একশ’র বেশি স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করতে চান মোসাদ্দেক
এখনও ছুটিতে টাইগাররা। শনিবার (২৯ জুন) সন্ধ্যায় বা রাতে পাঁচ দিনের ছুটি শেষ হবে। আজ ৩০ জুন আবার অনুশীলন শুরু করবে মাশরাফির দল। যে সব ক্রিকেটার ছুটিতে বার্মিংহ্যামের বাইরে গিয়েছিলেন, তার একটা অংশ গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকেই ফিরতে শুরু করেছেন। আর বাকিরা আজ সন্ধ্যা নাগাদ ফিরে আসবেন। কারণ শনিবার রাত পোহালেই আবার প্র্যাকটিস। আর ২ জুলাই মঙ্গলবার এজবাস্টনে ভারতের সাথে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ।
একটা দল বিশ্বকাপের মত মহা আসরে ২৪ থেকে ২৯ জুন ছুটি কাটালো। কোনোরকম ঐচ্ছিক অনুশীলনও করলো না! এটা নিয়ে কোনোরকম নেতিবাচক কথাবার্তা হয়নি। কেউ সমালোচনাও করেননি।
সে অর্থে তির্যক কথাবার্তা শোনা যায়নি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, কোনো দলই বিশ্বকাপ চলাকালীন পাঁচ দিন ছুটি কাটায়নি। এমনকি ভারত, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মত দলও পাঁচ দিন ছুটি কাটানোর সিদ্ধান্ত নেয়নি।
বাংলাদেশ দলই শুধু একটানা ১২০ ঘন্টা ক্রিকেটের বাইরে। অবশ্য এটাও ঠিক, কোন দল বিশ্বকাপে আট দিন বিরতিও পায়নি। ভারত বিশ্বকাপ শুরুর ৬ দিনের মাথায় ৫ জুন প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছে। ততদিনে বেশ কটি দল গড়পড়তা দুটি করে ম্যাচ খেলে ফেলেছিল।
যাই হোক, ২৪ জুন আফগানিস্তানের সাথে খেলার পর ওই আট দিনের লম্বা বিরতির কারণেই হয়ত পাঁচদিনের ছুটি নিয়ে নেতিবাচক কথা বার্তা হয়নি। তবে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের অনেকেরই কথা, ছুটি দরকার ছিল। তবে সেটা পাঁচ দিনের না হয়ে তিন দিন করা যেত।
আজ টিম হোটেল 'হায়াত রিজেন্সি'র সামনে বাংলাদেশের প্রচার মাধ্যমের সাথে কথা বলতে এসে প্রথমেই সে পাঁচ দিনের ব্রেক নিয়ে প্রশ্নর মুখোমুখি হলেন অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হলো, এই যে পাঁচ দিনের ব্রেকটা পেলেন, সেটা কিভাবে দেখছেন?
মোসাদ্দেক জবাব দিতে গিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলেন, ব্রেকটা দরকার ছিল। তার ব্যাখ্যা, টানা অনুশীলন ও ম্যাচ খেলতে খেলতে ক্রিকেটাররা খানিক ক্লান্ত ও অবসাদগ্রস্ত। কাজেই কিছুটা বিশ্রাম ও বিরতির দরকারও ছিল।
মোসাদ্দেক বলেন, ‘এটা বড় একটা টুর্নামেন্ট। আমরা যেভাবে ম্যাচ খেলছিলাম, তাই আমার মনে হয় ব্রেকটা দরকার ছিল। সবাই ছুটি কাটিয়ে ভালোভাবে হোটেলে ব্যাক করছে। কাল থেকে হয়তো আবার অনুশীলনে ফিরব। এখন শুধু ম্যাচ নিয়েই চিন্তা করবো।’
প্রথমে ভাবা হচ্ছিল, বিশ্বকাপ দলে নিয়মিত জায়গা পাবেন না মোসাদ্দেক। সাব্বির রহমান রুম্মন হয়তো সাত নম্বরে খেলবেন। কিন্তু আয়ারল্যান্ডে তিন জাতি আসরের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠে (১৯২.৫৯ স্ট্রাইকরেটে ২৭ বলে ৫২) দলকে ভালো জায়গায় নিয়ে যাবার পাশাপাশি বিশ্বকাপ একাদশে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করে ফেলেছেন মোসাদ্দেক।
