বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম হাফ সেঞ্চুরির গল্প
আসল নাম নাম মেহরাব হোসেন। ডাক নাম অপি। ফুটবল ও হকির মত ঢাকার ক্লাব তথা দেশের ক্রিকেটে সেই ৭০ দশক থেকেই ডাক নামের চলটাই বেশি। খেলোয়াড়রা ডাক নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। পরে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোয় আসল নামের প্রচলন হওয়ার পর থেকে ডাক নামে ডাকা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে ক্রিকেটারদের। এ কারণে মেহরাব হোসেনের বদলে খেলোয়াড়ী জীবনের বড় সময় তাকে ‘অপি’ নামেই ডাকা হতো বেশি।
তবে সেই অপির নামের শুরুর সাথে বাংলাদেশের ক্রিকেটের দুটি অবিস্মরণীয় ঘটনা জড়িয়ে আছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, অপি লিখতে বাংলা স্বরবর্ণের প্রথম বা আদ্যাক্ষর ‘অ’ লাগে। একইভাবে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের একজোড়া শুরুর গল্প জড়িয়ে আছে তাকে ঘিরে।
সবার জানা, অপিই একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান। আবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটে দেশের হয়ে প্রথম হাফ সেঞ্চুরিটিও কিন্তু অপির দখলে। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ যখন প্রথম বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে, তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১২৯ বলে ৬৪ রানের এক দুর্দান্ত ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন তিনি। সেটাই ছিল কোন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের বিশ্বকাপে প্রথম পঞ্চাশে পা রাখার ঘটনা।
খেলা হয়েছিল আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনের ক্যাসল এভিনিউতে। দিনটি ছিল ১৯৯৯ সালের ২১ মে। ঠিক আজকের এই দিনে। বর্তমান বাংলাদেশ ফাস্ট বোলিং কোচ এবং ৮০ ও ৯০ দশকে বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম শৈল্পিক ফাস্ট বোলার কোর্টনি ওয়ালশ, আর ওই সময়ের দুই তুখোড় দুই দ্রুত গতির বোলার রেয়ন কিং এবং মারভিন ডিলনের সাজানো ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলিং তোড় সামলানো ছিল যে কোনো ব্যাটিং শক্তির জন্যই কঠিন কাজ।
প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ (২), আকরাম খান (৪), আমিনুল ইসলাম বুলবুল (২), মিনহাজুল আবেদিন নান্নু (৫), খালেদ মাহমুদ সুজন (১৩), খালেদ মাসুদ পাইলট (৪) ও এনামুল হক মনি (৪) তা পারেননিও। পুরো দল ছিল ক্যারিবীয় বিধ্বংসী ফাস্ট বোলিংয়ের সামনে জবুথবু।
টিম বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয়েছিল মাত্র ১৮২ রানে। রান যা করার, প্রতিরোধ যা গড়ার তা গড়েছিলেন দুজন মাত্র তরুণ। এক মেহরাব হোসেন অপি। আর অন্যজন নাঈমুর রহমান দুর্জয়। তিন প্রধান ব্যাটিং স্তম্ভ আকরাম, নান্নু আর বুলবুলসহ ৪৫ রানে চার উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ যখন দিশেহারা, তখন হাল ধরেন দুই তরুণ অপি আর দুর্জয়।
৮৫ রানের এক জুটি গড়েও দেন তারা। ওয়ানডেতে ৮০/৯০ রানের জুটি হয়তো বড় না, তবে ঐ ম্যাচের আলোকে অপি-দুর্জয়ের ওই জুটিটি ছিল বেশ বড়। দুজনার সামনেই ছিল অর্ধশতক হাঁকানোর সুযোগ; কিন্তু দুর্জয় মাত্র ৫ রানের জন্য পারেননি বিশ্বকাপে হাফ সেঞ্চুরিয়ান হতে। তবে অপি ঠিকই পঞ্চাশে পা রাখেন।
দেশের হয়ে প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিয়ান আবার বিশ্বকাপেও প্রথম হাফ সেঞ্চুরির মালিক তিনি। কেমন ছিল অপির অনুভুতি? সে অর্ধশতক হাঁকানোর গল্পটাই বা কি? জাগো নিউজের সাথে আলাপে তার একটা নাতিদীর্ঘ বর্ণনা দিয়েছেন অপি।
আসুন শোনা যাক বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম হাফ সেঞ্চুরির গল্প। সেই অপির নিজের মুখ থেকে শোনাই কি বেশি উপভোগ্য হবে না!
