কিউইদের কঠিন চাপে ফেলতে ইংলিশদের করণীয়
বিশ্বকাপ ফাইনালের উইকেটের ছবি দেখে যে কেউ চমকে উঠতে পারেন। হয়তো চোখ কপালে তুলে বলে উঠতে পারেন, সে কি! এ আবার কেমন উইকেট? লর্ডসের পিচে এত সবুজ ঘাস কেন ?
তবে ইংলিশ অধিনায়ক মরগ্যান উইকেটের ঘাস নিয়ে মোটেই চিন্তিত নন। উইকেটের সবুজ রূপ নিয়ে তার আদৌ কোন মাথাব্যথা নেই। কারণ এই লর্ডসের পিচেই সারাবছর খেলে সময় কাটে। ক্রিকেট ‘মক্কা’র পিচের কী চরিত্র, গতি-প্রকৃতি তা খুব ভাল জানা ইংল্যান্ড ক্যাপ্টেনের।
তাই তো ম্যাচের আগের সংবাদ সম্মেলনে উইকেট নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মরগ্যান জানিয়ে দিলেন, ‘না না! দেখে যতটা সবুজ মনে হচ্ছে, ঘাস কিন্তু ততটা নেই।’
আসলে লর্ডসের পিচের মাঝামাঝি জায়গাটা একটু সবুজাভ। সেখানে বল পড়ে কম। গুডলেন্থ ও ফুল লেন্থটায় ঘাস কম থাকে। কাজেই পেস বোলারদের বল পিচে পড়ে ম্যুভ করার সম্ভাবনা কম। কেউ সেভাবে খেয়াল করেননি হয়তো, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান ম্যাচেও গুডলেন্থ স্পটে তেমন ঘাস ছিল না।
আজও ঘাষ ছেটে ফেলা হয়েছে। হয়ত কাল সকালেও আরেক প্রস্থ ঘাস ছেটে ফেলা হবে। আর তা খুব ভালই জানা ইংলিশদের। না হয় সবচেয়ে বেশি চিন্তার রেখা ফুটে উঠতো মরগ্যানের কপালে। কারণ প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ডের মূল শক্তিই পেস বোলিং।
ট্রেন্ট বোল্ট, ম্যাট হেনরি আর লকি ফার্গুসন- তিন ফাস্ট বোলারের বোলিংটাই যে কিউইদের সবচেয়ে বড় নির্ভরতা। বলা যায় অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসনের ব্যাট আর ঐ তিন পেসারের বোলিংয়ের জোরেই ফাইনালে নিউজিল্যান্ড। বলা যায়, কথাটি বোধ হয় কম হয়ে গেল। নিউজিল্যান্ড এতদূর এসেছেই তাদের অধিনায়কের চওড়া ব্যাট আর তিন পেসার বোল্ট, ফার্গুসন ও হেনরির কাঁধে ভর করে।
একটি ছোট্ট পরিসংখ্যানই বলে দেবে, নিউজিল্যান্ড এ চার জনের ব্যাটিং-বোলিংয়ের ওপর কতটা নির্ভরশীল।নিউজিল্যান্ড হলো সেই দল যারা সেমিফাইনালে ভারতের মত বড় ও তারকায় ঠাসা ফেবারিটদের বিদায় ঘন্টা বাজিয়ে ফাইনালে।
এ সাফল্যের পথে হেটে ফাইনালে পৌঁছলেও শুনে অবাক হতে পারেন, পুরো বিশ্বকাপে একবারের জন্য ৩০০ রানও করতে পারেনি কিউইরা। ঐ না পারায় ব্ল্যাকক্যাপসদের সঙ্গে আছে শুধু আফগানরা। মোদ্দা কথা, আফগানিস্তান আর নিউজিল্যান্ডই দুটি দল যারা এক ম্যাচেও ৩০০’র ঘরে পৌঁছতে পারেনি।
এবারের বিশ্বকাপে নিউজিল্যাান্ডের সর্বোচ্চ রান ৮ উইকেটে ২৯১। গত ২২ জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে এই রান করেছিল উইলিয়ামসনের দল। আর উল্টো দিকে ইংলিশরা প্রতি খেলায় রানের নহর বইয়ে ফাইনালে। একমাত্র দল যারা ছয় ছয়বার তিনশর বেশী রান করেছে।
এখন পর্যন্ত ইংলিশরা যে ছয় ম্যাচে ৩০০ + রান করেছে, সে ম্যাচগুলো হলো আফগানিস্তানের সাথে ম্যানচেস্টারে ৩৯৭/৬, বাংলাদেশের বিপক্ষে কার্ডিফে ৩৮৬/৬, ভারতের সাথে বার্মিংহামে ৩৩৭/৭, পাকিস্তানের সাথে নটিংহ্যামে ৩৩৪/৯, ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ৩১১/৮, চেষ্টারলিতে এই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩০৫/৮।
