শেষ বিশ্বকাপে বাজিমাত
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ মিশনকে সামনে রেখে দেশ ছাড়ার আগে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ের অন্যতম নির্ভরতা মুশফিকুর রহীম বলেছিলেন, ‘মাশরাফি ভাইয়ের জন্য বিশ্বকাপে আমরা ভাল কিছু করতে চাই।’ দীর্ঘদিন ধরে দেশের ক্রিকেটকে যারা নিজেদের সবটুকু উজাড় করে দিচ্ছেন, তাদের বিদায়ী বিশ্বকাপকে স্মরণীয় করে রাখার এক ধরনের তাড়না কিংবা মানসিক দায়বদ্ধতা অনুভব করেন সতীর্থ ক্রিকেটাররা। বিজয়ীর বেশে অগ্রজকে বিদায় দেয়ার সেই আকাঙ্খার কথাই জানিয়েছিলেন মুশফিক।
জীবনের শেষ বিশ্বকাপ রাঙানোর নজির যথেষ্টই আছে বিশ্বকাপে। এদের অনেকেই সেরা সময়ে যা অর্জন করতে পারেননি তা পেয়েছেন নিজেদের শেষ বিশ্বকাপে। এই দলে আছেন ইমরান খান, শচীন টেন্ডুলকারের মত কিংবদন্তীরা। আবার সোনালী ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার জন্য শেষ বিশ্বকাপকেই চ্যালেঞ্জ হিসাবে নেন মাইকেল ক্লার্ক।
বিশ্বকাপ শিরোপা না জিতে ক্যারিয়ার শেষ করাটা বোধকরি অস্ট্রেলিয়ার সোনালী সময়ের নির্মাতা স্টিভ ওয়াহ কিংবা বোলারদের আতঙ্ক অ্যাডাম গিলক্রিস্ট-ম্যাথু হেইডেন, ব্যাটসম্যানদের দুঃস্বপ্ন গ্লেন ম্যাকগ্রাদের নামের সঙ্গে কোনোভাবেই মানানসই হত না।
জীবনের শেষ বিশ্বকাপে নিজেকে রাঙিয়েছেন, সর্বোপরি রাঙিয়েছেন দলকে, এ সকল গ্রেটদের বিদায়ী মিশনের দিকে একটু চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক।
১৯৯২ এর বিশ্বকাপে পাকিস্তান অধিনায়ক ইমরান খান ছিলেন ৪০ ছুঁইছুঁই। অবসরে চলে যান বিশ্বকাপের আগেই। ওই সময়ের পকিস্তান প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের অনুরোধে অবসর ভেঙ্গে ক্রিকেটে ফেরেন ইমরান। সে সময় এক কথায় পাকিস্তান ক্রিকেটের হ-য-ব-র-ল দশা। বিশ্বকাপের আগে আগে ঘরের মাটিতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ০-২ ব্যবধানে হারল পাকিস্তান।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে বিনা মেঘে বজ্রপাত! ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেল কিংবদন্তীর ফাস্ট বোলার ওয়াকার ইউনুসের। বিশ্বকাপ ভাবনা নিয়ে ইমরান বললেন, ‘ওয়াকারও নাই। আমাদের জন্য বিশ্বকাপটা অনেক কঠিন হয়ে গেল।’
অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের যৌথ আয়োজনে মাঠে গড়াল ১৯৯২ এর বিশ্বকাপ। নিজেদের প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ইমরানের দল হারল ১০ উইকেটের ব্যবধানে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ৭৪ রানে অলআউট হয়ে গেলেও, বৃষ্টি বদান্যতায় এক পয়েন্ট পেল পাকিস্তান।
‘ভাগ্য সহাসীদেরই সহায় হয়’- এই প্রবাদটি যে কত বড় সত্যি তারই দৃষ্টান্ত বোধকরি ১৯৯২ এর ইমরানের পাকিস্তান। সেমিফাইনালে জায়গা করে নিতে জটিল সব সমীকরণের মুখে পড়ল দলটি। লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইমরানদের শুধু জিতলেই হবে না, সেইসঙ্গে শেষ চারের রেস থেকে ছিটকে পড়া অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারতে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
