ভারত নয়, নিজেদের নিয়েই চিন্তা করতে চান সৌম্য
পরিসংখ্যান জানাচ্ছে ভারতের বিপক্ষে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ আর দু’বছর আগে এই বার্মিংহ্যামেই আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে মোটেও সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ। সে অর্থে প্রতিদ্বন্দ্বীতা গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। গত বিশ্বককাপে ১০৯ রানে আর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে টাইগাররা হেরেছে ৯ উইকেটে। বিশ্বকাপ শুরুর আগে গা গরমের ম্যাচেও ফল সুবিধা হয়নি।
এবার সেই রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, ধোনি, শামি, চাহাল, কেদার ও কুলদিপ যাদবদের বিপক্ষে কি করবে মাশরাফির দল? প্রত্যাশা অনেক বড়; কিন্তু বাস্তবে প্রচন্ড শক্তিশালী ভারতের সাথে আদৌ কুলিয়ে উঠতে পারবে বাংলাদেশ?
কোহলির দলকে ঠিক কিভাবে দেখছে বাংলাদেশ? প্রতিপক্ষ ভারতকে নিয়ে টাইগারদের ভাবনটাই বা আসলে কি? এমন কৌতুহলি প্রশ্ন এখন অনেকের মুখে।
মাঠে ফল কি হবে, তার জবাব দেবে সময়। তবে এখনকার খবর, বাংলাদেশ নিজেদের নিয়েই ভাবছে বেশি। ভারত কেমন দল, কতটা শক্তিশালী, তাদের লাইনআপে কারা কারা আছেন? এসব সাত-পাঁচ ভাবার চেয়ে নিজেদের শক্তি-সামর্থ্যের কথা ভাবতেই বেশি আগ্রহী টাইগাররা।
আজ সৌম্য সরকারের কথা শুনে মনে হলো টাইগাররা নিজেদের সামর্থ্যের পরিচয়টা মাঠে দিতেই বেশি আগ্রহী। ভারত কতটা শক্তিশালী, কেমন দল, তাদের ব্যাটিং ও বোলিং শক্তি কতটা, লাইনআপে কে কে আছেন? এসব ভেবে বাড়তি চাপ নেয়ার কোনো ইচ্ছেই নেই মাশরাফি বাহিনীর।
আজ বার্মিংহ্যামে টিম হোটেল হায়াত রিজেন্সির বাইরে দাঁড়িয়ে স্বদেশি প্রচার মাধ্যমের সাথে কথা বলতে গিয়ে সৌম্য সরকার প্রথমেই এমনটা বুঝিয়ে দিলেন। জানিয়ে দিলেন, ‘ওরা ভারত, আমরা বাংলাদেশ।’
এই বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে নাম দেখে খেলার কোন সুযোগ নেই। আপনি কার সাথে খেলছেন, সেই দল কেমন, কতটা শক্তিশালী, তাদের দলে কারা কারা আছে? এসব সাত পাঁচ ভেবে ক্রিকেট হয় না। এমন ভাবলে শুরুতেই ব্যাকফুটে চলে যেতে হবে। নিজেদের সেরা বহূদুরে, ভালো খেলাও হবে কঠিন।’
বিষয়টাকে ওভাবে না দেখে সৌম্য চান জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামতে। তার কথা, লক্ষ্য থাকবে জয়ের। সবার আগে একটা ভালো পরিকল্পনা করে নামতে হবে। ওদের শক্তির জায়গা-দুর্বলতা বুঝে আমাদের তিন বিভাগেই ভালো করতে হবে। ভালো করতে পারলে অবশ্যই জিততে পারি।’
প্রতিপক্ষর চেয়ে নিজেদের নিয়ে ভাবার প্রসঙ্গ টেনে সৌম্য যোগ করেন, ‘আমরা আমাদের কাজ নিয়েই ভাবছি।’
ভারতের বোলিং অনেক ধারালো ও শক্তিশালী; কিন্তু সৌম্যর অনুভব, বাস্তবতা হলো তাদের ভাল, শক্তিশালী ভেবে বসে থাকলে চলবে না। করণীয় ঠিক করতে হবে। কাকে খেলবো। কোন বোলারকে দেখে আর কাকে মারবো? এসব ঠিক করা এবং বাস্তবে প্রয়োগ করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নির্দিষ্ট দিনে কাকে পিক করতে পারলে সহজে খেলতে পারব আর কাকে সমীহ করতে হবে- এই প্ল্যান করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
শুধু প্ল্যান করে বসে থাকলেই চলবে না। জায়গামত তার বাস্তবায়ন এবং পরিবেশ-পরিস্থিতির আলোকে তা বদলে পরিস্থিতি অনুযায়ী আবার নতুন প্ল্যান করতে হবে। এমনটা জানিয়ে সৌম্য বলেন, অনেক সময় এমন হয়- আগে থেকে ভেবে রেখেছি ওই বোলারকে পিক করব। দেখা গেল ম্যাচে সেই সবচেয়ে ভালো বোলিং করছে। তখন সেটা মানিয়ে নিতে হবে। আসলে এডজাস্টমেন্টটা খুব জরুরি। এটাই দেখার বিষয়, কাকে পিক করছি, কাকে সমীহ করছি।’
সাকিব আল হাসান আছে ফর্মের তুঙ্গে। তার ব্যাট ও বল দলকে দারুণ সার্ভিস দিচ্ছে। তবে সৌম্য মনে করেন, বাকিদের এখন কাজই হলো ইনফর্ম সাকিব ভাইকে সাহায্য করা। তাইতো মুখে এমন কথা, ‘একটা টুর্নামেন্টে একজন খুবই ভালো খেলে, একজনের খুব ভালো সময় যাবে। সে কতটা ধরে রাখে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। বাকিদের কাজ তখন তাকে সমর্থন করে যাওয়া। সবাই ভালো করলে দল একটা ভালো ফল পাবে।’
ভারতের সাথে এজবাস্টনের পিচ কেমন ব্যবহার করতে পারে? এ প্রশ্ন করা হলে সৌম্য একটু ভেবে জবাব দেন। কারণ, এই মাঠে আগামী ৩০ জুন ভারত খেলবে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের সাথে। এখন দেখার বিষয় হলো, ৪৮ ঘন্টা পর বাংলাদেশ কি ভারতের সাথে সেই ব্যবহার হওয়া পিচেই খেলবে, না নতুন কোনো উইকেটে খেলা হবে?
তা আগে জানতে চান সৌম্য। কারণ এই বাঁ-হাতির ধারনা, ‘আসলে ২ জুলাই ভারতের সাথে আমাদের ম্যাচে এজবাস্টনের পিচ কেমন হবে? তা নির্ভর করবে কোন পিচে খেলা হবে, তার ওপর। নতুন উইকেট থাকলে পেসারদের একটু সুবিধা থাকে শুরুতে আর ভারত ও ইংল্যান্ড ম্যাচ যে পিচে হবে, তাতে যদি আমরা খেলতে নামি, তখন ব্যবহৃত উইকেট থাকলে স্পিনারদের বাড়তি সাহায্য পাবার সম্ভাবনা থাকবে।’
সৌম্যর শেষ কথা, আমাদের আসলে অত-শত ভাবলে চলবে না। করনীয় শেষ দুই ম্যাচ জিততে সামর্থ্যের শেষ বিন্দু দিয়ে চেষ্টা করি। আমাদের যে দুটো ম্যাচ আছে দুটি জিতলে রেসে থাকতে পারব।’
এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম