তারুণ্যের প্রতীক মিরাজের স্বপ্ন অনেক বড়
বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে থাকাকালীন ২০১৬ সালের অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সময় নিজের লক্ষ্য হিসেবে জানিয়েছিলেন, ‘অন্তত ১৫ বছর জাতীয় দলের হয়ে খেলতে চাই।’
সে লক্ষ্যে এরই মধ্যে কাটিয়ে ফেলেছেন ৩টি বছর। তখনই বলেছিলেন জাতীয় দলে ঢুকতে চান ২ বছরের মধ্যে। এ লক্ষ্যটিও তিনি পূরণ করেছেন মাত্র ৮ মাসের মধ্যেই। শুনে মনে হচ্ছে, যেখানে হাত দিয়েছেন, সোনা ফলেছে মেহেদী হাসান মিরাজের।
অথচ ক্যারিয়ারের শুরুটা এতো সহজ ছিলো না তার। মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়ায় তার জন্য নিয়মিত ক্রিকেট খেলাটা ছিলো রীতিমতো বিলাসিতার সামিল। বাবা জালাল তালুকদারও শুরুতে মানতে পারেননি একমাত্র ছেলের অন্যসব কাজ বাদ দিয়ে সারাদিন ব্যাট-বল নিয়ে পড়ে থাকা। বাবাকেও রাজি করিয়েছেন নিজের সামর্থ্য ও প্রতিভা দিয়েই।
২০১০ সালে অনূর্ধ্ব-১৪ জাতীয় বিভাগীয় প্রতিযোগিতার সেরা ব্যাটসম্যান নির্বাচিত হয়ে পুরষ্কার নিতে এসেছিলেন মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। এত বড় মাঠে দর্শকদের সমারোহ দেখে বদলে যেতে থাকে বাবার ধারণা, শুরুর রাগ মিইয়ে গিয়ে অনুমতি দেন নির্বিঘ্নে ক্রিকেট খেলার। সেদিন থেকে যে শুরু! এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ২১ বছর বয়সী অফস্পিনিং অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজকে।
জাতীয় দলের সিঁড়িতে পা দেয়ার আগে সফলভাবে শেষ করেছেন বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের গণ্ডিটা। নিজের মধ্যে নেতাসুলভ একটি বৈশিষ্ট্য থাকায় ২০১৪ ও ২০১৬ সালে পরপর দুইটি অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে অধিনায়কত্ব করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল মিরাজের কাঁধে। ঘরের মাঠে ২০১৬ সালের বিশ্বকাপে দলকে এনে দিয়েছেন দেশের ইতিহাসের সেরা সাফল্য, বাংলাদেশ হয়েছিল তৃতীয়। মিরাজ নিজেও জিতেছিলেন টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার।
জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে হওয়া সে টুর্নামেন্টের পর জাতীয় দলে পা রাখতে মিরাজের অপেক্ষা করতে হয়েছিল মাত্র ৮ মাস। অক্টোবরে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড খেলতে এলে বিশেষজ্ঞ অফস্পিনার হিসেবে অভিষেক করানো হয় তাকে। প্রথম ম্যাচেই ইনিংসে ৬টি সহ নেন ৭টি উইকেট। অল্পের জন্য জিততে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। তবে পরের ম্যাচটিতে দুই ইনিংসেই ৬টি করে উইকেট নিয়ে টাইগারদের প্রথম ইংলিশ বধের একচ্ছত্র নায়ক ১৯ বছর বয়সী তরুণ মেহেদি হাসান মিরাজ।
এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। শুরুতে টেস্ট স্পেশালিস্ট হিসেবে খেললেও, ধীরে ধীরে নিজেকে অটোমেটিক চয়েজে পরিণত করেছেন তিন ফরম্যাটেই। ২০১৭ সাল থেকে নিয়মিতই খেলছেন তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটে। সাদা পোশাকে উইকেটটেকার এবং রঙিন পোশাকে কিপটে বোলিংয়ের দায়িত্বটাও পালন করছেন বেশ ভালোভাবেই।
যে কারণে ক্যারিয়ারের আড়াই বছরের মাথায় সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন বড়দের বিশ্বকাপে খেলার। ছোটদের বিশ্বকাপে সেরাদের সেরা হওয়া মিরাজের এবারের লক্ষ্যটা অবশ্য খানিক ভিন্ন। দলে অন্যান্য তারকা খেলোয়াড়দের ভিড়ে নিজের কাজটা ঠিকঠাক করতে চান এ অফস্পিনিং অলরাউন্ডার। বোলিংয়ে রান ঠেকিয়ে রেখে চাপ সৃষ্টি করা এবং ব্যাটিং পেলে দলের জন্য কার্যকরী ইনিংস খেলাই মূল লক্ষ্য হিসেবে ঠিক করে বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছেন মিরাজ।
এসএএস/আইএইচএস/এমএস