বিশ্বের ঘৃণিত একাদশে মুশফিক!
খেলোয়াড়দের যেমন বিশ্বজুড়ে ফ্যান থাকে, তেমনি থাকে হেটারও। হয়তো কোনো একটা স্ট্যাটাস, কোনো একটা কথা কিংবা মাঠের কোনো একটা কাণ্ডের কারণে অনেক সময় নিন্দিতদের কাতারে চলে যেতে পারেন বড় খেলোয়াড়ও। ভারতীয় ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট 'ক্রিকট্র্যাকার' বিশ্ব ক্রিকেটের ঘৃণিত খেলোয়াড়দের এমনই এক তালিকা করেছে, যার মধ্যে তারা রেখেছে বাংলাদেশের মুশফিকুর রহীমকেও।
এই একাদশে এক নাম্বারেই আছেন সালমান বাট। এমনকি জায়গা পেয়েছেন রিকি পন্টিং, মাইকেল ক্লার্কের মতো বড় তারকারা। আছেন ভারতেরও খেলোয়াড়। এক নজরে দেখা নেয়া যাক সেই একাদশ...
১. সালমান বাট : পাকিস্তানের প্রতিভাবান ওপেনার, যার মধ্যে সর্বকালের সেরা হওয়ার সব গুণাবলিই ছিল। ২০১০ সালে স্পট ফিক্সিং কান্ডে নিজের গায়ে নিজেই কলঙ্ক জড়ান তিনি। পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন সব ধরণের ক্রিকেটে। ওই ঘটনার পর শুধু পাকিস্তানি সমর্থকদের কাছেই নয়, বিশ্বজুড়েই ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়েছেন সালমান বাট।
২. জেসি রাইডার : মোটাসোটা গড়নের জেসে রাইডারের কথা মনে আছে? দারুণ প্রতিভাধর ছিলেন, ছিল বড় হিট নেয়ার দুর্দান্ত সামর্থ্য। কিন্তু রাতে মাতাল হয়ে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ কিংবা বারে মারামারির মতো কাণ্ড ঘটিয়ে নিজের ক্যারিয়ার ধ্বংস করেছেন কিউই এই ওপেনার। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে কোরি অ্যান্ডারসন যখন শহীদ আফ্রিদির ৩৭ বলে সেঞ্চুরির রেকর্ডটি ভাঙেন, ওই ম্যাচেই ৪৬ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন রাইডার। ওই বছরই তার ক্যারিয়ারটা শেষ হয়ে যায়।
৩. রিকি পন্টিং : ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা অধিনায়কদের তালিকায় তার নাম থাকবে, আবার বিশ্বজুড়ে হেটারও কম নয় রিকি পন্টিংয়ের। কারণ একটাই, খেলোয়াড়ি জীবনে ম্যাচ জেতার জন্য যে কোনো কিছু করতে রাজি ছিলেন তিনি। ২০০৮ সালে সিডনি টেস্টে খেলোয়াড় এবং আম্পায়ারদের সঙ্গে তার লেগে যাওয়ার ঘটনাটি এখনও মনে আছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। ভারতীয় সমর্থকদের কাছে অবশ্য এই পন্টিংয়ের ঘৃণিত হওয়ার আর একটি বড় কারণ, কোনো কোনো ম্যাচে তিনি একাই হারিয়ে দিয়েছেন ভারতকে।
৪. গ্রেগ চ্যাপেল : অস্ট্রেলিয়ার আরেক সাবেক অধিনায়ক। তিনি আবার ভারতের কোচও ছিলেন। খেলোয়াড়ি জীবন কিংবা কোচ হিসেবে কোনো সময়ই ভারতীয় সমর্থকদের পছন্দের পাত্র হতে পারেননি চ্যাপেল। ১৯৮১ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ছোট ভাই ট্রেভর চ্যাপেলকে দিয়ে আন্ডারআর্ম বল করিয়ে দুর্নাম কামান চ্যাপেল। আর ২০০৭ সালে ভারতের কোচ হয়ে সিনিয়রদের সঙ্গে তুমুল দ্বন্দ্বে জড়ান।
৫. মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন : ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান এবং অধিনায়ক। খেলোয়াড় হিসেবে ভক্তদের অনেক প্রিয় হলেও ব্যক্তিজীবনের কারণে সমালোচনার শিখরে ছিলেন আজহারউদ্দিন। অভিনেত্রী সঙ্গীতা বিজলানিকে বিয়ে করার পরও একাধিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি। আর সবচেয়ে বেশি নিন্দা কুড়ান ২০০০ সালে স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে।
৬. মাইকেল ক্লার্ক : আরও একজন কিংবদন্তি এবং অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক। ২০০৭-০৮ মৌসুমে ভারত সফরে ঠুনকো ঘটনায় শচিন টেন্ডুলকার, বীরেন্দর শেবাগ আর অন্যান্য ভারতীয় খেলোয়াড়দের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে প্রথম সমালোচিত হন ক্লার্ক। ঘরেও দুর্নাম আছে। তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলেছিলেন খোদ সতীর্থ মিচেল জনসন। ক্লার্কেরও অন্য অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়কদের মতো যে কোনো মূল্যে ম্যাচ জেতার একটা প্রবণতা ছিল, যেটা তাকে প্রতিপক্ষ সমর্থকদের কাছে ঘৃণার পাত্র বানিয়েছে অনেকবার।