কাজেই উইকেট বোলিং ফ্রেন্ডলি হলে সেটা হবে ইংলিশদের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা ও চিন্তার কারণ। কিন্তু ম্যাচের আগেরদিন মরগ্যানের কথাবার্তা শুনে ও শরীরি অভিব্যক্তি দেখে মনে হলো না, তারা উইকেটের সবুজ ভাব নিয়ে চিন্তিত।
বলে দিলেন, ‘যে ঘাষ দেখা যাচ্ছে, সেটা রোদ ওঠার পর সাদা হতে থাকবে।’ এখন প্রশ্ন হলো কেমন ফাইনাল হবে লর্ডসে? হাই স্কোরি নাকি লো বা মাঝারি স্কোরের? মরগ্যান মনে করেন হাই স্কোরিং গেমই হবে ফাইনালে।তাই ইংলিশ উইকেটের সবুজ ঘাস নিয়ে চিন্তিত নন।
তবে আগে ব্যাট করবেন কি-না? আজ প্রেস মিটে কিন্তু তা বলতে পারলেন না। ইংলিশ ক্যাপ্টেন মরগ্যানের চেয়ে উইকেটে ঘাসের অস্তিত্ব দেখে বরং চিন্তিত ইংলিশ মিডিয়া। প্রেস কনফারেন্সে এক ইংলিশ সাংবাদিক বড় আশা নিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন ইংলিশ ক্যাপ্টেনের কাছে, উইকেট যেমন তাতে কি টস জিতে ফিল্ডিং আগে করবেন?
মরগ্যানের জবাব, ‘এখনই বলতে পারছি না। কাল খেলার আগে সকালে দেখবো মাটি কতটা শক্ত। তার ওপর নির্ভর করবে কি করবো আগে।’
ভাবুন একবার, যে দল এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে রানের ফলগুধারা ছুটিয়েছে, যাদের তিন ব্যাটসম্যান বেয়ারষ্টো, রুট আর রয় মিলেই করেছেন ১৪৭১ রান, যাদের ব্যাট থেকে এসেছে পাঁচটি শতরান আর তাদের দল ৩০০’র বেশি রান করেছে ছয়বার- সেই ইংল্যান্ডও ফাইনালে আগে বোলিং না ব্যাটিং করবে, তা নিয়ে দ্বিধা-সংশয়ে। এটাই বুঝি ফাইনালের চাপ।
দু’ পক্ষই বার বার বলছে, যে দল চাপ কাটিয়ে স্বাভাবিক পারফরম করতে পারবে এবং নির্দিষ্ট দিনে সময় মত যা যা করণীয় তা করতে পারবে, তারাই জিতবে। তবে একটা কথা, পুরো আসরে একবারও ৩০০ রান করতে না পারা নিউজিল্যান্ডকে মানসিক চাপে ফেলতে এবং কঠিন পরীক্ষায় ফেলতে হলে ইংলিশদের বড়সড় স্কোর গড়তে হবে।
প্রশ্ন করা হলো, নিউজিল্যান্ড হলো সেই দল যারা আফগানিস্তানের মতোই একবারের জন্য ৩০০ রান করতে পারেনি। ২৪০, ২৬০ আর ২৮০ রানের আশপাশে থেকেও জিতে গেছে। সেই দলকে চাপে ফেলার জন্য কি বড়সড় টার্গেট মোক্ষম দাওয়াই?
ইয়ন মরগ্যান জবাবে যা বললেন, তার প্রথম কথা হলো যা ভাবা হয়েছিল তা হয়নি। মানে রানের নহর বয়ে যায়নি এবারের বিশ্বকাপে। বরং যা ভাবা হয়েছিল, তার চেয়ে কম রান উঠেছে। গত দুই তিন বছরে ইংল্যান্ডে গড়পড়তা যে রান হয়েছে এবারের বিশ্বকাপে তার চেয়ে কম রান হয়েছে এবং উইকেটের সাথে মানিয়ে নিতে আগের চেয়ে কষ্ট করতে হচ্ছে বেশি।
আর নিউজিল্যান্ড সম্পর্কে মরগ্যানের ব্যাখ্যা, ‘নিউজিল্যান্ড কিন্তু দারুণভাবে মাঝারি স্কোরও ডিফেন্ড করেছে।আর লর্ডস কোন সময়ই হাই স্কোরিংয়ের জন্য বিখ্যাত ভেন্যু না। তবে আমার মনে হয় যে, কালকের ফাইনাল ম্যাচে রান হবে। এখানে লড়াই হবে সেয়ানে সেয়ানে।’
এআরবি/এসএএস