মাশরাফি-তামিমের পাশেই দাঁড়ালেন রোডস
এবারের বিশ্বকাপে সব খেলা শেষেই প্রেস কনফারেন্সে এসেছেন কথা বলতে কিন্তু আজ আসেননি মাশরাফি বিন মর্তুজা। অথচ বাংলাদেশ মিডিয়া অপেক্ষায় ছিলেন তার কথা শুনতে। স্বপ্নভঙ্গের বেদনাকে কিভাবে দেখছেন মাশরাফি? ম্যাচের ব্যবচ্ছেদই বা কী?- তা খেলা শেষে পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অল্প কথায় বলেও দিয়েছেন।
তাই বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল স্বপ্নভঙ্গের ম্যাচ শেষে প্রতিক্রিয়া জানাতে এলেন কোচ স্টিভ রোডস। তিনি তো আর আর বাঙালি-বাংলাদেশি নন, ইংলিশ। যাদের আবেগ এমনিতেই কম। তাই চোখে মুখে হতাশা, বেদনা, দুঃখযন্ত্রণার চিহ্নও খুব কম।
কথা বললেন এমনভাবে যেন, যা হয়েছে সেটাই অনেক। ভাবটা এমন, দলের এমন পারফরমেন্স ও ফলে তিনি সন্তুষ্ট। কিন্তু আজ যে ক্রিকেটারদের ব্যর্থতা আর ব্যাটসম্যানদের দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের কমতির কারণে দল বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে- তা একবারের জন্যও বললেন না স্টিভ রোডস।
অধিনায়ক মাশরাফির বোলিং অকার্যকরিতা, তামিমের ক্যাচ ড্রপ আর অনুজ্জ্বল ব্যাটিং- এসব নিয়ে প্রশ্ন করা হলেও টাইগার কোচের মুখ থেকে একটি নেতিবাচক কথাও বের হয়নি। তিনি সবার পক্ষেই কথা বলেছেন।
তার কন্ঠে আক্ষেপ একটাই, ৩০ রান বেশি করে ফেলেছে ভারত। সেটা কি নিজেদের আলগা আর কমজোরি বোলিংয়ের কারণে? না, তাও নয়। পরাজয়ের কারণ ব্যাখ্যা করতে বলা হলে স্টিভ রোডসের ব্যাখ্যা, ‘মনে হয় টসটা খুব ক্রশিয়াল ছিল। সকালে উইকেটটা সহজ ছিল। ব্যাটিং করাটাও ছিল তুলনামূলক স্বস্তির। যে কারণে ৩০টি রান বেশি হয়েছে।’
ভাববেন না তিনি বলেছেন, রোহিত শর্মার ক্যাচ ড্রপের কারণে অমন হয়েছে। বাংলাদেশ কোচের ধারণা, ‘উইকেট সহজ ছিল বলেই ভারতীয়রা ৩০ রান বেশি করতে পেরেছে। একই উইকেট পরের সেশনে স্লো হয়ে পড়েছিল। তাই স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল ব্যাটিং করা সম্ভব হয়নি। আমরা ৩০ রান বেশি দিয়েছি আর হেরেছি ২৮ রানে।’
সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহীম আর লিটন দাস এবং সাকিবের আউট- সবগুলোই ক্রিকেটীয় পরিভাষায় ‘সফট ডিসমিসাল’। প্রশ্ন করা হল আচ্ছা এক ইনিংসে এতগুলো ব্যাটসম্যান সফট ডিসমিসাল কি পরাজয়ের অন্যতম কারণ?
রোডসের ব্যাখ্যা, ‘খালি চোখে সফট ডিসমিসাল মনে হলেও আসলে তা নয়। ঐ আউটগুলোর বেশিরভাগই ছিল স্লোয়ার ডেলিভারি, বোলারদের ক্রেডিট ছিল। তারাও বুদ্ধি খাটিয়ে ছুড়েছেন। আর উইকেট স্লো হয়ে যাওয়ায় ভারতীয় বোলারদের স্লোয়ার ছোড়াও যায় সহজ হয়ে। আর সেই স্লোয়ারগুলোর বিপক্ষে আমাদের ব্যাটসম্যানদের আউট হতে দেখে হয়ত মনে হয়েছে সফট ডিসমিসাল।’
সেমিফাইনাল খেলতে না পারার হতাশা তাকে খুব পোড়াচ্ছে- কথা শুনে ও শরীরী অভিব্যক্তি দেখে তা মনে হলো না। বরং অনেক সাজানো গোছানো বক্তব্যের মত বলে দিলেন, ‘আমি সে অর্থে হতাশ নই। বরং আমরা তিনটি ম্যাচ জিতেছি। দু দুটি বড় দলকে হারিয়েছি। সেটাই অনেক কৃতিত্বের, গর্বেরও। আমি আমার দলকে নিয়ে সন্তুষ্ট, গর্বিত।’
তামিমের ক্যাচ মিস ও তার এবারের বিশ্বকাপে ভাল খেলতে না পারা নিয়েও তেমন অসন্তোষ নেই তার। তাই মুখে এমন কথা, ‘আসলে তামিমের ভাগ্য সহায় ছিল না। সে প্রাণপন চেষ্টা করেছে। অনুশীলনে প্রচুর পরিশ্রম করেছে। বাড়তি ঘাম ঝরিয়েছে। অনেক মন প্রাণ দিয়ে ব্যাটিং প্র্যাকটিসও করেছে। কিন্তু যে কোন কারণেই হোক রান পায়নি। আসলে কখনো কখনো এমন হয়, যখন অনেক প্রাণপন চেষ্টাও সফল হয় না, যায় বিফলে। তামিমের ক্ষেত্রেও হয়ত তাই হয়েছে। ভুলে গেলে চলবে না তামিম দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যান। অনেক ম্যাচ জয়ের নায়কও। অতীতে তার হাত ধরেই অনেক ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। আমার বিশ্বাস, সে মেধাবী ও প্রতিভাবান। বয়সও মোটামুটি অনুকূলে। হয়ত চার বছর পর বিশ্বকাপ আবার সুযোগ পাবে।’
একইভাবে প্রশ্ন উঠলো মাশরাফির বোলিং নিয়েও। এক ভারতীয় সাংবাদিক প্রশ্ন করে বসলেন, আচ্ছা দলে মাশরাফির বোলিংটা কেমন ছিল? তা নিয়ে কি আপনি সন্তুষ্ট? এখানেও কোচ রোডস অধিনায়ক মাশরফির পাশে।
তার ব্যাখ্যা, ‘মাশরাফি প্রাণপন চেষ্টা করেছে। সে সাহসী যোদ্ধা। বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক সফল সেনাপতি। যে কোন কারণেই হয়ত সে সফল হয়নি। আমি নিশ্চিত সে নিজেও তার পারফরমেন্সে অসন্তুষ্ট, হতাশ।’
রোহিত শর্মার ক্যাচ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে স্টিভ রোডস বলে ওঠেন, ‘আমরা জানি তামিম সেফ হ্যান্ড। তার হাত ফসকে ক্যাচ বের হয় কম। তবে আজ সেই ভাইটাল ক্যাচ ড্রপ হয়েছে। রোহিত শর্মা আর বিরাট কোহলির মত ব্যাটসম্যানের ক্যাচ ড্রপ হলে পরিণতি নেতিবাচক হয়। সেটাই হয়েছে।’
এআরবি/এসএএস