নারী ক্রিকেটারদের পাওনা বুঝিয়ে দিলো গুলশান ইয়ুথ ক্লাব
নারী ক্রিকেটারদের পাওনা টাকা পরিশোধ করেছে গুলশান ইয়ুথ ক্লাব। ক্লাবটি এ বছর নারী প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ থেকে নেমে গেছে প্রথম বিভাগে। যে কারণে, স্থানীয় ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক পরিশোধে গড়িমসি করছিল তারা। লিগ শেষ হওয়ার পর স্থানীয় বেশিরভাগ মেয়েকে চুক্তির অর্ধেক টাকা দিয়েছিল তারা। গত ৩১ মে ‘গুলশান ইয়ুথ ক্লাব থেকে টাকা না পেয়ে নারী ক্রিকেটারদের চোখে পানি’- শিরোনামে জাগো নিউজে খবর প্রকাশের পর বিষয়টি নজরে আসে সবার।
ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) উদ্যোগে মেয়েদের টাকা পরিশোধ শুরু করলো প্রিমিয়ার থেকে প্রথম বিভাগ লিগে নেমে যাওয়া ক্লাবটি।
ঢাকায় অবস্থান করা ৫/৬ জন নারী ক্রিকেটার সোমবার গুলশান ক্লাবে গিয়ে তাদের বাকি টাকা নিয়ে এসেছেন। যারা ঢাকা থেকে বাড়িতে চলে গেছেন তাদের টাকা হাতে হাতে দিতে পারেনি ক্লাব। সবার ব্যাংক হিসেব নম্বর নেয়া হয়েছিল টাকা পাঠিয়ে দেবে বলে। কিন্তু সোমবার ব্যাংকের শেষ কার্যদিবস থাকায় বিকল্পভাবে মেয়েদের কাছে টাকা পাঠিয়ে দেয়া শুরু করেছে ক্লাবটি।
মেয়েদের টাকা পাওয়ার উদ্যোগটা নিয়েছিল ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব)। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল বলেছেন, ‘জাগো নিউজে খবরটি প্রকাশের পরই আমি বিষয়টি নিয়ে প্রথমে কথা বলি আমাদের সংগঠনের সভাপতি নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের সঙ্গে। তিনি বিষয়টি নিয়ে তৎপর হয়ে ওঠেন এবং কথা বলেন বিসিবির সিইও নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সুজনের সঙ্গে। গুলশান ইয়ুথ ক্লাব অফিসিয়ালদের সঙ্গেও কথা বলি আমরা। বিসিবি থেকে বলা হয়েছিল, ক্লাব এখন মেয়েদের টাকা দিতে না পারলে সেটা যদি উল্লেখ করে চিঠি দেয় তাহলে ঈদের আগে মেয়েদের টাকার ব্যবস্থা তারা করবে। কিন্তু রোববার সন্ধ্যায় গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের ক্রিকেট সাব-কমিটির কো-কনভেনর সাঈদা কবীর মুনমুন আমাকে জানান, তারাই টাকার ব্যবস্থা করছেন।’
এরপরই ক্রিকেটারদের ফোন করে পাওনা টাকা নিয়ে যেতে বলা হয় ক্লাব থেকে। যারা ঢাকায় আছেন তারা সোমবার দুপুরে ক্লাব থেকে পুরো পাওনা টাকা নিয়ে এসেছেন। ‘যে মেয়েরা ঢাকার বাইরে তাদের আমরা আসতে বলিনি। কারণ, ঈদ সামনে। যাতায়াতে বড় একটা ঝামেলা। ক্লাব থেকে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কিংবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। ক্লাব মেয়েদের শতভাগ পাওয়ানাই দিয়ে দিচ্ছে’- বলেছেন কোয়াবের সাধারণ সম্পাদক।
লতা, তৃষ্ণা, লায়লা, রিদমি, লিজা, তানিয়া ও ইলা দুপুরে গুলশান ইয়ুথ ক্লাবে গিয়ে তাদের পাওনা বুঝে নিয়েছেন। ‘আমার সঙ্গে ক্লাবের ৩৫ হাজার টাকা চুক্তি ছিল। আগে আমাকে দেয়া হয়েছিল ১৯ হাজার ৬০০ টাকা। আজ (সোমবার) বাকি টাকা দিয়েছে ক্লাব। এখন আমার কোনো পাওনা বাকি নেই’- ক্লাব থেকে টাকা পেয়ে জাগো নিউজকে বলেন দলের ক্রিকেটার নরসিংদীর লিজা আক্তার।
নারায়নগঞ্জের রিদমি আক্তার তার ভাইকে নিয়ে এসেছিলেন গুলশান ইয়ুথ ক্লাবে। টাকা পেয়ে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, ‘ক্লাব আমার বাকি পাওনা বুঝিয়ে দিয়েছে।’ যশোর থেকে শিরিন আক্তার বলছিলেন, ‘ক্লাব থেকে আমাকে ফোন করা হয়েছিল। বিকাশ নম্বর নিয়েছে। টাকা নাকি পাঠিয়ে দেবে। অপেক্ষায় আছি।’
রাঙ্গামাটি থেকে চম্বা চাকমা উচ্ছসিত কন্ঠে বলছিলেন, ‘এই মাত্র মোবাইলে আমার বাকি ৪০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে ক্লাব।’
ঈদের আগে মেয়েদের পাওনা পরিশোধ করায় গুলশান ইয়ুথ ক্লাবকে ধন্যবাদ জানিয়ে ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল বলেন, ‘আমরা আগে কখনো মেয়েদের এই ধরনের ঝামেলা নিয়ে কাজ করিনি। এবারই প্রথম। ক্লাব তাদের টাকা দিয়ে দিয়েছে। এটা অবশ্যই ভালো খবর। যারা বাড়িতে চলে গেছেন তারা ঢাকায় থাকলে টাকাটা হাতে হাতেই পেয়ে যেতেন। এখন ব্যাংকও ক্লোজ। গুলশান ইয়ুথ ক্লাব তাই বিকল্পভাবে টাকা পাঠাচ্ছে মেয়েদের।’
আরআই/আইএইচএস/এমএস