ব্রিস্টলে খোলা আকাশের নিচে তামিমের একাগ্র অনুশীলন
অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা কার্ডিফে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিন প্রেস কনফারেন্সে বলেছিলেন, ‘আমি আর তামিম খোলা আকাশের নিচে সেন্টার উইকেটে ব্যাট করতে মুখিয়ে আছি। এখানে বাতাস প্রচুর। আমি খেলার আগের দিন বাতাসের গতিবিধি বোঝার চেষ্টা করি খোলা আকাশের নিচে নেটে বল করে। তামিম ম্যাচের আগের দিন নেটে নিজের শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি সাড়তে পছন্দ করে। তার পুরো ব্যাটিংটাকে ঝালিয়ে নিতে ভালোবাসে। এটা তার ম্যাচ ভাবনা ও লক্ষ্য পরিকল্পনার অংশ। কিন্তু দুই ম্যাচ ধরে তামিম তা করতে পারেনি।’
তাই হয়তো তামিম উন্মুখ হয়ে ছিলেন কবে কখন খোলা আকাশের নিচে নেটে ব্যাটিং প্র্যাকটিস করার সুযোগ পাবেন। ছবিতে শেষ মুহূর্তের তুলির আঁচর দেয়ার মতো শেষবার নেটে নিজেকে ঝালিয়ে নেবেন।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। আজ (সোমবার) সাতসকালে ব্রিস্টলের মাঠে চলে আসা। ঘড়ির কাঁটা তখনো সকাল পৌনে ১০টা স্পর্শ করেনি। বাংলাদেশ টিম ব্রিস্টলের মাঠে পৌঁছেছে সবে। দল তখনো ওয়ার্ম আপ আর স্ট্রেচিং করতে নামেনি।
এর মধ্যেই ব্যাটিং কোচ নেইল ম্যাকেঞ্জিকে নিয়ে একজন সোজা মাঠে চলে গেলেন। মাঠে গিয়েই সেন্টার উইকেটের সবচেয়ে বাঁ দিকের নেটে শুরু করলেন ব্যাটিং। কোনো বোলার নেই, বিশেষ যন্ত্রের ভিতরে বল ছুড়ে দিয়ে তামিমকে নেটে ব্যাটিংয়ে বিশেষ সহায়তা করলেন প্রোটিয়া ব্যাটিং কোচ নেইল ম্যাকেঞ্জি।
সকাল ৯টা ৫০ মিনিট (বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৫০) থেকে একটানা সোয়া ঘণ্টার বেশি সময় ধরে নেটে একা ব্যাটিং প্র্যাকটিস করেছেন তামিম। মাঝে মধ্যে নেইল ম্যাকেঞ্জির সাথে শলাপরামর্শও করলেন।
প্রচণ্ড ঠান্ডা ব্রিস্টলে। তাপমাত্রা মাত্র ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দলের অন্য সদস্যরা শরীর গরম করতে আধ ঘণ্টার বেশি সময় শুধু ফুটবল খেললেন। তারপর ক্যাচিং-থ্রোয়িং প্র্যাকটিস শেষে নেট শুরু হলো সকাল ১১টার (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টা) কয়েক মিনিট আগে।
তামিম তথনো নেটে ব্যাটিং করেই যাচ্ছিলেন। শুধু আজ সকালেই নয়। কাল (রোববার) কার্ডিফ থেকে ব্রিস্টলে পা রেখে প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যেও ব্রিস্টলের ইনডোরে প্রায় ঘণ্টাখানেক ব্যাটিং প্র্যাকটিস করেছেন তামিম। বোঝাই যাচ্ছে নিজেকে মেলে ধরতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ দেশের এক নম্বর ওপেনার। নেটে আর ইনডোরে ব্যাটিংটা ঝালিয়ে নেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা।
তামিমের ব্যাট কথা বলুক, তামিম রানে ফিরুক আর দেশসেরা ওপেনার নিজের মতো করে প্রতিপক্ষ বোলারদের শাসন করে বড় বড় ইনিংস খেলে দলকে এগিয়ে দিক- বাংলাদেশ ভক্ত ও সমর্থক মাত্রই তা চান। ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনও মুখিয়ে আছেন তামিম কবে কখন জ্বলে ওঠেন তা দেখতে।
জাতীয় দলের এ সাবেক অধিনায়ক কাল ব্রিস্টলে পা দিয়ে জাগো নিউজের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘তামিম আমাদের দলের এক অন্যরকম ও বড় সম্পদ। তার ভালো খেলা এবং বিগ ইনিংস খেলা দলের জন্য খুব দরকার। তার ভালো খেলার ওপর আমাদের টপ অর্ডার ব্যাটিংই শুধু নয়, গোটা ব্যাটিং ডিপার্টমেন্ট তামিমের জ্বলে ওঠা নির্ভর করে। তামিমের ব্যাটে রান আসা মানে পরবর্তী ব্যাটসম্যানদের অন্যরকম স্বস্তি। ভালো খেলার অনুপ্রেরণা। তামিমের রান করার ওপর গোটা দলের ব্যাটিং অনেক বেশি নির্ভর করে। আমি উন্মুখ হয়ে আছি তামিমের ভালো খেলা দেখতে। তামিম রানে ফিরলেই দেখবেন আমাদের ব্যাটিংয়ের চেহারা পাল্টে গেছে। তখন দেখবেন গোটা ব্যাটিং লাইন আরও উজ্জ্বল হচ্ছে।’
তামিম সম্পর্কে বলতে গিয়ে সুজন একটি তথ্য দিয়েছিলেন, ‘আসলে ভালো করতে হলে ভাগ্যের আনুকূল্যও লাগে। তামিম এবারের বিশ্বকাপের প্রথম তিন ম্যাচে ভাগ্যের সে আনুকূল্য পায়নি। যদি পেত, তাহলে দেখতেন কি খেলাটাই না খেলতো। কারণ তামিম যে নেটে দুর্দান্ত খেলছে। বলে বোঝাতে পারবো না নেটে তার ব্যাটিং কত ভালো লাগছে। গত কদিন তামিম নেটে ছিল ব্রিলিয়ান্ট, আউটস্ট্যান্ডিং। কিন্তু মাঠে গিয়ে সেই ব্যাটিংটা করতে পারছে না। আমার বিশ্বাস তামিম রান করলেই ব্যাটিংয়ে আর কোন সমস্যা থাকবে না।’
খালেদ মাহমুদ সুজন একা নন। আপামর তামিম ভক্তরা তথা বাংলাদেশের প্রতিটি সমর্থকই চান দেশের এক নম্বর ওপেনারের ব্যাট জ্বলে উঠুক। তিনি যেভাবে অন্যসময় ভালো খেলে দীর্ঘ ইনিংস সাজিয়ে দলের ব্যাটিংকে সমৃদ্ধ করেন এবং স্কোরবোর্ড মোটা তাজা করতে রাখেন অগ্রণী ভূমিকা। এবারের বিশ্বকাপের প্রথম তিন ম্যাচে না পারলেও আগামীতে তামিম ঠিক নিজেকে খুঁজে পান- এ প্রত্যাশার সবার। দেখা যাক বাড়তি ঘাম ঝরিয়ে কাল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই তামিম নিজেকে আবার ফিরে পান কিনা?
এআরবি/এসএএস/পিআর