বাংলাদেশ ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ নয় : মাশরাফি
‘কেউ যদি ভেবে থাকেন, এবারের বিশ্বকাপে আমরা ওয়ান ম্যান আর্মি- তাহলে ভুল করবেন। আমরা মোটেও ওয়ান ম্যান আর্মি নই’- এই কথাটি টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার।
শুধু এটুকু শুনে আবার ভাবতে শুরু করেন না, অধিনায়ক মাশরাফি বুঝি পারফরমার সাকিব আল হাসানের যথাযথ মূল্যায়ন করছেন না। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ক্যারিয়ার সেরা অলরাউন্ডিং নৈপুণ্য বিশেষ করে অবিস্মরণীয় ব্যাটিং নৈপুণ্য এবং মনে রাখার মত অলরাউন্ডিং পারফরমেন্সও অধিনায়ককে সন্তুষ্ট করতে পারেননি।
তাই বুঝি, বাংলাদেশ এখন ওয়ান ম্যান আর্মি, সাকিব আল হাসান প্রাণশক্তি আর চালিকাশক্তি- তা মানতে নারাজ মাশরাফি। আর তাই যদি না হবেন, তাহলে অমন কথা বলা কেন?
ওপরের অংশ পড়ে হয়ত বিভ্রান্তিতে পড়ে গেছেন। না না, মাশরাফি এমনি এমনি অমন মন্তব্য করেননি। আজ (বুধবার) প্রেস কনফারেন্সে বাংলাদেশের এক সিনিয়র সাংবাদিক মাশরাফির কাছে জানতে চাইলেন, ‘আচ্ছা, আপনার দল কি এখন ওয়ান ম্যান আর্মি? দল কি সাকিবের একার নৈপুণ্যের ওপর নির্ভর করেই চলছে?
তখন টাইগার অধিনায়ক বেশ আস্থা ও সাহসের সাথে জবাব দিলেন, ‘না না, তা কেন হবে? আমরা মোটেই ওয়ান ম্যান আর্মি না। সন্দেহ নেই সাকিব দুর্দান্ত ফর্মে আছে, ব্রিলিয়ান্ট খেলছে। প্রতি ম্যাচেই ব্যাট ও বল হাতে অসাধারণ পারফরমেন্স দেখিয়েছে। আমাদের সাফল্যে একটা বড়সড় অবদানও রাখছে। তাই বলে দল এখন তার একার নৈপুণ্যের ওপর নির্ভর করেই চলছে আর সামনে আগাচ্ছে- আমি তা মনে করি না। আমার মনে হয় আমাদের আরও পারফরমার আছে, যারাও কার্যকর পারফরম করছে। দলের সাফল্যে অবদান রাখছে।’
তারা কারা? মাশরাফির জবাব, ‘সাইফউদ্দিন আর মোস্তাফিজ বল হাতে প্রায় খেলায় দলকে ভাল সার্ভিস দিচ্ছে। মিরাজও বেশ ভাল বোলিং করে যাচ্ছে। আর ব্যাটে লিটন দাস আগের ম্যাচে দারুণ ব্যাটিং করেছে। সাথে তামিমও আগের ম্যাচে চমৎকার শুরু করেছিল। সৌম্য বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও স্টার্ট পাচ্ছে। আর মুশফিকও দুই ম্যাচে তার নিজের স্বাভাবিক খেলাই খেলেছে। কাজেই মনে হয় না আমরা কারো একার নৈপুণ্যের ওপর শতভাগ নির্ভরশীল।’
তবে ওপরের অংশই শেষ নয়। সাকিবের প্রশংসায় পঞ্চমুখ মাশরাফি। তার ধারণা সাকিব সম্ভবত ক্যারিয়ারের সেরা সময় পার করছে। তার ভাষায়, ‘সাকিব ব্রিলিয়ান্ট পারফরম করছে।’
এখন বাকিরা কি সাকিবকে অনুসরণ করে নিজেদের পারফরমেন্সের গ্রাফটাকে উন্নত করতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে মাশরাফির ব্যাখ্যা, ‘অবশ্যই পারে। সাকিব এরই মধ্যে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সে দেখিয়ে দিয়েছে চেষ্টা থাকলে কত ভাল খেলা যায়। তার এমন জ্বলজ্বলে পারফরমেন্সের জন্য বিশেষ ধন্যবাদ।’
এখানেই শেষ নয়। সাকিবের জন্য দোয়াও চাইছেন টাইগার অধিনায়ক। তার কথা, ‘সাকিবের জন্য আমি দোয়া চাইছি যাতে সে এমন পারফরমেন্স করে যেতে পারে। সেই সাথে বাকিদেরও উঠে আসতে হবে। সাকিবের সাথে অন্যদেরও ব্যাট আর বল হাতে জ্বলে উঠতে হবে। শেষ ম্যাচে যেমন লিটন দাস করেছে। সত্যি দেখার মত ব্যাটিং করেছে লিটন।’
মোদ্দা কথা অধিনায়ক মাশরাফির প্রত্যাশা দুটি, এক সাকিব যেভাবে খেলছেন, প্রতিপক্ষ বোলারদের এতটুকু পাত্তা না দিয়ে এগিয়ে চলছেন নিজের মত। তার ব্যাটের রথ যেন না থামে। আর সাথে অন্যরাও সাকিবকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ভাল খেলে। তার যোগফলে যা দাঁড়াবে, সেটা দলকে এগিয়ে নেয়ার বড় রসদ হবে।
সত্যিই তাই। সাকিব যারপরনাই ভাল খেলছেন । যার প্রশংসা যতই হোক না কেন কম হবে। বাংলাদেশের একজন ব্যাটসম্যান বিশ্বকাপে পরপর চার খেলায় পঞ্চাশের ওপরে যাবেন আর দুবার টানা সেঞ্চুরিও হাঁকিয়ে বসবেন- তা কে কবে ভেবেছেন। সাকিব কিন্তু তাই করে দেখিয়েছেন।
আশা করা যাচ্ছে সাকিবের জয়রথ সচল থাকবে। তাতে পিষ্ট হবে অসিরাও। কিন্তু কঠিন সত্য হলো, সাথে আরও কজনার সাপোর্ট লাগবে। একা সাকিব কি আর টেনে নিতে পারবেন? তার অসাধারণ ইনিংসটির সাথে যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লিটন দাস অমন আত্মবিশ্বাসী আর স্বচ্ছন্দ্য সাবলীল ব্যাটিং করে ৬৯ বলে ৯৪ রানের হার না মানা ইনিংস না খেলতেন, তাহলে কি বাংলাদেশ অমন সহজে ৫১ বল আগে জয়ের বন্দরে পৌছে যেতে পারতো?
তামিম আর সৌম্যর ভূমিকাই কি কম? তারাও তো শুরুটা ভাল করে দিয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা যেভাবে আগাচ্ছিলেন, মোস্তাফিজ সে পথে বাঁধা হয়ে না দাঁড়ালে ক্যারিবীয়দের স্কোর যে সাড়ে তিনশ ছাড়িয়ে যেত।
দেখা যাক, কালকের ম্যাচ আর তারপরের তিন খেলায় আফগানিস্তান, ভারত ও পাকিস্তানের সাথে সাকিবের সাথে অন্যরা আরও ভাল খেলে সাকিবকে সাহায্য করতে পারেননি কি-না?
এআরবি/এসএএস