নতুন কোচ কে, হাথুরু না অন্য কেউ?
শুরু হয়ে গেছে নতুন প্রধান কোচ খোঁজার কাজ, হাথুরুসিংহেকে ফেরাতে এক পক্ষ তৎপর হয়ে উঠেছেন। যেভাবেই হোক না কেন, আসল কথা হলো স্টিভ রোডস উপাখ্যান শেষ। তার সাথে আপোষে সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। এ ইংলিশ আর বাংলাদেশের কোচ নন।
বিশ্বকাপ শেষে তাকে ঢাকায় ডেকে নিয়ে তার সাথে কথা বলে আপোষ মীমাংসায় তার সাথে করা ২০২০ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত সকল চুক্তি নবায়ন না করে উল্টো চুক্তি বাতিল করেছে বিসিবি। ৮ জুলাই (সোমবার) তাকে না করে দিয়েছেন বিসিবি প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দীন চৌধুরী সুজন।
এদিকে যে মুহুর্তে কোচের সাথে চুক্তি বাতিল হয়েছে, তারও আগে থেকেই শুরু হয়েছে নতুন প্রধান কোচ খোঁজা। বেশ কয়েকজন পরিচালকের সাথে কথা বলে বোঝা গেছে, নতুন কোচ নিয়ে বোর্ডে খানিক দ্বিধা-সংশয়ে রয়েছে। বোর্ডের অন্যতম নীতি নির্ধারক মাহবুব আনাম এবং খালেদ মাহমুদ সুজনসহ কয়েকজন সাবেক কোচ ও বর্তমানে শ্রীলংকার প্রধান কোচ হিসেবে কর্তব্যরত চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে আবার ফিরিয়ে আনার পক্ষে।
চন্ডিকা হাথুরুসিংহে তো বাংলাদেশকে বিপাকে ফেলে চলে গিয়েছিলেন একবার। তারপরও তাকে আবার আনতে চাওয়ার পেছনে কারণ কি? প্রশ্ন করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পরিচালকের ভাষ্য, ‘হাথুরুসিংহে ভাল কোচ। তার মেধা-প্রজ্ঞা স্টিভ রোডসের চেয়ে বেশি। গেম প্ল্যান, লক্ষ্য পরিকল্পনাও ভাল। আর সবচেয়ে বড় কথা, হাথুরুর ব্যক্তিত্ব প্রবল। ক্রিকেটারদের শাসন, অনুশাসন করার ক্ষমতা আছে। দল নিয়ন্ত্রন এবং শৃঙ্খলা-নিয়মানুবর্তিতা বজায় রাখার কাজেও হাথুরু বেশি দক্ষ এবং তার সামর্থ্য প্রমাণিত।’
এ কারণেই নাকি হাথুরুকে ফিরিয়ে আনার কথা ভাবা হচ্ছে। যদিও বলা হচ্ছে এ লংকানের সাথে শ্রীলংকা ক্রিকেট বোর্ডের চুক্তি আছে আরও ১৬ মাস। তাই তাকে নেয়া সহজও হবে না হয়তো। তারপরও বিসিবি চাইলে আর মাহবুব আনাম কথা বললে হয়তো হাথুরুকে আবার টাইগারদের কোচ হিসেবে দেখা যেতেও পারে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, শ্রীলংকান কানেকশন বরাবরই অনেক ভাল মাহবুব আনামের। অর্জুনা রানাতুঙ্গার মত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ব্যক্তিত্বের সাথে তার ব্যক্তিগত সু-সম্পর্ক, সখ্য অন্যরকম। জয়সুরিয়া, রোশন মাহনামাসহ অনেক লঙ্কান ক্রিকেটারের সাথে তার ব্যক্তিগত সম্পর্কও বেশ ভাল।
সবচেয়ে বড় কথা, শ্রীলংকায় তার ব্যবসায়িক যোগাযোগটা অনেক বেশি। তাই মাহবুব আনাম মধ্যস্ততা করলে হাথুরুকে পেতে কষ্ট করতে হবে না বিসিবিকে। তবে সবার আগে খুঁটিয়ে দেখতে হবে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন কি চান? তার মতামতইটাই সবচেয়ে বড়।
এদিকে বিসিবি সভাপতি পাপন এখনও লন্ডনে অবস্থান করছেন। সেটা এমনি এমনি নয়। বোর্ড সভাপতি, এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট এবং আইসিসির নির্বাহী সদস্য হিসেবে বিসিবি প্রধান ১৪ জুলাই ফাইনালের আমন্ত্রিত ও অভ্যাগত অতিথি।
আর বিশ্বকাপ ফাইনাল শেষে লর্ডসে আইসিসির বার্ষিক সাধারণ সভাও রয়েছে দুই দিন ব্যাপি। সেটা হবে ১৬ থেকে ১৭ জুলাই। আইসিসি বার্ষিক সাধারণ সভা শেষে ১৮ কিংবা ১৯ জুলাই নাজমুল হাসান পাপন দেশের উদ্দেশ্যে লন্ডন ছাড়বেন। ঢাকা থেকে বিসিবি পরিচালক ও মুখপাত্র জালাল ইউনুস মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে সেটাই জানিয়েছেন।
তার মানে বিসিবি প্রধান দেশে ফেরার আগে কোন কিছুই চূড়ান্ত হচ্ছে না, বা হবার কোন সম্ভাবনাও নেই। এদিকে হাথুরুসিংহই যে আবারও কোচ হচ্ছেন, সেটাও নিশ্চিত নয়।
একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, বিসিবি নতুন হাই প্রোফাইল কাউকে খুঁজছে। সেটা বর্তমান পাকিস্তান কোচ ‘মিকি আর্থারও’ হতে পারেন। মিকি আর্থার বিশ্বকাপের পর পাকিস্তানের কোচ পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এছাড়া আফগানিস্তানের ক্যারিবীয় কোচ ফিল সিমন্সও ফ্রি হয়ে যাবেন। তার সাথেও আফগান বোর্ডের চুক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে।
এর বাইরে বাংলাদেশে আরেক সাবেক কোচ জেমি সিডন্সের নামও শোনা যাচ্ছে কারো কারো মুখে। শেষ পর্যন্ত এদের মধ্যে কে হবেন বাংলাদেশের নতুন কোচ? তা নির্ভর করবে, বিসিবি বিগ বস নাজমুল হাসান পাপনের কাকে পছন্দ, তার ওপর।
কারণ শেষ অবধি পাপনই শেষ কথা। তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এখন হাথুরুই হোন কিংবা অন্য কেউ, যাকে পাপন চাইবেন, তার যাকে পছন্দ তিনিই হবেন নতুন কোচ। তার আগে হয়তো অনেক গুঞ্জন, গুজব বাতাসে ভেসে বেড়াবে। অনেক জল্পনা-কল্পনার ফানুস উড়বে বাতাসে। তবে সে গুলো শুধুই গুঞ্জন আর জল্পনা-কল্পনা। মূল বিষয়টা হচ্ছে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের পছন্দ-অপছন্দ।
এআরবি/আইএইচএস/এমএস