ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

মাশরাফি-সাকিবদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ আফগান অধিনায়ক

আরিফুর রহমান বাবু | সাউদাম্পটন থেকে | প্রকাশিত: ১১:৪৯ পিএম, ২৩ জুন ২০১৯

আফগানদের নিয়ে বাংলা সাহিত্যে কত লিখা! কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্প ‘কাবুলিওয়ালার’ সেই পিতৃস্নেহ প্রবণ কাবুলিওয়ালার সন্তান বাৎসল্যের কথা পড়ে কার না চোখের জল ঝরেছে? আরেক নামী লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর লিখা ‘আব্দুর রহমান’ চরিত্র পড়ে সেই ছাত্র জীবন থেকেই জেনেছি আফগানরা বড় মনের।

আজ (রোববার) সাউদাম্পটনের রোজ বোল স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে আফগান অধিনায়ক গুলবাদিন নায়েবের কথা শুনে মনে হলো সত্যিই আফগানরা মনের দিক থেকে বড়।

বিশ্বকাপের মত আসরে সাধারণত, এক দলের অধিনায়ক অন্য দলের সরাসরি প্রশংসা করেন না। করলেও একটু লেজ লাগিয়ে দেন। হয়ত বলেন, যদিও ভাল, তথাপি...। কিন্তু আফগান ক্যাপ্টেন সে পথে না হেটে সোজাসাপটা টিম বাংলাদেশ, মাশরাফির অধিনায়কত্ব আর পারফরমার সাকিবের প্রশংসা করলেন বেশ খোলা মনেই।

তবে নিজ দলের পক্ষে কথা বলতেও পিছপা হননি তিনি। শেষ দিকে প্রতিপক্ষ বাংলাদেশকে একটি বিশেষ বার্তাও দিয়ে দিয়েছেন। রাত পোহালে বিশ্বকাপের ম্যাচ যে দলের বিপক্ষে, আজ দুপুরে সেই বাংলাদেশ দল এবং বিশেষ করে অধিনায়ক মাশরাফি আর ‘চ্যাম্পিয়ন অলরাউন্ডার’ সাকিব আল হাসানের ভূয়সী প্রশংসায় পঞ্চমুখ গুলবাদিন নায়েব।

প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বরং টাইগারদের প্রশংসাই করলেন বেশি। বাংলাদেশ সম্পর্কে বলতে বলা হলে গুলবাদিন নায়েব বলে উঠলেন, ‘বাংলাদেশ এবারের বিশ্বকাপে বেশ ভাল খেলছে। বিশেষ করে ব্যাটিং ডিপার্টমেন্ট আছে ফর্মে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩২০ রানের বড়সড় টার্গেট অতিক্রম করে ফেলেছে। যা এক দারুণ সাফল্য।’

বাংলাদেশ দলের এ সাফল্য ও উত্তরণে অধিনায়ক মাশরাফি আর পারফরমার সাকিবের ভূমিকার প্রশংসা করে গুলবাদিন বলেন, ‘বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে বেশ উন্নতি করেছে। এ দলের উত্তরণে অধিনায়ক মাশরাফির ভূমিকা অপরিসীম। মাশরাফি বিন মর্তুজা অধিনায়ক হবার পর থেকেই দিনকে দিন বাংলাদেশ উন্নতি করেছে। প্রতিটি ডিপার্টমেন্টেই ভাল খেলতে শুরু করেছে।’

অধিনায়ক মাশরাফির প্রশংসার পাশাপাশি পারফরমার সাকিবের প্রসঙ্গ টেনে গুলবাদিন বলেন, ‘সাকিব তার দলের জন্য দারুণ পারফরম করছে এবং সার্ভিস দিচ্ছে। এটি অতুলনীয়।’

সাকিবকে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা পারফরমার আখ্যা দিয়ে গুলবাদিন বলেন, ‘সাকিবকে আমাদের বোলাররা আটকাতে পারবে কি পারবে না, তা সময়ই বলে দেবে। আমাদের মোহাম্মদ নবি আর রশিদ খানের সঙ্গে আইপিএল ও অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলেছে।’

সাকিবের কালকে জ্বলে ওঠা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে গুলবাদিন সৃষ্টিকর্তার ওপর ছেড়ে দিয়ে বলেন, ‘যদি আগামী দিন মানে ২৪ জুন সাকিবের দিন হয়, তাহলে সে অবশ্যই ভাল ক্রিকেট খেলবে। আর যদি দিনটি আমাদের হয়, তাহলে সাকিব একা নয়, পুরো প্রতিপক্ষ বাংলাদেশের সব ক্রিকেটারের জন্যই কঠিন এক দিন হবে।’

২৪ ঘন্টা আগে রোজ বোলের এই পিচেই ভারতের সাথে খেলেছে আফগানিস্তান। একই পিচে বাংলাদেশের সাথে খেলা কাল। খুব স্বাভাবিকভাবেই পিচ, তার গতি প্রকৃতি ও আচরণ সম্পর্কে আফগানদের ধারণা একটু বেশি।

সেটা কি কালকের ম্যাচে কোন বাড়তি সুবিধা হিসেবে কাজ করবে? এমন প্রশ্নের জবাবে আফগান অধিনায়ক বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা মাত্র একটি ম্যচ খেলেছি এই মাঠ ও উইকেটে। তবে এটা ইংলিশ কন্ডিশন, যার সম্পর্কে আগাম মন্তব্য করা কঠিন। আমরা জানি না আবহাওয়া কেমন থাকবে? উইকেটের আচরণ কী হবে? হ্যাঁ, গতকাল খুব ভাল দিন ছিল। আকাশে মেঘ ছিল না। রোদ ঝলমলে দিন কেটেছে। আমাদের আর ভারত দুই দলের জন্যই দিনটি ভাল ছিল। আমরা হয়তো দিনশেষে পারিনি। ব্যাটিংটা ভাল হয়নি। চেষ্টা থাকবে বাংলাদেশের সাথে আরও ভাল করার।’

এবারের বিপিএলে চিটাগাং ভাইকিংসের হয়ে খেলা গুলবাদিন ২০১৩ সালে ঢাকা ক্লাব ক্রিকেটেও অংশ নিয়েছেন। তাই বাংলাদেশের ক্রিকেট সম্পর্কে ধারণাটাও বেশ পরিষ্কার। তাই মুল্যায়নটাও করেছেন চুলচেরা।

গুলবাদিনের ধারনা, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেট অবকাঠামোটা বিশেষ করে ৫০ ওভারের ফরম্যাটের জন্য খুবই উপযোগি ও কার্যকর। আমি এক বছর খেলে দেখেছি। খুবই দারুণ আসর। অমন আসর খেলে আপনাআপনি পারফরমেন্সের মান উন্নত হয়। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। যা আমাকেও আকর্ষণ করেছে। বাংলাদেশ বেশ ভাল দল। এরই মধ্যে নিজেদের সামর্থের প্রমাণও দিয়েছে।’

সারাক্ষণ প্রায় প্রশংসা-স্তুতি গাইলেও শেষ দিকে গিয়ে একটি বার্তা দিয়ে রাখলেন আফগান অধিপতি, ‘শুনুন, আমার দল সম্পর্কে একটি কথা বলি- আমরা কিন্তু সহজ দল নই। আমরা হয়ত গত পাঁচ খেলায় বাজে ভাবে হেরেছি। তবে আমরা দিনকে দিন উন্নতি করছি। ইনশাআল্লাহ আগামীকাল হবে আমাদের দিন।’

এআরবি/এসএএস

আরও পড়ুন