চাপে ভোগেন বিরাট কোহলিও!
ভয়-ডরতো বহুদুরে। তাকে দেখলে মনেই হয় না কোনো রকম মানসিক চাপ, উৎপীড়ন, উদ্বেগ-উৎকন্ঠা আর পরাজয়ের শঙ্কা আছে ভিতরে। অনুকুল আর প্রতিকুল সব জায়গা আর পরিবেশে বিরাট কোহলি একইরকম। এমন নয়, তিনি অনেক বেশি ভালো পারফরমার তাই বুঝি চাপ কম।
হ্যাঁ, ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলা আর পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরলে সন্দেহাতীতভাবে বিরাট কোহলিই বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটসম্যান। বর্তমান সময় তো বটেই সব সময়েরও অন্যতম সেরা এবং সফল উইলোবাজের নাম বিরাট কোহলি। তারপরও বিশ্ব ক্রিকেটে ভারতের বর্তমান অধিনায়কই যে ভাল পারফরমার, আর কেউ নেই।
বিষয়টা কিন্তু তেমন নয়। মেধাবি, দক্ষ, যোগ্য, প্রতিভাবান ও বিশ্বমানের পারফরমার আছেন আরও; কিন্তু তাদের কাউকেই বিরাট কোহলির মত মাঠে এবং মাঠের বাইরে তেমন স্মার্ট, সাবলীল, স্বপ্রতিভ মনে হয় না। ধরা যাক, ভারত কোন ম্যাচে অনেক চাপে; কিন্তু বিরাট কোহলি যখন উইকেটে আসেন বা আসবেন, তখন তাকে দেখলে মনেই হয় না কোনো রকম চাপে আছেন।
আসলে কি তাই? কোহলি কি কখনো চাপ অনুভব করেন না? কোনরকম মানসিক চাপ তাকে কখনো গ্রাস করতে পারে না? আসলে, কোহলিরও চাপ আছে। তিনিও মানুষ। তারও চিন্তা-উদ্বেগ আছে। তিনিও ভিতরে ভিতরে মানসিক চাপ অনুভব করেন।
আজ বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনের জনাকীর্ন প্রেস কনফারেন্স রূমে ভারতীয়, ইংলিশ, বাংলাদেশিসহ প্রায় শতাধিক সাংবাদিকের সামনে সংবাদ সন্মেলনে হলে বসে সেই না বলা কথাটিই প্রথমবারের মত বললেন, ভারত অধিনায়ক। জানিয়ে দিলেন, তিনিও চাপে ভোগেন। তবে সেটাকে চাপ হিসেবে না নিয়ে, অন্যভাবে উপভোগ করেন। এবং এ সময়টায় ভালো খেলার পথ খুঁজে বেড়ান।
কথা হচ্ছিলো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের রোববারের ম্যাচ নিয়ে। এর মধ্যে এক ভারতীয় সাংবাদিক হঠাৎ করেই প্রশ্ন করে বসলেন, ‘আচ্ছা! বিরাট আপনিতো কয়েকবারই বলেছেন বিশ্বকাপ একটা অন্যরকম চাপের ক্ষেত্র। যে কারো জন্যই অন্যরকম চাপ। কিন্তু আপনি যখন ব্যাটিংয়ে নামেন, তখন দেখে মনেই হয় না আপনার মধ্যে কোন ভয়-ডর আছে। কোনোরকম চাপে ভুগছেন। আপনি কি বলবেন, কিভাবে ওই চাপ সামলে নিজেকে স্বাভাবিক রাখেন এবং ভাল পারফর্ম করেন?’
বিরাট কোহলি একটু হেসে বললেন, ‘যদি বলি, আমার কোন চাপ নেই বা কোন চাপ অনুভব করি না, তাহলে মিথ্যে বলা হবে। আমিও চাপে ভুগি। তবে সেটা অনেক সযত্নে লুকানো থাকে। আমি সব রকম চাপকে এমন ভাবে লুকিয়ে রাখি, যাতে কেউ দেখে না ফেলে (একটু হেসে)। কাউকে বুঝতে দেই না। আসলে আমিও মানুষ। আমারও চাপ আছে। আর সবার মত আমার পেটেও মাঝে-মধ্যে শূন্যতা তৈরি হয়। আমি সেটা পছন্দই করি। ’
কেন দল সংকটে বা বিপদে থাকলে তিনি পেটের ভেতরে শূন্যতা অনুভব করেন কেন? বিরাট কোহলি কেন এত ভাল খেলেন, সংকটে-বিপদে তার ব্যাট কেন আরও বেশি সচল হয়? এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বিরাট কোহলি তা পরিষ্কার করে দিয়েছেন। তার কথা শুনে মনে হলো, ‘ভিতরে অনুভব করা চাপ (যা সযত্নে লুকানো) সেটাই আসলে তার ভাল খেলার সবচেয়ে বড় তাগিদ।’
আর তাই কন্ঠে অমন কথা, ‘আসলে আমি পেটের ভেতর ওই প্রজাপতি ওড়ার মত চাপ অনুভব করি বলেই ভাল খেলার তাড়না প্রবল থাকে। চাপের মধ্যে ভাল খেলার তাগিদ বেশি অনুভব করি। আমি খুব সন্তুষ্ট যে আমার মধ্যে ঐ অনুভবটা থাকে। সেই চাপটাকে মনের ভিতরে খুব বেশি করে পুষে না রেখে নিজের করণীয়টা ঠিক মত করার চিন্তায় থাকি। আমাকে ভাল করতে হবে- এমন চিন্তা থেকেই ভিতরে ভাল খেলার তাগিদ অনুভব করি।’
উইকেটে নামার সময় নিজের অবস্থান নিয়েও ভাবেন না বলে জানিয়ে দেন কোহলি। তিনি বলেন, ‘আমি যখন উইকেটে হেঁটে যাই, ওই সময় কখনো ভাবি না আমার নামের পাশে কত রান আছে। আগে কি করেছি? ক্যারিয়ার কেমন- এসব কিছুই মাথায় থাকে না। আনিও না। ভাবি শুধু ওই নির্দিষ্ট দিনটির কথা। আসলে সেটাই ধরার বিষয়।’
তবুও মাঠে নামার সময় চাপটা অনুভব করেনই। কোহলি বলেন, ‘তারপরও ২২ গজে যাবার সময় ভিতরে একটা চাপ ঠিকই অনুভব করি। আমার মনে হয়, বিশ্বের সব ক্রিকেটারেরই এমন বোধ ও অনুভব হয়। তবে যখন ভাল খেলে সংকট কাটাতে শুরু করি, তখন মনে হয় দলের জন্য কিছু করতে পেরেছি।’
চাপ নিয়ে বিরাটের শেষ কথা, ‘আমার মনে হয় শরীরি ভাষাও একদম সঠিক হওয়া দরকার এবং অবশ্যই সবারই চাপ থাকা উচিৎ এবং চাপ অনুভব করাও উচিৎ। আর আপনি যদি চাপ অনুভব করতে না চান, সেটাই ধরা পড়ে। চোখে পড়ে আমি চাপ অনুভব করতে চাচ্ছেন না। আমি খুশি যে আমার চাপ অনুভব হয়। আর আমি ওই চাপের মধ্যেই নিজের মনটাকে তৈরি করে ফেলি। আমার কি করণীয় তাও স্থির হয়ে যায় এবং ভাবতে থাকি দলের জন্য আমাকে অবদান রাখতে হবে।’
এআরবি/আইএইচএস/এমকেএইচ