অপির নিজের মুখে বলা সেই গল্প, ‘সত্যি বলতে কি বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে আমার আত্মবিশ্বাস এবং নিজ সামর্থ্যের ওপর আস্থা ছিল প্রবল। কারণ বিশ্বকাপের কয়েক মাস আগে ঘরের মাঠে একটি তিন জাতি আসরে (মেরিল কাপ) আমি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলাম। বলার অপেক্ষা রাখে না, একদিনের ক্রিকেটে কোন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানের সেটাই ছিল প্রথম শতরান। খুব স্বাভাবিকভাবেই ওই সেঞ্চুরি আমাকে অনেক বেশি সাহস জুগিয়েছে। অনুপ্রাণিত করেছে। বার বার মনে হয়েছে আমি বিশ্বকাপেও ভাল কিছু করবো। সেই ভাল কিছু করার তাড়না, ইচ্ছে প্রবল হয় আমার বাবার কথায়।
বলতে পারেন, তার একটি উক্তি আমার মনে গেঁথে গিয়েছিল। সবার জানা, আমার চাচা আজহার হোসেন শান্টু একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম হাফ সেঞ্চুরিয়ান (১৯৮৯ সালে শারজায় অস্ট্রেলেশিয়া কাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৪)। আমার বাবা ছিলেন দারুণ ক্রিকেট অনুরাগি, সমাঝদার।
বাংলাদেশ বিশ্বকাপ খেলার যেগ্যেতা অর্জনের আগে তিনি ছিলেন ঘোরতর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সাপোর্টার। বিশ্ব ক্রিকেটে ১৯৭০ ও ১৯৮০‘র দশকে ক্যারিবীয়দের ছিল একচ্ছত্র প্রভাব ও রাজত্ব। আমার বাবা ৭০-এর দশকের শুরুর দিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেই চমকজাগানো আর আলো ছড়ানো ক্রিকেটের ভক্ত ছিলেন খুব।
৭০’এ অ্যান্ডি রবার্টস, জোয়েল গার্নার, মাইকেল হোল্ডিংয়ের দ্রুত গতির সুপার এক্সপ্রেস বোলিং বাবার খুব পছন্দ ছিল। তারপর কার্টলি অ্যামব্রোস, কোর্টনি ওয়ালশের বোলিংও বাবাকে খুব টানতো। বলতে পারেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেই ধারালো ফাস্ট বোলিংয়ের প্রতি বাবার একটা অন্যরকম আকর্ষণ ছিল। তাই বিশ্বকাপ খেলতে যাবার আগে বাবা বলেছিলেন, আর যাই করিস ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কিন্তু ভাল খেলা চাই। ভাল খেলবি। অন্তত পঞ্চাশ প্লাস একটা ইনিংস খেলবি বাবা। তাহলে আমার ভাল লাগবে। আমি খুব খুশি হবো।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ম্যাচের আগে আমার মাথায় ঠিক বাবার কথাটাই বাজছিল। আমি এমনিতেও বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। বাবার সেই ইচ্ছে ও চাওয়ার কথা মনে হতেই আরও একটু বেশি অনুপ্রাণিত হই। তারপর মাঠে নেমে ধীরে ধীরে ইনিংস এগিয়ে নিচ্ছিলাম। ত্রিশের ঘরে গিয়ে হঠাৎ কেমন যেন হয়ে যাই। বলতে পারেন একটু বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েছিলাম এবং আস্থা ও বিশ্বাস বেশি হয়ে পড়ায় এক পর্যায়ে আমি সোজা ব্যাটে বলের মেধা ও গুণ বিচার করা বাদ দিয়ে ক্রস ব্যাটে খেলতে শুরু করি।
