জয়ের তীব্র বাসনাই ছিল না ক্রিকেটারদের মধ্যে!
খুব বেশি দুর পিছনে যেতে হবে না। অনেক পরিসংখ্যান ঘাঁটাঘাটিরও দরকার নেই। খালি বাংলাদেশ এবার যে তিন ম্যাচে ৩২০প্লাস রান করেছে, ওই ম্যাচগুলোর চালচিত্র পর্যালোচনা করলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে, ম্যাচে বাংলাদেশের সম্ভাবনা ছিল কতটা?
আসুন একটু ছোট্ট পরিসংখ্যান দেখি। বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে রাবাদা-লুঙ্গি এনগিদির মত প্রচন্ড গতির ফাস্ট বোলার আর লেগস্পিনার ইমরান তাহিরের গড়া দক্ষিণ আফ্রিকার ধারালো বোলিং শক্তির বিপক্ষে আগে ব্যাট করে ৩৩০ রানের বড়-সড় স্কোর গড়ে জিতেছে ২১ রানের পরিষ্কার ব্যবধানে।
সে ম্যাচে কেউ শতরান করেননি। তবে হাফ সেঞ্চুরির সংখ্যা ছিল দুটি। একটি সাকিব আল হাসানের ৮৪ বলে ৭৫। আর অন্যটি মুশফিকুর রহীমের ৮০ বলে ৭৮। এছাড়া সৌম্য ৪২ আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ছিল ৪৬ রান। সবচেয়ে বড় কথা সাকিব আর মুশফিক তৃতীয় উইকেটে ১৪২ রানের বড়-সড় পার্টনারশিপ তৈরি করেছিলেন। তার ওপর ভর করেই ৩৩০-এ পা রাখা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সামনে ছিল ৩২২ রানের বিশাল টার্গেট। যা তাড়া করে ধরা দেয় ৭ উইকেটের বড় জয়। ওশানে থমাস, শেলডন কটরেল, শ্যানন গ্যাব্রিয়েলদের মত ভয়ঙ্কর ফাস্ট বোলিংয়ের বিপক্ষে ৪১.৩ ওভারে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। সহজ এই জয়ে সাকিব আল হাসান (৯৯ বলে অপরাজিত ১২৪) আর লিটন দাসের (৬৯ বলে ৯৪) চতুর্থ উইকেটে অবিচ্ছন্ন ১৮৯ রানের পার্টনারশিপে টাইগাররা জয়ী হয় ৭ উইকেটে, ৫১ বল হাতে রেখেই।
এরপর অস্ট্রেলিয়ার সাথে বিপক্ষে ৩৮১ রানের পিছু ধেয়ে মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্সদের মত সময়ের সেরা ফাস্ট বোলারদের বোলিং তোপের মুখেও ৩৩৩ রান করে ফেলা। সে ম্যাচে সাকিব আর শতরান করতে পারেননি। ফিরে যান ৪১ রানে। সে ঘাটতি পুষিয়ে শতরান হাঁকান মুশফিকুর রহীম (৯৭ বলে ১০২)। ওপেনার তামিমের ব্যাট থেকে আসে ৭৪ বলে ৬২ রান। শেষ দিকে ছয় নম্বর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ খেলেন ৫০ বলে ৬৯ রানের ঝড়ো ইনিংস।
আগে খুব বড়-সড় পার্টনারশিপ তৈরি না হলেও মুশফিক আর মাহমুদউল্লাজ দুই ভায়রাভাই মিলে গড়ে তোলেন ১২৭ রানের বড় জুটি। আর তাতেই অজিদের ৩৮১ রানের জবাবে ৩৩৩ পর্যন্ত যেতে পারলো বাংলাদেশ।
সেখানে মঙ্গলবার ভারতের বিপক্ষে টার্গেট ছিল ৩১৫ রান। ভুবনেশ্বর কুমার, মোহাম্মদ সামি, জসপ্রিত বুমরাহ, হার্দিক পান্ডিয়া আর চাহালের সাজানো ভারতের শক্তিশালী ও বৈচিত্র্যময় বোলিংয়ের বিপক্ষে ওই ৩০০ প্লাস রান করতে গিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যেন জুটি গড়ার কথা বেমালুম ভুলেই গেলেন।
কাল ও রকম একটি জুটি গড়ে উঠলে হয়তো অনায়াসে জিতে যেত বাংলাদেশ; কিন্তু একটি ১০০ বা তার বেশি রানের পার্টনারশিপও হয়নি প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম উইকেটে একটি ৫০ রানের পার্টনারশিপও হয়নি। একমাত্র সপ্তম উইকেটে সাব্বির আর সাইফউদ্দীন ৬৬ রানের একটি জুটি গড়ে তুলেছিলেন।
আর তাতেই ২৮৬ পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া। যা হয়নি, তা নিয়ে নাই বা বলা হলো। সাব্বির আর সাইফউদ্দীন জুটি ৬৬-তে না থেমে আর ২০/২৫ রান জুড়ে দিলেই তো হয়ে যেত; কিন্তু তাও হয়নি।
মোটকথা, বাংলাদেশ হেলায় সুযোগ হারিয়েছে। একটি ১০০ রানের পার্টনারশিপ হলে অনায়াসে জিতে যেত মাশরাফির দল। সে কাজটি না হওয়ায় ভক্ত ও সমর্থকদের হতাশা বেশি। সবার একটাই কথা, ৩০০ প্লাস রান তাড়া করে জিততে হলে একা সাকিবের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। সাকিবকে দু’জন সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দিলেই চলতো। দুটি ৭০-৮০ রানের জুটি তৈরি হলেও হয়ে হতো; কিন্তু সৌম্য, মুশফিক আর লিটন সেট হয়ে আউট হয়ে সে সুযোগ ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছেন। এ কারণেই ভক্তদের হতাশা বেশি।
তাদের একটাই প্রশ্ন, আগের খেলাগুলোয় যে মানসিক দৃঢ়তা, জয়ের তীব্র বাসনা আর দৃঢ় সংকল্প ছিল, আমাদের জিততে হবে আমাকে দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে- সেই কঠিন পণটা কাল ছিল অনুপস্থিত। সবাই সাকিবের ওপর তাকিয়ে ছিলেন। ভাবটা এমন বোঝাটা সাকিব একাই বহন করবে। আমরা একটু ধরলেই চলবে। সেটা হয় না। হয়নিও।
এআরবি/আইএইচএস/এমএস