সব সমীকরণ মিলে গেল। লাইফ লাইন পাওয়া এই পাকিস্তান কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে সেটাই দেখা গেল নক আউট পর্বে। এরপর দ্বিতীয় দফায় স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে উঠল ইমরান বাহিনি।
ওই বিশ্বকাপে নেতৃত্ব ও ইমরান হয়ে উঠলেন সমার্থক। শুধু ফাইনালের কথাই ধরা যাক। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আগে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২৪ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বসে পাকিস্তান। ব্যাটিং অর্ডারে নিজেকে প্রমোশন দিয়ে ওয়ান ডাউনে নামেন ইমরান। ম্যাচ সর্বোচ্চ ৭২ রানের ইনিংসটি আসলো তার ব্যাট থেকে।
শুধু এটুকু বললে খুবই অবিচার করা হবে নেতা ইমরানের প্রতি। পাকিস্তানের পুঁজি ২৪৯ রান। আড়াইশো রানের টার্গেটের সামনে খেলতে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ল ইংল্যান্ড। ৬৯ রানে হারাল ৪ উইকেট। তবে পঞ্চম উইকেট জুটিতে দারুণ প্রতিরোধ গড়ে তুললেন দুই ইনফর্ম ব্যাটসম্যান নেইল ফেয়ারব্রাদার ও অ্যালান ল্যাম্ব।
৭১ রানের জুটি গড়ে তুললেন দুজনে। আর কয়েকটা ওভার এ দু’জন উইকেটে থাকলেই পাকিস্তানের জন্য ম্যাচের রাশ ধরে রাখাটা কঠিন হয়ে পড়বে ভীষণভাবে। সচরাচর নতুন বলে আক্রমণ শানানোর পর শ্লগ ওভারে বোলিং করতেন ব্যাটসম্যানদের দুঃস্বপ্ন হয়ে ওঠা ওয়াসিম আকরাম।
কিন্তু ৩৫তম ওভারেই আকরামকে আক্রমণে আনলেন ইমরান। ওই এক সিদ্ধান্তেই নিশ্চিত হয়ে গেল ফাইনালের ভাগ্য। পরপর দু’বলে ওয়াসিম আকরাম ফিরিয়ে দিলেন ল্যাম্ব ও ক্রিস লুইসকে। এখান থেকে আর উঠে দাঁড়ানোর সাধ্য ছিল না ইংল্যান্ডের। বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়েই ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন ইমরান খান।
ক্যারিয়ার জুড়েই ইচ্ছা পূরণের খেলায় মেতেছিলেন ব্যাটিং বিস্ময় শচীন টেন্ডুলকার। কি পেয়েছেন না বলে, বলা উচিৎ কি পাননি তিনি? ব্যাটকে কথা বলিয়েছেন নিজের ইচ্ছামত। টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্ব্বোচ্চ রান, সর্বাধিক সেঞ্চুরি, অসংখ্য ট্রফি, ওয়ানডে ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশিবার ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কার’।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের যে সবগুলো ম্যাচ জয়ের রেকর্ড তার মূল কৃতিত্বও শচীনেরই; কিন্তু তারপরও ২০১১ বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত যেন পূর্ণতা পাচ্ছিল না শচীনের ঝলমলে ক্যারিয়ার। আগের পাঁচ বিশ্বকাপে অংশ নিয়েও যে শিরোপার স্বাদ পাননি এ ব্যাটিং বিস্ময়! ষষ্ট ও ক্যারিয়ারের শেষ অভিযানে শচীনের নামের পাশে যোগ হল বিশ্বকাপ শিরোপা।
২০১১ বিশ্বকাপে শচীনের ব্যাটে ভর দিয়েই চিরপ্রতিদ্বন্দী পাকিস্তানকে হারাল ভারত। ম্যাচ সর্বোচ্চ ৮৫ রান করে পেলেন ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ পুরস্কার। এটা ছিল শুধু বিশ্বকাপেই পাকিস্তানের বিপক্ষে তার তৃতীয়বারের মত ম্যাচ সেরার স্বীকৃতি পাওয়ার ঘটনা।
এরপর ফাইনাল। গৌতম গম্ভীর ও মাহন্দ্রে সিং ধোনির ব্যাটে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে উপমহাদেশের প্রথম দল হিসাবে দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপ ট্রফি নিজেদের করে নিল ভারত। দলের ট্রফি জেতার চেয়েও যেন বড় হয়ে উঠল শচীনের শিরোপা জয়। ম্যাচ শেষে উৎসবে মাতোয়ারা ভারতীয় শিবির। আর এই আনন্দযজ্ঞের কেন্দ্রবিন্দুতে শচীন।