ঠিক এ সময় হঠাৎ শুনি গ্যালারি থেকে বাংলায় কে একজন হারা গলায় বলছেন, এই কি করছো? ক্রস বাদ দিয়ে সোজা ব্যাটে খেলো। স্ট্রেট ব্যাটে ব্যাট করো। আমি তাকিয়ে খুঁজে দেখি, এই ইংল্যান্ডের মাটিতে কে বাংলায় আমাকে এমন পরামর্শ দিচ্ছেন? দেখি আমাদের সাবেক অধিনায়ক ও অগ্রজপ্রতিম লিপু ভাই (গাজী আশরাফ হোসেন) বলছেন ওই কথা। তার কথা আমাকে খুব নাড়া দিয়েছিল। সাথে সাথে আমি যেন সম্বিত ফিরে পাই। আবার নিজেকে শুধরে নিয়ে খেলতে থাকি।
আমাদের তখন নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়ছিল। প্রথম পানি পানের বিরতির সময় আমাদের কোচ গর্ডন গ্রিনিজ টুয়েলভ ম্যানকে দিয়ে ম্যাসেজ পাঠালেন, ‘তোমাকে শেষ পর্যন্ত থাকতে হবে । তুমি উইকেটে টিকে থাকার চেষ্টা করো।’
তখন আমার পার্টনার ছিল নাঈমুর রহমান দুর্জয়। দুর্জয়ের (৭২ বলে ৪৫) সাথে পরে একটা বড় পার্টনারশিপ (৮৫) হয়েছিল। দুর্জয়ও আমাকে অনুপ্রাণিত করলো। বললো, বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিটা তোমার। একটু দেখে খেল, পঞ্চাশ থেকে খুব দুরে নও তুমি। দেখে খেললে হয়ত বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের ফার্স্ট হাফ সেঞ্চুরিয়ান হয়ে যাবা।
দুর্জয়ের কথাও সাহস সঞ্চার হলো। মনে হলো হ্যাঁ, সত্যিইতো একটু দেখে খেললে হয়ত ফিফটিটা হয়ে যাবে। আমি পারবো ইনশাল্লাহ। এক সময় তা হয়েও গেল। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম হাফ সেঞ্চুরিয়ান হলাম আমি। সে যে কেমন ভাল লাগা, বলে বোঝাতে পারবো না।
আমার বাবার কথা মত, সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই পঞ্চাশ রান- তাতে ভাল লাগা পরিপূর্ণতা পেল, আনন্দ ও উচ্ছাস দ্বিগুণ হলো। এরপর আরও দুটি ঘটনা মনে দাগ কেটে আছে। এখনো মাঝে-মধ্যে মনে পড়ে। হয়ত আজীবন আমার মনের আয়নায় জ্বলজ্বল করবে।
প্রথম ঘটনাটি হলো খেলা শুরুর আগে। আমি প্যাড পরে বসে আছি। ব্যাটিংয়ে নামবো। হঠাৎ দেখি আমাদের কোচ গর্ডন গ্রিনিজ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আমি ড্রেসিং রুমের যে দরজা দিয়ে মাঠে নামবো, গর্ডন ঠিক সেখানে দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবছেন। হঠাৎ আমাকে ডেকে বললেন, শোন আমি তোমার কোচ, আমাকে বিশ্বাস হয়? আমি বললাম, হবে না কেন? খুব হয়।
তখন গর্ডন আমার কাঁধে হাত দিয়ে বলে উঠলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের যে ১১ জন বোলার ও ফিল্ডার মাঠে নামছে, আর তোমরা যে দু’জন ওপেন করতে যাচ্ছো, সেই ১৩ জনের মধ্যে তুমিই বেস্ট প্লেয়ার। মাঠে সেই সেরার প্রমাণ দিবা তুমি। কোচ যখন এমন উদ্দীপক ও অনুপ্রেরণা জোগানোর কথা বলেন, তখন আমার সাহস দ্বিগুণ বেড়ে যায়। আত্মবিশ্বাস এবং নিজ সামর্থ্যের ওপর আস্থাও বেড়ে যায় বহুগুণে।