৭. মুশফিকুর রহীম : ভারতীয় সমর্থকদের কাছে ঘৃণিত ক্রিকেটারদের মধ্যে আছে বাংলাদেশের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীমের নামও। ক্রিকট্র্যাকারের ভাষায়- অপরিণত এবং কটু উদযাপন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য এবং পোস্টের কারণে ঘৃণিত ক্রিকেটারদের মধ্যে একজন হয়েছেন মুশফিক।
তারা লিখেছে, কষ্টার্জিত জয় কিংবা প্রতিপক্ষ দলের উইকেট ফেলার পর বন্য উদযাপন করে নিন্দা কুড়িয়েছেন মুশফিক। এছাড়া ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলার সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ভারতের হারের পর একটি ছবি পোস্ট করে আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন মুশফিক। পরে তিনি সেটা ডিলিট করেন, কিন্তু ভারতীয় সমর্থকদের অনেকেই সেটির স্ক্রিনশট নিজেদের কাছে রেখেছেন এবং এজন্য মুশফিককে পছন্দ করেন না তারা। ভারতীয় সমর্থকদের মতে, বাংলাদেশি এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ভারত এবং অন্যান্য দেশকে প্রাপ্য সম্মান দিতে চান না।
৮. শ্রীশান্ত : ভারতের সাবেক পেসার। তিনি ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০১১ সালে দেশের ওয়ানডে বিশ্বকাপের দলে ছিলেন। তারপরও ভক্ত-সমর্থকদের কাছে নিন্দার পাত্র এই শ্রীশান্ত, কারণ স্পট ফিক্সিংয়ের মতো প্রতারণা। ২০১৩ সালে এই কাণ্ডের পর আজীবন নিষিদ্ধ হন এই পেসার।
৯. রবিচন্দ্রন অশ্বিন : ভারতের সর্বকালের সেরা অফস্পিনারদের একজন। অশ্বিন মূলত নিন্দা কুড়িয়েছেন 'মানকাড' আউটের কারণে। ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় এই কাণ্ড ঘটালেও তেমন আলোচনা হয়নি। সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছেন এবারের আইপিএলে এমনটা করে। আইপিএলে তো দুই দলেরই সমর্থক থাকে। কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের অশ্বিন রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে ম্যাচে জস বাটলারকে 'মানকাড' আউটের ফাঁদে ফেলেন, যেটা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রীতিমত ঝড় উঠে।
১০. মোহাম্মদ আসিফ : ২০১০ সালে ইংল্যান্ডে সালমান বাট এবং মোহাম্মদ আমিরের সঙ্গে স্পট ফিক্সিংয়ে নাম ছিল মোহাম্মদ আসিফেরও। আমিরের বয়স তখন অনেক কম হওয়ায় তাকে দোষীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাননি ক্রিকেটভক্তরা। তবে সালমান বাটের সঙ্গে আসিফের নামটিই বেশি এসেছে। এর মধ্যে ২০০৬ সালে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ নিয়ে ডোপ পজিটিভ হন। একইরকম কাণ্ড ঘটান ২০০৮ সালে আইপিএলে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের হয়ে খেলতে গিয়েও।
১১. শেন ওয়ার্ন : নিঃসন্দেহে কিংবদন্তি লেগস্পিনার। আবার ক্রিকেটের ব্যাড বয়ও বলা যায়। অস্ট্রেলিয়ান এই সাবেক মাঠে এবং মাঠের বাইরে এমন কোনো কাণ্ড নেই যে ঘটাননি। অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহর সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো ছিল না। ২০০৩ সালে মাদক গ্রহণের কারণে নিষিদ্ধ হন, ওই বছর তাই বিশ্বকাপও খেলতে পারেননি। তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগও ছিল। যার ফলশ্রুতিতে ২০০৭ সালে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। ১৯৯৪ সালে একজন বুকির সঙ্গে তার সম্পর্কের খবর ফাঁস হয়। ২০০৮ সালে তার ধুমপানের ছবি তোলায় কয়েকজন বালককে মেরেছিরেন। ক্রিকেটের এই কিংবদন্তি তাই বরাবরই ছিলেন আলোচনার মধ্যে, ভক্ত-সমর্থকদের কাছে চরম অপছন্দের পাত্রও।
এমএমআর/পিআর