ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

ইমরান-ওয়াসিমদের হাতে বিশ্বকাপ শিরোপা

ইমাম হোসাইন সোহেল | প্রকাশিত: ০১:০৫ পিএম, ২৪ মে ২০১৯

ক্রিকেট ইতিহাসের অনেক বড় মোড় পরিবর্তনের বিশ্বকাপ ছিল ১৯৯২ সালে। ভারত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে বিশ্বকাপ গেলো অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে। যদিও এটা বড় কোনো মোড় পরিবর্তন নয়। ১৯৯২ সাল থেকেই যে ক্রিকেট হয়ে উঠলো রঙিন।

১৯৭৭ সালে অস্ট্রেলিয়ান ব্যবসায়ী ক্যারি পেকার যে ট্র্যাডিশন চালু করেছিলেন, আইসিসি সেটাকে গলদকরণ করতে সময় নিয়েছিল ১৫ বছর। রঙিন পোশাক, রাতের অন্ধকারে ফ্লাডলাইটের আলোয় খেলা, সাদা বল- কত কিছুই না চালু করে দিয়েছিলেন ক্যারি পেকার।

সারা ক্রিকেট বিশ্বে সেই ক্যারি পেকার ওয়ার্ল্ড সিরিজের দারুণ সাড়া পড়েছিল। ক্রিকেট যে করপোরেট বাণিজ্যের নতুন দিগন্ত হতে পারে- সেটাও দেখিয়ে দেন ক্যারি পেকার। আইসিসি ১৫ বছর পর সেই ধারণা গ্রহণ করে নেয় এবং অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপেই সিদ্ধান্ত নেয় রঙিন পোষাক, সাদা বল এবং ফ্লাড লাইটের আলোয় দিবা-রাত্রির ম্যাচ আয়োজন করার। এই বিশ্বকাপের পৃষ্ঠপোষক ছিল বেনসন অ্যান্ড হেজেস।

রঙিন পোশাক, ফ্লাড লাইট- এর আগে টুকটাক পরীক্ষামূলকভাবে বিভিন্ন ওয়ানডেতে চালু করেছিলো আইসিসি। আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বকাপে প্রথমবার ১৯৯২ সালেই আইসিসি পাকাপাকি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এগিয়ে আসে। সে সঙ্গে খেলোয়াড়দের জার্সির পেছনে নাম লেখা, সাদা বল, ফিল্ডিংয়ের বাধ্যবাদকতা এবং দুই প্রান্তে দুই নতুন বল মিলিয়ে বলা যায় আধুনিক ক্রিকেটের জোয়ার শুরু হলো ১৯৯২ বিশ্বকাপ থেকে।

southeast

এই বিশ্বকাপেই অদ্ভূত বৃষ্টি আইনের প্রচলন ঘটায় আইসিসি। তার আগে রান গড়ের সুবাদে পরে ব্যাট করা দলের সামনে লক্ষ্য ছুড়ে দেয়া হত। এই বিশ্বকাপ থেকে ‘সেরা ওভার’ আইনে অদ্ভূত লক্ষ্য দাঁড়া করানো শুরু হল বৃষ্টিবিঘ্নিত দ্বিতীয় ইনিংসে। যার সবচেয়ে বড় শিকার হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

বলা বাহুল্য, বর্ণবাদের অভিযোগ কাটিয়ে ২২ বছর নিষিদ্ধ থাকার পর ১৯৯১ সালে ক্রিকেটে ফিরে আসে প্রোটিয়ারা এবং ১৯৯২ সালেই যাত্রা শুরু হলো দক্ষিণ আফ্রিকানদের বিশ্বকাপ অভিযান। ফলে তাদের জায়গা দিতে বিশ্বকাপের ফরম্যাটে ব্যাপক রদবদল আনতে হয়।

দক্ষিণ আফ্রিকাসহ ৮টি টেস্ট প্লেয়িং দেশের সঙ্গে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন জিম্বাবুয়েকে নিয়ে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯। ফরম্যাট বদলে ৯ দলের এই টুর্নামেন্টকে এক গ্রুপের প্রথম পর্বে পরিণত করা হল।

অংশগ্রহণকারী ৯ দেশ লিগ পদ্ধতিতে ৮টি করে ম্যাচে অংশ নেয়। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা ৪টি দেশকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় সেমিফাইনাল। প্রথম সেমিফাইনালে ইমরান খানের পাকিস্তান ৬ উইকেটে নিউজিল্যান্ডকে এবং দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২০ রানে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে।

