ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরাদের গল্প

ক্রীড়া প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৯:৪৩ পিএম, ২১ মে ২০১৯

মিনহাজুল আবেদিন নান্নুকে তো বিশ্বকাপের দলেই রাখা হয়নি প্রথমে। কিন্তু মিডিয়ায় তুমুল লেখালেখির কারণে শেষ পর্যন্ত নির্বাচকরা এক প্রকার বাধ্য হয় তাকে দলে নেয়ার জন্য। সেই মিনহাজুল আবেদিন নান্নুই সর্বপ্রথম ইতিহাস রচনা করলেন। বাংলাদেশের হয়ে প্রথম বিশ্বকাপে হলেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ। তার দেখানো পথে হেঁটে আরও ৯ জন ম্যাচ সেরা হলেন বিশ্বকাপের মহাযজ্ঞে।

বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের জয় মোট ১১টি ম্যাচে। এর মধ্যে ১০টিতে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছে টাইগার ক্রিকেটাররা। এর মধ্যে ২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জিতলেও বাংলাদেশের কেউ ম্যাচ সেরা হয়নি। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে সেই সেরাদের সম্পর্কেই সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরা হলো জাগো নিউজের পাঠকদের সামনে...।

মিনহাজুল আবেদিন নান্নু
প্রতিপক্ষ : স্কটল্যান্ড, ১৯৯৯। আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের চাওয়া-পাওয়া খুব বেশি ছিল না। একটাই চাওয়া ছিল স্কটল্যান্ডকে হারানো। তবে বিশ্বকাপে খেলতে নামার পর আমিনুল ইসলাম বুলবুলদের পারফরম্যান্স ক্রিকেট বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়। যার প্রথমটিতে ছিল স্কটল্যান্ডকে হারানোর গল্প। বিশ্বকাপে প্রথম জয়ও বটে সেটি বাংলাদেশের। এই ম্যাচের জয়ের নায়ক হলেন তিনি, যার বিশ্বকাপ খেলার কথাই ছিল না।

বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর কথাই বলা হচ্ছে। ৯৯ বিশ্বকাপে প্রথমে নান্নুর সুযোগই মেলেনি। তবে সংবাদ মাধ্যমে লেখালেখি এবং বোর্ড কর্তাদের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ দলে অন্তর্ভুক্ত হন তিনি। এবং সুযোগ পেয়েই বাংলাদেশ দলকে বিশ্বকাপে প্রথম জয়টা উপহার দিলেন তিনি। ১৯৯৯ সালের ২৪ মে এডিনবরায় দলের কঠিন মুহূর্তে নান্নু খেলেন ৬৮ রানের এক বীরোচিত ইনিংস। যার মাহাত্ম্য আজও কমেনি।

সেদিন প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২৬ রানের মধ্যেই ৫ উইকেট হারিয়ে বসেছিল টাইগাররা; কিন্তু ৬ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে একাই দলকে টেনে তোলেন নান্নু। মাটি কামড়ে পড়ে থেকে ১১৬ বলে খেলেন ৬৮ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। এই ইনিংসের ওপর ভর করেই ১৮৫ রান তোলে বাংলাদেশ।

শেষ পর্যন্ত স্কটল্যান্ডকে ২২ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপে প্রথম জয় পায় বাংলাদেশ। সেদিন বল হাতে ১টি উইকেটও পেয়েছিলেন দেশবরেণ্য এ ক্রিকেটার। দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জিতে নেন তিনি।

Sujon

খালেদ মাহমুদ সুজন
পাকিস্তান, ১৯৯৯। স্কটল্যান্ডকে হারানোর পর ইংল্যান্ড বিশ্বকাপেই বাংলাদেশ তাদের দ্বিতীয় জয়ের দেখা পেয়ে যায়। যদিও এমন একটি জয় এভাবে চলে আসবে ভাবতেও পারেনি বাংলাদেশ।

নর্দাম্পটনে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচটি ছিল বিশ্বকাপে শেষ ম্যাচ। শেষ ম্যাচে বিশেষ কিছু করে দেখারো প্রত্যয় নিয়েই মাঠে নামে বাংলাদেশ এবং অবিশ্বাস্যভাবে পাকিস্তানকে হারিয়ে দেয় ৬২ রানের ব্যবধানে।

