ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

ভারতীয় মিডিয়ায় মাশরাফিই যেন ‘চ্যাম্পিয়ন’ ক্যাপ্টেন

আরিফুর রহমান বাবু | বার্মিংহাম থেকে | প্রকাশিত: ০৯:৩০ পিএম, ০১ জুলাই ২০১৯

বাংলাদেশ বিশ্বকাপের সেরা চারে থাকবে কি থাকবে না? মাশরাফি বিন মর্তুজা দল প্রথমবার বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে সেমিফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে কি পারবে না? তার উত্তর জানতেই রাজ্যের আগ্রহ সবার। প্রিয় দলকে বিশ্বকাপের শেষ চারে দেখার অপেক্ষায় উন্মুখ কোটি বাঙালি, মুুখিয়ে গোটা বাংলাদেশ।

মায়া কিংবা স্বপ্ন নয়। বাস্তব, ঘষা বাস্তব। চরম সত্য হলো, আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর শ্রীলঙ্কা বিদায় নিলেও বাংলাদেশ এখনো টিকে আছে বিশ্বকাপে। টিকে আছে বলাটা খুব ভাল শোনাবে না। আসলে বলা উচিৎ সেমিফাইনালের দৌড়ে বেশ ভাল মতই আছে মাশরাফির দল।

নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে জিততে পারলে আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়ে এক পয়েন্ট খোয়া না গেলে এখন সেমিফাইনালের খুব কাছাকাছি পৌঁছে যেত টাইগাররা। তবে এখনও শেষ চারে পা রাখার সম্ভাবনা আছে যথেষ্ঠই।

ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে শেষ দুই ম্যাচ জিতে গেলে সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনা থাকবে অনেক। তারপরও শেষ চার কিন্তু নিশ্চিত হবে না। ঘিরে থাকবে নিশ্চয়তার ঘোর অমানিশা। ওদিকে ঘাড়ে নিশ্বাষ ফেলা ইংল্যান্ড শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিতে গেলে কপাল পুড়বে টাইগারদের।

এমন সমীকরণের সামনে দাড়িয়ে ২ জুলাই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ভারতের সাথে। ভারতীয়রা কি ভাবছে টাইগারদের নিয়ে। জানতে ইচ্ছে করছে, তাই না?

তাহলে শুনুন, যেহেতু আগের দিন এই বার্মিংহামের এজবাস্টনে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ ছিল ভারতের, তাই আজ কোহলি, রোহিত, ধোনিরা আর প্র্যাকটিস করেননি। কেউ আনুষ্ঠানিক সংবাদ সন্মেলনে কথাও বলেননি।

তাই বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটারদের চিন্তাভাবনা, মনোভাব, লক্ষ্য, পরিকল্পনা অজানাই থেকে গেছে। ভারতের ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গার গতকাল ইংল্যান্ডের সঙ্গে খেলার পরে মিক্সড জোনে মিডিয়ার সামনে কিছু কথা বলেছেন বাংলাদেশকে নিয়ে।

সেখানে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য তথ্য নেই। ‘বাংলাদেশ আমাদের অবাক করেছে, অনেক ভাল খেলে সেমির লড়াইয়ে শরিক হয়েছে’- এসব কোন কথাই নেই। টিম ইন্ডিয়ার লক্ষ্য-পরিকল্পনায় বাংলাদেশ সেভাবে হাইলাইটেড হয়েছে কি হয়নি?- তা অজানা থাকলেও ভারতীয় মিডিয়া যে বাংলাদেশকে অনেক বেশি বড় করে দেখছে ভারতীয় প্রচার মাধ্যমের কাছে যে বাংলাদেশ এখন রীতিমত ‘বড়’ দল, তাতে সন্দেহ নেই।