তারপরও ছিল সংশয়-সন্দেহ, মোসাদ্দেক সাত নম্বরে নেমে শেষ দিকে হাত খুলে খেলতে পারবেন ? ওই সময় যে স্ট্রাইকরেট দরকার, তার পক্ষে কি তত স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করা সম্ভব? বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, মোসাদ্দেক সে কঠিন কাজটি বেশ দক্ষতার সাথে করে দেখাচ্ছেন।
খুব বড় ইনিংস খেলার চেয়ে অবস্থা বুঝে হাত খুলে খেলে রান গতি বাড়ানোর চেষ্টাই করে যাচ্ছেন। তাতে সাফল্যও মিলেছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষ দ্বিতীয় ম্যাচটি বাদ দিলে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে প্রথম ম্যাচে ২০ বলে ২৬, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় খেলায় ১৬ বলে ২৬ আর শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের সাথে খুব দরকারের সময় ২৪ বলে ৩৫ রানের কার্যকর ইনিংস উপহার দিয়ে মোসাদ্দেক এখন নির্ভরযোগ্য পারফরমারই বনে গেছেন।
এই যে দলে জায়গা পাকাপোক্ত হয়ে যাওয়া, তা নিয়ে কিছু বলতে বলা হলে মোসাদ্দেক বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি আসলে পাকাপোক্ত হওয়া নিয়ে তেমন কিছু ভাবেননি।
তার ইচ্ছে ও লক্ষ্য ছিল একটাই- সুযোগ পেলেই তা কাজে লাগানো এবং সামর্থ্যের সবটুকু ঢেলে ভালো কিছু করা। এই অলরাউন্ডারের ভাষায়, ‘আমি যখন এখানে আসি আগের থেকেই আমার চিন্তা ছিল যে সুযোগ পেলে ভালো কিছু করার চেষ্টা করবো। সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। সুযোগ পেলেই যে ভালো করবো সেই নিশ্চয়তা নেই। আমি আমার নিজের কাজটা ঠিকমতো করার চেষ্টা করেছি। এর বাইরে কিছু না। এখন পর্যন্ত তাই করেছি। সামনের ম্যাচগুলোতেও সেই চেষ্টাই থাকবে ইনশাআল্লাহ।’
দলে আপনার ভূমিকা কী হবে? সে সম্পর্কে কোনো পূর্ব ধারণা ছিল কি? মোসাদ্দেকের উত্তর, ‘বিশ্বকাপ খেলতে আসার আগে প্রিমিয়ার লিগ দিয়ে আমি আমার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আমি সুযোগ পেলে সেভাবেই খেলবো এবং ন্যাচারাল খেলার চেষ্টা করবো। প্রিমিয়ার লিগ থেকে এই অনুশীলনটাই করে এসেছি। চেষ্টা ছিল। এখন সেটাই করছি।’
লোয়ার মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করা কতটা চ্যালেঞ্জিং? মোসাদ্দেক বলেন, ‘এটা শুধু আমার জন্য না, সবার জন্য চ্যালেঞ্জিং। সাত নম্বরে নেমে বড় ইনিংস খেলা মানে নিজের থেকে দলের রানটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। সবাই চেষ্টা করে এখানে এসে যেন দ্রুত রানটা তুলতে পারে। প্রিমিয়ার লিগ থেকেই এ চেষ্টা করে আসছি। এখনও সেই চেষ্টায় আছি। স্ট্রাইকরেট নিয়েই চিন্তা করছি। চিন্তা থাকে যখনই ব্যাটিংয়ে যাব, তখন ১০০ র বেশি স্ট্রাইক রেট নিয়ে ব্যাটিং করবো। বোলিংয়ের সময় আমার রোল হয়তো থাকে ৫-৬ ওভার। উইকেটের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আসলে ডট বল করা। যেই পরিস্থিতিতে আমি যাচ্ছি চেষ্টা করছি ডট বল বেশি করে করার।’
এআরবি/এমএমআর/এমএসএইচ