আবেগের প্রকাশ ঘটাতে গিয়ে শচীনকে কাঁধে তুলে নিলেন বিরাট কোহলি। পরবর্তীতে এই কাঁধে তোলার কারণ ব্যাখ্যা করে কোহলি বলেছিলেন, ‘যে মানুষটা দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতীয় ক্রিকেটকে কাঁধে করে বয়ে বেড়িয়েছেন তাকে কাঁধে তুলব না তো কি করব?’ ট্রফি জয়ের আনন্দে ভাসিয়ে শচীনকে বিদায় দেয়ার প্রতিজ্ঞা পূরণ করল ভারতীয় শিবির।
ক্রিকেটে স্টিভ ওয়াহর জায়গাটি একটু ভিন্ন। ক্যারিবীয় রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে ক্রিকেটে অজি রাজত্ব কায়েমের রূপকার তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের ক্রমপতন সম্পর্কে বলতে গিয়ে একবার দলটির অধিনায়ক কার্ল হুপার বলেছিলেন, ‘স্টিভ ওয়াহ অধিনায়ক হলেও এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের সুদিন ফিরিয়ে আনতে পারবে না।’
এ কথা থেকেই সুস্পষ্ট যে ক্রিকেটে নেতৃত্ব আর স্টিভ ওয়াহ কতটা সমার্থক। ১৯৮৭ সালে টিন এজ থাকাকালীন জেতেন বিশ্বকাপ শিরোপা। ১৯৮৭ সালের ওই আসরে অস্ট্রেলিয়া ছিল ডার্ক হর্স। আর স্টিভ ওয়াহ নামটিও ছিল অচেনা। উপমহাদেশের মাটি থেকে অস্ট্রেলিয়ার কাপ জয়, ধারনার বাইরে ছিল প্রায় সবারই।
ওই আসরে ব্যাটে-বলে নিজেকে খুব ভালভাবেই চিনিয়েছিলেন স্টিভ ওয়াহ। সেমিফাইনালে ইমরান খানের মত অধিনায়ককে বোকা বানিয়ে দিয়েছিলেন ২১ বছরের ওই তরুণ। ইনিংসের শেষ ওভারে ইমরান বল তুলে দিয়েছিলেন সেলিম জাফরকে। ওই ওভারে তিন তিনটা ছক্কা হাঁকান স্টিভ ওয়াহ। ওই ১৮ রানের পার্থক্য আর পুরো ম্যাচে ঘোচাতে পারেনি পাকিস্তান। এরপর ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ শিরোপা জরে স্বাদ পায় অস্ট্রেলিয়া।
বিশ্বকাপ জিতলেও ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয় যুগ শুরু তখনও ভাবনার অতীত। অ্যালান বোর্ডারের সময় পেরিয়ে, মার্ক টেলর জামানা শেষ হওয়ার পর বিশ্ব ক্রিকেটের রাজশক্তির জায়গায় অস্ট্রেলিয়াকে অধিষ্ঠিত করেন স্টিভ ওয়াহ। তবে ঐতিহাসিক অর্জনের জন্য নেতা স্টিভ ওয়াহর শিরোপা জেতাটা হয়ে ওঠে সময়ের দাবী।
ক্রিকেটে সর্বজয়ী স্টিভ ওয়াহ সেই দাবী মেটালেন, ১৯৯৯ সালে তার শেষ বিশ্বকাপ মিশনে। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওই আসরে সুপার সিক্স পর্ব থেকে ছিটকে পড়ার উপক্রম হয় অস্ট্রেলিয়ার। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ‘জিততেই হবে’ ম্যাচে খাদের কিনার থেকে দলকে একাই উদ্ধার করলেন স্টিভ ওয়াহ।
১২০ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়লেন সেমিফাইনালে নিশ্চিত করেই। এরপর আর কেউ থামাতে পারেনি স্টিভ বাহিনিকে। একতরফা ফাইনালে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে নিজের শেষ বিশ্বকাপকে স্মরণীয় করে রাখলেন স্টিভ ওয়াহ। অস্ট্রেলিয়া তথা স্টিভ রাজত্ব পেল নতুন মাত্রা।
যাদেরকে নিয়ে ক্রিকেটে স্টিভ ওয়াহ একক রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তাদের অন্যতম ছিলেন গিলক্রিস্ট, হেইডেন, ম্যাকগ্রারা। এ তিনজনেরই শেষ বিশ্বকাপপ ছিল ২০০৭। এর আগের অর্থাৎ ২০০৩ বিশ্বকাপের শিরোপাজয়ী দলের অন্যতম সেনানীও এই ত্রয়ী।
