তিনশ’ বছরেরও পুরনো ভেন্যু লন্ডনের দ্য ওভাল
ক্রিকেটের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে দ্য ওভালের নাম। কেউ কেউ একে কেনিংটন ওভাল নামেও চিনে থাকেন। দক্ষিণ লন্ডনের কেনিংটনে অবস্থিত বলে একে কেনিংটন ওভাল নামে ডাকা হয়।
ক্রিকেটের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত কিভাবে? ১৮৮০ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট ম্যাচটির আয়োজক যে ছিল এই মাঠ? দ্য ওভালকে ঐতিহাসিক স্টেডিয়াম অভিধায় ভূষিত করা হয় এ কারণেই।
টেস্ট ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৮৭৬-৭৭ সালে। ইংল্যান্ড গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে। ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজটি ড্র হয়েছিল ১-১ ব্যবধানে। এর দুই বছর পর আবারও অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে খেলে আসলো ইংল্যান্ড। ১ ম্যাচের সিরিজ জিতলো অস্ট্রেলিয়া। এরপর ১৮৮০ সালে অস্ট্রেলিয়া আসলো ইংল্যান্ডে খেলতে। মাত্র ১ ম্যাচের সিরিজ তারা খেললো দক্ষিণ লন্ডনের ক্রিকেট ভেন্যু দ্য ওভালে।
সারে কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের হোম ভেন্যু হিসেবে এই মাঠের যাত্রা শুরু তারও ৩৫ বছর আগে থেকে। কারণ, দ্য ওভাল স্টেডিয়ামটির ক্রিকেটাঙ্গনে যাত্রাই শুরু হয় ১৮৪৫ সালে। তখন থেকেই সারে কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের হোম ভেন্যু এই স্টেডিয়ামটি।
শুধু ক্রিকেটই নয়, দ্য ওভালের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ক্রীড়াঙ্গনের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা। অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আয়োজক ছিল তারা। ১৮৭০ সালে ইংল্যান্ড তাদের ইতিহাসে প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ খেলে এই মাঠে, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। ১৮৭২ সালে প্রথম এফএ কাপের ফাইনাল আয়োজন করা হয় এই স্টেডিয়ামে। এছাড়া ১৮৭৪ এবং ১৯৮২ সালের এফএ কাপের ফাইনালের আয়োজকও ছিল দ্য ওভাল।
১৮৭৬ সালে প্রথমবারেরমত ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ড এবং ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের মধ্যকার ইন্টারন্যাশনাল রাগবি ম্যাচের আয়োজন করা হয় এই মাঠে। এছাড়া ১৮৭৭ সালে প্রথম রাগবি ভার্সিটি ম্যাচেরও আয়োজন করা হয় দ্য ওভালে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয় এই মাঠেই।
স্টেডিয়ামটির বয়স তিন শতাব্দীরও বেশি। লন্ডন মিউনিসিপ্যালিটির খেলাধুলার প্রাণকেন্দ্র হিসেবেই মূলতঃ কেনিংটনে গড়ে ওঠে দ্য ওভাল স্টেডিয়ামটির। সব ধরনের খেলাধুলারই আয়োজন করা হতো এই স্টেডিয়ামে। যদিও খাতা-কলমে ১৭২৪ সালের ১৮ জুন প্রথম এই মাঠে লন্ডন বনাম ডার্টফোর্ডের মধ্যে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ।
তবে এই মাঠটি তখনকার সময়ে আদালতের রায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের রায় কার্যকরের জন্যও ব্যবহার করা হতো। হয়তো বা ওই কারণেই ১৭৪০ সালে এই মাঠ থেকে ক্রিকেট সরিয়ে নেয়া হয়। চলে যায় আর্টিলারি গ্রাউন্ডে। তবে প্রায় শতবর্ষ পর এই মাঠটিকে লিজ নেয় রাজ পরিবার। ১৮৪৪ সালে ডাচি অব কর্নওয়েল মাঠটিকে লিজ নেন ক্রিকেটের জন্য। বার্ষিক ১২০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে ৩০ বছরের জন্য লিজ নেয়া হয় এবং ১৮৪৫ সালে এই মাঠে ক্রিকেট শুরু করা হয়।
যদিও শুধুমাত্র ক্রিকেট নয়, অন্য খেলাধুলাও অনুষ্ঠিত হয় এই মাঠে। যার কথা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯৭৫ সালে প্রথম বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে যে কয়বার বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল ইংল্যান্ড, প্রতিবারই দ্য ওভাল ছিল অপরিহার্য ভেন্যু। শুধু তাই নয়, ইতিমধ্যেই ১০০’রও অধিক টেস্ট ম্যাচ আয়োজক হওয়ার গৌরব অর্জন করে ফেলেছে দ্য ওভাল।
১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৮৩, ১৯৯৯- এই চারটি বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল ইংল্যান্ড। প্রতিবারই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আয়োজক ছিল দ্য ওভাল। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও বিশ্বকাপের ৫টি ম্যাচের আয়োজক ঐতিহ্যবাহী স্টেডিয়ামটি। এই ৫ ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশের ম্যাচও আছে দুটি।
৩০ মে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচটাই আয়োজন করবে দ্য ওভাল। দুই প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ইংল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর ২ জুন এই মাঠেই প্রথম খেলতে নামবে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। ৫ জুন বাংলাদেশ নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে এই মাঠেই মুখোমুখি হবে নিউজিল্যান্ডের।
৯ জুন দ্য ওভালে হবে মহারণ। মুখোমুখি হবে শিরোপার দুই ফেবারিট ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া। এই মাঠের সর্বশেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কা।
বিশ্বকাপে এই মাঠের উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স হচ্ছে, ১৯৯৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাকিস্তানের সাকলায়েন মোস্তাক করেছিলেন দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিক।
আইএইচএস/এমএস