‘নিজ ইচ্ছায় নয়, ফিজিও আনফিট বলার পরই খেলেননি সাইফউদ্দীন’
লন্ডন, কার্ডিফ, ব্রিস্টল, টনটন, নটিংহ্যাম হয়ে মাশরাফি-সাকিবরা এখন সাউদাম্পটনে। ৪৮ ঘন্টা পর এই শহরের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে ঘেরা রোজ বোল স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের সাত নম্বর ম্যাচ খেলতে নামবে টাইগাররা।
গোটা দেশের নজর টাইগারদের দিকে। সবার কৌতুহলি প্রশ্ন, ‘বাংলাদেশ কি শেষ পর্যন্ত সেমিফাইনালে উঠতে পারবে?’ সেমিফাইনাল খেলতে হলে সাধারণ হিসেবে, পরের তিন ম্যাচে জয় খুব দরকার। আফগানিস্তান-পাকিস্তান আর ভারতের সাথে শেষ তিন ম্যাচ জিততে পারবে তো মাশরাফির দল? আর জিতলেও সেমির টিকিট মিলবে কি? পরের তিন ম্যাচে জয়ই কি শেষ কথা? নাকি অন্য কোন সমীকরণও মেলাতে হবে?
এর মধ্যে পেস বোলিং অলরাউন্ডার সাইফউদ্দীন আর মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের ইনজুরি ভাবিয়ে তুলেছে পুরো দলকে। অস্ট্রেলিার বিপক্ষে তাদের দু’জনার অভাব বোধ হয়েছে প্রবলভাবে। ওই ম্যাচে এই দু’জন দলে থাকলে, ভিন্ন কিছুও হতে পারতো। অধিনায়ক মাশরাফিও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাইফউদ্দীন আর মোসাদ্দেককে মিস করার কথাও জানিয়েছেন।
সাইফউদ্দীনের অভাব বোধ হতেই পারে। হয়েছেও। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বাধিক ৯ উইকেট শিকারী এই মিডিয়াম পেসার। তাও চার ম্যাচে। পিঠের ইনজুরির কারণে অস্ট্রেলিয়ার সাথে শেষ ম্যাচ খেলতে পারেননি। তার আগে দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড- এই তিন দলের বিপক্ষে দুটি করে উইকেট দখল করেছেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টনটনের সমারসেট কাউন্টি ক্লাব গ্রাউন্ডে পতন ঘটিয়েছেন তিন উইকেটের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচে ভয়ঙ্কর ও বিপজ্জনক উইলোবাজ ক্রিস গেইলকে শূন্য রানে ফিরিয়ে নিজ দলকে উজ্জীবিত আর অনুপ্রাণিতও করেছেন।
অধিনায়ক মাশরাফি ছন্দে নেই। পাঁচ ম্যাচে (শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত) তার উইকেট মোটে ১টি। অপর পেসার মোস্তাফিজের পারফরমেন্সটাও ওঠা-নামা করছে। এখন পর্যন্ত একটি ম্যাচেও পুরো ১০ ওভার বা সবগুলো স্পেলে স্বাভাবিক ছন্দে বল করতে পারেননি। কোনো স্পেলে লাইন ভাল হচ্ছে না তো অন্য কোনো স্পেলে লেন্থে সমস্যা হচ্ছে।
পাঁচ ম্যাচে কাটার মাস্টারের উইকেট মোটে ৮টি। খুব স্বাভাবিকভাবেই অস্ট্রেলিয়ার সাথে বারবার সাইফউদ্দীনের অভাববোধ হয়েছে। ম্যাচের আগেরদিন নটিংহ্যাম সময় বিকেলে পাঁচটার পরে (বাংলাদেশ সময় রাত দশটা-সাড়ে দশটা) জানা গেলো, সাইফউদ্দীন শতভাগ ফিট নন।
তার ইনজুরির ধরণ নিয়েও শোনা গেল দু’ধরনের কথা। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু বললেন, তার হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি। আবার অন্য পক্ষ থেকে জানা গেলো, সাইফউদ্দীনের পিঠে ব্যাথা। বলা হলো, ২০ জুন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের দিন সকালে ফিটনেস টেস্ট নেয়া হবে। তাতে উত্তীর্ণ হতে পারলেই কেবল খেলা হবে সাইফউদ্দীনের। না হয় বিশ্রামে কাটাতে হবে।
এদিকে ম্যাচের দিন আবার অন্য গুঞ্জন, ‘সাইফউদ্দীন নাকি ইনজুরির অজুহাতে অস্ট্রেলিয়ার সাথে ম্যাচ থেকে সড়ে দাঁড়িয়েছেন।’
কোচ স্টিভ রোডস, ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন, ফিজিও চন্দ্রমোহন আর ট্রেনার মারিও ভিল্লাভারায়নের কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে এমন মন্তব্য করেননি।
তবে দলের ভেতর থেকেই খবরটি মিডিয়ার কানে এসেছে, সাইফউদ্দীনের নাকি ‘বিগ ম্যাচ ফোবিয়া’ আছে। তিনি ছোট-খাট ইনজুরিকেও তখন বড় করে দেখতে শুরু করেন এবং ইনজুরির অজুহাত দেখিয়ে ম্যাচ না খেলে বিশ্রামে চলে যান। এমন খবরও চাউর হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার সাথে ২০ জুন নটিংহ্যামের ম্যাচের আগেও নাকি তাই করেছেন।
আসলে কি ঘটেছে? সাইফউদ্দীন কি সত্যি সত্যিই ছোট-খাট ইনিজুরিকে বড় করে দেখিয়ে খেলা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন? ঘটনার সত্যতা কতটুকু?
