সেই লর্ডসে ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে আয়ারল্যান্ড
মাত্র এক সপ্তাহ আগেই ঐতিহাসিক লর্ডসে বিশ্বজয়ের স্বারক বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছিলেন এক আইরিশ, ইয়ন মরগ্যান। আইরিশ হয়েও তিনি ইংল্যান্ডের অধিনায়ক এবং তার হাত ধরেই বহু আকাংখিত বিশ্বকাপ ট্রফিটি ঘরে তুলতে পেরেছে ইংল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নানা ঘটন-অঘটনের ফাইনালের পর বাউন্ডারি ব্যবধানে প্রথমবারেরমত বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হলো ইংলিশরা।
সেই লর্ডসেই সপ্তাহ না যেতে আরও একটি ইতিহাস রচনা করতে চলেছে আয়ারল্যান্ড। এবার আর নির্দিষ্ট কোনো আইরিশ নয়, এবার পুরো আয়ারল্যান্ড দলই খেলতে নামবে লর্ডসে।
ক্রিকেটের ঐতিহাসিক ভেন্যুটিতে অনেকেই তো খেলতে নামে। কিন্তু আয়ারল্যান্ডের ক্ষেত্রে সেটা ইতিহাস হবে কেন? কারণ, এই প্রথম ক্রিকেটের তীর্থভূমিতে টেস্ট খেলতে নামছে আয়ারল্যান্ড। বুধবার স্বাগতিক ইংল্যান্ড অধিনায়ক জো রুটের সঙ্গে টস করতে নামবেন আইরিশ অধিনায়ক উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড।
টেস্ট খেলার মর্যাদা পাওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত মাত্র দুটি ম্যাচ খেলতে পেরেছে আয়ারল্যান্ড। গত বছর ডাবলিনে নিজেদের ইতিহাসে প্রথম টেস্ট ম্যাচে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয় আইরিশরা। যেটার শেষ দিনে এসে তারা হেরে গিয়েছিল। এরপর চলতি বছর মার্চে ভারতের দেরাদুনে এক ম্যাচের টেস্ট সিরিজে আফাগানিস্তানের মুখোমুখি হয় আয়ারল্যান্ড। এই দুই টেস্টের কোনোটিতেই জিততে পারেনি তারা।
নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে তৃতীয় ম্যাচটিই আয়ারল্যান্ড খেলতে নামছে লর্ডসের মাটিতে। বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। আইরিশদের কাছে এ কারণেই এই টেস্ট ম্যাচটি ঐতিহাসিক। তারওপর, লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আইরিশদের এই ম্যাচটি হতে যাচ্ছে চারদিনের। এ কারণেও, ইতিহাসের পাতায় নাম লেখাচ্ছে ইংল্যান্ড-আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার লর্ডস টেস্ট।
আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেট বেশ কয়েক বছর থেকেই সবার নজরে রয়েছে। বিশেষ করে ২০০৭ সালে পাকিস্তানকে এবং ২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে তোলপাড় ফেলে দেয় তারা ক্রিকেট বিশ্বে। কিন্তু তাদের সবচেয়ে বড় আকাংখা ছিল টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তি। সেই প্রাপ্তিটাও যখন এসে গেলো, তখন বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব থেকে আয়ারল্যান্ডকে বিদায় নিতে হয়। ২০১৯ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি তারা।
কিন্তু আইরিশদের সামনে সময় এসেছে, তারা যে ১০ দলে নামিয়ে আনা বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা রাখে তা প্রমাণ করার। বিশ্বকাপ যখন বড় হওয়ার কথা, তখন তাকে ছোট করে ফেলারও মোক্ষম একটা জবাব দেয়ার সুযোগ আয়ারল্যান্ডের সামনে।
১৯ শতাব্দী থেকেই আয়ারল্যান্ডে ক্রিকেট অনেক জনপ্রিয় একটি খেলা। কিন্তু আইরিশ জাতীতাবাদ মাথাছাড়া দিয়ে ওঠার পর এবং জিয়েলিক অ্যাথলেটিক অ্যাসোসিয়েশন গড়ে ওঠার পর ক্রিকেটকে ঘোষণা করা হয় একটি বিদেশি খেলা কিংবা গ্যারিসন হিসেবে।
তবে ১৯৬৯ সালে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয় এবং সেটা টিভিতে দেখানোর পর থেকেই আয়ারল্যান্ডে ক্রিকেট নিয়ে মানসিকতার পরিবর্তন হতে শুরু করে। সেই থেকেই ধীরে ধীরে আয়ারল্যান্ডে ক্রিকেট আজকের অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে।
আয়ারল্যান্ড বর্তমান দলটির বেশ কয়েকজন সদস্যই এখন খেলছেন কাউন্টি ক্রিকেটে। যাদের মধ্যে রয়েছেন টিম মুরতাগ। যিনি খেলেন লর্ডস ভিত্তিক কাউন্টি ক্লাব মিডলসেক্সে এবং কিছুদিন আগেই যিনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৮০০ উইকেট নেয়ার গৌরব অর্জন করেন।
এছাড়া বয়েড রানকিনও রয়েছেন এই দলে। যিনি কিছুদিন ইংল্যান্ডের হয়েও খেলেছিলেন। এরপর আবার তিনি আয়ারল্যান্ডে ফিরে আসেন নিজ দেশের হয়ে খেলার জন্য। ইংল্যান্ডের হয়ে ১টি টেস্ট এবং ৭টি ওয়ানডেও খেলেছিলেন এই ক্রিকেটার। এবার তিনি সেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই নিজ দেশের হয়ে ঐতিহাসিক লর্ডসে টেস্ট খেলতে নামবেন।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট শুরুর আগের দিন তিনি বলেন, ‘এটা হচ্ছে একটা স্বপ্ন। যা সত্য হয়ে এসেছে আমাদের সামনে। এমনকি এটা এমন এক বিষয়, যা আমার খেলোয়াড়ি জীবনে কখনও ঘটবে তা, কখনও ভাবিনি।’
লর্ডসে খেলতে পারবে ভেবে মনে মনে উচ্ছসিত বয়েড রানকিন। তিনি বলেন, ‘লর্ডসে টেস্ট খেলার চেয়ে তো আর বেশি কোনো কিছু আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না।’
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এই টেস্টে ইংল্যান্ড তাদের বেশ কয়েকজন বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটারকে বিশ্রাম দিতে পারে। যাদের মধ্যে রয়েছেন জোফরা আর্চার, অলরাউন্ডার বেন স্টোকস এবং ব্যাটসম্যান জস বাটলার। ডাবলিনে জন্ম নেয়া ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যানও নেই টেস্টে। কারণ, তিনি ইংল্যান্ডের টেস্ট স্কোয়াডের সদস্য নন।
আইএইচএস/পিআর