এই জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন খালেদ মাহমুদ সুজন। ম্যাচটি ছিল ৩১মে। নর্দাম্পটনে টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। দলের সবার ছোট ছোট প্রচেষ্টায় স্কোরবোর্ডে সেদিন ২২৩ রানের সংগ্রহ পায় টাইগাররা।

জবাব দিতে নেমে এক মিডিয়াম পেসার সুজনের কাছেই যেন অসহায় আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানের পরাক্রমশালী দলটি। সাঈদ আনোয়ার, শহিদ আফ্রিদি, ইনজামাম-উল হকরা বাংলাদেশের সামনে সেদিন দাঁড়াতেই পারেননি।

১০ ওভার বল করে ২ মেডেনসহ ৩১ রান খরচায় সুজন তুলে নিয়েছিলেন আফ্রিদি, ইনজামাম আর সেলিম মালিকের উইকেট। ফলাফল ১৬১ রানেই অলআউট হয়ে যায় ৯২’এর বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন এবং সেবারের ফাইনালিস্টরা।

তার আগে ব্যাট হাতে গুরুত্বপূর্ণ ২৭ রানের পর বল হাতে ৩ উইকেট। বাংলাদেশের পক্ষে সহজেই তাই বিশ্বকাপে দ্বিতীয় ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হয়ে যান খালেদ মাহমুদ সুজন।

Mashrafee

মাশরাফি বিন মর্তুজা
ভারত, ২০০৭। ২০০৩ বিশ্বকাপ বাংলাদেশকে লজ্জা ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি। এক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়ায় ২ পয়েন্ট পাওয়াই ছিল অর্জন। এছাড়া গ্রুপ পর্বের বাকি ৫ ম্যাচেই হারে খালেদ মাসুদ পাইলটের নেতৃত্বাধীন দলটি। এমনকি কানাডা ও কেনিয়ার বিপক্ষেও ওই আসরে হারের লজ্জায় ডোবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

সেই লজ্জার ইতিহাস পাশ কাটিয়ে উঠে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ খেলতে যায় নিজেদের আত্মসম্মান ফিরে পেতে। খেলতে গিয়েই বাজিমাত টাইগারদের। নিজেদের প্রথম ম্যাচেই শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে দেয় তারা। বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের বর্তমান অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা পোর্ট অব স্পেনে ধসিয়ে দেন টিম ইন্ডিয়ার ব্যাটিং লাইনআপ।

পকেটে পুরে নেন ৪ উইকেট। মূলতঃ তার বোলিং নৈপুণ্যেই ১৯১ গুটিয়ে যায় ভারত। আর বাংলাদেশ সেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ৫ উইকেট হাতে রেখে। ম্যাচ জুড়ে দুর্দান্ত বোলিং করে যাওয়ায় ম্যাচ সেরার পুরস্কার ওঠে পেসার মাশরাফির হাতেই।

Ashraful

মোহাম্মদ আশরাফুল
বারমুডা, ২০০৭। ভারতকে হারানোর পর ২০০৭ বিশ্বকাপে সুপার এইটে ওঠার জন্য আর একটিমাত্র জয় প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ পেয়ে গেলো দুর্বল বারমুডাকে। আইসিসির সহযোগি এই দেশটিকে হারিয়ে সুপার এইটে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ দল।

এ ম্যাচ অবশ্য খুব সহজেই জিতে নিয়েছিল হাবিবুল বাশারের দল। প্রথমে ব্যাট করে বারমুডা মাত্র ৯৪ রানে আটকে গেলে মোহাম্মদ আশরাফুলের ২৯ রানের দায়িত্বশীল ইনিংসে ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়ে টিম বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করায় ম্যাচ সেরার পুরস্কার ওঠে তখনকার দেশীয় ক্রিকেটের সুপারস্টার আশরাফুলের হাতে।

Ashraful

মোহাম্মদ আশরাফুল
দক্ষিণ আফ্রিকা, ২০০০৭। বারমুডার বিপক্ষে ম্যাচ জয়ী ইনিংসের পর শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। সুপার এইটের প্রথম দুই ম্যাচ হেরে গেলেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ২৫১ রানের লড়াকু সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। দলের হয়ে ৮৩ বলে ৮৭ রানের এক দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন আশরাফুল।