১৯৯৯ এর বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন দলে ছিলেন গিলক্রিস্ট ও ম্যাকগ্রা। ওয়েস্টইন্ডিজে আয়োজিত ২০০৭ বিশ্বকাপে শিরোপা মিশনে যোগ দিলেন এই তিনজন। স্টিভ ওয়াহ জামানা শেষ হলেও অস্ট্রেলিয়ান শ্রেষ্ঠত্বে এতটুকু আঁচড় পড়তে দেননি তারা। ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপেও এই ত্রয়ী খেললেন চ্যম্পিয়নের মতই।
ওই আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী ব্যাটসম্যান হেইডেন। সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী ম্যাকগ্রা পেলেন ‘প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ’ পুরস্কার। আর ফাইনাল ম্যাচে নিজেকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেলেন গিলক্রিস্ট। মাত্র ১০৪ বলের টর্নেডো ইনিংসে ১৪৯ রান করলেন এই হার্ডহিটার ওপেনার। বিশ্বকাপ ফাইনালে এটা এখন পর্যন্ত সর্ব্বোচ্চ ব্যাক্তিগত রানের ইনিংস। স্টিভ ওয়াহর চ্যম্পিয়ন বোধকে নিজেদের ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেলেন এই ত্রয়ী।
২০১১ বিশ্বকাপের আগে টানা তিন বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া পড়ল ‘জেনারেশন গ্যাপ’র ফাঁদে। সেরাদের বড় অংশই চলে গেছেন অবসরে। নতুনরা সেই জায়গাগুলো পুরণ করতে পারেননি। আগের দু’ বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক রিকি পন্টিং বেশিদুর টানতে পারলেন না দলকে।
উপমহাদেশের আয়োজনে ভারতের কাছে কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে বিদায় নিল অস্ট্রেলিয়া। অজি ক্রিকেটে তখন রীতিমত বিপর্যয়। পন্টিং অবসর নেয়ার পর নেতৃত্বের গুরুভার পড়ল মাইকেল ক্লার্কের কাঁধে। ততদিনে রাজত্ব হারিয়ে নিজেদের খুঁজে ফিরছে অস্ট্রেলিয়া।
মর্যাদার অ্যাসেজে পরপর কয়েক দফায় ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছে অজি বাহিনি। কোনোভাবেই ধস আটকাতে পারছে না চরম পেশাদারখ্যাত অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট ম্যানেজম্যান্ট। ঠিক এমন একটি সময়ে ২০১৫ বিশ্বকাপে অংশ নিল ক্লার্কের অস্ট্রেলিয়া।
হারানো রাজ্য ফিরে পাওয়ার লড়াই শুরু হল ক্লার্কদের। মূলতঃ নতুনদের নিয়ে নামলেন নতুন অভিযাত্রায়। গৌরব ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ের স্পিরিট ভালভাবেই নতুনদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে সমর্থ হলেন ক্লার্ক। নিউজিল্যান্ডের পিছনে থেকে গ্রুপ পর্বে দ্বিতীয় স্থান লাভ করল অস্ট্রেলিয়া।
মেলবোর্নের ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসাবে ক্লার্ক পেলেন নিউজিল্যান্ডকে। গ্রুপ পর্বে প্রতিবেশিদের কাছে ১ উইকেটে হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালে অবশ্য পুরোপুরি ভিন্ন চিত্র। স্টিভ ওয়াহ, পন্টিংয়ের সময়ের ক্ষুধার্ত চেহারা ফিরে আসল ক্লার্কের দলের মধ্যে।
মেলবোর্নে শিরোপার লড়াইয়ে কিউইদের এক কথায় উড়িয়ে দিল অজিরা। ৭ উইকেটের ব্যবধানে জিতে সর্বাধিক পঞ্চমবারের মত শিরোপা জিতল অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচে দলের পক্ষে সর্ব্বোচ্চ ৭৪ রানের ইনিংস খেললেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে নিজের শেষ বিশ্বকাপ মিশনে ঐতিহাসিক দায়িত্বপালন করলেন ক্লার্ক।
