ভালো খেলেও যে কারণে হারলো বাংলাদেশ!
জয়-পরাজয় খেলারই অংশ। একটি খেলায় দুই দলই জিতবে না। আবার দুই দলই হারবে না। কাউকে জিততে হয়, কাউকে না কাউকে হারতে হয়। তবে, ভালো খেলেও হারের বেদনাটা খুবই কষ্টাদায়ক। সেই কষ্টটাই এখন অনুভব করছে বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্ত-সমর্থকরা।
টনটনের সমারসেট কাউন্টি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজের গড়া ৩২১ রানের পুঁজি খুব সহজেই পাড়ি দিয়েছিল বাংলাদেশ। পুরো ৫১ বল হাতে রেখে, ৭ উইকেটের ব্যবধানে। ওই জয়ের পর আত্মবিশ্বাস আর মনোবল হয়ে উঠেছিল খুবই চাঙ্গা। সেই মনোবলে বলিয়ান হয়েই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ট্রেন্টব্রিজে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ।
বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারবে বাংলাদেশ, এই স্বপ্ন কিন্তু কেউ দেখেনি। কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্স যখন সত্যি সত্যিই দুর্দান্ত এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করে যখন বাংলাদেশ ৩৩৩ রান পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তখন জিততে না পারাটা দারুণ পীড়াদায়ক।
বোঝাই যাচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মত অস্ট্রেলিয়াকেও যদি ৩২০ কিংবা ৩৩০ রানের মধ্যে আটকে রাখা যেতো, তাহলে আজও জিতে যেতো বাংলাদেশ। কিন্তু নিঃসন্দেহে, অস্ট্রেলিয়ার রান বেশিই করে ফেলেছিল। ৪৮ রানে জিতেছে অসিরা। বোঝাই যাচ্ছে উদ্বৃত্ত রানগুলোর কারণেই জয় পেয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
কেন নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স করেও তাহলে জিততে পারলো না বাংলাদেশ? এর কারণ খুঁজতে গেলে, সাদা চোখে ক্রিকেট ভক্ত-সমর্থকরা দুটো কারণই খুঁজে পাবেন।
প্রথমত ডেভিড ওয়ার্নারের ক্যাচ মিস। ১০ রানের মাথায় সাব্বির রহমানের কল্যাণে জীবন পেয়ে ওয়ার্নার খেললেন ১৪৭ বলে ১৬৬ রানের ইনিংস। বাংলাদেশকে কক্ষপথ থেকে ছিটকে দেয়ার জন্য এই একটি কারণই যথেষ্ট। তবুও, বাংলাদেশ ৩৮ থেকে ৪০ ওভার পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার রানের স্রোতে বেশ ভালোভাবেই বাধ দিতে পেরেছিল।
কিন্তু শেষ ১০ ওভারের ঝড়ে সেই বাধ আর টিকলো না। বালির বাধের মত উড়ে গেছে। ওই ১০ ওভারে অস্ট্রেলিয়া রান তুলেছে ১৩১। ওয়ার্নার আউট হওয়ার পর মাঠে নেমে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল যে টর্নেডো বইয়ে দিতে শুরু করেছিলেন, মাত্র ১০ বলে আউট না হলে তিনি রানকে নিয়ে যেতেন নিশ্চিত ৪০০ প্লাস। ১০ বলেই এই বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান রান করেন ৩২। শেষ পর্যন্ত রান আউট হন তিনি।
বোলিংয়ে বাংলাদেশ ছিল আজ নিঃসন্দেহে নখ-দন্তহীন। শুরুতে মাশরাফি এবং মোস্তাফিজ বেশ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করার চেষ্টা করলেও উইকেট না পাওয়ার কারণে ধীরে ধীরে তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে অসি ব্যাটসম্যানরা। সাইফউদ্দিনের ইনজুরির কারণে রুবেল হোসেনকে সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু ২০১৫ বিশ্বকাপের সেই বিষাক্ত রুবেল এখন আর নেই সম্ভবত। ৯ ওভারে ৯.২২ গড়ে ৮৩ রান দিয়েছেন তিনি। সাইফউদ্দিন থাকলে নিশ্চিত এতটা খরুচে হতেন না। নিয়ন্ত্রিত বোলিং করতেন এবং অস্ট্রেলিয়ার পুঁজি হতো আরও কম।
বোলিংয়ে আজ স্পিন ডিপার্টমেন্ট ছিল পুরোপুরি নিষ্প্রভ। সাকিব আল হাসান কিংবা মেহেদী হাসান মিরাজ কোনো উইকেটই নিতে পারেননি। অথচ, এরা দু’জন হলেন বাংলাদেশের ব্রেক থ্রু বোলার। কঠিন সময়ে উইকেট এনে দেন। কিন্তু তাদের ঘূর্ণি আজ বিপদে ফেলতে পারেনি অসি ব্যাটম্যানদের।
অন্যদিকে কাঁধের ইনজুরির কারণে খেলতে পারেননি মোসাদ্দেক সৈকত। তার বোলিংটা যেমন মিস করেছে বাংলাদেশ দল, তেমনি ব্যাটিংও। মোসাদ্দেকের পরিবর্তে মাঠে নামা সাব্বির রহমান পুরোপুরি ফ্লপ। ওই জায়গা মোসাদ্দেক থাকলে, ম্যাচের চিত্রটা ভিন্নও হতে পারতো। আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালের সেই মোসাদ্দেকের যদি আজও দেখা মিলতো, তাহলে কি গল্পটা ভিন্ন হতে পারতো না!
রান যখন ৩৮১ দাঁড় করিয়ে ফেললো অস্ট্রেলিয়া, তখন আর বাংলাদেশের জয়ের চিন্তাটা দুরাশা ছাড়া কিছুই নয়। লক্ষ্য ছিল, যতটা ভালো খেলা যায়। সে চেষ্টাই করেছেন ব্যাটসম্যানরা। শুরুতে ভুল বোঝাবুঝিতে সৌম্য রানআউট না হলে হয়তো রানের পরিমাণটা আরেকটু বাড়তে পারতো। কিংবা সাব্বির রহমান এসেই যদি বোল্ড হয়ে না যেতেন, তাহলেও রানটা পার হতো ৩৪০-৩৪৫। তাও কম গৌরবের হতো না।
তবুও এর মধ্যে প্রাপ্তি কম নয়। নিঃসন্দেহে মুশফিকের সেঞ্চুরি অনেক বড় পাওয়া। ৯৭ বলে অপরাজিত ১০২ রান করেন তিনি। আরেক পাওয়া হচ্ছে তামিম ইকবাল এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের রানে ফেরা। পঞ্চ পান্ডবের এই দুইজন এই ম্যাচের আগ পর্যন্ত ছিলেন নিষ্প্রভ। তারা দু’জনই রান পেয়েছেন আজ। তামিম ৬২, মাহমুদউল্লাহ ৫০ বলে করেছেন ৬৯ রান। এগুলোই বা কম কি?
আইএইচএস/