ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

কানাডার বিপক্ষে সেই ম্যাচেই বিশ্বকাপে অভিষেক মাশরাফির

আরিফুর রহমান বাবু | লর্ডস, লন্ডন থেকে | প্রকাশিত: ১০:০০ পিএম, ০৪ জুলাই ২০১৯

২০০১ সালের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের কথা। সম্ভবত ৫ কি ৬ নভেম্বর। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জাতীয় দলের অনুশীলন শেষে তার টেস্ট অভিষেকের খবরটা আগাম জেনেছিলেন এক সাংবাদিকের কাছ থেকে। শুনতে হয়ত কানে লাগতে পারে। মনে হতে পারে, আত্মপ্রচারণা বুঝি! কিন্তু আসল সত্য হলো, তার টেস্ট অভিষেকের সাথে আমার একটা অন্যরকম সম্পৃক্ততা আছে।

যেটা দেবব্রত মুখোপাধ্যয়ের লিখা মাশরাফি বিন মর্তুজার আত্মজীবনীতেও উল্লেখ আছে। মাশরাফি নিজের মুখেই বলেছেন, আমার টেস্ট অভিষেকের আগাম খবর দিয়েছিলেন সাংবাদিক বাবু ভাই। তখনো একাদশ চূড়ান্ত হয়নি; কিন্তু নির্বাচকদের সাথে কথা বলে আমি জেনেই ওই সুখবর দিয়েছিলাম তখনকার উচ্ছ্বল ২০ বছরের যুবা মাশরাফিকে।

সৌভাগ্যবশতঃ তার বিশ্বকাপ অভিষেকটাও চোখের সামনে দেখতে পেরেছিলাম আমি। ২০০৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ডারবানের কিংসমিডে বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচটি খেলেছিলেন তখনকার ২২ বছরের টগবগে যুবা মাশরাফির।

তবে পার্থক্য একটাই, টেস্ট অভিষেকের মত বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলার আগে তাকে আগাম খবর দিতে হয়নি। ততদিনে পারফরমার মাশরাফি নিজেকে সু-প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন।

২০০১ সালের নভেম্বর থেকে ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি- ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে হিসেব করলে ১৫ মাস হয়ত। ভাবছেন এই এক বছরের বেশি সময়ে বুঝি অনেকগুলো ওয়ানডে খেলে হাত পাকিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিলেন নড়াইলের চিত্রা পাড়ের তেজোদ্বীপ্ত যুবা মাশরাফি।

আসলে তা নয়। ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্যারিয়ারে প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে তার নামের পাশে ছিল মাত্র তিন ওয়ানডে ম্যাচ। ওই তিনটি মাত্র একদিনের ম্যাচে তার উইকেট ছিল (২/২৬ + ২/৪৮ + ০/৪২) = ৪ টি; তাও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে।

ওই ক্ষুদ্র ওয়ানডে অভিজ্ঞতা নিয়েই ২০০৩ বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন মাশরাফি। শুধু তাই নয়, বাঁ-হাতি মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুর সাথে টিম বাংলাদেশের স্ট্রাইকবোলারও বনে গিয়েছিলেন তিনি।

মনের আয়নায় সেই দিনটি এখনো জ্বল-জ্বল করছে। দিনটি ছিল ২০০৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। রাত পোহালেই কোরবানির ঈদ। আর মাশরাফিসহ এক ঝাঁক তরুণ হাবিবুল বাশার, সানোয়ার, হান্নান সরকার, আল শাহরিয়ার রোকন, অলক কাপালি, তাপস বৈশ্য আর এহসানুল হক সিজাদের সেটা ছিল প্রথম বিশ্বকাপ। মাশরাফির সাথে ওই ক’জনারও ছিল বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। তারপরও মাশরাফির বিশ্বকাপ অভিষেকের কথা খুব ভাল মনে আছে।

আগের দিন ডারবানের কিংসমিডে প্র্যাকটিস কভার করতে গিয়েই মাশরাফি নজর কাড়লেন সবার। অনুশীলনে তার সবার চেয়ে আলাদা। ছয় ফুটের ওপরে লম্বা। সুঠামদেহী এক তরুণ অনুশীলনে যেন হরিণ চপলতায় একদিন ওদিক দৌড়াদৌড়ি ছুটোছুটি করছিলেন।

আগের দিন নেট প্র্যাকটিসের আগে পড়ন্ত বিকেলে খানিক বৃষ্টি হয়েছিল। এখনো মনে আছে পেসার মঞ্জু আর মাশরাফি আম খেতে খেতে ড্রেসিং রুমের বাইরে এসে মিডিয়ার সাথে দু’চার কথা বলেছিলেন। অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট আগের দিন আলাপে জানিয়ে দিয়েছিলেন, কাল তিন পেসার খেলবেন।

দলে খালেদ মাহমুদ সুজনও ছিলেন। এ ছাড়া বাঁ-হাতি মঞ্জুরুল ইসলাম আর ডানহাতি তাপস বৈশ্যও স্কোয়াডের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। কোন তিনজন? পাইলট জানিয়ে দিলেন, যেহেতু মঞ্জুর আছে ১৯৯৯ সালে যুক্তরাজ্যে বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা, তাই ওই বাঁ-হাতি থাকবেই। সাথে বোলিংয়ের সূচনা করবে মাশরাফি।

