বড্ড অসময়েই জ্বলে উঠলো দক্ষিণ আফ্রিকা
২৩ জুন লর্ডসে পাকিস্তানের কাছে হারার পরই কবরে ঢুকে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন। যে কারণে প্রোটিয়াদের শেষ দুই ম্যাচ হয়ে যায় শুধুই আনুষ্ঠানিকতা; কিন্তু সেই আনুষ্ঠানিকতার প্রথম ম্যাচে তারা যেভাবে জ্বলে উঠলো শ্রীলংকার বিরুদ্ধে তাতে দেশটির সমর্থকদের কেবল আপসোসই বেড়েছে- এই পারফরম্যান্স এতদিন তাদের কোথায় ছিলো?
চেস্টার লি স্ট্রিটে লংকানদের পাড়া-মহল্লার দল বানিয়ে ৯ উইকেটের বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তাও ১২.৪ ওভার হাতে রেখে। এই বিশ্বকাপে অন্যতম বড় ব্যবধানের জয়-পরাজয়ের ম্যাচ এটি। ৬ জুলাই বিশ্বকাপের শেষ লিগ ম্যাচ তাদের। যে ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা খেলবে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে, যারা সবার আগের নিশ্চিত করেছে সেমিফাইনালের টিকিট।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের কাছে হার দিয়ে। তারা প্রথম জয়ের মুখ দেখেছিল আফগানিস্তানকে হারিয়ে এবং পরে এক পয়েন্ট যোগ হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ম্যাচটি বৃষ্টিতে বাতিল হওয়ায়। শ্রীলংকাকে বিধ্বস্ত করার পর এখন প্রোটিয়াদের ঝুলিতে ৫ পয়েন্ট। শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারলে টেবিলে নিজেদের অবস্থান একটু ওপরে উঠবে, এই যা!
সবকিছু পরিকল্পনামতো হয়েছিল বলেই লংকানদের বিরুদ্ধে দাপুটে জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ফ্যাফ ডু প্লেসি টস জিতে প্রথম সুবিধাটা পেয়েছিলেন। কারণ, সীম বোলারদের ফ্রেন্ডলি উইকেটে টস ছিল একটা ফ্যাক্টর। শ্রীলংকাকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে সে সুবিধা পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছিল প্রোটিয়ারা। কাগিসো রাবাদা ইনিংসের প্রথম ডেলিভারিতেই তুলে নেন লংকান প্রথম উইকেট। টস জিতে অধিনায়কের বোলিং নেয়ার সিদ্ধান্ততে শুরুতেই সঠিক প্রমাণ করেন এ প্রোটিয়া পেসার।
রান দেড়’শ হওয়ার আগেই ৬ উইকেট চলে যাওয়ার পর লংকানদের স্কোর ২০০ পার হবে কিনা তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছিল। তবে মিডল অর্ডারে কুশাল মেন্ডিস ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা এবং লোয়ার অর্ডারে থিসারা পেরেরা ও ইসুরু উদানারা কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারায় শ্রীলংকা যেতে পারে ২০৩ রান পর্যন্ত।
২০৪ রানের টার্গেটে পৌঁছাতে প্রোটিয়াদের হারাতে হয়েছে কেবল কুইন্টন ডি ককের উইকেটটি। ২৬ বছরের এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানকে ১৫ রানে সাজঘরে পাঠান মালিঙ্গা। ম্যাচে শ্রীলংকার শেষ আনন্দ ছিল ওইটুকুই। বাকি সময় তারা বল করেছেন এবং মাঠের বাইরে থেকে বল কুড়িয়ে এনেছেন।
অধিনায়ক ফ্যাফ ডু প্লেসি এবং হাশিম আমলা মিলেই দলকে সহজে নিয়ে গেছেন জয়ের বন্দরে। অধিনায়ক সেঞ্চুরিটা অবশ্য পূরণ করতে পারেননি। তার চার রান কম থাকা অবস্থায়ই ম্যাচ শেষ। হাশিম আমলা অপরাজিত ছিলেন ৮০ রানে।
সব হারানোর পর এমন একটা জয় দক্ষিণ আফ্রিকার সমর্থকদের বিষাদময় হৃদয়ে কিঞ্চিত আনন্দ দিয়েছে। তারা এখন চাইছে যাতে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েই বিশ্বকাপ মিশনটা শেষ করতে। কারণ, এবারের বিশ্বকাপটা তাদের জন্য বড় এক চ্যালেঞ্জই ছিল। হার দিয়ে শুরুর পর তারা আর কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি। সব হারিয়ে লংকানদের বিরুদ্ধে বিশাল এ জয়টা তাদের জন্য কেবলই সান্তনা।
এমন ম্যাচ জয়ের পর প্রোটিয়া অধিনায়ক আক্ষেপ করেই বললেন, ‘বিশ্বকাপের প্রথম সপ্তাহটাই আমাদেরকে দুরে ঠেলে দিয়েছে। ওই এক সপ্তাহেই আমরা দুটি বড় দলকে পেয়েছিলাম। ইংল্যান্ড এবং ভারত। মাঝে বাংলাদেশের কাছেও হারতে হলো। যে ধাক্কা থেকে আসলে আমরা বেরিয়ে আসতে পারিনি।’
আরআই/আইএইচএস/এমএস