২৫২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে প্রোটিয়ারা মাত্র ১৮৪ রানেই গুটিয়ে গেলে ৬৭ রানের জয় পায় টাইগাররা। আর ম্যাচে সর্বোচ্চ ৮৭ রান করায় এক বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বারের মতো ম্যাচ সেতার খেতাব অর্জন করেন আশরাফুল।

Tamim

তামিম ইকবাল
আয়ারল্যান্ড, ২০১১। ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে বাংলাদেশ গ্রুপ পর্বের কোটা পেরোতে না পারলেও তিনটি ম্যাচে জয়ের দেখা পায়। সেবারের আসরে টাইগাররা প্রথম জয় তুলে নেয় আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। মিরপুরে টসে জিতে ব্যাট করে বাংলাদেশ অলআউট হয় ২০৫ রানে।

দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেন ওপেনার তামিম ইকবাল। পরবর্তীতে যা ম্যাচ জয়ী ইনিংস হিসেবে স্বীকৃতি পায়। বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেয়া লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে আইরিশরা গুটিয়ে যায় ১৭৮ রানে। ২৭ রানের জয় পাওয়ায় ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান তামিম।

Imrul

ইমরুল কায়েস
ইংল্যান্ড ২০১১। একই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে দুটো ম্যাচ সেরার কীর্তি সর্বপ্রথম গড়েন মোহাম্মদ আশরাফুল ২০০৭ বিশ্বকাপে। আর ২০১১ বিশ্বকাপে সে রেকর্ডে ভাগ বসান ইমরুল কায়েস। এই ওপেনার প্রথম ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের দিন। ডু অর ডাই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে স্কোরবোর্ডে ২২৫ রান তোলে ইংলিশরা।

জবাবে ইমরুল কায়েসের ৬০ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও শফিউল ইসলামের অনবদ্য ফিনিশিংয়ে ম্যাচ ২ উইকেট হাতে রেখেই জিতে যায় সাকিব আল হাসানের দল। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলায় ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান ইমরুল কায়েস।

Imrul

ইমরুল কায়েস
নেদারল্যান্ডস ২০১১ । ইংল্যান্ড ম্যাচের পর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও ম্যাচ জয়ী ইনিংস উপহার দেন ইমরুল কায়েস। আগে ব্যাট করে ডাচরা মাত্র ১৬০ রানে গুটিয়ে যাওয়ায় সেদিন টাইগাররা ম্যাচ জেতে ৫ উইকেট হাতে রেখে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরার পুরস্কার বাগিয়ে নেন এই ওপেনার।

Mushfiq

মুশফিকুর রহীম
আফগানিস্তান ২০১৫। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ২০১৫ বিশ্বকাপ জয় দিয়েই শুভসূচনা করে মাশরাফির বিন মর্তুজার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল। আফগানিস্তানকে টাইগাররা হারায় ১০৫ রানের বড় ব্যবধানে।

প্রথমে ব্যাট করে স্কোরবোর্ডে ২৬৭ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ। জবাবে ১৬২ রানের মধ্যেই গুটিয়ে যায় আফগানরা। বাংলাদেশের হয়ে সেদিন মাত্র ৫৬ বলে ৭১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হয়ে যান মুশফিকুর রহীম।

Mahmudullah

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ
ইংল্যান্ড ২০১৫। সাফল্য বিবেচনায় ২০১৫ বিশ্বকাপ বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত সেরা বিশ্বকাপ। এই অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপেই বাংলাদেশের হয়ে প্রথম বিশ্বকাপ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। যদিও একটি না; পরপর দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে চতুর্দিকে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন সাইলেন্ট কিলার খ্যাত এই ব্যাটসম্যান।

২০১১ বিশ্বকাপের পর ২০১৫ বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের কাছে নাকানি-চুবানি খায় ইংলিশরা। অ্যাডিলেডে ৯ মার্চ মাহমুদউল্লাহর অনবদ্য সেঞ্চুরির উপর ভর করে ২৭৫ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে তোলে বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে রুবেল হোসেনের দুর্দান্ত বোলিং নৈপুণ্যে ১৫ রানে জয় পায় বাংলাদেশ। ৪ উইকেট নেন রুবেল। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে সেদিন মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরিরই জয়জয়কার হয়। ম্যাচ সেরার পুরস্কারও তাই এই ব্যাটসম্যানের হাতে ওঠে।

এসএস/আইএইচএস/পিআর

আরও পড়ুন