টনটনে গেইলদের হারানোর পর বেড়ে গেছে টাইগারদের জার্সি বিক্রি
বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় বিভিন্ন দেশের জার্সি বেচা-কেনার হিড়িক পড়ে বাংলাদেশে। রাস্তাঘাটে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার জার্সি পরা মানুষ থাকে অসংখ্য। প্রিয় দলের ম্যাচের দিন জার্সি গায়ে চাপিয়েই টিভির সামনে বসেন ফুটবল ভক্তরা। বাসা-বাড়ি আর পথে-ঘাটে উড়ানো হয় পছন্দের দেশগুলোর পতাকা। বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ফুটবল খেলে না। তারপরও এদেশের মানুষের এভাবে আনন্দ-উৎসব করে অন্য দেশকে সমর্থন দেয়ার বিষয়টি দেখে অবাক হন অনেক বিদেশিও।
ফুটবল বিশ্বকাপে বাংলাদেশ না খেললেও খেলে ক্রিকেট বিশ্বকাপে। ১৯৯৯ সাল থেকে বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ও মর্যাদার আসরে নিয়মিত খেলে আসছে টাইগাররা। বাংলাদেশ ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছে এক ক্রিকেট পাগল দেশ হিসেবে। এবারের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে মাশরাফিরা দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করছে এবং দেশে লক্ষ লক্ষ সমর্থক তা নিয়ে উচ্ছ্বাসও প্রকাশ করছে।
বিশ্বকাপ ক্রিকেট চলাকালীন আগেও বাংলাদেশ দলের জার্সি পরা মানুষ দেখা যেতো রাস্তাঘাটে। এমন কী কর্মক্ষেত্রেও; কিন্তু এবারের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ ঘিরে অতীতের সব উচ্ছ্বাস ছাড়িয়ে গেছে। রেকর্ড পরিমাণ জার্সি বিক্রি হয়েছে এবং হচ্ছে এই বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে। বাংলাদেশের লাল-সবুজ জার্সি পরা এতো মানুষ আগে কখনো চোখে পড়েনি, এবার যেমনটা পড়ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরুর পর জার্সি বিক্রির দোকান কিংবা স্টলগুলোয় বেচাকেনার ধুম পড়েছিল; কিন্তু ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের কাছে হার এবং শ্রীলংকার বিরুদ্ধে ম্যাচটি বৃষ্টিতে বাতিল হওয়ার পর টাইগারভক্তরা হতাশ হয়েছিল কিছুটা। জার্সি বিক্রেতারাও তখন অলস সময় কাটিয়েছেন; কিন্তু গত দু’দিন ধরে আবার ভিড় বেড়েছে রাজধানী ঢাকার জার্সির দোকানগুলোতে। কারণ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দুর্দান্ত এক জয়।
সেমিফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখতে জয়ের বিকল্প ছিল না গেইলদের বিরুদ্ধে। মাশরাফি টস জিতে ক্যারিবীয়দের ব্যাটিংয়ে পাঠালে তারা বাংলাদেশের সামনে ছুড়ে দেয় ৩২২ রানের চ্যালেঞ্জ। টাইগাররা পারবেন তো? বাংলাদেশের সমর্থকদের সেই টেনশন দুর করে ৫১ বল এবং ৭ উইকেট হাতে রেখেই ম্যাচ জেতে মাশরাফি বাহিনী। যে জয় আবার বাংলাদেশকে ফিরিয়ে এনেছে সেমিফাইনালে ওঠার সম্ভাব্যদের তালিকায়।
সোমবার রাতে ইংল্যান্ডের টনটনে ওই অবিস্মরণীয় জয়ের পর টাইগারভক্তরা আবার ছুটতে শুরু করেছেন জার্সির দোকানে। আবার বিক্রি বেড়ে গেছে লাল-সবুজ জার্সির। মঙ্গলবার ও বুধবার মুখের হাসি আরো চওড়া হয়েছে জার্সি বিক্রেতাদের। চুটিয়ে ব্যবসা করছেন দোকানীরা। বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের স্পোর্টস সামগ্রী বিক্রির দোকানগুলোয় এবং ফুটপাতে ঘুরে দেখা গেছে অনেক টাইগারভক্ত জার্সি কিনছেন।
বেশিরভাগ দোকানেই ঝুলিয়ে রাখা টাইগারদের লাল-সবুজ জার্সি। খদ্দের আসছেন, দেখছেন। দরদাম করছেন এবং কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ কিনেই গায়ের পোশাকটি বদলে ফেলে জার্সি পরে হাঁটা দিচ্ছেন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। ক্রীড়া সামগ্রী বিক্রির দোকানগুলোতে যেন রমরমা ভাব।
‘আমরা প্রচুর জার্সি বিক্রি করেছি। তবে মাঝে বিক্রি অনেক কমে গিয়েছিল। বেশি জার্সি বিক্রি করেছি ঈদের আগের দিন। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে জয়ের পর বিক্রি বেড়ে গিয়েছিল। তারপর কিছুদিন বিক্রি ছিল না বললেই চলে। পুরোদিনে একটা/দুইটা। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে আবার বিক্রি বেড়েছে। গতকাল আমি খুচরাই একশ’র বেশি জার্সি বিক্রি করেছি’- বলছিলেন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের খেলাধুলার জার্সি বিক্রেতা মো. শহিদুল্লাহ।
গুলিস্তানের আরেক দোকানী বললেন, ‘আমাদের এখানে কমদামী জার্সিই বেশি বিক্রি হয়। ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে আমাদের ফ্রি সাইজের জার্সিগুলো বিক্রি করি। ছোটদেরগুলো একটু কম। অনেকে নিজের জার্সির সঙ্গে বাচ্চাদের জন্যও নিয়ে যাচ্ছেন।’
আরেক জার্সি বিক্রেতা জামাল হোসেন বললেন, ‘আশা করি, বৃহস্পতিবার অনেক জার্সি বিক্রি হবে। কারণ, ওই দিন বাংলাদেশের খেলা অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে। আমরা নতুন করে কিছু জার্সি তৈরির অর্ডারও দিয়েছি কারখানায়। বাংলাদেশ যত ম্যাচ জিতবে আমাদের জার্সি বিক্রিও ততো বাড়বে।’
আরআই/আইএইচএস/এমকেএইচ