এই সেমিফাইনালেই ভুতুড়ে বৃষ্টি আইনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আফ্রিকানদের লক্ষ্য দাঁড়িয়েছিল ১ বলে ২২ রান! ইংল্যান্ডের করা ২৫২ রানের জবাব দিতে নেমে ৪৩ ওভারে ২৩২ রান তুলে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। এ সময়ই বৃষ্টি হানা দেয়। তখন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন ছিল ১৩ বলে ২২ রান। বৃষ্টি কেড়ে নেয় পুরো ২ ওভার। অদ্ভূত বৃষ্টি আইনে শেষ পর্যন্ত প্রোটিয়াদের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১ বলে ২২ রান। যা অবিশ্বাস্য এবং এই লক্ষ্য তো কোনোভাবেই পাড়ি দেয়া সম্ভব ছিল না দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য।

southeast

এই বিশ্বকাপের ক্রিকেটকে সবচেয়ে বড় চমক ছিল পিঞ্চ হিটিং ও পাকিস্তানের রোমাঞ্চকর ক্রিকেট। ফিল্ডিং বাধ্যবাদকতার সুবিধা নিয়ে ইয়ান বোথাম ও মার্ক গ্রেট ব্যাচরা এক মারকাটারি ব্যাটিং উপহার দিতে শুরু করেন প্রথম ১৫ ওভারে। সেই ধারাবাহিকতা এখনও চলছে।

তবে সবাইকে ছাপিয়ে গেল ইমরান খানের অতুলনীয় নেতৃত্ব। তার উদ্ভাবনী ও আকর্ষনীয় পরিচালনায় ওয়াসিম আকরাম, ইনজামাম-উল হক, মোশতাক আহমেদরা তৈরি করেছিলেন দারুণ গল্পগাথা। যে গল্প দিয়ে প্রথম এবং একমাত্র ট্রফিটি ঘরে তুলে নিলো পাকিস্তানিরা।

২৫ মার্চ মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত ফাইনালে মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড এবং পাকিস্তান। তৃতীয়বারেরমত বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলছে ইংল্যান্ড। অন্তত এবার তো তাদের ট্রফি চাই’ই চাই। কিন্তু ইমরান খানের অসাধারণ নেতৃত্বগুণের কাছেই পরাজিত হতে হয়েছিল ইংল্যান্ডকে।

টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান। ইমরান খানের ক্যাপ্টেন্স নক ৭২ রান, জাভেদ মিয়াঁদাদের ৫৮, ইনজামাম-উল হকের ৪২ এবং ওয়াসিম আকরামের ৩৩ রানের ওপর ভর করে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৪৯ রান।

জবাব দিতে নেমে শুরুতে ইয়ান বোথাম এবং অ্যালেক স্টুয়ার্টের উইকেট হারিয়ে ফেললেও গ্র্যাহাম গুচ, গ্রায়েম হিক, নেইল ফেয়ারব্রাদার অ্যালান ল্যাম্বরা পাকিস্তানের কাছ থেকে জয় ছিনিয়ে নিতে শুরু করেন। চিন্তিত অধিনায়ক ইমরান খান বলতে গেলে প্রথা ভেঙ্গেই ওয়াসিম আকরামকে বোলিংয়ে নিয়ে আসেন ইনিংসের মাঝপথে।

বোলিংয়ে এসেই অ্যালান ল্যাম্ব আর ক্রিস লুইসকে দুই বলে বোল্ড করে ফিরিয়ে দেন ওয়াসিম আকরাম। ম্যাচ হেলে পড়ে পাকিস্তানের দিকে। ৬২ রান করা নেইল ফেয়ারব্রাদারকে তুলে নেন আকিভ জাভেদ। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড অলআউট হয়ে যায় ২২৭ রানে। ২২ রানে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতে নেয় পাকিস্তান।

ফাইনালে ব্যাট হাতে ৩৩ রান এবং ১০ ওভারে ৪৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেয়ার কারণে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার জিতে নেন ওয়াসিম আকরাম।

অথচ এই পাকিস্তানের কি ভাগ্য। গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল ইমরান খানের দল। ডেরেক প্রিঙ্গল, ফিল ডিফ্রেইটাস, গ্ল্যাড স্টোন স্মল এবং ইয়ান বোথামের আগুনে বোলিংয়ের সামনে মাত্র ৭৪ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। ওই ম্যাচে হার মানে গ্রুপ পর্ব থেকেই নিশ্চিত বিদায় পাকিস্তানের।

কিন্তু কি অদ্ভূত ভাগ্য পাকিস্তানিদের। ইংল্যান্ড ৮ ওভারে ১ উইকটে হারিয়ে ২৪ রান তোলার পরই বৃষ্টি নামে এবং শেষ পর্যন্ত ম্যাচই বাতিল হয়ে যায়। এবং পয়েন্ট ভাগাভাগি। সেই পয়েন্ট ভাগাভাগিতেই ভাগ্যের দরজা খুলে যায় পাকিস্তানের। শেষ পর্যন্ত চতুর্থ দল হিসেবে ওঠে তারা সেমিফাইনালে।

পাকিস্তানের ভাগ্যে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল স্বাগতিক এবং ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া, প্রবল প্রতাপশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং জিম্বাবুয়েকে।

আইএইচএস/এমএস

আরও পড়ুন