আমি ভুলেই যাই, আমার বিপক্ষে কোর্টনি ওয়ালশ আর মারভিন ডিলনের মত ভয়ংকর ফাস্ট বোলাররা আছেন। মাঠে নামার পর মনেই হয়নি আমি কার বিপক্ষে ব্যাট করছি। উল্টো মনে হয়, আমিই সেরা। আমাকে প্রমাণ করতে হবে আমিই সেরা।
আমার সেদিন ভাল খেলার পিছনে বাবার নির্দেশ আর কোচ গর্ডন গ্রিনিজের সেই উদ্দীপক সংলাপ খুবই কার্যকর ভূমিকা রেখেছিল। আর দ্বিতীয় ঘটনাটি আমার সারা জীবন মনে থাকবে। আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে মাঠের ভিতরে হয়ত সর্বোচ্চ প্রশংসা প্রাপ্তির এক মুহূর্ত। সেটা ব্যাটিংয়ের সময়। পঞ্চাশের পথে এক সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফাস্ট বোলার মারভিন ডিলনের বলে সামনের পায়ে ভর করে সোজা ব্যাটে একটা ছক্কা হাঁকিয়েছিলাম। বল স্ট্রেইট সীমানার বাইরে গিয়ে ছিটকে পড়লো।
সাধারণতঃ বড় দলের বিপক্ষে কোন ব্যাটসম্যান এমন বিগ হিট নিলে বোলার স্বয়ং বা ফিল্ডিংয়ে থাকা কেউ কোন স্লেজিং করেন, বা কটুক্তি করে বসেন; কিন্তু ডিলনকে ছক্কা হাঁকানোর পর আমার ভাগ্যে জুটলো প্রশংসা। তাও যার তার মুখে নয়। একদম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্যাপ্টেন ব্রায়ান লারা স্বয়ং গালি থেকে এসে আমাকে বললেন, ‘গুড শট। গুড শট বাডি।’
বলার অপেক্ষা রাখে না ক্রিকেটের রেকর্ডের বরপুত্র ব্রায়ান চার্লস লারা তখন বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা তারকা ও সেরা উইলোবাজ। তার মত সুপার স্টারের মুখে নিজের এক স্ট্রোকের এমন প্রশংসা- বলে বোঝাতে পারবো না কি যে অন্যরকম ভাললাগায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম তখন। ভালো লাগার পাশাপাশি অনুপ্রাণিতও বোধ করছিলাম বেশ।’
এছাড়া আরও একটি ঘটনা মনে বিশেষ দাগ কেটে আছে। তাহলো, হাফ সেঞ্চুরির পর ইনিংস ব্রেকেই আমার দেশের সংবাদকর্মীদের সাথে কথা বলে ফেলি। সাধারণতঃ খেলা চলাকালীন মিডিয়ার সাথে কথা বলার নজির নেই। খেলা শেষে দুই দলের অধিনায়ক, কোচ এবং দিনের সেরা পারফরমার কথা বলেন; কিন্তু ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আমি তার কোন ক্রাইটেরিয়ার মধ্যে না পড়েও স্বদেশি মিডিয়ার সাথে কথা বলেছিলাম।
এটা রীতির বাইরে; কিন্তু যেহেতু খেলা শেষ হবে বাংলাদেশ সময় অনেক রাতে (১১ টার পরে)। তখন মিডিয়ার সাথে কথা বলা কঠিন। আর সবচেয়ে বড় কথা দেশের হয়ে বিশ্বকাপের মত সর্বোচ্চ আসরে প্রথম সেঞ্চুরির গল্প ও হাফ সেঞ্চুরিয়ানের তাৎক্ষণিক অনুভুতি এবং কথোপকোথনটা দেশবাসীর কাছে মেলে ধরতেই নিয়ম ও রীতি ভেঙ্গে আমাকে বলা হলো লাঞ্চের সময় প্রচার মাধ্যমের সাথে কথা বলে নিতে। আমার মনে আছে আমি ড্রেসিং রুমের বাইরে বেরিয়ে এসে আমার দেশের সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছিলাম।
২০ বছরে বাংলাদেশের ক্রিকেটে বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি
আমার মনে হয় ২০ বছরে ক্রিকেটের বড় ধরনের কোন পরিবর্তন আসেনি। মৌলিক বিষয়গুলো ঠিকই আছে। তবে পাওয়ার হিটিং বেড়েছে। আমাদের সময়ও পাওয়ার হিটিং ছিল। তবে আমার মনে হয় এখন পাওয়ারের প্রয়োগ অনেক বেশি।
আমাদের দলে তখন পরিণত ক্রিকেটার একদমই হাতে গোনা ছিলেন। নান্নু ভাই, আকরাম ভাই আর বুলবুল ভাই; কিন্তু তাদেরও আন্তর্জাতিক ম্যাচ সংখ্যা ছিল খুব কম। সাকুল্যে ১৭-১৮টি করে ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে তারা তখন বিশ্বের বড় বড় দলের বাঘা বাঘা বোলারের মোকাবিলা করেছেন।
এখন সেখানে আমাদের দলের বেশ কজন ক্রিকেটার দেড়শো থেকে ১৭০টি ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। একটা স্বস্তি নিয়ে, আস্থা-আত্মবিশ্বাস নিয়ে স্বাভাবিক ব্যাটিং করার অনেক বড় রসদ। এই অভিজ্ঞতা তাদের কাজে দিবে। আমার মনে হয়, এবারের বিশ্বকাপে আরও একটি ইতিবাচক দিক আছে বাংলাদেশের। খেলা হবে জুন থেকে জুলাই পর্যন্ত। ইংল্যান্ডে তখন সামার (গ্রীষ্ম)। ওই সময় উইকেটটা বেশ ভাল থাকে। ব্যাটিং করতে ব্যাটসম্যানদের আরামদায়ক হয়। দলে সিনিয়র প্লেয়ারের সংখ্যা বেশি। আমি খুব বিশ্বাস করি আমাদের দল ভাল খেলবে।
১৯৯৯ সালে আপনার একটি আর মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর একটি- এই দুটি মাত্র হাফ সেঞ্চুরিই ছিল ব্যাটিংয়ের প্রাপ্তি। দীর্ঘ ২০ বছরে বিশ্বকাপ এবং আইসিসির বিশ্ব আসরে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন চার চারটি। গত বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ একাই হাঁকিয়েছেন দুই সেঞ্চুরি।
আর দুই বছর আগে এই যুক্তরাজ্যে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক ম্যাচে জোড়া শতক উপহার দিয়ে দলকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে তুলেছিলেন মাহমুদউল্লাহ আর সাকিব। এবার সেই যুক্তরাজ্যে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ক’জন ব্যাটসম্যানের শতরান করার সম্ভাবনা অছে? ব্যাটসম্যানের নাম ও সংখ্যা জানাবেন কি?
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একজন দু’জন নয়, আমার মনে হয় এক থেকে সাত নম্বর পর্যন্ত যারা আছেন, তাদের সবারই সেঞ্চুরির সুযোগ ও সম্ভাবনা আছে। আমার বিশ্বাস তাদের সবার সে সামর্থ্য আছে। তারা বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সে সামর্থ্যের প্রমাণও দিয়েছে।
এবারের বিশ্বকাপে তাদের সবার শতরানের সুবর্ণ সুযোগ আছে। আমার মনে হয় ধৈর্য্য ধরে মাইন্ড সেটটা যদি ঠিক রাখতে পারেন, তাহলে অনেক বড় ইনিংস বেরিয়ে আসতে পারে। মোটকথা ধৈর্য্য আর মনোসংযোগ ধরে রাখতে পারলে আমাদের এক থেকে সাত নম্বরের যে কেউ যে কোন ম্যাচেই সেঞ্চুরি করার সামর্থ্য রাখেন। এখন জায়গাত সে সামর্থর সঠিক ও যথাযথ প্রয়োগটাই ঘটাতে হবে।
এআরবি/পিআর