এবং খুব মনে আছে, বাঁ-হাতি মঞ্জু আর ডান হাতি মাশরাফিই শুরু করেছিলেন বোলিং। মঞ্জু প্রথম আর মাশরাফি দ্বিতীয় ওভার বোলিং করেন।

কেমন ছিল তার বোলিং? খুব জানতে ইচ্ছে করছে তাই না? তাহলে শুনুন, মাশরাফি তখন ২০ বছরের টগবগে যুবা। এখনকার মত ৩৬ বছর বয়সী নন। আর সে সময় তার হাঁটুতে সাত-আটটি কেন, একটি অপারেশনও হয়নি। একদম শতভাগ সুস্থ। শরীরে শক্তিও ছিল প্রচুর। বল করতেন প্রচন্ড গতিতে। ছুটে আসতেন প্রায় ৩০ গজ দুর থেকে ১৭-১৮ স্টেপ দৌড়ে।

মাইল মিটার হিসেব কষলে তার গড়পড়তা বলের গতি ১৪০ কিলোমিটারের আশপাশে থাকতো। আর এখনকার মত শুধু লাইন লেন্থের ওপর ভর করে বোলিংও করতেন না। প্রচন্ড গতির সাথে সুইংয়ের মিশেলে তখনকার মাশরাফি ছিলেন এক সত্যিবার ফাস্ট বোলারের প্রতিচ্ছবি। উইকেটের দুই দিকেই সুইং করাতে পারতেন। আর মাঝে মধ্যে শর্ট অব লেন্থে পিচ ফেলে বাউন্সার ছুড়ে ব্যাটসম্যানের সাহস আর টেকনিকের পরীক্ষা নেবার সাসর্থ্যও ছিল দারুন।

কিন্তু জানেন, সেই দুর্দান্ত মাশরাফির বিশ্বকাপে প্রথম বল হাতে নিয়ে ভাল করতে পারেননি। মানে শুরু ভাল হয়নি। প্রথম বলেই বাউন্ডারি হজম করে। কানাডিয়ান ওপেনার ডেভিসনের বিপক্ষে বিশ্ব কাপের প্রথম ওভারে ৫ রা দিয়েছিলেন মাশরাফি।

প্রথম বলেই বাউন্ডারি হজম করেন। দ্বিতীয় বল ওয়াইড। একজন ফাস্ট বোলার বিশ্বকাপে প্রথম বল হাতে নিয়ে প্রথম দুই বলে বাউন্ডারির পর ওয়াইড। খুব স্বাভাবিকভাবেই খেই হারিয়ে ফেলার কথা; কিন্তু অসম্ভব মনের জোরের মাশরাফি তার পরের পাঁচ বলে (ওয়াইড করায় এক বল বেড়ে গিয়েছিল) আর রান দেননি।

দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে আবার সেই ডেভিসনের কাছে চার হজম করেন; কিন্তু কথায় বলে না ‘দান দান তিন দান।’ ঠিক তৃতীয় ওভারে গিয়ে (ইনিংসের ষষ্ঠ) ওই ডেভিসনকেই পরিষ্কার বোল্ড করে দেন।

ওই ওভারের প্রথম বলটি ছিল ‘নো।’ এখনকার মত তখন নো বলে ফ্রি হিট ছিল না। তাই ঠিক পরের বলে ডেভিসনের উইকেট উপড়ে যায় মাশরাফির এক্সপ্রেস ডেলিভারিতে। ৫ ওভারের প্রথম স্পেলে একটি উইকেট পেয়েছিলেন। কত রান দিয়ে তা মনে নেই। তবে ক্রিকইনফো জানাচ্ছে, তার বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচের প্রথম স্পেলটি ছিল ৫-০-২১-১।

এরপর ৩৮ নম্বর ওভারে আবার ফিরে এসে তিন ওভার বোলিং করলেন। ৪০ নম্বর ওভার মানে তার সপ্তম ওভারে দ্বিতীয় উইকেট। এবার কানাডিয়ান মিডল অর্ডার বাগাইকে বোল্ড। ম্যাচে তার বোলিং ফিগার ছিল ৮-০-৩৮-২। ব্যাট হাতেও সুবিধা হয়নি। ফিরে গিয়েছিলেন শূন্য রানে।

সবচেয়ে বড় কথা, ওই ম্যাচে আনকোরা কানাডার কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে ৬০ রানে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। যে কারণে ম্যাচটি বাংলাদেশের বিশ্বকাপ তথা ওয়ানডে ইতিহাসের এক কালো দিন হয়ে আছে।

ওই এক হারে গোটা জাতির ঈদ মাটি হয়ে গিয়েছিল। আর সেই ম্যাচে যার বিশ্বকাপ অভিষেক হয়েছিল, সেই মাশরাফি এখন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক আর এক নম্বর পেস বোলার। ১৬ বছর পর বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচটি খেলতে যাচ্ছেন কাল।

এআরবি/আইএইচএস/পিআর

আরও পড়ুন