প্রবাসীদের আক্ষেপ : সেমিতে থাকতে পারত বাংলাদেশও
একবার ভাবুন তো আজ ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে ভারত আর নিউজিল্যান্ড নয়, যদি বাংলাদেশ আর ভারতের সেমির যুদ্ধ হতো, তাহলে অবস্থাটি কি দাঁড়াতো? দর্শক, ভক্ত-সমর্থক মিলে একটা ‘এলাহি কান্ড’ বেধে যেত নিশ্চিত। স্টেডিয়ামে উপচে পড়া দর্শক হতো।
সাত সকাল থেকেই ওল্ড ট্রাফোর্ডের চারপাশ ভরে যেত বাংলাদেশ আর ভারতের সমর্থকে। সারাক্ষণ কানে ভেসে আসতো ‘বাংলাদেশ.. বাংলাদেশ..., ইন্ডিয়া.. ইন্ডিয়া... ধ্বনি। লাল-সবুজ পতাকা আর তেরঙ্গার রঙিন হয়ে যেত মানচেস্টারের পথ-ঘাট।
কিন্তু তার আর প্রয়োজন নেই। ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে একচেটিয়া ভারতীয় সমর্থকদের দাপট। পুরো মাঠে একটাই আওয়াজ, একটিই স্লোগান, ইন্ডিয়া.., ইন্ডিয়া...। কিউই সাপোর্টারারাও যে নেই, তা নয়। তবে তাদের সংখ্যা বড্ড কম।
অথচ সব কিছু ঠিক থাকলে আর সাথে ভাগ্যর আনুকুল্য পেলে হয়তো আজ ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ভারতের বিপক্ষে সেমির যুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে পারতো মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, মোস্তাফিজদের বাংলাদেশ। তাহলে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে কি যে পরিবেশ হতো! তা কল্পনাও করা যায় না। অতি বড় লিখিয়েও তার সত্যিকার বর্ণনা দিতে পারতেন কি-না সন্দেহ।
২ জুলাই বার্মিংহামের এজবাষ্টনে বাংলাদেশ আর ভারতের গ্রুপ ম্যাচেই বোঝা গেছে এখন টাইগারদের সঙ্গে ভারতীয়দের লড়াই মানেই অন্যরকম উত্তেজনা। সর্বোচ্চ আকর্ষণ আর জমজমাট লড়াই।
বিশ্বকাপ নিয়ে দেশে উৎসাহ, উদ্দীপনা, প্রাণচাঞ্চল্যতা একরকম আর যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে উৎসাহ-আগ্রহ অন্যরকম। যুক্তরাজ্যের প্রবাসী বাংলাদেশিরা লন্ডন, কার্ডিফ, বার্মিংহাম, নটিংহ্যাম, টনটন, ব্রিস্টলসহ সবকটা শহর চষে বেড়িয়েছেন। যুক্তরাজ্য তো বটেই যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড থেকেও প্রতি খেলায় প্রবাসী বাংলাদেশি এসেছিলেন লাল সবুজের টানে।
বার্মিংহামের এজবাস্টনে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে টিভির পর্দায় ভারতীয়দের একচ্ছত্র দাপট চোখে পড়লেও, সে ম্যাচেও অন্তত প্রায় পাঁচ হাজার বাংলাদেশি ছিলেন মাঠে। ভারতীয়দের মত বুুদ্ধি খাটিয়ে আগে ভাগে টিকিট কিনে রাখতে পারলে সে সংখ্যা হতো দ্বিগুণ।
জাগো নিউজের পাঠকদের মনে থাকতে পারে, বাংলাদেশ ও ভারত ম্যাচের আগে এ প্রতিবেদকের বার্মিংহাম থেকে লেখা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল ৫০ থেকে ১০০ পাউন্ড বেশি দিয়ে ভারতীয়দের কাছ থেকে বাধ্য হয়ে চড়া মূল্যে টিকিট কিনতে বাধ্য হচ্ছেন বাংলাদেশিরা। বিষয়টি কিছুই না। বেশিরভাগ প্রবাসী ভারতীয় বাংলাদেশি ও পাকিস্তানীদের তুলনায় স্বচ্ছল। তারা বুদ্ধি খাটিয়ে আগেভাগে অনলাইনে টিকিট কিনে রেখেছিলেন। আর বাংলাদেশের সাপোর্টাররা ভেবেছিলেন খেলার আগে দিয়ে কিনবো। ততক্ষণে প্রায় ৭০% টিকিট চলে গিয়েছিল ভারতীয়দের হাতে। সে কারণেই বার্মিংহামে বাংলাদেশ আর ভারতের ম্যাচে আকাশি-নীল রং আর তেরঙ্গা পতাকা চোখে পড়েছে বেশি।