এ খবর যার সবচেয়ে ভাল জানার কথা সেই ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনকে প্রশ্ন করা হলো, ‘একটু বলবেন, সাইফউদ্দীনের ব্যাপারটি আসলে কি? জোর গুঞ্জন, এ পেস বোলিং অলরাউন্ডার নাকি ছোট খাট ইনজুরিকে বড় করে দেখিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সাথে ম্যাচ থেকে সড়ে দাঁড়িয়েছেন? ম্যানেজার হিসেবে আপনি কি জানেন এবং এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি?
আজ সকালে জাগো নিউজের এমন প্রশ্নেরর মুখোমুখি হয়ে খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, ‘এমন খবরের ভিত্তি কি? সাইফউদ্দীন একজন ক্রিকেটার। তাকে দেখভালের জন্য ফিজিও চন্দমোহান, তার ফিটনেস লেভেল খুঁটিয়ে দেখার জন্য ট্রেনার মারিও ভিল্লাভারায়ন আছেন। আর আমি ম্যাজোর হিসেবে সব রকম সুবিধা-অসুবিধা দেখার জন্য এবং সব রকম লজিস্টিক সাপোর্ট দেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমরা কেউ কি বলেছি, সাইফউদ্দীন পুরোপুরি সুস্থ? সুস্থ হয়েও না খেলার জন্য অসুস্থতার ভান ধরে আছে? বলুন! টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে এমন কোন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বা কেউ কি অফিসিয়ালি এমন বলেছেন? তাহলে সাইফউদ্দীনের ইনজুরি নিয়ে ধোঁয়াটে পরিস্থিতির উদ্রেক ঘটেছে কেন?’
একজন ক্রিকেটার কোনোভাবেই সুস্থ থেকে অসুস্থতার ভান ধরে কিংবা ছোট ইনজুরিকে বড় দেখিয়ে নিজেকে কোন ম্যাচ খেলা থেকে সরিয়ে রাখতে পারে না।
একথা জানিয়ে খালেদ মাহমুদ সুজন খুব জোরের সাথে বলেন, ‘ফর্ম ও ছন্দে থাকার বিষয়টি কোচ আর অধিনায়ক দেখেন। আর কোনো ক্রিকেটারের ইনজুরি সংক্রান্ত বিষয় খুঁটিয়ে দেখার সমুদয় দায়-দায়িত্ব ফিজিওর। তিনিই দেখেন, জানেন, বোঝেন- কার কি অবস্থা?’
টিম ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন উল্টো প্রশ্ন করেন, ‘আচ্ছা! আপনাদের কাছে কি এমন খবর আছে, ফিজিও বলেছেন যে সাইফউদ্দীন অসুস্থতার ভান করেছে? যদি থাকে তাহলে সাইফউদ্দীনকে দোষারোপ করা যেত। এখন ফিজিওই যদি বলেন, সাইফউদ্দীনের পিঠে ব্যাথা। সে খেলার মত অবস্থায় নাই। তার পক্ষে খেলা সম্ভব না। তাহলে তাকে বাইরে রাখা ছাড়া টিম ম্যানেজমেন্টের আর কিই বা করার থাকে, বলুন?’
সুজনের শেষ কথা, ফিজিও যদি মনে করেন, একজন ক্রিকেটার ফিট, তখন যদি ওই ক্রিকেটার নিজেকে আনফিট দাবি করে, তখন টিম ম্যানেজমেনট বিষয়টিকে নেতিবাচক চোখে দেখে; কিন্তু সাইফউদ্দীন ইস্যুতে তেমন কিছুই ঘটেনি। ফিজিও একবারও আমাদের বলেনি, সাইফউদ্দীন ফিট। বরং চন্দ্রমোহন আমাদের বলেছে, সাইফউদ্দীন খেলার অবস্থায় নেই।
আর ফিজিও চন্দ্রমোহন যদি শতভাগ নিশ্চয়তা দেন যে সাইফউদ্দীন পুরোপুরি ফিট; কিন্তু খেলতে চাচ্ছে না- তাহলে তাকে আমলে নেয়া যেতো। যেখানে ফিজিও বলছে সাইফউদ্দীনের সমস্যা আছে, সেখানে আমাদের কিই বা করার আছে? এটুকু বলতে পারি সাইফউদ্দীন কেন, ফিজিও কাউকে ঠিক বললে বা কারো ফিটনেস সাটিফিকেট দিলে তার না করার কোনই সুযোগ নেই। সাইফউদ্দীন কেন, কোন ক্রিকেটারের সেই সাধ্য নেই এটা বলার।
তাহলে কি সাইফউদ্দীন আগামী ২৪ জুন সাউদাম্পটনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলতে পারবেন? মোসাদ্দেকের কাঁধের ইনজুরির কি অবস্থা? ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন জানালেন, ‘আজ তাকে খুঁটিয়ে দেখা হবে। ফিজিও তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। দেখা যাক, ফিজিওর রিপোর্টের ওপরই নির্ভর করবে সাইফউদ্দীন কবে ফিরবে। আর মোসাদ্দেক তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ফিল্ডিং করার সময় বাঁ-কাঁধে ঝাঁকুনি খেয়েছে। তার শুশ্রুষা চলছে। ফিজিও প্রাথমিকভাবে আমাদের বলেছিলেন, ৭২ ঘন্টার মধ্যে ফিট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। আশা করছি, পরশু খেলার আগে মোসাদ্দেক সুস্থ হয়ে উঠবে। আমি যতটুকু জানি, মোসাদ্দেকের অবস্থা ইমিধ্যেই খানিকটা উন্নতির দিকে।’
এআরবি/আইএইচএস/এমকেএইচ