স্টিভ ওয়াহ, পন্টিংদের জীয়ন কাঠিটি তিনি দিয়ে গেলেন উত্তর প্রজন্মকে। নতুনভবে জেগে উঠল অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট। বলা বাহুল্য এটি ছিল মাইকেল ক্লার্কের ক্যারিয়ারে শেষ ওয়ানডে ম্যাচ।
এবারের বিশ্বকাপ এক সুতোঁয় বেধেঁছে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি ও উইন্ডিজ রান মেশিন ক্রিস গেইলকে। এবারের আসরে অংশ নেয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে এ দু’জনই কেবল খেলেছেন ২০০৩ বিশ্বকাপে। বিশ্বকাপে অংশ নেয়ার দিক থেকে এ দু’জনই সবচেয়ে অভিজ্ঞ।
৩৫ পেরিয়েছেন মাশরাফি। আর ৪০ ছুঁইছুই গেইল। বিশ্বের প্রায় সব গ্রেটদের চোখে এ সময়ের সেরা অধিনায়ক মাশরাফি। আর সীমিত ওভারের ক্রিকেটে এখনও বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যাটসম্যান গেইল। ব্যাটিংয়ের শিল্পী ব্রায়ান লারা অবসরে যাওয়ার পর ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের সেই পুরনো স্বাদ-গন্ধ-রুপ-রস গেইলের মধ্যেই খুঁজে পান ক্রিকেটপ্রেমীরা। মাশরাফি-গেইলের মধ্যে সবচেয়ে বড় সাদৃশ্যটা হল ওয়ানডে বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেলতে পারেনি দু’জনই। সর্বোচ্চ কেয়ার্টার ফাইনাল থেকেই ঝরে গেছেন বিশ্ব ক্রিকেটের এই দুই সম্ভ্রম জাগানো নাম।
এটাই তার শেষ বিশ্বকাপ, আগেই জানিয়ে দিয়েছেন বাংলদেশ সংসদের নবীন সদস্য মাশরাফি। এমনিতেই গত বেশ কয়েক বছর ধরেই ওয়ানডে ক্রিকেটে অনিয়মিত গেইল। প্রৌঢ়ত্বের প্রান্তবেলায় পৌঁছানো এই ক্যারিবীয় ওপেনারকে আনা হয়েছে বিশ্বকাপকে মাথায় রেখেই।
গত চার দশক ধরে বিশ্বকাপ শিরোপা নাই এক সময়ের ক্রিকেটের দেশ বিবেচিত ওয়েস্টইন্ডিজের। হালে নতুনভাবে শুরুর একটা ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে দলটির মধ্যে। অধিনায়ক জ্যাসন হোল্ডারের নেতৃত্বে দলটির মধ্যে বিশৃঙ্খলতাও কমে এসেছে অনেকটায়। বেশ কয়েকজন প্রমাণিত ম্যাচ উইনারের উপস্থিতি বর্তমানে একটা সম্ভবানার উপর দাঁড় করিয়েছে উইন্ডিজকে। এদের সঙ্গে গেইলকে যুক্ত করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা ক্যারিবীয় ক্রিকেট ম্যানেজম্যান্টের।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড় স্বপ্নের সবটুকু জায়গা জুড়েই মাশরাফি। সেরা অধিনায়কের সনদ নিয়েই এবারের বিশ্বকাপ অংশ নিচ্ছেন তিনি। শুধু তার নেতৃত্বগুণেই ঢেকে যায় বাংলাদেশ ক্রিকেটে দলের অনেক ফাঁক-ফোঁকর, ত্রুটি-বিচ্যুতি, সামর্থ্যরে সীমাবদ্ধতা। এই মাশরাফির জন্য নিজেদের সবটুকু উজাড় করে দেয়ার প্রতিজ্ঞা সতীর্থদের।
আজ পর্যন্ত বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেলেনি বাংলাদেশ। সেখানে কত বড় স্বপ্নই দেখা সম্ভব? স্বপ্নের সঙ্গে তো বাস্তবতাও থাকতে হবে? কিন্তু যখন নেতা মাশরাফি, তখন পরিসংখ্যান, উপাত্ত সব কিছুকেই ভুল করে দেয়ার চ্যালেঞ্জ অনুভব করে বাংলাদেশে দলের প্রতিটি ক্রিকেটার। মুশফিকের ভাষায়, প্রথমে সেমিফাইনাল। তারপর তো একটা করে ম্যাচ।
দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথম ম্যাচে গুঁড়িয়ে দিয়ে সেই পথে যাত্রাটা দারুণভাবে শুরু করেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত মাশরাফিকে কি উপহার দিতে পারেন তারা।
আইএইচএস/এমএস