক বা দুই বছরের জন্য নয়, চার বছরের করতে হবে। আসলে আমরা সিস্টেমে যেতে চাচ্ছি। যাতে সেইম বাইলজ বা প্লেয়িং কন্ডিশনে খেলা হয় তাই।’
এআরবি/আইএইচএস/এমএস