কিন্তু এটা জোর দিয়েই বলে দেয়া, বাংলাদেশ সেমিফাইনাল খেলতে পারলে দৃশ্যপট যেত বদলে। সবার জানা বাংলাদেশ সেমিফাইনাল খেললে হয়ত চার নম্বর হয়েই উঠতো। তখন খেলা পড়তো ভারতেরই সঙ্গে। ঐ মহারণের আগে বাংলাদেশের সমর্থক ও ভক্তরা সেমিফাইনালের টিকিট আগ ভাগেই সংগ্রহ করতেন। তাই আজ (মঙ্গলবার) ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে বসতো বাঙালির মিলনমেলা।
লাল-সবুজ জার্সি গায়ে লাল সবুজ পতাকা হাতে অন্তত ১২-১৪ হাজার বাঙালি থাকতেন স্টেডিয়ামে। কিন্তু তা আর হলো কই? নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে সমানতালে লড়ে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষ মুহূর্তে অল্পের জন্য হেরে যাওয়া আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্রিস্টলে বৃষ্টির বৈরী আচরণ মাশরাফি বাহিনীর সেমিতে খেলার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে।
তারপরও সম্ভাবনা আর সুযোগ দুই'ই ছিল। কিন্তু ২ জুলাই সুবিধাজনক অবস্থা তৈরি করেও ভারতের কাছে হারে সব সম্ভাবনা গেছে নিঃশ্বেষ হয়ে। তাই এখন দেশের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য জুড়ে টাইগার সমর্থক ও ভক্তদের মন খারাপ। তারাও চরম হতাশ।
লন্ডনের বাদশা, হাসান, তাহের, জুলহাস, ফায়েজ, কার্ডিফের দূর্বার, উজ্জ্বল, ব্রিস্টলের ফারুক, কামরুল, টনটনের মোর্শেদ, রিয়াজ, বার্মিংহামের খুকুমণি, পথিক- সবার আক্ষেপ, ইস সেমিফাইনালে যদি আমাদের প্রিয় জাতীয় দল থাকতো, তাহলে আমরা যে যেখানে থাকি না কেন, সদলবলে পাড়ি জমাতাম ম্যানচেস্টারে।
এদের অনেকেই বার্মিংহামে ভারতের সাথে ম্যাচ দেখতে এসেছিলেন যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে। আবার পাকিস্তানের সাথেও মাঠে দেখা মিলেছে এদের অনেকের সাথে।
সেমির যুদ্ধে প্রিয় জাতীয় দল না থাকায় অনেকেই আফসোস অনুশোচনায় স্বদেশী সাংবাদিকদের কাছে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে আক্ষেপের সুরে বলেছেন, সত্যিই খুব খারাপ লাগছে। অনেক আশায় বুক বেঁধেছিলাম এবার আমাদের প্রিয় দল খেলবে সেমিফাইনাল। আমরা হৈচৈ করে দল বেঁধে মাঠে যাব। বাংলাদেশ-বাংলাদেশ ধ্বনিতে ম্যানচেস্টারের আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে তুলবো।
আত্মীয়, পরিজন, বন্ধুবান্ধবের বাসায় গিয়ে হয় আগের রাতে না হয় খেলার দিন কাকডাকা ভোরে গিয়ে উঠে ছুটতাম ওল্ড ট্রাফোর্ডে। সত্যিই তখন ম্যানচেস্টার হয়ে উঠতো ঢাকা। ওল্ড ট্রাফোর্ড ইন্ডিয়া স্লোগানের পাশাপাশি ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ’ ধ্বনিতে কেপে কেপে উঁঠতো।
শুধু আফসোসে পোড়াই নয়, অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিই সেমিফাইনাল আর ফাইনালের টিকিটও বিক্রি করে দিয়েছেন। তাদের কথা, আমাদের দল নেই। আর খেলা দেখে কী করবো?
এআরবি/এসএএস