তাই তো ভারতীয় সাংবাদিকদের বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সম্পর্কে রাজ্যের কৌতূহল। এই বলো না, রিয়াদ খেলবে কি-না? সৌম্য আর লিটনের বেড়ে ওঠা, ঢাকা লিগে তাদের অনেক রান সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি, সৌম্য বিশ্বকাপ খেলতে আসার আগে ঢাকাই লিগে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে- এসব খুব ভালই জানা ভারতীয় সাংবাদিকদের।

আগে এমনটা ছিল না। ঢাকায় ভারতীয় দল খেলতে গেলে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের কাছ থেকে এটা ওটা জেনে, এর ওর সম্পর্কে ধারণা নিতেন ভারতীয় সাংবাদিকরা। এবার সে ধারা পাল্টেছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ইমেজ অনেক বদলেছে। তারাও স্টারের মর্যাদা পাচ্ছেন এখন। কেমন সেটা? খুব জানতে ইচ্ছে করছে, তাই তো?

তাহলে শুনুন, ভারতের অন্যতম শীর্ষ ও অভিজাত ইংরেজী দৈনিক ‘দ্যা টেলিগ্রাফে’র প্রধান ক্রিকেট করেসপন্ডেন্ট লোকেন্দ্র প্রতাপ শাহী; যিনি কলকাতা, দিল্লীতে বসে টেলিফোনে স্যার ভিভ রিাচার্ডস, ইমরান খান, স্যার ইয়ান বোথাম, স্টিভ ওয়াহ, ব্রায়ান লারা, রিকি পন্টিং, ওয়াসিম আকরাম, অর্জনা রানাতুঙ্গা, অরবিন্দ ডি সিলভা, শেন ওয়ার্নসহ ভিনদেশের সব নামী-দামি ক্রিকেটারের ইন্টারভিউ করেন, সেই শাহী যখন প্রেস কনফারেন্স শেষে উঠে ছুটে এসে মাশরাফিকে জড়িয়ে ধরেন এবং বলেন, 'এক্সকিউজ মি, ক্যান আই হ্যাভ এ ফটোগ্রাফ উইদ ইউ?'

তখন আর বুঝতে বাকি থাকে না, মাশরাফির ইমেজ এখন অনেক বেশি উজ্জ্বল আর বড়। মাশরাফির সঙ্গে থাকা বাংলাদেশ মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমাম আর নিরাপত্তারক্ষী প্রায় না করে করে দিয়েছিলেন। কিন্তু মাশরাফি ঠিক প্রেসবক্সের বাইরে এক কোনায় গিয়ে লোকেন্দ্র প্রতাপ শাহীর অনুরোধ রক্ষা করলেন।

ভারতীয় সমসাময়িক ক্রিকেট রিপোর্টারদের মধ্যে একটু অন্তর্মুখি লোকেন্দ্র প্রতাপ শাহীকে ওভাবে আবেড়তাড়িত হয়ে মাশরাফির সাথে ছবি তুলতে দেখে অবাক বাংলাদেশের সাংবাদিকরাও।

শুধু লোকেন্দ্র প্রতাপ শাহী কেন, যারা এরই মধ্যে আট-নয়টি বিশ্বকাপ এবং প্রায় হাজারখানেক ওয়ানডে ম্যাচ কভার করে ফেলেছেন, সেই কলকাতার সংবাদ প্রতিদিনের গৌতম ভট্টাচার্য্য আর আজকালের দেবাশীষ দত্তর মত লদ্ধ প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেট লিখিয়েরাও টিম বাংলাদেশ আর মাশরাফির প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

বোঝাই গেল, বিশ্বকাপ জিততে পারেন আর নাই পারেন, তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেমিফাইনাল খেলুক কিংবা নাই খেলুক- মাশরাফিও ‘চ্যাম্পিয়ন’ ক্রিকেটার। অনেক বড় অধিনায়ক। তারচেয়ে বড়, বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন ‘শক্তি’ বাংলাদেশের অধিনায়ক। সেটাই কি কম?

এআরবি/এসএএস/এমএস

আরও পড়ুন